ইমতিয়াজ মাহমুদ
শামীম সিকদারকে দৃশ্যত অনেকেই ভয় পেত। না, তিনি কাউকে মারধর করেছেন বা হত্যা করেছেন, সেসব আমরা শুনিনি। তিনি সঙ্গে অস্ত্র রাখতেন বলে একটা কথা প্রচলিত আছে, এটা কতটা সত্যি, সেটাও কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারে না। বলা হয়, বড় ভাই সিরাজ সিকদারের মৃত্যুর বদলা নেওয়ার জন্য শামীম একসময় সঙ্গে অস্ত্র নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন। এটা আমার কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না। কেননা বদলা নেওয়ার প্রবণতা থাকলে তিনি ঠিকই চরমপন্থী দলের সঙ্গে মিলে পাল্টা হামলা ধরনের কর্মসূচিতে অংশ নিতেন। আর নিতান্ত যদি অস্ত্র তাঁর কাছে থেকেও থাকে, তা ব্যবহার করে তিনি কাউকে কখনো ভীতি প্রদর্শন করেছেন বা হুমকি দিয়েছেন, সে রকম কোনো ঘটনার কথা আমরা জানি না। কিন্তু লোকে যে তাঁকে ভয় পেত খানিকটা, এ কথা সত্যি। শামীম সিকদারের প্রতি এ রকম ভীতির অনুভূতি আহমদ ছফারও ছিল।
আহমদ ছফা শামীম সিকদারের প্রেমে পড়েছিলেন। বিবাহও করতে চেয়েছিলেন। শামীম সিকদার ছফাকে জানতেন, তাঁর এ রকম আকাঙ্ক্ষাকে তিনি বিশেষ গুরুত্ব দেননি। ছফার ভীতির কথা লিখেছেন অসীম সাহা ‘আহমদ ছফা স্মারক গ্রন্থে’, ‘...হাঁটার এক ফাঁকে ছফা ভাই আমাকে হঠাৎ করেই বলে ফেললেন, বুঝলে অসীম, আমি বোধ হয় শামীমকে ভালোবেসে ফেলেছি। আমি বললাম, ভালো কথা। তিনি সঙ্গে সঙ্গে বললেন, “না না, কিন্তু আমি ওকে বিয়ে করব না।” আমি বললাম, “কেন?” তিনি বললেন, “ও আমাকে মেরেই ফেলবে।” না, ছফা নিশ্চয়ই আশঙ্কা করেননি যে শামীম সিকদার তাঁকে খুন করবেন। এটা ছিল নিতান্তই একটা ভীতির প্রকাশ, যে বিবাহ করে আরেকজনের ঘরে প্রথাগত নিয়মে সুশীলা গৃহবধূ হয়ে থাকার মতো নতজানু প্রকৃতির নারী শামীম সিকদার ছিলেন না।
অনুমান করি, এটাই ছিল শামীম সিকদারকে লোকের ভয় পাওয়ার কারণ। ব্যক্তিগত পর্যায়ে ভয়টা ছিল যে এই নারী ঠিক অন্য সব নারীর মতো পিতৃতন্ত্রের বেঁধে দেওয়া নিয়মে জীবন যাপন করবেন আর একজন পুরুষ তাঁকে একান্ত বাধ্যগত স্ত্রী হিসেবে হজম করে ফেলবেন, সে রকম নারী নন। আর সামগ্রিকভাবে আমাদের পিতৃতান্ত্রিক সমাজও শামীম সিকদারকে ভয় পেত, বিশেষ করে আমাদের সমাজের রক্ষণশীল সাম্প্রদায়িক অংশটি। যখনই কোনো নারী পিতৃতন্ত্রের বেঁধে দেওয়া নিয়মের বাইরে নিজের জীবন যাপন করতে চেয়েছেন, তারা সেই নারীকে ভয় পেয়েছে। সেই ভীতির প্রকাশ পেয়েছে তাদের আক্রমণাত্মক ভূমিকায়। পশুর মতো। ভয় পেলে পশুরা কী করে? দাঁত-মুখ খিঁচিয়ে মুখ ব্যাদান করে তীব্র গর্জন করে এবং কখনো কখনো হিংস্র আক্রমণ করে উল্টো ভয় দেখায়। আমাদের সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীও শামীম সিকদারের সঙ্গে ঠিক এ কাজটি করেছে। ওরা শামীম সিকদারকে আক্রমণ করার চেষ্টা করেছে, হত্যা করার হুমকি দিয়েছে। কেননা ওরা শামীম সিকদারকে ভয় পেয়েছিল।
শামীম সিকদার কোনো অ্যাটম বোমা তৈরি করেননি, বিশাল কোনো রাজনৈতিক দল গঠন করেননি, বিস্ফোরক কোনো গ্রন্থ রচনা করেননি। তবু কেন তাঁকে এত ভয়? কেননা তিনি একান্ত নিজের মতো করে জীবন যাপন করতে চেয়েছেন। তিনি নিজের মেরুদণ্ড সোজা রেখে পিতৃতন্ত্রের বেঁধে দেওয়া নিয়মের মধ্যে নিজের জীবন আবদ্ধ রাখেননি। নারীর জন্য যে শৃঙ্খল পিতৃতন্ত্র তৈরি করেছে, সেই শৃঙ্খলে তিনি নিজেকে শৃঙ্খলিত করেননি। ভাস্কর হিসেবে কৃতিত্ব অর্জনের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর জীবনযাত্রার ধরন লোকে জেনেছে, শার্ট-প্যান্ট পরা, ছোট করে চুল ছেঁটে রাখা, ধূমপান করা, সাইকেল চালানো। আর এটাতেই রক্ষণশীল সাম্প্রদায়িক শক্তির ভূত সন্ত্রস্ত হয়েছে। ওদের আশঙ্কা জন্মেছে, এই যে শামীম সিকদার ‘পান থেকে খসিয়েছেন সংস্কারের চুন’, এতে আবার পিতৃতান্ত্রিক সমাজের শৃঙ্খল না ভেঙে পড়ে।
শামীম সিকদার দেশে থাকতে পারেননি। ২০০১ সালে মৌলবাদীদের হুমকির মুখে তিনি দেশত্যাগ করেছিলেন। দেশে ফিরেছিলেন এই কদিন আগে যেন নিজের দেশের মাটিতে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করার জন্য, শেষ শয্যাটা দেশের মাটিতে পাতবেন বলে। তিনি যেখানেই থাকুন, পিতৃতন্ত্রের বিরুদ্ধে এই যে ছোট একটি স্ফুলিঙ্গ হয়েছিল, শামীম সিকদার নামে এই স্ফুলিঙ্গটি কি নিভে গেছে? না, যায়নি।
শামীম সিকদারকে দৃশ্যত অনেকেই ভয় পেত। না, তিনি কাউকে মারধর করেছেন বা হত্যা করেছেন, সেসব আমরা শুনিনি। তিনি সঙ্গে অস্ত্র রাখতেন বলে একটা কথা প্রচলিত আছে, এটা কতটা সত্যি, সেটাও কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারে না। বলা হয়, বড় ভাই সিরাজ সিকদারের মৃত্যুর বদলা নেওয়ার জন্য শামীম একসময় সঙ্গে অস্ত্র নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন। এটা আমার কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না। কেননা বদলা নেওয়ার প্রবণতা থাকলে তিনি ঠিকই চরমপন্থী দলের সঙ্গে মিলে পাল্টা হামলা ধরনের কর্মসূচিতে অংশ নিতেন। আর নিতান্ত যদি অস্ত্র তাঁর কাছে থেকেও থাকে, তা ব্যবহার করে তিনি কাউকে কখনো ভীতি প্রদর্শন করেছেন বা হুমকি দিয়েছেন, সে রকম কোনো ঘটনার কথা আমরা জানি না। কিন্তু লোকে যে তাঁকে ভয় পেত খানিকটা, এ কথা সত্যি। শামীম সিকদারের প্রতি এ রকম ভীতির অনুভূতি আহমদ ছফারও ছিল।
আহমদ ছফা শামীম সিকদারের প্রেমে পড়েছিলেন। বিবাহও করতে চেয়েছিলেন। শামীম সিকদার ছফাকে জানতেন, তাঁর এ রকম আকাঙ্ক্ষাকে তিনি বিশেষ গুরুত্ব দেননি। ছফার ভীতির কথা লিখেছেন অসীম সাহা ‘আহমদ ছফা স্মারক গ্রন্থে’, ‘...হাঁটার এক ফাঁকে ছফা ভাই আমাকে হঠাৎ করেই বলে ফেললেন, বুঝলে অসীম, আমি বোধ হয় শামীমকে ভালোবেসে ফেলেছি। আমি বললাম, ভালো কথা। তিনি সঙ্গে সঙ্গে বললেন, “না না, কিন্তু আমি ওকে বিয়ে করব না।” আমি বললাম, “কেন?” তিনি বললেন, “ও আমাকে মেরেই ফেলবে।” না, ছফা নিশ্চয়ই আশঙ্কা করেননি যে শামীম সিকদার তাঁকে খুন করবেন। এটা ছিল নিতান্তই একটা ভীতির প্রকাশ, যে বিবাহ করে আরেকজনের ঘরে প্রথাগত নিয়মে সুশীলা গৃহবধূ হয়ে থাকার মতো নতজানু প্রকৃতির নারী শামীম সিকদার ছিলেন না।
অনুমান করি, এটাই ছিল শামীম সিকদারকে লোকের ভয় পাওয়ার কারণ। ব্যক্তিগত পর্যায়ে ভয়টা ছিল যে এই নারী ঠিক অন্য সব নারীর মতো পিতৃতন্ত্রের বেঁধে দেওয়া নিয়মে জীবন যাপন করবেন আর একজন পুরুষ তাঁকে একান্ত বাধ্যগত স্ত্রী হিসেবে হজম করে ফেলবেন, সে রকম নারী নন। আর সামগ্রিকভাবে আমাদের পিতৃতান্ত্রিক সমাজও শামীম সিকদারকে ভয় পেত, বিশেষ করে আমাদের সমাজের রক্ষণশীল সাম্প্রদায়িক অংশটি। যখনই কোনো নারী পিতৃতন্ত্রের বেঁধে দেওয়া নিয়মের বাইরে নিজের জীবন যাপন করতে চেয়েছেন, তারা সেই নারীকে ভয় পেয়েছে। সেই ভীতির প্রকাশ পেয়েছে তাদের আক্রমণাত্মক ভূমিকায়। পশুর মতো। ভয় পেলে পশুরা কী করে? দাঁত-মুখ খিঁচিয়ে মুখ ব্যাদান করে তীব্র গর্জন করে এবং কখনো কখনো হিংস্র আক্রমণ করে উল্টো ভয় দেখায়। আমাদের সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীও শামীম সিকদারের সঙ্গে ঠিক এ কাজটি করেছে। ওরা শামীম সিকদারকে আক্রমণ করার চেষ্টা করেছে, হত্যা করার হুমকি দিয়েছে। কেননা ওরা শামীম সিকদারকে ভয় পেয়েছিল।
শামীম সিকদার কোনো অ্যাটম বোমা তৈরি করেননি, বিশাল কোনো রাজনৈতিক দল গঠন করেননি, বিস্ফোরক কোনো গ্রন্থ রচনা করেননি। তবু কেন তাঁকে এত ভয়? কেননা তিনি একান্ত নিজের মতো করে জীবন যাপন করতে চেয়েছেন। তিনি নিজের মেরুদণ্ড সোজা রেখে পিতৃতন্ত্রের বেঁধে দেওয়া নিয়মের মধ্যে নিজের জীবন আবদ্ধ রাখেননি। নারীর জন্য যে শৃঙ্খল পিতৃতন্ত্র তৈরি করেছে, সেই শৃঙ্খলে তিনি নিজেকে শৃঙ্খলিত করেননি। ভাস্কর হিসেবে কৃতিত্ব অর্জনের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর জীবনযাত্রার ধরন লোকে জেনেছে, শার্ট-প্যান্ট পরা, ছোট করে চুল ছেঁটে রাখা, ধূমপান করা, সাইকেল চালানো। আর এটাতেই রক্ষণশীল সাম্প্রদায়িক শক্তির ভূত সন্ত্রস্ত হয়েছে। ওদের আশঙ্কা জন্মেছে, এই যে শামীম সিকদার ‘পান থেকে খসিয়েছেন সংস্কারের চুন’, এতে আবার পিতৃতান্ত্রিক সমাজের শৃঙ্খল না ভেঙে পড়ে।
শামীম সিকদার দেশে থাকতে পারেননি। ২০০১ সালে মৌলবাদীদের হুমকির মুখে তিনি দেশত্যাগ করেছিলেন। দেশে ফিরেছিলেন এই কদিন আগে যেন নিজের দেশের মাটিতে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করার জন্য, শেষ শয্যাটা দেশের মাটিতে পাতবেন বলে। তিনি যেখানেই থাকুন, পিতৃতন্ত্রের বিরুদ্ধে এই যে ছোট একটি স্ফুলিঙ্গ হয়েছিল, শামীম সিকদার নামে এই স্ফুলিঙ্গটি কি নিভে গেছে? না, যায়নি।
ডেস্কে বসে কপের খবর নেওয়া আর আকাশের চাঁদ ছোঁয়ার মধ্যে যেন তেমন কোনো পার্থক্য নেই। কিন্তু হঠাৎ মনে পড়ল আনিকা তাবাসসুমের কথা। এই মুহূর্তে তিনি আছেন আজারবাইজানের বাকুতে। এত এত অ্যাপের দুনিয়ায় তাঁকে ধরা কি খুব কঠিন? চেষ্টা করতেই তাঁর কাছ থেকে পাওয়া গেল উত্তর। আমরাও চটপট কথা বলে ফেললাম আনিকার সঙ্গে।
৫ দিন আগেবাংলাদেশে তৈরি পোশাক খাতে ৩৩ লাখ ১৭ হাজার ৩৯৭ জন শ্রমিক কাজ করছেন এখন। বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) বায়োমেট্রিক ডেটাবেইস থেকে পাওয়া গেছে এ তথ্য। এই বিশালসংখ্যক শ্রমিকের মধ্যে ১৭ লাখ ৩৪ হাজার ৪৫৯ জন বা ৫২ দশমিক ২৮ শতাংশ নারী...
৫ দিন আগেআরব অঞ্চলের দেশগুলোর ঐতিহ্যবাহী খেলা উটের দৌড়। একসময় আমাদের দেশে যেমন ঘোড়দৌড় হতো, বিষয়টি তেমনই। সেখানে শুধু ঘোড়ার বদলে থাকে উট। সে উট যাঁরা চালনা করেন, তাঁরা হলেন জকি। এত দিন জকি হিসেবে সৌদি আরবে ছিল পুরুষদের দাপট। দেশটিতে সেই প্রচলিত প্রথা অবশ্য ভেঙেছে ২০২২ সালে...
৫ দিন আগেঅ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে পেনিসিলিনের আবিষ্কার মানবজাতিকে স্বস্তি দিয়েছিল। তারপর আবিষ্কৃত হয় ছত্রাকজনিত রোগের বিরুদ্ধে কর্মক্ষম অ্যান্টিবায়োটিক নাইস্ট্যাটিন। এটির সঙ্গে যুক্ত আছে রাচেল ফুলার ব্রাউন এবং তাঁর সহযোগী এলিজাবেথ হ্যাজেনের নাম। এই দুজনের আবিষ্কারটি ছিল ছত্রাকজনিত রোগের বিরুদ্ধে প্রথম কার্যকর
৫ দিন আগে