নিজের কোনো বাড়ি নেই শাহনাজের

মো. তারেক রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
প্রকাশ : ১৯ জুলাই ২০২৩, ০৮: ৪১

প্রায় ২২ বছর আগে পাঁচ সন্তানসহ শাহনাজ পারভিনকে রেখে অন্যখানে বিয়ে করেন সেরাজুল ইসলাম। স্বামীর জমি ও বসতভিটা না থাকায় শিশুসন্তানদের নিয়ে শাহনাজ আশ্রয় নেন ভাশুরের একটি কুঁড়েঘরে। তাদের বাঁচিয়ে রাখতে দুই দশকের বেশি সময় ধরে শাহনাজ করে চলেছেন জীবনযুদ্ধ। ধীরে ধীরে প্রতিকূলতা জয় করেছেন। দিয়েছেন চায়ের দোকান। হয়েছেন ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত সদস্য। সন্তানদের স্বাবলম্বী করে তুলেছেন। সংক্ষেপে এই হলো চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা ইউনিয়ন পরিষদের ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য শাহনাজ পারভিনের গল্প।

কিন্তু ৪৮ বছরের জীবন তো আর সহজ-সরল পথে চলেনি। গরম চায়ের কেতলি থেকে কাপে চা ঢালতে ঢালতে শাহনাজ পারভিন একদিন সে গল্পই শোনালেন তাঁর দোকানে বসে। সে প্রায় ৩২ বছর আগের ঘটনা। শ্যামপুর ঘোনটোলা এলাকায় পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়েছিল তাঁর। তারপর সংসারে একে একে আসে পাঁচ সন্তান। সঙ্গে গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে আসে বিচ্ছেদ। পাঁচ সন্তান আর নিজে বাঁচাতে নেমে পড়েন জীবনসংগ্রামে।

শুরু করেন ঝালমুড়ির ব্যবসা। প্রথমে স্কুল-কলেজ এলাকায় ঘুরে ঘুরে ঝালমুড়ি বিক্রি করতেন শাহনাজ। সেখান থেকে কোনোরকমে সংসার চালিয়ে কিছু টাকা জমিয়ে শুরু করেন কাপড়ের ব্যবসা। শিবগঞ্জের পাইকারি বাজার থেকে কাপড় সংগ্রহ করে খুচরা বিক্রি করতেন বিভিন্ন গ্রামে। কাপড়ের ব্যবসা করে সংসার চালিয়ে পাঁচ ছেলেমেয়ের বিয়ে দেন তিনি। তাঁর বড় ছেলে আমির চাঁদ ব্যবসা করেন, দ্বিতীয় ছেলে নূর আমিন একই এলাকায় আরেকটি চায়ের দোকান চালান। মেয়ে লিসার বিয়ে দিয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায়। চতুর্থ ছেলে রায়হান পানির পাম্পের মিস্ত্রি। ছোট ছেলে সিয়াম মায়ের সঙ্গেই থাকে।

বছর তিনেক আগে কিছু টাকা জমিয়ে সাহাপাড়া বাজারে মাসিক ১ হাজার ৬০০ টাকায় জায়গা ভাড়া নিয়ে একটি টিনের ঘর তুলে চায়ের দোকান শুরু করেন শাহনাজ। তখন থেকে এলাকার মানুষ তাঁকে নির্বাচন করার জন্য অনুরোধ শুরু করেন। এলাকাবাসীর অনুরোধেই প্রচারণা শুরু করেন। বিনয়ী ও মিষ্টভাষী হিসেবে পরিচিত শাহনাজ দ্রুতই মানুষের মনে জায়গা করে নেন। পাঁচজন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে পরাজিত করে নির্বাচিত হন ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত সদস্য হিসেবে।

শাহনাজ জানান, যেদিন বাইরে মিটিং থাকে, সেদিন খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে দোকান খুলে ঘণ্টাখানেক বিক্রিবাট্টা করে মিটিংয়ে চলে যান। কাজ শেষে আবার বিকেলে দোকান খুলতে হয়। সেখান বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আসে লোকজন। চা বিক্রির পাশাপাশি সেখান থাকেই চারিত্রিক সনদসহ বিভিন্ন জরুরি কাগজপত্র স্বাক্ষর করে লোকজনকে দেন তিনি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত