Ajker Patrika

একজন সাহসী জীবনযোদ্ধা

ডেস্ক রিপোর্ট
আপডেট : ১১ অক্টোবর ২০২৩, ০৮: ৩৯
একজন সাহসী জীবনযোদ্ধা

১৯৭১ সালে আকাশবাণী থেকে প্রচার করা হলো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. নীলিমা ইব্রাহিমকে হত্যা করা হয়েছে। 

যে সময়ে এই খবর প্রকাশিত হয়েছিল, সে সময় তিনি ছিলেন শিক্ষার্থীদের অন্যতম আশ্রয়। বিশ্ববিদ্যালয়পাড়ায় থাকার সময় তাঁর বাড়ি ছিল বহু শিক্ষার্থীর অস্থায়ী আস্তানা। আজকের বহু নামীদামি নেতা তখন ছিলেন ছাত্রনেতা। অধ্যাপক নীলিমা ইব্রাহিম ছিলেন অত্যন্ত রাজনীতি সচেতন। উনসত্তরের ছাত্র আন্দোলন, ছয় দফা এবং এগারো দফার দিনগুলোয় তিনি বিনা দ্বিধায় তাঁর ছাত্রদের সাহায্য করে গেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যাতে বিভ্রান্ত হয়ে না পড়ে, সে কারণে হত্যার গুজব রটায় যুদ্ধাবস্থাতেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নীলিমা ইব্রাহিম ঢাকায় ফিরে আসেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর তৎপরতা বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

বাংলায় নারী জাগরণ এবং ক্ষমতায়নে যাঁরা কাজ করে গেছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম ড. নীলিমা ইব্রাহিম। তিনি একাধারে একজন শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক ও সমাজকর্মী।

স্বাধীনতার পরে বঙ্গবন্ধু সরকার কর্তৃক নারী পুনর্বাসন বোর্ড গঠিত হলে নীলিমা ইব্রাহিম বোর্ডের একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত নারীদের বীরাঙ্গনা উপাধি দেওয়া হয়। বীরাঙ্গনাদের জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে খোলা হয়েছিল পুনর্বাসন কেন্দ্র। সেখানে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে পরবর্তী সময়ে তিনি প্রকাশ করেন ‘আমি বীরাঙ্গনা বলছি’ বইটি। পুনর্বাসন কেন্দ্রের সাতজনের সাক্ষাৎকার নিয়েই রচিত হয় এই বই। বইটি যুদ্ধের সময় চলা নারীদের ওপর নির্যাতনের প্রতিচ্ছবি।

অধ্যাপক ড. নীলিমা ইব্রাহিম একাধারে একজন শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক ও সমাজকর্মী। 

অধ্যাপক ড. নীলিমা ইব্রাহিম দায়িত্ব পালন করেছেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে। তবে এ কাজের জন্য তিনি কোনো পারিশ্রমিক নেননি। ১৯৭৪ সালে তিনি বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সে সময় বাংলা একাডেমিতেও বিশৃঙ্খলতার কমতি ছিল না, তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সেসব প্রতিবন্ধকতা সামলে নিয়েছিলেন।

১৯২১ সালের ১১ অক্টোবর বাগেরহাটের মূলঘর গ্রামের এক জমিদার পরিবারে জন্ম নীলিমা ইব্রাহিমের। তাঁর আসল নাম নীলিমা রায় চৌধুরী। ১৯৪৫ সালে তাঁর বিয়ে হয় তৎকালীন ইন্ডিয়ান আর্মি মেডিকেল কর্পসের ক্যাপ্টেন ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিমের সঙ্গে। বিয়ের পরে তাঁর নাম হয় নীলিমা ইব্রাহিম। ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন তিনি। তিনি খুলনা করোনেশন গার্লস স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন চারটি বিষয়ে লেটার নিয়ে। পরবর্তী সময়ে তিনি কলকাতার ভিক্টোরিয়া ইনস্টিটিউট থেকে আইএ এবং কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে বিএবিটি শেষ করেন। তারপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ও সাহিত্যে প্রথম শ্রেণিতে এমএ পাস করেন। ১৯৫৯ সালে প্রথম বাঙালি নারী হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন নীলিমা ইব্রাহিম।

সমাজসেবা ও সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার কারণে অনেক সম্মাননাও পেয়েছেন নীলিমা। এগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, মাইকেল মধুসূদন পুরস্কার, লেখিকা সংঘ পুরস্কার, বেগম রোকেয়া পদক, বঙ্গবন্ধু পুরস্কার, থিয়েটার সম্মাননা পদক এবং একুশে পদক। ২০০২ সালের ১৮ জুন ৮১ বছর বয়সে মারা যান ড. নীলিমা ইব্রাহিম।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মিডিয়া ছুটায় দেব, চেনো আমাদের’—সাংবাদিককে হুমকি কুড়িগ্রামের এসপির

মেঘনা আলম ‘নিরাপত্তা হেফাজতে’, কারণ জানাল পুলিশ

তিন সুপারস্টারেও ফ্লপ, ৩৪ বছর আগে যে সর্বভারতীয় ছবি প্রযোজককে দেউলিয়া বানিয়েছিল

ইসলামপুর বিএনপির সহসভাপতি যোগ দিলেন জামায়াতে

বান্দরবান, মণিপুর, মিজোরাম ও রাখাইন নিয়ে খ্রিষ্টান রাষ্ট্র করার ষড়যন্ত্র চলছে: বজলুর রশীদ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত