Ajker Patrika

দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ‘উই’

কাশফিয়া আলম ঝিলিক
দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ‘উই’

দেশীয় পণ্যের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত নারী উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ ও নেটওয়ার্কিংয়ের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে উইমেন অ্যান্ড কমার্স (উই)। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে উই এখন জাপান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও যুক্তরাজ্যে দেশীয় নারী উদ্যোক্তাদের পণ্য বিক্রির কাজ শুরু করেছে। ১৩ লাখ সদস্য এবং ৩ লাখ ৫০ হাজার নারী উদ্যোক্তার এই ফেসবুক গ্রুপটি অনলাইন ও অফলাইনে বেশ কিছু সফল সামিট সম্পন্ন করেছে। সম্প্রতি স্প্রিং ফেয়ার ও লন্ডনের বার্মিংহামে মেলায় অংশ নিয়েছিলেন উইয়ের উদ্যোক্তারা। আগামী তিন বছর সেখানে অংশ নেওয়ার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন তাঁরা। লিখেছেন কাশফিয়া আলম ঝিলিক।

পাট দিয়ে শৌখিন জিনিস তৈরি করতেন নাসরিনের বাবা। করোনার সময় যখন তাঁর পরিবার আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত, তখন সংসারে সাহায্য করার কথা ভাবেন নাসরিন। বাবার তৈরি পণ্য দিয়েই শুরু করেন নিজের অনলাইন ব্যবসা। যুক্ত হন ফেসবুকের উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স (উই) নামের গ্রুপটির সঙ্গে। এই গ্রুপে এসে তাঁর ব্যবসা পেয়েছে নতুন মাত্রা।

নাসরিনের মতো অনেকেই আছেন যাঁরা নিজের পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতার জন্য হাল ধরেছেন সফলভাবে। উই নামের গ্রুপটি তৈরি করা হয় সেই নারীদের জন্য, যাঁরা নিজে কিছু করতে চান। এর পেছনে আছে একজন নিশার পরিশ্রমের গল্প।

শুরুর গল্প
উইয়ের প্রতিষ্ঠাতা নাসিমা আক্তার নিশার জন্ম ঢাকাতেই। বেড়ে ওঠা, বিয়ে এবং কর্মক্ষেত্র সবই ঢাকায়। নির্দিষ্ট করে বললে বনানীতে। একটি যৌথ পরিবারের সন্তান নিশার হাত ধরে উইয়ের বেড়ে ওঠার গল্পটা খুব সহজ ছিল না। মেয়েদের পড়াশোনার বিষয়ে পরিবারের মনোভাব খুব ভালো ছিল না। কিন্তু নিশার পড়ালেখা করার আগ্রহ ছিল প্রবল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ইচ্ছে থাকলেও বাসা থেকে তা দূরে হওয়ায় সেখানে পড়ার অনুমতি মেলেনি। বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ি থেকেও কাজ করা নিয়ে ছিল আপত্তি। তবে নিশার বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ায় বাবা ও স্বামীর সিদ্ধান্তে ২০০৫ সাল থেকে বাবার ব্যবসার দায়িত্ব বুঝে নেন নিশা।

ব্যবসাবদল
বাবার রিয়েল এস্টেট ব্যবসা দেখাশোনা করতে গিয়ে কিছুদিনের মধ্যেই নিশা বুঝতে পারেন, সেই কাজ তাঁকে দিয়ে হবে না। তাই শুরু করেন নিজের আগ্রহের জায়গা গেমিং প্ল্যাটফর্মের কাজ। মোবাইল ফোনের অ্যাপ ডেভেলপ দিয়ে শুরু করে পরে সফটওয়্যার ডেভেলপের কাজ শুরু করেন তিনি। এভাবে ২০১০ সাল থেকে নিশার উদ্যোক্তা জীবনের শুরু। ছেলেকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া-আসা করতে করতে খেয়াল করেন, এমন অনেক নারীই আছেন যাঁরা প্রতিভাবান হওয়া সত্ত্বেও কাজ করতে পারছেন না। চাইলেই তাঁরা সংসারের হাল ধরতে পারছেন না। সে সময় নিশা ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সঙ্গে কাজ করছিলেন। তখন থেকেই নারীদের ই-কমার্স সেক্টরে কাজের সুযোগ নিয়ে ভাবতে থাকেন। নিজে কাজ করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হয়েছিলেন। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই নারীদের জন্য এমন একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করার চিন্তা করলেন, যেখানে তাঁরা নিজেদের প্রতিভা কাজে লাগাতে পারেন। 

উইয়ের যাত্রা শুরু
তুরস্কে এনটিএফের একটি নারীবিষয়ক প্রশিক্ষণে অংশ নেন নিশা। সেখানে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের নারীরা তাঁদের পণ্য নিয়ে হাজির হন এবং সেখানকার ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ই ছিলেন নারী। মূলত সেখান থেকেই দেশের নারীদের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরির কথা মাথায় আসে নিশার। তত দিনে তিনি খেয়াল করেন, সফটওয়্যার নিয়ে কাজ করতে গিয়েও বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। বুঝতে পারছেন না কোথায় বায়ার কিংবা সেলার পাবেন। ই-ক্যাবের তৎকালীন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনা করেন বিষয়টি। এরপর ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর উইয়ের যাত্রা শুরু হয়। 

আশীর্বাদ হয়ে আসে করোনা
করোনার সময় উই একটা নতুন মাত্রা পায়। তখন পরিবার বাঁচাতে অনেকেই ফেসবুক ঘিরে কিছু না কিছু করতে চাইছেন। সে সময় উই নারীদের সহায়তা করতে এগিয়ে আসে। গ্রুপটি যেহেতু আগে থেকেই ছিল, তাই কাজটি সহজ হয়। পণ্য বিপণনের জন্য অনেকেই যুক্ত হতে থাকেন গ্রুপটিতে। কার্যক্রম বাড়তে থাকে। তখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক ট্রলের শিকার হতে হয়েছিল নিশা এবং উইয়ের সদস্যদের। প্রতিদিনই বিভিন্ন নেতিবাচক জিনিস দেখতেন তিনি। কিন্তু হাল ছাড়েননি।

ধীরে ধীরে উই থেকে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। প্রথমে ঢাকাভিত্তিক হলেও পরে ২০১৯ সালে চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় কাজ করা শুরু করে উই। ধীরে ধীরে সারা দেশে এমনকি এখন বিদেশেও নানান আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। উইয়ের অফিসে প্রতিদিন ক্রেতা ও বিক্রেতার দেখা হয়। প্রায় ৫০ জন উদ্যোক্তা সেখানে তাঁদের পণ্য নিয়ে আসেন বিক্রির জন্য। ক্রেতাদের আনা হয় উইয়ের পক্ষ থেকে।

উইয়ের সঙ্গে যুক্ত এমন অনেকেই আছেন যাঁদের পরিবার চায় না তাঁরা বাইরে কাজ করুন। সে ধরনের সদস্যরা উইকে নিজেদের ভরসার জায়গা মনে করেন। 

উইকে আজকের অবস্থানে আনতে অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হয়েছে নিশাকে। ২০১৭ সাল থেকে শুরু হওয়া এই উদ্যোগে তিনি পেয়েছিলেন জীবনসঙ্গীর সহায়তা। একসঙ্গে পথ চলতে চলতে ২০১৯ সালে তিনি হারান তাঁকে। উইয়ের সফলতার ভাগীদার হিসেবে তাই তাঁকে অস্বীকার করেন না নিশা। বলেন, ‘আমার পার্টনার আমাকে সব সময় বলতেন, ‘’তুমি উই কখনো ছেড়ে দিয়ো না।’’ আমি ওকে অনেক মিস করি। আমার আজকে এই অবস্থানে আসার পেছনে তাঁর অবদান অনেক।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পরমাণু শক্তিধর হতে চেয়েছিল তাইওয়ান, সিআইএ এজেন্টের বিশ্বাসঘাতকতায় স্বপ্নভঙ্গ

চ্যাম্পিয়নস ট্রফি: রিজার্ভ-ডেতেও সেমিফাইনাল না হলে হৃদয়বিদারক সমীকরণ

বগুড়ায় ইফতারের পর ডেকে নিয়ে যুবককে হত্যা

অমর্ত্য সেনের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় যা বললেন জামায়াতের আমির

সেনাসদস্যকে এক গাড়ি ধাক্কা দেয়, আরেক গাড়ি পিষে যায়

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত