কাশফিয়া আলম ঝিলিক, ঢাকা
১০২ ডিগ্রি জ্বর। টেবিলের ওপর বাজতে থাকা ফোন কোনোমতে রিসিভ করলেন তিনি। ফোনের অন্য প্রান্ত থেকে বলা হলো, ‘আগামীকাল একটা ম্যাচ আছে। চলে এসো।’ তিনি জ্বরের কথা জানালেন। অন্য প্রান্ত থেকে বলা হলো, ‘কখনো না বলবে না। আগে রিংয়ে নামো, ফাইট করো। ৯ মিনিটের খেলা, তুমি পারবে।’ পরদিন মেয়েটি রিংয়ে উপস্থিত।
তুমুল ‘ফাইট’ করে চ্যাম্পিয়ন হতে না পারলেও হলেন রানারআপ। সে খবর ফলাও করে প্রচারিত হলো পত্রিকায়। সেই আনন্দ আজও তাঁকে উদ্বেলিত করে। মেয়েটির নাম তামান্না হক। মাথাভর্তি সোনালি চুলের অধিকারী লম্বা মেয়েটি শিখেছেন বক্সিং, কুংফু; এমনকি ইসরায়েলি সেনাবাহিনী উদ্ভাবিত মার্শাল আর্ট ক্রাত মাগাও। এই মারকুটে মেয়ে দেশের প্রথম নারী বক্সার।
আর এখন নারীদের শেখাচ্ছেন কিক বক্সিংসহ আত্মরক্ষার বিভিন্ন কৌশল।
সেই ছোটবেলা থেকে তামান্না আর দশটা শিশুর মতো সাধারণ ছিলেন না। বিকেলে তিনি লুকোচুরি বা কুমির ডাঙা না খেলে কিংবা টম অ্যান্ড জেরি না দেখে রেসলিং দেখতেন। তাঁর প্রিয় রেসলার ট্রিপল এইচ। এ ছাড়া তাঁর পছন্দের তালিকায় আছেন মাইক টাইসন আর ব্রুস লি। সেই ভালো লাগা থেকেই বক্সিং আর মার্শাল আর্টের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয় তামান্নার। পরিবারের অমতে গিয়ে তাই শেখেন বক্সিং ও কুংফু। অনেকের চেয়ে বেশি ঘাম ঝরান তিনি।
প্রথম লড়াই পরিবারের সঙ্গে
তামান্নার বড় হওয়া রাজধানীর কচুক্ষেতে। সেটাই তাঁদের স্থায়ী ঠিকানা। বাবা ছিলেন সরকারি চাকরিজীবী। দুই বোনের মধ্যে তামান্না একটু বেশিই চঞ্চল ছিলেন ছোটবেলায়। একদিন বক্সিংকে জীবনের লক্ষ্য হিসেবে বেছে নেওয়ার কথা জানালেন বাড়িতে। যা হওয়ার তা-ই হলো, সবাই ‘না না’ করে উঠলেন। কিন্তু তিনি অনড়। পরিবারের সে বাধা একাই লড়লেন। কোনো ভবিষ্যৎ নেই, টিকে থাকা কঠিন জেনেও তিনি এগোলেন, একা। নিজেকে বারবার ভেঙেছেন, আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। পরিবারকে বোঝাতে হয়েছে বিস্তর। এ ক্ষেত্রে তামান্নার পাশে দাঁড়ান মোহাম্মদ আলী বক্সিং ফেডারেশনের হেড কোচ মহিউদ্দিন। তিনি বললেন, তুমি পারবে, অবশ্যই পারবে।
উচ্চতা নিয়ে বিপাকে
২০১৪ সালের দিকে তামান্না যখন বক্সিং শুরু করেন, সে সময় দেশের নারীরা বক্সিংয়ে আসেননি। তাঁকে অনুশীলন করতে হতো ছেলেদের সঙ্গে। তাতে তাঁর বিপদ হয়নি; বরং তিনি বিপদে পড়েছেন নিজের উচ্চতা নিয়ে। ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি উচ্চতার তামান্নার জন্য প্রতিপক্ষ মেলানো বেশ কঠিন হতো। তাই অনেক ম্যাচেই তিনি খেলতে পারতেন না। এভাবে না খেলতে পেরে আর সুযোগ-সুবিধার অভাবে ক্যারিয়ার নিয়ে তামান্না খানিকটা হতাশ হয়ে গিয়েছিলেন। তবু নিজেকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে গেছেন তিনি।
অভিমান আছে
অভিমান আছে নারী বক্সারদের সুযোগ আর সম্মানী নিয়ে। একজন বক্সারের দেশি-বিদেশি প্রতিপক্ষের সঙ্গে প্রচুর ম্যাচ খেলাটা জরুরি। তামান্না বলেন, ‘আমার সময় এই সুযোগ কম পেয়েছি। খেলা শেষে খেলোয়াড়ের একটা মিনিমাম পেমেন্ট পাওয়া উচিত। সে সিস্টেমটা তখন ভালো ছিল না।
এখন অনেকে পেশাদার বক্সিং করছেন। তাঁদের উৎসাহের জন্য দেশের বাইরে খেলানো, স্পনসর নিয়ে আসা অনেক জরুরি।’ এসব দিকে এখন কিছুটা উন্নতি হলেও তা অপ্রতুল বলে জানান তিনি। তামান্না মনে করেন, নারী বক্সারদের আরও ভালো খেলাতে আর এই পেশায় নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে আরও উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
আত্মরক্ষার কৌশল ও কিক বক্সিং
একপর্যায়ে সুযোগ-সুবিধার অভাবে বক্সিং ছেড়ে দেন তামান্না। তবে ফাইটিংয়ে ক্যারিয়ার গড়ার ভূত তাঁর মাথা থেকে যায়নি তখনো। এই স্বপ্ন পূরণ করতে তিনি প্রশিক্ষণ নেন কিক বক্সিং ও আত্মরক্ষার বিভিন্ন কৌশলের ওপরে। তিনি রেপ অ্যান্ড প্রিভেনশন ইনস্ট্রাক্টর হিসেবেও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। কয়েক বছর যাবৎ ফিটনেস ইন্সট্রাক্টর হিসেবে কাজ করছেন তিনি। বিভিন্ন সমাজসেবামূলক সংগঠনের সঙ্গে নারীদের আত্মরক্ষার বিষয়ে সচেতনতা তৈরির পাশাপাশি তাদের প্রশিক্ষণের কাজও করেন তামান্না। এ বিষয়ে কাজ করতে গিয়ে তিনি খেয়াল করেন, এখন বাবা-মায়েরা সন্তানদের কারাতে, জুডো অথবা কুংফু শেখালেও আত্মরক্ষার ট্রেনিং নিয়ে আগ্রহী নন। আর প্রান্তিক অঞ্চলের মেয়েদের এসব শেখানো হয় না তো বটেই, তারা জানেও না আত্মরক্ষার কৌশলের বিষয়টি কী। অথচ এই প্রশিক্ষণগুলো মানুষকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। স্বনির্ভরশীল হতে শেখায়।
তামান্নার স্বপ্ন
তামান্না এখন পুরোদমে নারীদের কিক বক্সিং ও আত্মরক্ষার বিভিন্ন কৌশল প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন ফিটনেস ট্রেনিং। গত বছরের ডিসেম্বর থেকে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘পথের ইশকুল’ ও অবহেলিত নারী সংগঠনের সঙ্গে মিলে আত্মরক্ষার কৌশল ও যৌন হয়রানি প্রতিরোধে করণীয় বিষয় নিয়ে কাজ করছেন তামান্না হক। তিনি স্বপ্ন দেখেন, দেশের প্রত্যেক নারী পথে বা বাড়িতে নিরাপদ ও আত্মবিশ্বাসী থাকবেন। নিজেদের আত্মবিশ্বাসে নিজেরাই নিজেদের অবস্থান চিহ্নিত করবেন।
১০২ ডিগ্রি জ্বর। টেবিলের ওপর বাজতে থাকা ফোন কোনোমতে রিসিভ করলেন তিনি। ফোনের অন্য প্রান্ত থেকে বলা হলো, ‘আগামীকাল একটা ম্যাচ আছে। চলে এসো।’ তিনি জ্বরের কথা জানালেন। অন্য প্রান্ত থেকে বলা হলো, ‘কখনো না বলবে না। আগে রিংয়ে নামো, ফাইট করো। ৯ মিনিটের খেলা, তুমি পারবে।’ পরদিন মেয়েটি রিংয়ে উপস্থিত।
তুমুল ‘ফাইট’ করে চ্যাম্পিয়ন হতে না পারলেও হলেন রানারআপ। সে খবর ফলাও করে প্রচারিত হলো পত্রিকায়। সেই আনন্দ আজও তাঁকে উদ্বেলিত করে। মেয়েটির নাম তামান্না হক। মাথাভর্তি সোনালি চুলের অধিকারী লম্বা মেয়েটি শিখেছেন বক্সিং, কুংফু; এমনকি ইসরায়েলি সেনাবাহিনী উদ্ভাবিত মার্শাল আর্ট ক্রাত মাগাও। এই মারকুটে মেয়ে দেশের প্রথম নারী বক্সার।
আর এখন নারীদের শেখাচ্ছেন কিক বক্সিংসহ আত্মরক্ষার বিভিন্ন কৌশল।
সেই ছোটবেলা থেকে তামান্না আর দশটা শিশুর মতো সাধারণ ছিলেন না। বিকেলে তিনি লুকোচুরি বা কুমির ডাঙা না খেলে কিংবা টম অ্যান্ড জেরি না দেখে রেসলিং দেখতেন। তাঁর প্রিয় রেসলার ট্রিপল এইচ। এ ছাড়া তাঁর পছন্দের তালিকায় আছেন মাইক টাইসন আর ব্রুস লি। সেই ভালো লাগা থেকেই বক্সিং আর মার্শাল আর্টের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয় তামান্নার। পরিবারের অমতে গিয়ে তাই শেখেন বক্সিং ও কুংফু। অনেকের চেয়ে বেশি ঘাম ঝরান তিনি।
প্রথম লড়াই পরিবারের সঙ্গে
তামান্নার বড় হওয়া রাজধানীর কচুক্ষেতে। সেটাই তাঁদের স্থায়ী ঠিকানা। বাবা ছিলেন সরকারি চাকরিজীবী। দুই বোনের মধ্যে তামান্না একটু বেশিই চঞ্চল ছিলেন ছোটবেলায়। একদিন বক্সিংকে জীবনের লক্ষ্য হিসেবে বেছে নেওয়ার কথা জানালেন বাড়িতে। যা হওয়ার তা-ই হলো, সবাই ‘না না’ করে উঠলেন। কিন্তু তিনি অনড়। পরিবারের সে বাধা একাই লড়লেন। কোনো ভবিষ্যৎ নেই, টিকে থাকা কঠিন জেনেও তিনি এগোলেন, একা। নিজেকে বারবার ভেঙেছেন, আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। পরিবারকে বোঝাতে হয়েছে বিস্তর। এ ক্ষেত্রে তামান্নার পাশে দাঁড়ান মোহাম্মদ আলী বক্সিং ফেডারেশনের হেড কোচ মহিউদ্দিন। তিনি বললেন, তুমি পারবে, অবশ্যই পারবে।
উচ্চতা নিয়ে বিপাকে
২০১৪ সালের দিকে তামান্না যখন বক্সিং শুরু করেন, সে সময় দেশের নারীরা বক্সিংয়ে আসেননি। তাঁকে অনুশীলন করতে হতো ছেলেদের সঙ্গে। তাতে তাঁর বিপদ হয়নি; বরং তিনি বিপদে পড়েছেন নিজের উচ্চতা নিয়ে। ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি উচ্চতার তামান্নার জন্য প্রতিপক্ষ মেলানো বেশ কঠিন হতো। তাই অনেক ম্যাচেই তিনি খেলতে পারতেন না। এভাবে না খেলতে পেরে আর সুযোগ-সুবিধার অভাবে ক্যারিয়ার নিয়ে তামান্না খানিকটা হতাশ হয়ে গিয়েছিলেন। তবু নিজেকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে গেছেন তিনি।
অভিমান আছে
অভিমান আছে নারী বক্সারদের সুযোগ আর সম্মানী নিয়ে। একজন বক্সারের দেশি-বিদেশি প্রতিপক্ষের সঙ্গে প্রচুর ম্যাচ খেলাটা জরুরি। তামান্না বলেন, ‘আমার সময় এই সুযোগ কম পেয়েছি। খেলা শেষে খেলোয়াড়ের একটা মিনিমাম পেমেন্ট পাওয়া উচিত। সে সিস্টেমটা তখন ভালো ছিল না।
এখন অনেকে পেশাদার বক্সিং করছেন। তাঁদের উৎসাহের জন্য দেশের বাইরে খেলানো, স্পনসর নিয়ে আসা অনেক জরুরি।’ এসব দিকে এখন কিছুটা উন্নতি হলেও তা অপ্রতুল বলে জানান তিনি। তামান্না মনে করেন, নারী বক্সারদের আরও ভালো খেলাতে আর এই পেশায় নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে আরও উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
আত্মরক্ষার কৌশল ও কিক বক্সিং
একপর্যায়ে সুযোগ-সুবিধার অভাবে বক্সিং ছেড়ে দেন তামান্না। তবে ফাইটিংয়ে ক্যারিয়ার গড়ার ভূত তাঁর মাথা থেকে যায়নি তখনো। এই স্বপ্ন পূরণ করতে তিনি প্রশিক্ষণ নেন কিক বক্সিং ও আত্মরক্ষার বিভিন্ন কৌশলের ওপরে। তিনি রেপ অ্যান্ড প্রিভেনশন ইনস্ট্রাক্টর হিসেবেও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। কয়েক বছর যাবৎ ফিটনেস ইন্সট্রাক্টর হিসেবে কাজ করছেন তিনি। বিভিন্ন সমাজসেবামূলক সংগঠনের সঙ্গে নারীদের আত্মরক্ষার বিষয়ে সচেতনতা তৈরির পাশাপাশি তাদের প্রশিক্ষণের কাজও করেন তামান্না। এ বিষয়ে কাজ করতে গিয়ে তিনি খেয়াল করেন, এখন বাবা-মায়েরা সন্তানদের কারাতে, জুডো অথবা কুংফু শেখালেও আত্মরক্ষার ট্রেনিং নিয়ে আগ্রহী নন। আর প্রান্তিক অঞ্চলের মেয়েদের এসব শেখানো হয় না তো বটেই, তারা জানেও না আত্মরক্ষার কৌশলের বিষয়টি কী। অথচ এই প্রশিক্ষণগুলো মানুষকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। স্বনির্ভরশীল হতে শেখায়।
তামান্নার স্বপ্ন
তামান্না এখন পুরোদমে নারীদের কিক বক্সিং ও আত্মরক্ষার বিভিন্ন কৌশল প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন ফিটনেস ট্রেনিং। গত বছরের ডিসেম্বর থেকে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘পথের ইশকুল’ ও অবহেলিত নারী সংগঠনের সঙ্গে মিলে আত্মরক্ষার কৌশল ও যৌন হয়রানি প্রতিরোধে করণীয় বিষয় নিয়ে কাজ করছেন তামান্না হক। তিনি স্বপ্ন দেখেন, দেশের প্রত্যেক নারী পথে বা বাড়িতে নিরাপদ ও আত্মবিশ্বাসী থাকবেন। নিজেদের আত্মবিশ্বাসে নিজেরাই নিজেদের অবস্থান চিহ্নিত করবেন।
নড়াইল শহরের সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের খেলার মাঠের দক্ষিণ দিকে রাস্তার পাশে চারতলা ভবন। নাম ‘অন্তি কটেজ’। এ ভবনের ৩ হাজার বর্গফুট ছাদজুড়ে তনিমা আফরিনের বাগান। তিনতলায় স্বামী ও দুই মেয়ে নিয়ে বসবাস করছেন জাতীয় কৃষি পুরস্কার পাওয়া তনিমা।
১ দিন আগেঘড়িতে তখন কাঁটায় কাঁটায় ৮টা ৫০ মিনিট। শিক্ষার্থীসহ অন্যদের উপস্থিতি তেমন চোখে পড়ছে না। কিন্তু এরই মধ্যে উপজেলা পরিষদ থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে একটি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে পৌঁছে গেছেন তিনি। সকাল ৯টায় ওই বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠান হওয়ার কথা, সেখানে তিনি প্রধান অতিথি।
১ দিন আগেদিন যত যাচ্ছে, গৃহকর্মী নির্যাতন যেন বাড়ছেই। বাংলাদেশ শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, দেশে ২৫ লাখ গৃহকর্মী কাজ করে। আর বাংলাদেশ অভিবাসী মহিলা শ্রমিক অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, দেশের ৮০ শতাংশ গৃহকর্মী নারী।
১ দিন আগেহতে চেয়েছিলেন বিজ্ঞানী। কিন্তু হলেন অনুসন্ধানী সাংবাদিক। নাম তাঁর ইডা টারবেল। উনিশ শতকে পৃথিবীময় তেল ব্যবসার ৯০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করত রকফেলারদের প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড অয়েল কোম্পানি। সেই প্রতিষ্ঠানের কালো দিক উন্মোচন করে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন ইডা।
১ দিন আগে