হিজড়াদের নিয়ে স্বপ্ন দেখেন সুলতানা

মুহাম্মদ শফিকুর রহমান
প্রকাশ : ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৭: ৪৭

অনার্স প্রথম বর্ষ পরীক্ষার তিন মাস আগে তাঁর বিয়ে হয়। বিয়ের পর আমাদের নারীদের গৃহিণী হয়ে সংসারের কাজে হারিয়ে যাওয়ার যে ইতিহাস আছে, সে পথে হাঁটেননি তিনি। লেখাপড়া চালিয়ে গেছেন। স্নাতক শেষ হওয়ার আগে প্রথম সন্তানের মা হন। কিন্তু লড়াকু এই নারী সবকিছু সামলে নোয়াখালী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক পর্বে ১৫তম স্থান অধিকার করেন। এরপর মাস্টার্স শেষে দ্বিতীয় সন্তানের মা হন তিনি। আমাদের এই চরিত্রের নাম সুলতানা পারভীন। নোয়াখালীর মানুষ হলেও তিনি এখন সপরিবার বাস করেন ঢাকার মিরপুরে। 

স্বামী, সন্তান নিয়ে ভালোই দিন কাটছিল তাঁর। কিন্তু কোথায় যেন একটা শূন্যতা ছিল। কিছু একটা করতে চাইত মন। পত্র-পত্রিকায় ফ্রিল্যান্সারদের সাফল্যের গল্প পড়তেন তিনি। সেখান থেকেই ভাবনা এল, ফ্রিল্যান্সিং করতে পারলে মন্দ হয় না। ২০১২ সালের জুলাই মাসে দুদিনের একটা সেমিনারে যোগ দেন সুলতানা। সে বছরের অক্টোবর মাসে এসইও কোর্সে ভর্তি হন। নভেম্বরে মার্কেট প্লেসে অ্যাকাউন্ট করার ১২ দিনের মাথায় কাজ পান তিনি। 

মধ্য বয়সে শুরু
বিবাহিত জীবনের ২০ বছর পর ৩৮ বছর বয়সে সুলতানা ফ্রিল্যান্সিংয়ের জগতে আসেন। দুই বছর একটা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন তিনি। কিন্তু মন বসেনি। বাইরে চাকরির চেয়ে ঘরে বসে নিজের মতো করে কাজ করতে পারাটা ভালো লেগে যাওয়ায় চাকরি ছেড়ে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করেন সুলতানা। 

পাঁচ ডলার প্রথম আয়
সুলতানার প্রথম আয় ছিল মাত্র ৫ ডলার। কাজটা ছিল ইয়াহু আনসারের। বর্তমানে সুলতানার মাসিক গড় আয় প্রায় ৭০ হাজার টাকা। 

কাজের গল্প
প্রথম দিকে তিনি এসইও সম্পর্কিত কাজ করতেন। সে সময় তিনি ইয়াহু আনসার, ফোরাম পোস্ট, লিংক বিল্ডিং ইত্যাদির কাজ করতেন। রেসিপি লেখা, বই রিভিউ, চাকরির জন্য কভার লেটার লেখার মতো কাজের জন্য তাঁর জুড়ি নেই। তবে বর্তমানে শুধু অনুবাদের কাজ করছেন তিনি। কাজের ফাঁকে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সেমিনারে সুলতানা পারভীনের ডাক পড়ে নতুনদের ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে প্রাথমিক ধারণা দেওয়ার জন্য। তিনি নৌবাহিনীসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অনেক সেমিনার করেছেন। কনটেন্ট রাইটিং নিয়ে তাঁর একটি অনলাইন কোর্স আছে ইনস্ট্রাক্টর ডট নেটে। 

আনন্দ কাব্য
২০১৪ সালে সুলতানা বেসিস পুরস্কার পান। এটি তাঁর ফ্রিল্যান্সিং জীবনের অন্যতম আনন্দের ঘটনা। তরুণদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে তিনি এ পুরস্কার পেয়েছিলেন। ডিআইইউ থেকে পাওয়া ফ্রিল্যান্সার মিট অ্যাওয়ার্ড তাঁর আরেকটি পুরস্কার। তাঁর ভাবতে ভালো লাগে, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্য–পুস্তক বোডের নবম-দশম শ্রেণির ক্যারিয়ার শিক্ষা বইয়ে তাঁকে নিয়ে সৃজনশীল প্রশ্ন রয়েছে! 

ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য ৫ টিপস
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে সুলতানা পারভীন অভিজ্ঞ হয়েছেন। সে আলোকেই জানালেন নতুনদের জন্য পরামর্শ। বললেন, ফ্রিল্যান্সিংয়ে ভালো করতে পাঁচটি গুণ থাকতে হবে—ধৈর্য, ইংরেজি ভাষায় মোটামুটি দক্ষতা, নির্দিষ্ট কাজে দক্ষ, কম্পিউটার জ্ঞান এবং বিনয় ও সততা।  

সফলতার গোপন রহস্য
‘প্রতিনিয়ত শিখছি। আমি মনে করি, এখনো অনেক কিছু জানি না। নতুন কিছু জানতে খুব পছন্দ করি। অনেকে বলেন, আমার প্রচুর ধৈর্য। হয়তো এটাই মূল শক্তি।’ জানিয়েছেন সুলতানা পারভীন।

ফ্রিল্যান্সিংয়ের বাইরে
ফ্রিল্যান্সিংয়ের বাইরে ক্র্যাফটিং, হ্যান্ড পেইন্ট, লেখালেখি সুলতানার শখের কাজ। কিছু অসহায় শিশুর পড়াশোনার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন তিনি। এর বাইরে আরও কিছু কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও সেগুলোর কোনো কিছু জানাতে নারাজ তিনি।

ভবিষ্যৎ ভাবনা
তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে কাজে লাগাতে চান সুলতানা। সে জন্য ভবিষ্যতে একটি ক্র্যাফট কারখানা প্রতিষ্ঠার ইচ্ছা আছে তাঁর। এ ছাড়া একটি বৃদ্ধাশ্রম তৈরিরও স্বপ্ন দেখেন সুলতানা পারভীন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত