নারীদের অংশগ্রহণ কতটুকু এগোল

সানজিদা সামরিন
প্রকাশ : ২৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০৮: ৩১

আর কয়েক দিন পরেই শুরু হবে অমর একুশে বইমেলা। একে কেন্দ্র করে লেখক, কবি আর প্রকাশনা সংস্থাগুলোর সঙ্গে শিল্পীপাড়ায়ও ব্যস্ততার কমতি নেই। বইয়ের প্রচ্ছদ আর পাতাজুড়ে অলংকরণের দায়িত্ব তো তাঁদের কাঁধেই। শিল্পীর লিঙ্গভেদ না থাকলেও চারপাশ থেকে শোনা যায়, বইমেলায় পুরুষ প্রচ্ছদ ও অলংকরণশিল্পীর কাজ অহরহ চোখে পড়লেও এ ক্ষেত্রে নারীদের সংখ্যা হাতে গোনা। এসব নিয়ে এ সময়ের তিন প্রচ্ছদ ও অলংকরণশিল্পীর সঙ্গে কথা বলেছেন সানজিদা সামরিন।

সারা তৌফিকা, ফ্রিল্যান্স আর্টিস্ট
পোশাকি নাম সারা তৌফিকা। শিল্পীপাড়ায় সারা টিউন নামে পরিচিত তিনি। জন্ম ও বেড়ে ওঠা বরিশালে। উচ্চমাধ্যমিকের পাট চুকিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্য়ালয়ের চারুকলা অনুষদের গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগে ভর্তি হন। ২০১০-১১ সাল থেকে পেশাগতভাবে বই অলংকরণের কাজ করছেন। এর দু-তিন বছর পর থেকে বইয়ের প্রচ্ছদের কাজও করছেন সমানতালে।

ডিজিটাল মাধ্যমে কাজ করতেই বেশি আনন্দ পান সারা। প্রচ্ছদ নাকি পুরো বইয়ের অলংকরণ—চ্যালেঞ্জিং কোনটি? সারা বললেন, ‘আমি পুরো বইয়ের অলংকরণ করতে বেশি পছন্দ করি। সিসিমপুর, ইকরি মিকরি, ছাপাখানার ভূত—এদের সঙ্গে বেশি কাজ করা হচ্ছে এখন। তা ছাড়া জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সঙ্গেও কাজ করছি।’ বইমেলায় নারী প্রচ্ছদশিল্পী বা অলংকরণশিল্পীর সংখ্যা কম বলে মনে করেন না সারা।

সারা জানিয়েছেন, প্রযুক্তির ব্যবহার কাজের দক্ষতা বাড়িয়ে দিয়েছে অনেকটাই। অন্যদিকে বাঁচিয়েছে সময়। প্রযুক্তি গ্রহণে শিল্পীদের দ্বিধা বিষয়ে সারা বলেন, ‘এটা আসলে গ্রহণযোগ্যতার বিষয়। আমি তো দেখছি, সিনটিক দিয়েই শিল্পীরা দারুণ সব কাজ করে ফেলছেন।

অসাধারণ সব শিল্পকর্ম। আর বিভিন্ন চলচ্চিত্রে যে অ্যানিমেশন বা ভিএফএক্স ইফেক্ট আনা হয়, সেগুলোর শিল্পমান অনেক 
উন্নত মনে হয়। আমার জন্য সমন্বয় করা খুবই সহজ। কারণ, দিনশেষে কাজটি প্রোডাকশনে গেলে সেটা প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমেই এগোয়। হাতে আঁকার মূল্য আগেও ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে।’ এবারের বইমেলায় তিনটি বইয়ের কাজ করেছেন সারা তৌফিকা।  

জাকিয়া শিম্‌মিন চৌধুরীজাকিয়া শিম্‌মিন চৌধুরী, স্থপতি ও শিশুতোষ বই অলংকরণশিল্পী 
বেড়ে ওঠা রাজশাহীতে। ছোটবেলা থেকে ছবি আঁকা ছিল নেশার মতো। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে তিনি জাতীয় পুরস্কার ও শংকর আন্তর্জাতিক শিশু প্রতিযোগীতা পুরস্কার পেয়েছেন। কিন্তু বড় হয়ে স্থপতি হতে চাইলেন। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্য বিষয়ে স্নাতক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জিআইএস ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টে স্নাতকোত্তর শেষ করেন; পাশাপাশি চলতে থাকে ছবি আঁকা।

নিজের আঁকা ছবিগুলোকে বইয়ের পাতায় দেখার সুযোগ আসে করোনাকালে। লাইট অব হোপের গুফি প্রোডাকশনের শিশুতোষ বইয়ের একটি প্রকল্পে অংশ নেন তিনি। আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি জাকিয়াকে। সেই থেকে প্রায় চার বছর ধরে শিশুতোষ বইয়ের অলংকরণ ও প্রচ্ছদ করে যাচ্ছেন সমানতালে। সব কটি বইয়ের কাজই হয়েছে লাইট অব হোপ থেকে।

অ্যাক্রিলিক ও জলরঙে কাজ করতে স্বচ্ছন্দবোধ করেন জাকিয়া। তবে পেপারক্র‍্যাফট ও ডিজিটাল মাধ্যমেও কাজ করছেন। তিনি প্রচ্ছদ ও অলংকরণ—দুটিই করেন। এ পর্যন্ত ১০টি শিশুতোষ বইয়ের কাজ করেছেন।

প্রচ্ছদশিল্পী বা অলংকরণশিল্পী হিসেবে নারীদের অংশগ্রহণ তুলনামূলক কম কেন? এর উত্তর জানতে চাই জাকিয়ার কাছে। তিনি বলেন, ‘মনে হয় অনেকে বুঝতে পারেন না, কোথায় গিয়ে বা কীভাবে কাজটা করবেন। এখন অনলাইনের যুগ। অনেক সুযোগ আছে, অনেক অনলাইন ট্রেনিংও হচ্ছে ইলাস্ট্রেশনের ওপর; যেখানে প্রফেশনাল আর্টিস্ট ছাড়াও সাধারণ মানুষ, যাঁরা আঁকতে ভালোবাসেন, তাঁদের কাজ শেখার সুযোগ হচ্ছে। ফলে এদিক থেকেও নারীরা পিছিয়ে নেই বলে মনে করি।’

জাকিয়া মনে করেন, প্রযুক্তির সাফল্য পুরো প্রকাশনাশিল্পকে এগিয়ে নিয়েছে। একই সঙ্গে মনে করেন, পেশা, সংসার, সন্তান সামলানোসহ নারীরা বিভিন্ন কাজ করতে পারছেন প্রযুক্তি আছে বলেই। এবারের বইমেলায় জাকিয়া শিম্‌মিন চৌধুরীর অলংকরণে দুটি বই আসবে।

আভা তাজনোভা খান (ইরা)আভা তাজনোভা খান (ইরা), প্রচ্ছদশিল্পী
রাজশাহী বিশ্ববিদ্য়ালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে প্রিন্টমেকিং বিষয়ে স্নাতকোত্তর শেষ করে প্রচ্ছদশিল্পী হিসেবে কাজ করছেন বিভিন্ন প্রকাশনীর সঙ্গে। প্রায় দেড় বছর ধরে প্রচ্ছদ আঁকছেন আভা তাজনোভা খান (ইরা)।

আভা জানান, সামাজিক যোগাযোগনির্ভর সময়ে অনেক নারী শিল্পী হয়তো এ মাধ্যম এড়িয়ে চলেন। তাই আপাতভাবে মনে হয়, প্রচ্ছদ বা অলংকরণের জগতে নারী শিল্পীদের অংশগ্রহণ কম। কিন্তু আভা মনে করেন, নারীরা এখন অনেক সাবলীল। শিল্প-সংস্কৃতির অন্যান্য দিকের মতো বইয়ের প্রচ্ছদ ও অলংকরণের দিকেও তাঁরা ঝুঁকছেন।

এখন পর্যন্ত ২০টির মতো বইয়ের প্রচ্ছদ করেছেন তিনি। নবকথন, পেনসিল, এশিয়া পাবলিকেশনসহ আরও বেশ কিছু প্রকাশনীর সঙ্গে কাজ করেছেন। তিনি হাতে এঁকে কাজ করতে বেশি ভালোবাসেন। অ্যাক্রিলিকে আঁকতে স্বচ্ছন্দবোধ করেন। আঁকার পর যদি প্রযুক্তির কোনো সহায়তা নিতে হয়, সেটুকু তিনি নেন। আভা বলেন, ‘প্রযুক্তির কল্যাণে তো আমরা অনেক সুবিধাই পাচ্ছি। হাতে এঁকে কাজ করার সময় লেখকের দিক থেকে বিভিন্ন ফিডব্যাক আসতে থাকে। অনেক কারেকশনের ব্যাপার থাকে। ফলে বারবার রং ও এলিমেন্ট বদলানো কঠিন হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে ডিজিটাল মাধ্যম কাজটাকে অনেক সহজ ও দ্রুত করে দেয়। আবার অনেক সময় ডিজিটাল মাধ্যমের কাজ কিছুটা দায়সারাও হয়ে যায়। শিল্পীর সিগনেচার আর্ট সে সময় ঊহ্য থাকে। সব মিলিয়ে ইতিবাচক, নেতিবাচক—দুটো দিকই আছে ডিজিটাল মাধ্যমের।’

নিজের করা প্রচ্ছদের বই প্রকাশিত হওয়ার পর অন্য রকম ভালো লাগা কাজ করে বলে জানান আভা।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত