শাওন মাহমুদ
১৯২৯ সালের ৩ মে জুরুর জন্ম। জুরু, অর্থাৎ জাহানারা ইমাম। রুমী ও জামী—দুই সন্তান বড় হওয়ার পর তাদের কাছ থেকে জন্মদিনে চমকিত হতে ভালোবাসতেন তিনি। প্রতিবছরই রুমী আর জামী একসঙ্গে মাকে তাই জন্মদিনে বিস্মিত করার উপাদান খুঁজে খুঁজে বের করে নিত। তাদের দুজনের মা ঘর সাজাতে রজনীগন্ধা ফুল পছন্দ করতেন আর উপহার পেতে ভালোবাসতেন গোলাপ ফুল। নিজ বাড়ির পোর্চের ওপর উঠে যাওয়া গাঢ় হাওয়াই মিঠাই রঙা বাগানবিলাস ফুলের ঝাড় ছিল তাঁর প্রিয়।
৩ মে ১৯৭১। জাহানারা ইমামের জন্মদিনেই রুমী সবচেয়ে বড় চমক দিয়েছিল তাঁকে। মুক্তিযুদ্ধে যাচ্ছে রুমী, বাঁচা-মরার লড়াই, নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াইয়ে যোগ দিতে রুমী যাচ্ছে। বুকের পাঁজরের হাড় চেপে ধরা বেদনায়, একেবারে অজানা, খোঁজের বাইরে, শর্তহীন ছাড়াছাড়িতে প্রখর শক্তিশালী এক জননীর সঙ্গে আমাদের পরিচয় হওয়ার প্রথম পদক্ষেপটাও তাঁর জন্মদিন থেকে শুরু।
সেই বছর দুই ভাই তাঁকে চমকে দেওয়ার জন্য কোনো আয়োজন করেনি। ২৫ মার্চের পর বাসার কারোরই মন ভালো ছিল না। চারদিকে যুদ্ধের কান্নার গুমরে ওঠা বাড়াবাড়ি। তারপরও সকাল সকাল দরজায় অনুমতি নিয়ে দুজন ঘরে ঢুকেছিল। রুমীর হাতে ছিল নিজস্ব লাইব্রেরি থেকে তুলে আনা লিয়ন উরিসের লেখা বই ‘মাইলা ১৮’ আর জামীর হাতে বাগান থেকে সদ্য তোলা একটা আধফোটা কালো গোলাপ, যার নাম বনি প্রিন্স। রুমী হাতের বইটি মাকে পড়তে দিয়ে বলেছিল, এই বইয়ে যা লেখা আছে, দেশ ও জাতির নাম বদলে দিলে তা অবিকল বাংলাদেশের আর বাঙালির দুঃখের কাহিনি, প্রতিরোধের কাহিনি, বাঁচা-মরার লড়াইয়ের কাহিনি বলে মনে হবে। আর জামী গোলাপটা হাতে দিতেই রুমী আবারও বলে উঠেছিল, ‘আমাদের স্বাধীনতার প্রতীক। এ রকম রঙের রক্ত ঝরিয়ে তবে স্বাধীনতার রাজপুত্র আসবে।’
না, রুমী আর ফিরে আসেনি। রুমীর লাশ কোথাও পাওয়া যায়নি। রুমীর মৃত্যুদিন কবে জানা হয়নি। ২৯ আগস্ট রুমীকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বেঁচে থাকার খবর ছিল রুমীর। হায় কালো গোলাপ বনি প্রিন্স, আধফোটা, মখমলের মতো মসৃণ, পুরু পাপড়ির গোলাপ। জননীর জন্মদিনে শেষ উপহার দিয়েছিল সে। তার বনি প্রিন্স, স্বাধীনতার রাজপুত্র নির্মম অত্যাচারে রক্ত ঝরিয়ে কোথায় হারিয়ে গিয়েছিল, কেউ জানে না।
শহীদ রুমীর জন্য বনি প্রিন্সের চারা খুঁজে পাইনি এখনো। ছাদবাগানে এনেছিলাম জননীর প্রিয় রঙের বাগানবিলাস, গাঢ় হাওয়াই মিঠাই রঙা ফুলের চারা। চৈত্র থেকে ফুটতে শুরু করে এই বাগানবিলাস, বৈশাখের মাঝামাঝি পুরো ঝাড় ফুলে ফুলে দুলে ওঠে। আজ ৩ মে শহীদজননীর জন্মদিনে প্রিয় ফুল বাগানবিলাসের প্রতিটি পাপড়ি তাঁকে জানায় লম্বা অভিবাদন। প্রতিটি লতার মাঝে কাঁটাগুলো জানান দেয় তাঁর স্বাধীনতার রাজপুত্রকে হারানোর বেদনার কথা। সবুজ পাতাগুলো বারবার জানিয়ে যায়, তাঁদের আত্মত্যাগ আমাদের জন্য, আমাদের ভালো থাকার জন্য। আর আমি বলি, শুভ জন্মদিন জুরু। অভিবাদন জানাই তোমাকে।
শাওন মাহমুদ
শহীদ আলতাফ মাহমুদের কন্যা
১৯২৯ সালের ৩ মে জুরুর জন্ম। জুরু, অর্থাৎ জাহানারা ইমাম। রুমী ও জামী—দুই সন্তান বড় হওয়ার পর তাদের কাছ থেকে জন্মদিনে চমকিত হতে ভালোবাসতেন তিনি। প্রতিবছরই রুমী আর জামী একসঙ্গে মাকে তাই জন্মদিনে বিস্মিত করার উপাদান খুঁজে খুঁজে বের করে নিত। তাদের দুজনের মা ঘর সাজাতে রজনীগন্ধা ফুল পছন্দ করতেন আর উপহার পেতে ভালোবাসতেন গোলাপ ফুল। নিজ বাড়ির পোর্চের ওপর উঠে যাওয়া গাঢ় হাওয়াই মিঠাই রঙা বাগানবিলাস ফুলের ঝাড় ছিল তাঁর প্রিয়।
৩ মে ১৯৭১। জাহানারা ইমামের জন্মদিনেই রুমী সবচেয়ে বড় চমক দিয়েছিল তাঁকে। মুক্তিযুদ্ধে যাচ্ছে রুমী, বাঁচা-মরার লড়াই, নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াইয়ে যোগ দিতে রুমী যাচ্ছে। বুকের পাঁজরের হাড় চেপে ধরা বেদনায়, একেবারে অজানা, খোঁজের বাইরে, শর্তহীন ছাড়াছাড়িতে প্রখর শক্তিশালী এক জননীর সঙ্গে আমাদের পরিচয় হওয়ার প্রথম পদক্ষেপটাও তাঁর জন্মদিন থেকে শুরু।
সেই বছর দুই ভাই তাঁকে চমকে দেওয়ার জন্য কোনো আয়োজন করেনি। ২৫ মার্চের পর বাসার কারোরই মন ভালো ছিল না। চারদিকে যুদ্ধের কান্নার গুমরে ওঠা বাড়াবাড়ি। তারপরও সকাল সকাল দরজায় অনুমতি নিয়ে দুজন ঘরে ঢুকেছিল। রুমীর হাতে ছিল নিজস্ব লাইব্রেরি থেকে তুলে আনা লিয়ন উরিসের লেখা বই ‘মাইলা ১৮’ আর জামীর হাতে বাগান থেকে সদ্য তোলা একটা আধফোটা কালো গোলাপ, যার নাম বনি প্রিন্স। রুমী হাতের বইটি মাকে পড়তে দিয়ে বলেছিল, এই বইয়ে যা লেখা আছে, দেশ ও জাতির নাম বদলে দিলে তা অবিকল বাংলাদেশের আর বাঙালির দুঃখের কাহিনি, প্রতিরোধের কাহিনি, বাঁচা-মরার লড়াইয়ের কাহিনি বলে মনে হবে। আর জামী গোলাপটা হাতে দিতেই রুমী আবারও বলে উঠেছিল, ‘আমাদের স্বাধীনতার প্রতীক। এ রকম রঙের রক্ত ঝরিয়ে তবে স্বাধীনতার রাজপুত্র আসবে।’
না, রুমী আর ফিরে আসেনি। রুমীর লাশ কোথাও পাওয়া যায়নি। রুমীর মৃত্যুদিন কবে জানা হয়নি। ২৯ আগস্ট রুমীকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বেঁচে থাকার খবর ছিল রুমীর। হায় কালো গোলাপ বনি প্রিন্স, আধফোটা, মখমলের মতো মসৃণ, পুরু পাপড়ির গোলাপ। জননীর জন্মদিনে শেষ উপহার দিয়েছিল সে। তার বনি প্রিন্স, স্বাধীনতার রাজপুত্র নির্মম অত্যাচারে রক্ত ঝরিয়ে কোথায় হারিয়ে গিয়েছিল, কেউ জানে না।
শহীদ রুমীর জন্য বনি প্রিন্সের চারা খুঁজে পাইনি এখনো। ছাদবাগানে এনেছিলাম জননীর প্রিয় রঙের বাগানবিলাস, গাঢ় হাওয়াই মিঠাই রঙা ফুলের চারা। চৈত্র থেকে ফুটতে শুরু করে এই বাগানবিলাস, বৈশাখের মাঝামাঝি পুরো ঝাড় ফুলে ফুলে দুলে ওঠে। আজ ৩ মে শহীদজননীর জন্মদিনে প্রিয় ফুল বাগানবিলাসের প্রতিটি পাপড়ি তাঁকে জানায় লম্বা অভিবাদন। প্রতিটি লতার মাঝে কাঁটাগুলো জানান দেয় তাঁর স্বাধীনতার রাজপুত্রকে হারানোর বেদনার কথা। সবুজ পাতাগুলো বারবার জানিয়ে যায়, তাঁদের আত্মত্যাগ আমাদের জন্য, আমাদের ভালো থাকার জন্য। আর আমি বলি, শুভ জন্মদিন জুরু। অভিবাদন জানাই তোমাকে।
শাওন মাহমুদ
শহীদ আলতাফ মাহমুদের কন্যা
ডেস্কে বসে কপের খবর নেওয়া আর আকাশের চাঁদ ছোঁয়ার মধ্যে যেন তেমন কোনো পার্থক্য নেই। কিন্তু হঠাৎ মনে পড়ল আনিকা তাবাসসুমের কথা। এই মুহূর্তে তিনি আছেন আজারবাইজানের বাকুতে। এত এত অ্যাপের দুনিয়ায় তাঁকে ধরা কি খুব কঠিন? চেষ্টা করতেই তাঁর কাছ থেকে পাওয়া গেল উত্তর। আমরাও চটপট কথা বলে ফেললাম আনিকার সঙ্গে।
৫ দিন আগেবাংলাদেশে তৈরি পোশাক খাতে ৩৩ লাখ ১৭ হাজার ৩৯৭ জন শ্রমিক কাজ করছেন এখন। বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) বায়োমেট্রিক ডেটাবেইস থেকে পাওয়া গেছে এ তথ্য। এই বিশালসংখ্যক শ্রমিকের মধ্যে ১৭ লাখ ৩৪ হাজার ৪৫৯ জন বা ৫২ দশমিক ২৮ শতাংশ নারী...
৫ দিন আগেআরব অঞ্চলের দেশগুলোর ঐতিহ্যবাহী খেলা উটের দৌড়। একসময় আমাদের দেশে যেমন ঘোড়দৌড় হতো, বিষয়টি তেমনই। সেখানে শুধু ঘোড়ার বদলে থাকে উট। সে উট যাঁরা চালনা করেন, তাঁরা হলেন জকি। এত দিন জকি হিসেবে সৌদি আরবে ছিল পুরুষদের দাপট। দেশটিতে সেই প্রচলিত প্রথা অবশ্য ভেঙেছে ২০২২ সালে...
৫ দিন আগেঅ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে পেনিসিলিনের আবিষ্কার মানবজাতিকে স্বস্তি দিয়েছিল। তারপর আবিষ্কৃত হয় ছত্রাকজনিত রোগের বিরুদ্ধে কর্মক্ষম অ্যান্টিবায়োটিক নাইস্ট্যাটিন। এটির সঙ্গে যুক্ত আছে রাচেল ফুলার ব্রাউন এবং তাঁর সহযোগী এলিজাবেথ হ্যাজেনের নাম। এই দুজনের আবিষ্কারটি ছিল ছত্রাকজনিত রোগের বিরুদ্ধে প্রথম কার্যকর
৫ দিন আগে