Ajker Patrika

সোভিয়েত ইউনিয়ন: একটি স্বপ্নের মৃত্যু

জাহীদ রেজা নূর
আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২১, ০৯: ২৮
সোভিয়েত ইউনিয়ন: একটি স্বপ্নের মৃত্যু

২৫ ডিসেম্বর ছিল সোভিয়েতফেরত শিক্ষার্থীদের পিকনিক। প্রতিবছরই এ দিনটিতে ঢাকার আশপাশে এই পুনর্মিলনী হয়। বছরের পর বছর এই দিনটিতে সোভিয়েত ইউনিয়নে পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীরা এক হয়ে ফিরে যান তাঁদের ফেলে আসা দিনগুলোয় এবং অবধারিতভাবেই তাঁরা যেসব আলোচনা করেন, তাতে শাহ আবদুল করিমের ‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম’ গানের একটা রেশ পাওয়া যায়।

যাঁরা এ দিনটিতে নিভৃতে কোনো এক পিকনিক স্পটে জড়ো হন, তাঁরা ১৯৯১ সালের ২৬ ডিসেম্বর সোভিয়েত ইউনিয়নের সমাপ্তির ট্র্যাজিক দিনটির কথাও স্মরণ করেন। যাঁরা ১৯৯১ সালের আগে সোভিয়েত ইউনিয়নে গিয়েছিলেন, তাঁদের মনে দেশটি এখনো হয়ে রয়েছে এক রূপকথার দেশ। নস্টালজিয়া তাঁদের জীবনযাপনের একটি বড় অনুষঙ্গ।

দুই. যে সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাচ্ছিল, সে সময়টায় অন্য অনেক শিক্ষার্থীর মতো আমিও অবস্থান করছিলাম সেখানে। আমি পড়াশোনা করতাম রাশান ফেডারেশনের সর্বদক্ষিণের শেষ বড় শহর ক্রাসনাদারে। আমাদের এলাকাকে বলা হতো উত্তর ককেশাস। শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যেত কুবান নদী। রাশিয়ায় খুব কম অঞ্চলই আছে, যেখানে নদীর বড় বড় মাছ বিক্রি হয়। যেখানে হেক্টরের পর হেক্টরজুড়ে চাষ হয় ধানের। ক্রাসনাদার ছিল সে রকম ‘মাছে-ভাতে’ এক শহর।

সৌভাগ্য না দুর্ভাগ্য, সেটা জানি না, সমাজতন্ত্রের শেষ পাঁচ বছর এবং গণতন্ত্রের প্রথম পাঁচ বছর আমি সোভিয়েত ইউনিয়নে ছিলাম। ফলে সোভিয়েত পতনের ইতিহাসটি আসলে আমাদের চোখের সামনেই নির্মিত হয়েছে। আমরা ছিলাম তার অসহায় পর্যবেক্ষক।

তিন. কেন ভেঙে গেল সোভিয়েত ইউনিয়ন, তা নিয়ে অসংখ্য লেখালেখি হয়েছে। তাই নতুন করে তার আলোচনা নিরর্থক। শুধু এটুকু বলাই বোধ হয় দরকারি, পশ্চিমা বিশ্বের কমিউনিস্টবিরোধী ষড়যন্ত্রই কেবল দেশটির ভাঙনের কারণ ছিল না, অভ্যন্তরীণ নানা অরাজকতাও দেশটির ইতি টানার ব্যাপারে অবদান রেখেছে। কাছে থেকে দেখা সেই কারণগুলো নিয়েই কিছু কথা বলব এখন। চোখে দেখা কারণগুলোর বাইরেও যেসব কারণ রয়েছে, তার আলোচনা এখানে করছি না বটে, তবে ‘আকেলমন্দ কে লিয়ে ইশারা-ই কাফি হ্যায়’ কথাটা অন্য অনেক কিছুর মতো এখানেও প্রযোজ্য।

প্রচারণার একটা নিজস্ব শক্তি আছে। বারবার কানের সামনে একই কথা বলতে থাকলে একসময় যেকোনো মিথ্যাও সত্য বলে মনে হতে থাকে। হিটলারের সহচর গোয়েবলস এ কথাটি প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন। খারাপ মানুষের অথবা ক্ষমতাবান মানুষের একটা বড় আশ্রয় হলো প্রচারণা দিয়ে সত্যকে লুকিয়ে ফেলা। সেই প্রচারণা একসময় জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে এবং তারা সত্য ভেবে নিজেরাও তা প্রচার করতে থাকে।

আমরা ১৯৮৬ সালে যখন সোভিয়েত ইউনিয়নে গিয়েছিলাম, তখন আফগানিস্তানে ছিল সোভিয়েত সেনা। সরকারি প্রচারণা ছিল, যুদ্ধে সোভিয়েত বাহিনী ভালো করছে, আফগানিস্তানে গণতন্ত্র রক্ষা করছে। অথচ মূল ঘটনার সঙ্গে এই প্রচারণার মিল ছিল না। যাঁদের সন্তানেরা আফগানিস্তানে গিয়েছিলেন, তাঁরা সব সময় আতঙ্কে থাকতেন, সন্তানের মৃত্যুর খবর শুনতে হতে পারে ভেবে পাথর হয়ে যেত তাঁদের মন। অসহায় মা-বাবার নীরব দীর্ঘশ্বাস এবং পার্টির বিরুদ্ধে কিছু না বলতে পারার জ্বালা ঠিকই ধরা পড়ত আমাদের চোখে। কী ভয়টাই না তাঁরা পেতেন কমিউনিস্ট পার্টিকে! যে পার্টিকে বলা হচ্ছে কেন্দ্র, সেই পার্টিকে আপন ভাবতে পারছে না দেশের সাধারণ মানুষ—এই সহজ সত্যটি কী করে সে সময় এড়িয়ে যাওয়া হয়েছিল, সেটা এখনো বুঝতে পারি না।

আর এর কিছুকাল পরে স্বনামধন্য গায়ক আলেগ গাজমানোভের ‘পুতানা’ গানটি তো আফগান যুদ্ধের পুরো ক্লেদটিকে সামনে নিয়ে এসেছিল।

চার. সোভিয়েত ইউনিয়নে শিক্ষার্থী যুবকদের সংগঠন ছিল ‘কমসোমল’। শিক্ষার্থীদের সমাজতন্ত্রে দীক্ষিত করে তোলার ব্যাপারে কাজ করত সংগঠনটি। কিন্তু এরাই যেভাবে দুর্নীতিবাজ আর ক্ষমতাবান হয়ে উঠেছিল, সে কথা না বললে সমাজতন্ত্র পতনের একটি সূক্ষ্ম কারণ ঊহ্য থেকে যাবে।

জাহীদ রেজা নূর, উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকাঅর্থনীতি বুঝুক আর না বুঝুক, একজন মানুষ বোঝে, কোনটা ভালো, কোনটা মন্দ। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের তরুণদের পড়াশোনা করার জন্য সোভিয়েত ইউনিয়ন যে বৃত্তিগুলো দিত, তাতে মূলত অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের তরুণেরা আসত। এই গরিব দেশগুলোর সন্তানেরা যে পোশাক পরত, যে যন্ত্রে গান শুনত, সেগুলো সোভিয়েত তরুণদের কাছে ছিল অকল্পনীয়। তারা চেষ্টা করত, কোনো না কোনোভাবে বিদেশি ছাত্রদের কাছ থেকে জিনসের প্যান্ট অথবা স্টেরিও সেট কিনতে। পড়াশোনার পাশাপাশি এ রকম একটি ব্যবসা গড়ে উঠল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘিরে। এটা ছিল ওপেন সিক্রেট। কোনো কোনো বিদেশি শিক্ষার্থী স্রেফ এই ব্যবসা করেই আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে উঠল। আর সোভিয়েত তরুণদের হাতে কী করে এত ‘বাড়তি পয়সা’ এল, সেটাও ভেবে দেখার মতো। একটু খোঁজ করতেই চোখে পড়ল, পার্টির ওপরদিকে যাদের অবস্থান, তাদের প্রচ্ছন্ন আশীর্বাদেই গড়ে উঠতে পারছে এই অবৈধ ব্যবসা। মুখে বলা হচ্ছে এগুলো অবৈধ, অথচ সবখানেই তা ঘটছে সবার চোখের সামনে। এই বৈপরীত্যই বুঝিয়ে দিচ্ছিল, সমাজের নৈতিকতা কোথাও কোথাও নড়বড়ে হয়ে উঠছে।

পাঁচ. মানুষ ব্যাংকে টাকা রাখতে পারছে। তার ইচ্ছে হচ্ছে ভালো কিছু কেনার। কিন্তু ভালো কিছু পাবে কোথায়? সেই কোনো এক মান্ধাতার আমলে জামা-জুতা-প্যান্টের ডিজাইন করা হয়েছিল, আসবাবের ডিজাইন করা হয়েছিল, সেগুলোই তো পাওয়া যেত সরকারি দোকানগুলোয়। এর বাইরে একটু শখের জিনিস কিনবে, তার তো উপায় নেই।

সেবা ব্যাপারটা হয়ে উঠেছিল হাস্যকর! মাস গেলেই বেতন, সুতরাং কাজ করলাম কি না করলাম, সেটা খুব বড় ব্যাপার ছিল না। ক্রেতারা নির্ভর করতেন এই সরকারি কর্মচারীদের ওপর, যাঁদের অনেকেই ক্রেতাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতেন।

একঘেয়ে হয়ে যাওয়া পোশাক-আশাক, আসবাব, একই জায়গায় ঘুরতে যাওয়া, বিদেশভ্রমণের সুযোগহীনতা রুশ মানুষকে করে তুলেছিল পৃথিবী-বিচ্ছিন্ন। আর তার মধ্যেই দরিদ্র, মাঝারি দরিদ্র দেশের শিক্ষার্থীদের চকচকে চেহারা সোভিয়েত নাগরিকদের মনে সংশয়ের জন্ম দিত। যদি গরিব দেশের মানুষেরই এ রকম মনকাড়া বাহিরিয়ানা, তাহলে উন্নত বিশ্বের মানুষেরা না জানি কী সুখে আছে—এই ভাবনা যদি একজন সোভিয়েত নাগরিকের মন দখল করে নেয়, তাহলে দোষ দেওয়া হবে কাকে?

ছোট্ট একটি তথ্য: কোকা-কোলা কিংবা সেভেনআপ কিংবা পেপসি যদি হঠাৎ করে পৌঁছে যায় কারও হাতে, তাহলেই সে মানুষ পশ্চিমা বিশ্ব আর সোভিয়েত ইউনিয়নের পণ্যসামগ্রীর পার্থক্য বুঝে ফেলবেন। তখন তাঁর আরও ইচ্ছে হবে, পশ্চিমা বিলাসিতার কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়ার। সে চেষ্টাই করেছে হতভাগা মানুষেরা।

ছয়. অর্থনীতি হোঁচট খেয়েছিল কোথায়, তা নিয়ে আমজনতার মনে জিজ্ঞাসা ছিল, কিন্তু তার উত্তর জানা ছিল কম। দক্ষতাহীন মানুষদের ততোধিক অপরিকল্পিত কারখানায় তৈরি সামগ্রীর গুণগত মান ছিল একেবারে নিচু পর্যায়ের। কিন্তু কে কথা বলবে এ নিয়ে? ছোট্ট উদাহরণ: ট্রাক বানানো হতো কুতাইসির কারখানায়। এত খারাপ মানের ট্রাক পৃথিবীর আর কোথাও বানানো হতো না। ব্যক্তিগত মালিকানায় ট্রাক কেনার কোনো সুযোগ ছিল না। ট্রাক কিনত সরকার। বছরের পর বছর গচ্চা দেওয়া হয়েছে, কিন্তু মান ভালো করার কথা মাথায়ই আসেনি কারও।

এভাবেই কোনো পরিবর্তন ছাড়াই টিকে ছিল কারখানাগুলো। সরকারি কাজ বলতে সেই ছন্নছাড়া সেবার কথা বলতে হচ্ছে, যা শুধু দেনায় জর্জরিত করেছে দেশকে। ধীরে ধীরে খুলে দিয়েছে পশ্চিমের বন্ধ দরজা।

১৯৮৭ সালে গরবাচোভ যখন অর্থনৈতিক সংস্কারের পথ খুঁজলেন, তখন ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের জন্ম হতে লাগল এবং তা সরকারি টাকা শুষে খেতে থাকল। একশ্রেণির মানুষের হাতে কোত্থেকে এসে পড়ল সীমাহীন অর্থ এবং তা দিয়েই তারা ঘটিয়ে দিলেন যাবতীয় অনর্থ।

সাত. সংক্ষেপে কয়েকটা কথা বলে ফেলা দরকার। অর্থনৈতিক কারণগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় ব্যাপারটিই ছিল পরিকল্পিত অর্থনীতির পথটির মধ্যে নানা ধরনের সংকট স্পষ্ট হয়ে উঠতে থাকা। সে সময় তেলের দাম কমে যাওয়ায় দেশের বাজেটে একটা বড় ঘাটতি দেখা দেয়, যা থেকে উঠে আসা সহজসাধ্য ছিল না। মাদকবিরোধী প্রচারণা শেষ পর্যন্ত জনগণকে কোনো দিশা দেখাতে পারেনি; বরং বাড়িতে মদ তৈরি করে সরকারকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েছিল সে দেশের জনগণ। আশির দশকের শুরুতে দেখা গেল দেশের নেতারা বয়োবৃদ্ধ হয়ে পড়েছেন, তাঁদের পশ্চিমা প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় পিছিয়ে পড়ছেন, সমাজতান্ত্রিক আদর্শ নানা কারণে জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে, জাতীয়তার প্রশ্নগুলো বড় হয়ে উঠছে ইউনিয়নভুক্ত বিভিন্ন প্রজাতন্ত্রে, কমিউনিস্ট পার্টির অভ্যন্তরেও দ্বিধাবিভক্তি বেড়ে যাচ্ছে এবং গরবাচোভকে সরিয়ে কীভাবে ইয়েলৎসিনের আবির্ভাব হলো, কী করে তিনি জনপ্রিয়তা পেলেন, সেগুলোর দিকে দৃষ্টি দিলেও একটি স্বপ্ন কেন হঠাৎ করেই মিলিয়ে গেল, তার হদিস পাওয়া যাবে।

স্বপ্নটির অবসান ঘটেছে বটে, কিন্তু প্রতিবছর ২৫ ডিসেম্বর সোভিয়েতফেরত যে শিক্ষার্থীরা ফেলে আসা দিনগুলোকে স্মরণ করেন, তাঁরা জানেন, কারও কারও মনে সত্যিই স্বপ্নটির জন্ম হয়েছিল তা বাস্তবে পরিণত করার প্রত্যয় নিয়ে। প্রত্যয়টি হয়তো মরে যায়নি।

জাহীদ রেজা নূর, উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

৫ ফুট উচ্চতার সুড়ঙ্গ খুঁড়ে বেলারুশ থেকে পোল্যান্ডে ১৮০ অভিবাসী, চাঞ্চল্যকর ভিডিও প্রকাশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

৫ ফুট উচ্চতার সুড়ঙ্গ খুঁড়ে বেলারুশ থেকে পোল্যান্ডে ১৮০ অভিবাসী, চাঞ্চল্যকর ভিডিও প্রকাশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

৫ ফুট উচ্চতার সুড়ঙ্গ খুঁড়ে বেলারুশ থেকে পোল্যান্ডে ১৮০ অভিবাসী, চাঞ্চল্যকর ভিডিও প্রকাশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

৫ ফুট উচ্চতার সুড়ঙ্গ খুঁড়ে বেলারুশ থেকে পোল্যান্ডে ১৮০ অভিবাসী, চাঞ্চল্যকর ভিডিও প্রকাশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

৫ ফুট উচ্চতার সুড়ঙ্গ খুঁড়ে বেলারুশ থেকে পোল্যান্ডে ১৮০ অভিবাসী, চাঞ্চল্যকর ভিডিও প্রকাশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত