নূরুননবী শান্ত
পৃথিবীতে উৎপাদন ঐতিহ্য যে নারীর হাতে গড়ে উঠেছে, সেই তথ্য আজ সর্বজনবিদিত। সভ্যতার সূচনায় নারীই প্রকৃতি চষে পরিবারের খাদ্যসংস্থানের নিশ্চয়তা বিধান করেছিলেন। উপমহাদেশীয় পুরাণে প্রকৃতি, বনদেবী, অসুর-সংহারী ইত্যাদি রূপে সম্মানিত করা হয় নারীকে। আজ যখন বৈশ্বিক উন্নয়ন লক্ষ্যের সাপেক্ষে বাংলাদেশ প্রকৃতিবিরুদ্ধ প্রবৃদ্ধিকেন্দ্রিক বৈষম্যপূর্ণ উন্নয়ন ও অপরিকল্পিত নগরায়ণের নগদ আকর্ষণের দিকে ঝুঁকেছে, তখনো নারীই রক্ষা করে চলেছেন স্থানীয় ঐতিহ্যের সঙ্গে ন্যূনতম সম্পর্ক।
ঐতিহ্য প্রবাহিত হয় পরম্পরায়। দুঃখজনক হলেও সত্য যে আমাদের শিক্ষা, বৈষম্যপূর্ণ অর্থনৈতিক রূপান্তর ধারা, ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতি—সবই পরম্পরার সুতা ছিন্ন করে কায়েম করতে ব্যস্ত শিকড়-বিচ্ছিন্ন পুঁজির প্রতিযোগিতাময় ব্যক্তিসর্বস্ব সমাজ। সেই ব্যক্তি এতটাই স্বতন্ত্র যে ঐতিহ্য তার কাছে নিতান্ত পশ্চাৎপদ ধারণা ও পরিত্যাজ্য। এই প্রবণতা আত্মঘাতী, আত্মপরিচয়বিনাশী। কেননা ঐতিহ্যই চিহ্নিত করে জাতি, গোষ্ঠী, গোত্র, সম্প্রদায় তথা সমষ্টির আত্মপরিচয়। গভীরভাবে লক্ষ করলে বোঝা যায়, বাঙালির এবং বাংলাদেশে বসবাসরত অবাঙালি জাতিসত্তাগুলোর আত্মপরিচয়ের বাহক ঐতিহ্য চর্চার প্রধান ও দৃশ্যমান কুশীলব নারীরাই। প্রাচীনকাল, নিকট অতীত এবং বিপর্যস্ত বর্তমানে নারীই ঐতিহ্যের বাহক, চর্চাকারী এবং সঞ্চারক।
আবহমান বিমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের পণ্য নকশিকাঁথা অথবা শীতলপাটি বুননশৈলী, বাংলাদেশের অঞ্চলভেদে প্রচলিত খাদ্যসংস্কৃতির রূপ ও স্বাদ বৈচিত্র্যময় বৈশিষ্ট্য, গৃহস্থালি বাসনপত্র থেকে শুরু করে বিশেষ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন পোশাক এবং অলংকারসহ বিবিধ সাংসারিক উপকরণ সংরক্ষণ, বিয়ের বিশিষ্ট আচারসহ বিয়ের গীত, জন্ম ও মৃত্যুর সঙ্গে জড়িত পালনীয় আচার ইত্যাদির স্রষ্টা, চর্চাকারী, সংরক্ষণকারী এবং সঞ্চারক মূলত নারী। প্রতি গ্রামে, প্রতি গৃহে নিজস্ব ঐতিহ্য-প্রেম, সৃষ্টিশীলতা ও উৎপাদনশীলতার স্বপ্রণোদিত প্রয়োগে তাঁরাই টিকিয়ে রেখেছেন বাঙালির আত্মপরিচয় প্রকাশক ঐতিহ্য-চক্র। এই ঐতিহ্য-চক্রের নিরিখেই নির্ণয় করা যায় যেকোনো রাষ্ট্রসীমায় থাকা ভাষা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ঐক্যে জারিত বাসিন্দাদের জাতিগত, নৃগোষ্ঠীগত ও সামাজিক পরিচয়-স্বাতন্ত্র্য।
২০২২ সালের ‘আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস’-এ জাতিসংঘ মহাসচিব ঐতিহ্যগত জ্ঞান সংরক্ষণ ও বিকাশে ‘আদিবাসী’ নারীদের অবদানের গুরুত্ব বিশেষভাবে তুলে ধরেছিলেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ৫০টির বেশি ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ক্ষেত্রেও দেখা যায়, নারীরাই পরম্পরাগতভাবে তাঁদের খাদ্য, প্রাকৃতিক ওষুধপত্র, ভাষা, সংস্কৃতিসহ প্রায় সব ঐতিহ্যগত জ্ঞান ও চর্চার সংরক্ষক। যেমন গারো সম্প্রদায়ের নারীরা আজও সংরক্ষণ করে চলেছেন তেল-মসলাবিহীন মাছ-মাংস (গপ্পা) রান্নার নিজস্ব পদ্ধতি। সাঁওতালসহ বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ক্ষুদ্র জাতিসত্তার নারীদের হাতেই টিকে আছে তাঁদের গৃহ-আলপনার ঐতিহ্য। বস্তুগত, বিমূর্ত ও প্রাকৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর নারীরাই অগ্রবর্তী ভূমিকা পালন করে চলেছেন।
অথচ পরিচয়-স্বাতন্ত্র্যের প্রকৃত নির্মাতা নারীরা আজ বিভিন্নভাবে ঐতিহ্য-বিচ্ছিন্ন প্রগতির শিকার। সমাজ যেমন নারীর সংগীত-ঐতিহ্য, গীতপ্রবণতাসহ রুদ্ধ করতে চায় ঐতিহ্যিক সৃষ্টিশীলতা, তেমনি শিকড়-বিচ্ছিন্ন বিভ্রান্ত প্রগতিবাদীও ঐতিহ্য লালন ও চর্চাকে প্রগতি-প্রতিবন্ধক মনে করে। দুর্যোগপ্রবণ বাংলাদেশের যেকোনো আসন্ন জরুরি পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে, গ্রামে কিংবা নগরে, পরিবারের সব বয়সী সদস্যদের খাদ্য-বস্ত্র-জ্বালানি-জল সংরক্ষণে সব সময় সচেষ্ট থাকেন নারী। এটাই ঐতিহ্যগতভাবে হয়ে আসছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে চিড়া, মুড়ি, গুড়, আচার ইত্যাদি জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার উপযুক্ত খাদ্য প্রস্তুত ও সংরক্ষণের ঐতিহ্য নারীর কাছ থেকে ছিনতাই করেছে করপোরেটের কালো হাত। ব্যবসা বিকাশের নামে এ ধরনের ঐতিহ্য ছিনতাই নারীর স্বাভাবিক ঐতিহ্য চর্চা ও সংরক্ষণ সক্ষমতা হত্যার শামিল।
নারীর শস্যবীজ সংরক্ষণ ঐতিহ্যেও থাবা বসিয়েছে পুঁজিবাদী করপোরেটের লম্বা হাত। অথচ বৈচিত্র্যময় দেশি ধানবীজ ও পাটবীজ থেকে শুরু করে লাউ, মিষ্টিকুমড়া, করলা, ঝিঙে, সরিষা, মসুর, পুঁইশাক, লালশাক, ডাঁটা, ঢ্যাঁড়সসহ সব রকমের স্থানীয় সবজি, শস্য ও ফল বীজ ঐতিহ্যগতভাবে নারীরাই সংরক্ষণ করে এসেছেন। বীজ বাছাই ও শোধন থেকে শুরু করে চারা তোলা, হাঁস-মুরগি পালন, দুধ দোহন, বসতবাড়িতে ফুল চাষ, নকশি পাখা তৈরি, মাটির পুতুল, কাপড়ের পুতুল, পাটের শিকাসহ ঐতিহ্যবাহী কুটিরশিল্পভুক্ত শত দরকারি ও শৌখিন পণ্য সৃষ্টির ঐতিহ্য পরম্পরাগতভাবে নারীরাই বহন করেছেন এবং করে চলেছেন। বাংলাদেশের বিমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বাউলগান, পালাগান, কবিগান, কীর্তন, বিষহরার গান, পটগান ইত্যাদিতে নারীর অংশগ্রহণ পরম্পরাগতভাবে দৃশ্যমান। উত্তরবঙ্গের বিয়ের গীত কিংবা হাওরের ধামাইল গানের স্রষ্টা ও চর্চাকারী কেবল নারীরাই। নদীমাতৃক বাংলাদেশের বেদে সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য সাপ খেলা থেকে শুরু করে অন্যান্য জীবিকায়ন কার্যক্রমের প্রধান ভূমিকায় নারীকেই অবতীর্ণ হতে দেখা যায়।
এরপরও এটাই বাস্তবতা যে বাংলাদেশের মূলধারার জনগোষ্ঠীই হোক বা ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জনগোষ্ঠী—সব প্রেক্ষাপটেই নারীর ওপর যুগ যুগ ধরে চলছে পারিবারিক, সামাজিক, সাম্প্রদায়িক, এমনকি রাষ্ট্রীয় বৈষম্য, বঞ্চনা ও নিপীড়ন। প্রযুক্তির ঝাঁ-চকচকে অগ্রগতি ও নারী-প্রগতির বাকসর্বস্ব উন্নতি সত্ত্বেও সর্বজনীন পিতৃতন্ত্রের দানব নারীকে প্রান্তিক বিবেচনা করতে চায়। নারীর প্রতি চলমান প্রতিকারহীন আধিপত্যবাদী, দমনমূলক আচরণ ও সহিংসতার মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব আমাদের জাতিগত পরিচয় স্বাতন্ত্র্যের নির্ণয়ক ঐতিহ্যকে ফেলে দিচ্ছে বিলুপ্তি ঝুঁকির মুখে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, ঐতিহ্যহীন হওয়ার প্রবণতা পুরো জাতিকে পরিচয়হীন করে দেবে।
সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের মানুষের পরিচয়-স্বাতন্ত্র্য-সূচক ঐতিহ্য সংরক্ষণে নারীর চিরায়ত ভূমিকাকে প্রণোদিত করার উপযুক্ত সামাজিক-অর্থনৈতিক সংহতি নির্মাণে মনোযোগী হওয়াই হবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের প্রধান কর্তব্য। বাংলাদেশের বাঙালি ও সব বৈচিত্র্যময় জাতিসত্তার আত্মপরিচয়বাহী ঐতিহ্যের স্বরূপ সমুন্নত রাখতে, বিশেষ করে ঐতিহ্য সুরক্ষায় নারীর ভূমিকার কাঠামোগত স্বীকৃতি হতে পারে এক কার্যকর পদক্ষেপ।
লেখক: গল্পকার, ফোকলোর তাত্ত্বিক ও অনুবাদক
পৃথিবীতে উৎপাদন ঐতিহ্য যে নারীর হাতে গড়ে উঠেছে, সেই তথ্য আজ সর্বজনবিদিত। সভ্যতার সূচনায় নারীই প্রকৃতি চষে পরিবারের খাদ্যসংস্থানের নিশ্চয়তা বিধান করেছিলেন। উপমহাদেশীয় পুরাণে প্রকৃতি, বনদেবী, অসুর-সংহারী ইত্যাদি রূপে সম্মানিত করা হয় নারীকে। আজ যখন বৈশ্বিক উন্নয়ন লক্ষ্যের সাপেক্ষে বাংলাদেশ প্রকৃতিবিরুদ্ধ প্রবৃদ্ধিকেন্দ্রিক বৈষম্যপূর্ণ উন্নয়ন ও অপরিকল্পিত নগরায়ণের নগদ আকর্ষণের দিকে ঝুঁকেছে, তখনো নারীই রক্ষা করে চলেছেন স্থানীয় ঐতিহ্যের সঙ্গে ন্যূনতম সম্পর্ক।
ঐতিহ্য প্রবাহিত হয় পরম্পরায়। দুঃখজনক হলেও সত্য যে আমাদের শিক্ষা, বৈষম্যপূর্ণ অর্থনৈতিক রূপান্তর ধারা, ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতি—সবই পরম্পরার সুতা ছিন্ন করে কায়েম করতে ব্যস্ত শিকড়-বিচ্ছিন্ন পুঁজির প্রতিযোগিতাময় ব্যক্তিসর্বস্ব সমাজ। সেই ব্যক্তি এতটাই স্বতন্ত্র যে ঐতিহ্য তার কাছে নিতান্ত পশ্চাৎপদ ধারণা ও পরিত্যাজ্য। এই প্রবণতা আত্মঘাতী, আত্মপরিচয়বিনাশী। কেননা ঐতিহ্যই চিহ্নিত করে জাতি, গোষ্ঠী, গোত্র, সম্প্রদায় তথা সমষ্টির আত্মপরিচয়। গভীরভাবে লক্ষ করলে বোঝা যায়, বাঙালির এবং বাংলাদেশে বসবাসরত অবাঙালি জাতিসত্তাগুলোর আত্মপরিচয়ের বাহক ঐতিহ্য চর্চার প্রধান ও দৃশ্যমান কুশীলব নারীরাই। প্রাচীনকাল, নিকট অতীত এবং বিপর্যস্ত বর্তমানে নারীই ঐতিহ্যের বাহক, চর্চাকারী এবং সঞ্চারক।
আবহমান বিমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের পণ্য নকশিকাঁথা অথবা শীতলপাটি বুননশৈলী, বাংলাদেশের অঞ্চলভেদে প্রচলিত খাদ্যসংস্কৃতির রূপ ও স্বাদ বৈচিত্র্যময় বৈশিষ্ট্য, গৃহস্থালি বাসনপত্র থেকে শুরু করে বিশেষ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন পোশাক এবং অলংকারসহ বিবিধ সাংসারিক উপকরণ সংরক্ষণ, বিয়ের বিশিষ্ট আচারসহ বিয়ের গীত, জন্ম ও মৃত্যুর সঙ্গে জড়িত পালনীয় আচার ইত্যাদির স্রষ্টা, চর্চাকারী, সংরক্ষণকারী এবং সঞ্চারক মূলত নারী। প্রতি গ্রামে, প্রতি গৃহে নিজস্ব ঐতিহ্য-প্রেম, সৃষ্টিশীলতা ও উৎপাদনশীলতার স্বপ্রণোদিত প্রয়োগে তাঁরাই টিকিয়ে রেখেছেন বাঙালির আত্মপরিচয় প্রকাশক ঐতিহ্য-চক্র। এই ঐতিহ্য-চক্রের নিরিখেই নির্ণয় করা যায় যেকোনো রাষ্ট্রসীমায় থাকা ভাষা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ঐক্যে জারিত বাসিন্দাদের জাতিগত, নৃগোষ্ঠীগত ও সামাজিক পরিচয়-স্বাতন্ত্র্য।
২০২২ সালের ‘আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস’-এ জাতিসংঘ মহাসচিব ঐতিহ্যগত জ্ঞান সংরক্ষণ ও বিকাশে ‘আদিবাসী’ নারীদের অবদানের গুরুত্ব বিশেষভাবে তুলে ধরেছিলেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ৫০টির বেশি ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ক্ষেত্রেও দেখা যায়, নারীরাই পরম্পরাগতভাবে তাঁদের খাদ্য, প্রাকৃতিক ওষুধপত্র, ভাষা, সংস্কৃতিসহ প্রায় সব ঐতিহ্যগত জ্ঞান ও চর্চার সংরক্ষক। যেমন গারো সম্প্রদায়ের নারীরা আজও সংরক্ষণ করে চলেছেন তেল-মসলাবিহীন মাছ-মাংস (গপ্পা) রান্নার নিজস্ব পদ্ধতি। সাঁওতালসহ বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ক্ষুদ্র জাতিসত্তার নারীদের হাতেই টিকে আছে তাঁদের গৃহ-আলপনার ঐতিহ্য। বস্তুগত, বিমূর্ত ও প্রাকৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর নারীরাই অগ্রবর্তী ভূমিকা পালন করে চলেছেন।
অথচ পরিচয়-স্বাতন্ত্র্যের প্রকৃত নির্মাতা নারীরা আজ বিভিন্নভাবে ঐতিহ্য-বিচ্ছিন্ন প্রগতির শিকার। সমাজ যেমন নারীর সংগীত-ঐতিহ্য, গীতপ্রবণতাসহ রুদ্ধ করতে চায় ঐতিহ্যিক সৃষ্টিশীলতা, তেমনি শিকড়-বিচ্ছিন্ন বিভ্রান্ত প্রগতিবাদীও ঐতিহ্য লালন ও চর্চাকে প্রগতি-প্রতিবন্ধক মনে করে। দুর্যোগপ্রবণ বাংলাদেশের যেকোনো আসন্ন জরুরি পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে, গ্রামে কিংবা নগরে, পরিবারের সব বয়সী সদস্যদের খাদ্য-বস্ত্র-জ্বালানি-জল সংরক্ষণে সব সময় সচেষ্ট থাকেন নারী। এটাই ঐতিহ্যগতভাবে হয়ে আসছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে চিড়া, মুড়ি, গুড়, আচার ইত্যাদি জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার উপযুক্ত খাদ্য প্রস্তুত ও সংরক্ষণের ঐতিহ্য নারীর কাছ থেকে ছিনতাই করেছে করপোরেটের কালো হাত। ব্যবসা বিকাশের নামে এ ধরনের ঐতিহ্য ছিনতাই নারীর স্বাভাবিক ঐতিহ্য চর্চা ও সংরক্ষণ সক্ষমতা হত্যার শামিল।
নারীর শস্যবীজ সংরক্ষণ ঐতিহ্যেও থাবা বসিয়েছে পুঁজিবাদী করপোরেটের লম্বা হাত। অথচ বৈচিত্র্যময় দেশি ধানবীজ ও পাটবীজ থেকে শুরু করে লাউ, মিষ্টিকুমড়া, করলা, ঝিঙে, সরিষা, মসুর, পুঁইশাক, লালশাক, ডাঁটা, ঢ্যাঁড়সসহ সব রকমের স্থানীয় সবজি, শস্য ও ফল বীজ ঐতিহ্যগতভাবে নারীরাই সংরক্ষণ করে এসেছেন। বীজ বাছাই ও শোধন থেকে শুরু করে চারা তোলা, হাঁস-মুরগি পালন, দুধ দোহন, বসতবাড়িতে ফুল চাষ, নকশি পাখা তৈরি, মাটির পুতুল, কাপড়ের পুতুল, পাটের শিকাসহ ঐতিহ্যবাহী কুটিরশিল্পভুক্ত শত দরকারি ও শৌখিন পণ্য সৃষ্টির ঐতিহ্য পরম্পরাগতভাবে নারীরাই বহন করেছেন এবং করে চলেছেন। বাংলাদেশের বিমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বাউলগান, পালাগান, কবিগান, কীর্তন, বিষহরার গান, পটগান ইত্যাদিতে নারীর অংশগ্রহণ পরম্পরাগতভাবে দৃশ্যমান। উত্তরবঙ্গের বিয়ের গীত কিংবা হাওরের ধামাইল গানের স্রষ্টা ও চর্চাকারী কেবল নারীরাই। নদীমাতৃক বাংলাদেশের বেদে সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য সাপ খেলা থেকে শুরু করে অন্যান্য জীবিকায়ন কার্যক্রমের প্রধান ভূমিকায় নারীকেই অবতীর্ণ হতে দেখা যায়।
এরপরও এটাই বাস্তবতা যে বাংলাদেশের মূলধারার জনগোষ্ঠীই হোক বা ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জনগোষ্ঠী—সব প্রেক্ষাপটেই নারীর ওপর যুগ যুগ ধরে চলছে পারিবারিক, সামাজিক, সাম্প্রদায়িক, এমনকি রাষ্ট্রীয় বৈষম্য, বঞ্চনা ও নিপীড়ন। প্রযুক্তির ঝাঁ-চকচকে অগ্রগতি ও নারী-প্রগতির বাকসর্বস্ব উন্নতি সত্ত্বেও সর্বজনীন পিতৃতন্ত্রের দানব নারীকে প্রান্তিক বিবেচনা করতে চায়। নারীর প্রতি চলমান প্রতিকারহীন আধিপত্যবাদী, দমনমূলক আচরণ ও সহিংসতার মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব আমাদের জাতিগত পরিচয় স্বাতন্ত্র্যের নির্ণয়ক ঐতিহ্যকে ফেলে দিচ্ছে বিলুপ্তি ঝুঁকির মুখে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, ঐতিহ্যহীন হওয়ার প্রবণতা পুরো জাতিকে পরিচয়হীন করে দেবে।
সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের মানুষের পরিচয়-স্বাতন্ত্র্য-সূচক ঐতিহ্য সংরক্ষণে নারীর চিরায়ত ভূমিকাকে প্রণোদিত করার উপযুক্ত সামাজিক-অর্থনৈতিক সংহতি নির্মাণে মনোযোগী হওয়াই হবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের প্রধান কর্তব্য। বাংলাদেশের বাঙালি ও সব বৈচিত্র্যময় জাতিসত্তার আত্মপরিচয়বাহী ঐতিহ্যের স্বরূপ সমুন্নত রাখতে, বিশেষ করে ঐতিহ্য সুরক্ষায় নারীর ভূমিকার কাঠামোগত স্বীকৃতি হতে পারে এক কার্যকর পদক্ষেপ।
লেখক: গল্পকার, ফোকলোর তাত্ত্বিক ও অনুবাদক
ডেস্কে বসে কপের খবর নেওয়া আর আকাশের চাঁদ ছোঁয়ার মধ্যে যেন তেমন কোনো পার্থক্য নেই। কিন্তু হঠাৎ মনে পড়ল আনিকা তাবাসসুমের কথা। এই মুহূর্তে তিনি আছেন আজারবাইজানের বাকুতে। এত এত অ্যাপের দুনিয়ায় তাঁকে ধরা কি খুব কঠিন? চেষ্টা করতেই তাঁর কাছ থেকে পাওয়া গেল উত্তর। আমরাও চটপট কথা বলে ফেললাম আনিকার সঙ্গে।
৪ দিন আগেবাংলাদেশে তৈরি পোশাক খাতে ৩৩ লাখ ১৭ হাজার ৩৯৭ জন শ্রমিক কাজ করছেন এখন। বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) বায়োমেট্রিক ডেটাবেইস থেকে পাওয়া গেছে এ তথ্য। এই বিশালসংখ্যক শ্রমিকের মধ্যে ১৭ লাখ ৩৪ হাজার ৪৫৯ জন বা ৫২ দশমিক ২৮ শতাংশ নারী...
৪ দিন আগেআরব অঞ্চলের দেশগুলোর ঐতিহ্যবাহী খেলা উটের দৌড়। একসময় আমাদের দেশে যেমন ঘোড়দৌড় হতো, বিষয়টি তেমনই। সেখানে শুধু ঘোড়ার বদলে থাকে উট। সে উট যাঁরা চালনা করেন, তাঁরা হলেন জকি। এত দিন জকি হিসেবে সৌদি আরবে ছিল পুরুষদের দাপট। দেশটিতে সেই প্রচলিত প্রথা অবশ্য ভেঙেছে ২০২২ সালে...
৪ দিন আগেঅ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে পেনিসিলিনের আবিষ্কার মানবজাতিকে স্বস্তি দিয়েছিল। তারপর আবিষ্কৃত হয় ছত্রাকজনিত রোগের বিরুদ্ধে কর্মক্ষম অ্যান্টিবায়োটিক নাইস্ট্যাটিন। এটির সঙ্গে যুক্ত আছে রাচেল ফুলার ব্রাউন এবং তাঁর সহযোগী এলিজাবেথ হ্যাজেনের নাম। এই দুজনের আবিষ্কারটি ছিল ছত্রাকজনিত রোগের বিরুদ্ধে প্রথম কার্যকর
৪ দিন আগে