Ajker Patrika

রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের ইতিবৃত্ত ও করণীয়

অরুণাভ পোদ্দার
আপডেট : ০১ মার্চ ২০২২, ১২: ১৪
রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের ইতিবৃত্ত ও করণীয়

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কয়েক সপ্তাহ ধরেই দিনক্ষণ দিয়ে বলছিলেন রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের কথা। কিন্তু ভ্লাদিমির পুতিন সরাসরি ইউক্রেন আক্রমণ না করে প্রথমে ইউক্রেনের বিচ্ছিন্নতাবাদী অঞ্চলকে স্বাধীনতার স্বীকৃতি দিয়ে সেই অস্থায়ী সরকারের সঙ্গে মৈত্রী চুক্তি করে সেখানে রুশ সৈন্য পাঠিয়ে পশ্চিমের হিসাব-নিকাশ উল্টে দিলেন।

গত বৃহস্পতিবার ভোরে রাশিয়া তিন দিক থেকে স্থলে-জলে-অন্তরিক্ষে ইউক্রেনকে আক্রমণ করেছে। শুক্রবার পর্যন্ত ইউক্রেনের ১২০ অধিক সামরিক স্থাপনা দখল করেছে রাশিয়ান সেনারা। তারা কিয়েভের উপকণ্ঠে পৌঁছে গেছে প্রায় বিনা বাধায়। আমি রাশিয়ার এই পদক্ষেপের নিন্দা জানানোর আগে প্রথমেই প্রশ্ন রাখি, রাশিয়া ইউক্রেন ইস্যুতে কেন এত স্পর্শকাতর প্রতিক্রিয়া দেখাল? এর উত্তরের মাঝেই লুকিয়ে আছে বর্তমান সমস্যার কারণ ও সমাধান।

প্রথমেই বলে রাখি, পৃথিবীকে আমরা যত গণতান্ত্রিক, মানবিক বলি না কেন, আসলে তা না। উন্নত দেশগুলো মুখে মুখে মানবাধিকার, গণতন্ত্রের কথা বললেও আসলে তাদের কাজকর্মে তা পরিলক্ষিত হয় না। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর সারা বিশ্ব ভেবেছিল স্নায়ুযুদ্ধের শেষে এবার বিশ্ব সত্যিকারের উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাবে। ক্ষুধা, দারিদ্র্য, স্বাস্থ্য ও পরিবেশের প্রতি এই সবুজ গ্রহের অধিবাসীদের নজর দেওয়ার সুযোগ এসেছিল। তখন একটা কথা খুবই শোনা যেত—আমরা সবাই ‘গ্লোবাল ভিলেজ’-এর অংশ। খুবই যুক্তিযুক্ত কথা। আমরা যারা প্রগতির পক্ষে, মানুষের জীবনমান উন্নয়নের পক্ষে, মানবাধিকারের পক্ষে কথা বলি, তারা খুবই আশান্বিত হয়েছিলাম; বরং সোভিয়েত লৌহ জমানার পতনে যারপরনাই খুশিও হয়েছিল অনেকে। কিন্তু সেই মধুচন্দ্রিমা থাকেনি বেশি দিন। কেন থাকেনি তা-ই বলছি এখন।

নব্বইয়ের দশকের প্রথমার্ধে তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রসচিব জেমস বেকার সোভিয়েত নেতা গর্ভাচেভকে কথা দিয়েছিলেন বার্লিন প্রাচীর পতনের শর্তে ন্যাটো আর এক ইঞ্চিও সম্প্রসারিত হবে না। ২০৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পূর্ব ইউরোপে সমাজতন্ত্রের পতনের পর ওয়ারশ জোটের বিলোপ সাধিত হয় স্বয়ংক্রিয়ভাবেই। বিশ্ব আশা করেছিল ন্যাটোও হয়তো বিলুপ্ত হতে চলেছে। কিন্তু আমেরিকা তার কথা রাখেনি; বরং প্রিবাল্টিকের তিনটি দেশ লাটভিয়া, লিথুনিয়া, এস্টোনিয়াকে প্রথমেই ন্যাটো জোটভুক্ত করা হয়। ওয়ারশ জোটের মূল প্রাণকেন্দ্র পোল্যান্ডসহ হাঙ্গেরি, রোমানিয়া, চেক, স্লোভাকিয়া, স্লোভেনিয়াকে ন্যাটোতে অন্তর্ভুক্ত করে তা আরও পূর্ব দিকে সম্প্রসারিত করা হয়। এই সবকিছুই করা হয়েছিল রাশিয়া জুজুর মুলা ইউরোপীয়দের সামনে ঝুলিয়ে। এর মাঝে ১৯৯০ সালে সাদ্দাম হোসেনের কুয়েত দখলকে কেন্দ্র করে মার্কিনরা একদফা একতরফা ক্ষমতা প্রদর্শন করে। শোনা যায়, সাদ্দাম হোসেনকে গোপনে আমেরিকাই প্ররোচিত করেছিল কুয়েত আক্রমণের জন্য। সিনিয়র বুশ সেই সুযোগে কুয়েত মুক্ত করে নিজেকে বিশ্বের সামনে মুক্তির দূত হিসেবে তুলে ধরেন। সেই সুযোগে সৌদি আরবসহ কুয়েত, কাতার, ওমানে মার্কিন ঘাঁটি গড়ে তোলেন। তখন বিশ্বে এককেন্দ্রিক (ইউনি পোলার) বিশ্বব্যবস্থা থাকায় আর সোভিয়েত পতন ও চীনের অর্থনীতি ততটা মজবুত না থাকায় তা মেনে নেওয়া ছাড়া উপায়ও ছিল না। এদিকে বদ্ধ মাতাল ইয়েলৎসিনকে শিখণ্ডী দাঁড়া করিয়ে একে একে পূর্ব ইউরোপসহ সাবেক সোভিয়েত রিপাবলিকগুলোতে প্রো-আমেরিকান সরকার গঠন ও ন্যাটো ব্লকে চালিয়ে যাচ্ছিল পশ্চিম। এর মাঝে ১৯৯৯ সালে রাশিয়ার পটপরিবর্তন হয়। ক্ষমতাসীন হন বর্তমান প্রেসিডেন্ট, সাবেক কেজিবি গুপ্তচর ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি প্রথমেই রাশিয়ার জরাজীর্ণ অর্থনীতির পুনর্নির্মাণে মনোনিবেশ করেন। এর মাঝে বিশ্বে ঘটে যায় ৯/১১-এর মতো সন্ত্রাসী ঘটনা। আল-কায়েদা ২০০১-এর ১১ সেপ্টেম্বর আমেরিকার টুইন টাওয়ার, ওয়াশিংটন ডিসির পেন্টাগনসহ বেশ কয়েক জায়গায় সরাসরি হামলা চালিয়ে আমেরিকাসহ সারা বিশ্বকে চমকে দেয়। শুরু হয় আমেরিকা তথা জুনিয়র বুশের নেতৃত্বে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ। আফগানিস্তানে কোনো প্রমাণ ছাড়াই আক্রমণ, বি-৫২ থেকে বোমা মেরে আল-কায়েদা দমনের নামে আফগানিস্তানকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করার কথা আমরা সবাই জানি। কিন্তু এত কিছুর পরও আল-কায়েদাপ্রধান আর ধরা পড়েন না। তিনি নিহত হন আমেরিকার কমান্ডো হামলায় ২০১১ সালে, খোদ পাকিস্তানের ইসলামাবাদের কাছে। সেই কাহিনি সবার জানা।

এর পরই মার্কিন আর ব্রিটিশরা সাদ্দামকে উৎখাতের কৌশল খুঁজতে থাকে। প্রথমে টুইন টাওয়ার হামলায় জড়ানোর চেষ্টা করলেও তা হালে পানি পায়নি। এরপর জুনিয়র বুশ ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মিলে ইরাকে ‘ম্যাস ডেসট্রাক্টিভ উইপেন’ বা প্রাণঘাতী অস্ত্রের ধোয়া তুলে সরাসরি ইরাক আক্রমণ করেন এবং ইরাককে ধ্বংসস্তূপে পরিণত ও সাদ্দামকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েও কোনো প্রাণঘাতী অস্ত্রের খোঁজ পায়নি। এরপর শুরু হয় আমেরিকার নেতৃত্বে আরব বসন্ত ও গণতন্ত্রের নামে আরেক খেলা। রাশিয়া, চীনের নীরব ভূমিকা আমেরিকা ও ব্রিটেনকে ক্ষমতায় মদমত্ত করে তোলে। যা খুশি তাই করার লাইসেন্স পেয়ে লিবিয়া, সিরিয়ায় হামলা করে। এসব দেশে কখনো বিদ্রোহীদের সাহায্যের নামে, কোথাও আল-কায়েদা, আইএসআই দমনের নামে নিজের সৈন্য নামিয়ে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করে। উদ্বাস্তু হয় লাখো কোটি মানুষ। তার ঢেউ পৌঁছে পশ্চিম ইউরোপেও। এক জার্মানিই কয়েক লাখ সিরীয়, আফগান শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়। কিন্তু সিরিয়ায় আসাদ সরকারকে উৎখাত করতে গিয়ে ২০ বছরের মধ্যে প্রথম আমেরিকা তীব্র প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। সিরিয়ার লাটাকিয়ার বিমানঘাঁটি রক্ষার্থে প্রথমে রুশ বাহিনী সিরিয়ায় হস্তক্ষেপ করে ২০১৩ সালে। কৃষ্ণসাগর ও ভূমধ্যসাগরে রুশ নৌ-উপস্থিতি ও লাটাকিয়া থেকে বিমান আক্রমণ আমেরিকান মদদপ্রাপ্ত আসাদবিরোধী বিদ্রোহী, আইএসআই ও তুরস্কের মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়। এককথায় বারাক ওবামা ও হিলারি ক্লিনটনের পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।

এর মধ্যে একসময় ক্রুশ্চেভের কাছ থেকে উপহার পাওয়া ক্রিমিয়ার জনগণও রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হতে চায়। সেই গণভোটে রুশপন্থীরা জয়লাভ করে। রাশিয়া সরাসরি সৈন্য পাঠিয়ে ক্রিমিয়া তাদের দখলে নেয়। এর পরই শুরু হয় রাশিয়ার ওপর আমেরিকার নেতৃত্বে পশ্চিমের অবরোধ। প্রথমে রাশিয়ার অর্থনীতি বেশ ধাক্কা খেলেও সামলে ওঠে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য থেকে শুরু করে যন্ত্রাংশ, সফটওয়্যার—সবকিছুতেই স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে ওঠে। আর অস্ত্র ও জ্বালানি রপ্তানি করে নিজেদের অর্থনীতি সংহত করে। ভ্লাদিমির পুতিনও আমেরিকার চোখে চোখ রেখে কথা বলতে থাকেন; বিশেষ করে তাঁর নিজ উঠানে ন্যাটোর সম্প্রসারণে তীব্র আপত্তি তোলেন। এদিকে পশ্চিমের প্রত্যক্ষ মদদে তথাকথিত ‘অরেঞ্জ বিপ্লবের’ মাধ্যমে রুশপন্থী সরকারকে উৎখাত করে, একেবারে উগ্র দক্ষিণপন্থীরা ক্ষমতায় আসে। ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগদানের জন্য উদ্গ্রীব হয়ে ওঠে। এদিকে রাশিয়া তার নিজ ঘাড়ে ন্যাটোকে নিশ্বাস ফেলতে দিতে নারাজ। ইতিমধ্যে পূর্ব ইউক্রেনের দানেস্তক ও লুহান্সের রুশ ভাষাভাষী জনগণের ওপর নেমে আসে উগ্র জাতীয়তাবাদী ইউক্রেনিয়ার নির্যাতন। রাশিয়ার সহায়তায় তারা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এই হচ্ছে সংক্ষেপে রাশিয়া আর ইউক্রেন সংকটের মূল।

এখন ভেবে দেখার বিষয়, স্নায়ুযুদ্ধের সময় গড়ে ওঠা ন্যাটো-ওয়ারশ জোটের মধ্যে যখন একটি (ওয়ারশ) বিলুপ্ত হয়ে গেছে, তখন ন্যাটোর পূর্বমুখী সম্প্রসারণ কতটুকু যুক্তিযুক্ত। যেখানে রাশিয়া বারবার বলছে তারা ঘাড়ের ওপর ন্যাটোর নিশ্বাস ফেলতে দেবে না।

ধরুন, আমেরিকার চৌহদ্দি মেক্সিকো বা কিউবা বা সেন্ট্রাল আমেরিকায় যদি কেউ পারমাণবিক মিসাইল বসায়, তবে তা কি আমেরিকা মেনে নেবে? আমরা সবাই কী ভুলে গেছি ষাটের দশকের কিউবার সোভিয়েত মিসাইল বসানোর ইতিহাস? তা হলে সে ক্ষেত্রে রাশিয়া তার নিরাপত্তার কথা বললে কেন পশ্চিমের গাত্রদাহ হয়? ইউক্রেনকে উসকে দিয়ে পশ্চিম এখন তামাশা দেখছে। অনেকটা গাছে তুলে মই কাড়া।

এই সংকট ও যুদ্ধ থেকে বের হওয়ার একমাত্র উপায় এখনো আছে। তা হলো ইউক্রেনকে ঘোষণা দিতে হবে নিরপেক্ষ বাফার স্টেট হিসেবে থাকার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যে ভূমিকা রেখেছিল সুইজারল্যান্ড ও ফিনল্যান্ড। তারা কোনো পক্ষেই না থেকে নিরপেক্ষ ছিল। রাশিয়ারও উচিত তার প্রতিবেশীদের কাছে নিজেকে গ্রহণযোগ্য করে তোলা, বিশ্বাস অর্জন করা। না হলে আমেরিকা তার প্রতিবেশীদের বোঝাতে সক্ষম হবে, ন্যাটো ছাড়া তোমাদের কোনো নিরাপত্তা নেই। সেই ফাঁদে রাশিয়া ইতিমধ্যেই পা দিয়েছে।

মনে রাখতে হবে, বর্তমানের পারমাণবিক অস্ত্রের যুগে যুদ্ধ ভয়ানক পরিণতি নিয়ে আসতে পারে। এই যুদ্ধে প্রকৃতভাবে কেউই জয়লাভ করতে পারবে না। দুই দেশের জনগণকেই যুদ্ধের মাশুল টানতে হবে। যেখানে বিশ্বে কোটি কোটি মানুষ ক্ষুধা, দারিদ্র্য, করোনা মহামারিতে জর্জরিত, সেখানে এই ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধ সাধারণ মানুষের দুর্দশাই বাড়াবে। আর পশ্চিম ইউরোপের উচিত এখন ন্যাটোকে বিদায় করে এই স্নায়ুযুদ্ধের অবসান টানা। সব যুদ্ধবাজ পক্ষকে, সব যুদ্ধ জোটকে, সব অস্ত্র ব্যবসায়ী টাইকুনের লাগাম টানার জন্য বিশ্ব জনমত গড়ার এটাই সময়।

আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের ক্ষুদ্র দেশগুলোর জন্য রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত একটি বড় শিক্ষা নিয়ে এল। তা হলো, কখনো কোনো বৈশ্বিক বা আঞ্চলিক সামরিক জোটে নিজেকে না জড়ানো। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা জোটনিরপেক্ষ ছিলাম। সেই স্নায়ুযুদ্ধের সময় নেহরু, নাসের, টিটোর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা জোটনিরপেক্ষ জোটই এখন আবার আমাদের রক্ষাকবচ হতে পারে।

অরুণাভ পোদ্দার, চিকিৎসক ও সংস্কৃতিকর্মী

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

ব্রিটেনে নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে কোটি মুসলিম, বেশির ভাগই বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের

মা-বাবাকে নির্যাতন, ছেলেকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রাখল প্রতিবেশীরা

আজকের রাশিফল: চায়ের বিল না দেওয়া বন্ধুদের সাহায্য করুন, সন্ধ্যার দিকে ভালো খবর

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

ব্রিটেনে নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে কোটি মুসলিম, বেশির ভাগই বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের

মা-বাবাকে নির্যাতন, ছেলেকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রাখল প্রতিবেশীরা

আজকের রাশিফল: চায়ের বিল না দেওয়া বন্ধুদের সাহায্য করুন, সন্ধ্যার দিকে ভালো খবর

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

ব্রিটেনে নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে কোটি মুসলিম, বেশির ভাগই বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের

মা-বাবাকে নির্যাতন, ছেলেকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রাখল প্রতিবেশীরা

আজকের রাশিফল: চায়ের বিল না দেওয়া বন্ধুদের সাহায্য করুন, সন্ধ্যার দিকে ভালো খবর

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

ব্রিটেনে নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে কোটি মুসলিম, বেশির ভাগই বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের

মা-বাবাকে নির্যাতন, ছেলেকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রাখল প্রতিবেশীরা

আজকের রাশিফল: চায়ের বিল না দেওয়া বন্ধুদের সাহায্য করুন, সন্ধ্যার দিকে ভালো খবর

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

ব্রিটেনে নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে কোটি মুসলিম, বেশির ভাগই বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের

মা-বাবাকে নির্যাতন, ছেলেকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রাখল প্রতিবেশীরা

আজকের রাশিফল: চায়ের বিল না দেওয়া বন্ধুদের সাহায্য করুন, সন্ধ্যার দিকে ভালো খবর

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত