Ajker Patrika

দুর্নীতি কি সহজে দূর হয়?

জাহীদ রেজা নূর
আপডেট : ২৯ আগস্ট ২০২২, ১২: ২০
দুর্নীতি কি সহজে দূর হয়?

গত শতাব্দীর একটা বড় সময়জুড়েই পৃথিবীর নানা দেশে ক্ষমতা পরিবর্তন হতো অভ্যুত্থানের মাধ্যমে। ক্ষমতায় আসতেন কোনো জেনারেল। তিনি ঘোষণা করতেন, দেশ দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে বলে তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করছেন। শুরুর দিকে সাধারণ মানুষ খুব খুশি হতো। ভাবত, সত্যিই এবার দুর্নীতিহীন একটা নতুন জীবনের 
আস্বাদ পাওয়া যাবে।

সেই ক্ষমতা দখলকারী জেনারেল সাধারণ জনগণকে আশ্বস্ত করে বলতেন, কিছুদিনের জন্য ক্ষমতায় বসেছেন, দেশে সবকিছু সিস্টেমের মধ্যে আনতে পারলেই তিনি জনগণের ক্ষমতা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেবেন।

কিন্তু এরপর জনগণের অভিজ্ঞতা হতো ভিন্ন। তারা দেখত, সেই যে জেনারেল সাহেব ক্ষমতায় এলেন, তারপর আলমারিতে উর্দি উঠিয়ে রেখে রাজনৈতিক দল গঠনের দিকে মনোযোগ দিলেন। বিরোধী দলের কর্মকাণ্ড কঠোর হাতে দমন করলেন এবং দেশের একচ্ছত্র অধিপতি হয়ে বসলেন। আর দুর্নীতি? চলতে থাকল বহাল তবিয়তে। 
শুধু জেনারেলরাই নন, অনেক রাজনৈতিক দল বিপুল ভোটে জয়লাভ করে একই ঘোষণা দিয়েছে এবং একসময় দুর্নীতিকে করেছে চলার সাথি।

গত শতাব্দীতে প্রবলভাবে ঔপনিবেশিক শাসন থেকে বহু দেশ যখন বের হলো, তখন অনেকেই ভেবেছিলেন, নিজ হাতে ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের ভার আসার পর এই দেশগুলোর ভাগ্যের পরিবর্তন হবে। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, নিজ দেশের নিয়ন্ত্রকেরা নিয়ন্ত্রণহীনভাবে দুর্নীতিপরায়ণ হয়ে উঠেছেন। রক্ষক হয়ে উঠেছে ভক্ষক। 

আমাদের দেশ দুর্নীতিবাজ দেশের তালিকার ঠিক কোন জায়গায় আছে, তা খুঁজে নেবেন। দেখতে পাবেন, বহুদিন ধরেই আমরা সেরা দুর্নীতিবাজদের তালিকায় পোক্ত আসন নিয়ে বেঁচে আছি। আমাদের সরকারি অফিসগুলোর ইঞ্জিনে তেল দেওয়া না হলে ‘গাড়ি চলে না, চলে না, চলে নারে, গাড়ি 
চলে না...।’

বহুভাবে আমাদের দেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিহাদ চলেছে। এমনকি ইদানীং ধর্মব্যবসায়ীরা এ দেশটাকে মুসলমানদের দেশ বলে গলা ফাটিয়ে দিচ্ছে, কিন্তু বীরপুঙ্গবেরা কীভাবে ঘুষ খাচ্ছে, সেটা তো যে কেউ দেখতে পাচ্ছে। তবে আক্ষেপ হলো, আমাদের দেশে চুনোপুঁটিরা ধরা পড়ে বেশি। মাঝারি আর উচ্চমাপের দুর্নীতিবাজেরা সব সময়ই থাকে আড়ালে। রাশিয়ায় একটা কথা চালু হয়ে গেছে ইদানীং।

লুকিয়ে বলা হচ্ছে, ‘যারা বড় দুর্নীতিবাজ, তারা আইন প্রণয়ন করে, যারা মাঝারি, তারা সে আইন বাস্তবায়নের কাজে নিযুক্ত হয় আর বড়শিতে ধরা পড়ে চুনোপুঁটিরা। দুর্নীতির ব্যাপারে আমাদের দেশ আর রাশিয়া অনেকটা একই ময়দানে যুদ্ধরত।

একটু খেয়াল করলেই দেখবেন, কোনো সরকারি কেরানি বা ড্রাইভার কয়েক কোটি টাকা লোপাট করে ধরা পড়ায় পত্রপত্রিকায় সে কী প্রচার! মনে হয়, দেশের সব সম্পদ এই লুটেরারাই ধ্বংস করে দিলেন। কিন্তু আরেকটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে, তাঁদের চেয়ে একটু উঁচু স্তরের দুর্নীতিবাজদের ধরার কাজটা কেউ করে না। হাজার কোটি টাকা লোপাট করে দেন যাঁরা, তাঁদের নিয়ে না সরকার, না মিডিয়া কেউই সোচ্চার হয় না। 

কেন হয় না, সেটাও অনেকে জানে। কিন্তু তাঁরা কী কারণে ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকতে পারেন, সে ব্যাপারেও বোধ হয় এখন সাধারণ মানুষ জানে।

দুই. রুশ ভাষার শিক্ষক হিসেবে কয়েক বছর আগে রাশিয়ায় গিয়েছিলাম। সেখানে একজন রুশ শিক্ষকের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল। অবসরে দুর্নীতি বিষয়ে কথা হচ্ছিল। তিনি নিজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক হওয়ায় দুর্নীতির নানা কথা তাঁর নখদর্পণে।

আমি ছিলাম মূলত শ্রোতা। তিনিই বলেছিলেন, আমাদের মতো দেশগুলোয় আপাতদৃষ্টিতে যে মানুষদের দিকে শ্রদ্ধার দৃষ্টিতে তাকানো হয়, তাঁদের সবার মধ্যে সততা, মানবিকতা খুঁজে লাভ নেই। তিনি আরও বলেছিলেন, সেলিব্রেটিদের দূর থেকে দেখাই ভালো। কাছে গেলে হতাশ হতে হয়।

এ কথাগুলো ছাড়াও তিনি যা বলেছিলেন, সেগুলো এখনো সস্তা হয়ে যায়নি। বর্তমানের নিরিখে মনে হয়, সে কথাগুলো কেন এখনো আমরা মাথার মুকুট করে রেখেছি? 

দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশ যে লড়াইটা করে থাকে, সেগুলো অল্পবিস্তর আমাদের জানা। তারপরও একটু পৃথিবী ঘুরে দেখা যাক, কোথায় কীভাবে যুদ্ধটা হচ্ছে।

চীনে ঘুষ খাওয়াকে বড় অপরাধ হিসেবেই দেখা হয়। ২০১৭ সালে যখন রুশ শিক্ষক কথাগুলো বলছিলেন, তখন চীনে ঘুষ খাওয়া ও রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি আত্মসাতের শাস্তি ছিল মৃত্যুদণ্ড। বছরে কয়েক হাজার মানুষ ঘুষ ও রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি দখলের শাস্তি পেত। কিন্তু অবাক করা ব্যাপার হলো, এরপরও অনেকেই ঘুষ খাওয়ার লোভ সামলাতে পারত না।

সেখানে বড় বড় আমলা, বড় বড় প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজাররাও ঘুষ নেওয়ার দায়ে শাস্তি পেতেন, তারপরও লুকিয়ে-চুরিয়ে ঘুষ খাওয়া চলত। চীন সরকার আইন করেছে, সরকারি কর্মচারীরা উপহার হিসেবে স্টক এক্সচেঞ্জের কোনো শেয়ার নিতে পারবেন না, রহস্যজনক কম দামে কোনো স্থাবর সম্পত্তি কিংবা গাড়ি কিনতে পারবেন না, সরকারি চাকরিজীবন শেষে বড় কোনো কোম্পানিতে চাকরি করতে পারবেন না।

সে দেশে সামাজিক শিক্ষার ব্যবস্থা আছে। ঘুষের লোভ সংবরণের জন্য নানা ধরনের কোর্স করতে হয়। এত কিছুর পরও দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় চীন রয়েছে। মানুষের লোভ কতটা থাকলে কঠোর আইনের ফাঁক দিয়েও কর্মচারীরা ঘুষ খান!

তিন. দুর্নীতিতে হাবুডুবু খাওয়া হংকং বেছে নিয়েছিল অন্য আরেকটি পথ। তবে সে পথে চলতে হলে মনে সততা আর দেশপ্রেম থাকা দরকার। হংকংয়ে প্রথমেই সরকারি আমলাদের প্রমাণ করতে হয়েছে তাঁদের গাড়ি, বাড়ি, স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি সৎভাবে উপার্জিত টাকায় কেনা হয়েছে। অস্বচ্ছ আয় দিয়ে সম্পত্তি করার প্রমাণ পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে জেলে পোরা হয়েছে সরকারি কর্মচারীকে। কিংবা সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।

দ্বিতীয়ত, সরকারি কর্মচারীদের বেতন এমন একপর্যায় পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে, যেন তিনি নিজের বেতনেই স্বচ্ছন্দে চলতে পারেন। তাঁর যেন ঘুষের টাকার প্রয়োজন না হয়। তৃতীয়ত, সেখানে ঘুষের বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করে তোলার নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়। সবচেয়ে বড় কথা, সাধারণ মানুষ প্রকাশ্যে ঘুষখোরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারে, গণমাধ্যম লিখতে পারে। দেশের নাগরিকেরা এখন বিশ্বাস করে, সরকার সত্যিই ঘুষখোরদের কঠোর শাস্তি দেওয়ার ব্যাপারে আন্তরিক। দুর্নীতিগ্রস্ত দেশটি রাতারাতি এখন দুর্নীতিমুক্ত দেশের মডেল হয়ে উঠেছে।

সিঙ্গাপুরের কথা তো বহু আলোচনাতেই উঠে আসে। আদালতকে অনেক বেশি স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে সেখানে। ফৌজদারি আইনের প্রয়োগ জোরদার করা হয়েছে। বিচারকদের বেতন বৃদ্ধি করা হয়েছে। ঘুষের বিরুদ্ধে কঠোর হয়েছে দেশ। সেখানে একটি নিয়ম আছে। যদি কোনো সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে ঘুষের অভিযোগ ওঠে, তাহলে যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে না পারেন, ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি অপরাধী হিসেবে গণ্য হন। এখন সবাই জানে, সিঙ্গাপুর দুর্নীতির বিচারে পৃথিবীতে কোন অবস্থানে আছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার কোনো নাগরিক যখন কোনো সরকারি দপ্তরে আবেদন পাঠায়, তখন তা উন্মুক্ত থাকে। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একজন সরকারি কর্মচারী কত দিনে কাজটি করে থাকেন, তা জানা হয়ে যায় সবার। তাই এই মুক্ত পরিবেশে চাইলেই একজন সরকারি আমলা বা কর্মচারী সাধারণ নাগরিককে অযথা ঘোরাতে পারেন না। যদিও সিঙ্গাপুর ও হংকংয়ের চেয়ে দক্ষিণ কোরিয়া দুর্নীতি দমনে পিছিয়ে আছে, কিন্তু তারপরও সরকারি অফিসের কাজে গতি আছে সে দেশে।

চার. আমার এক বন্ধু প্রায়ই সিঙ্গাপুরের লি কুয়ান ইউ আর সোভিয়েত ইউনিয়নের স্তালিনের কথা বলে। কঠোর হাতে দেশ চালালে একসময় এই দুর্নীতিবাজেরা কুপোকাত হবে বলে সে বিশ্বাস করে। কিন্তু আমি কেন যেন ওর কথায় ভরসা রাখতে পারি না। স্তালিনের কঠোরতা অনেক সময়ই মানবতার বিপরীতে গেছে বলে আমার মনে হয়, আর লি কুয়ান ইউ যে দেশটি চালিয়েছেন, যাঁদের তিনি পাশে পেয়েছেন, তাতে একটা বড় পরিবর্তন আনতে পেরেছেন। আমাদের দেশে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রক্ষককে ভক্ষকের ভূমিকায় দেখা যায়। যাঁর হাতে থাকবে বিচারের ভার, তিনিই দেখা যাবে গণেশ উল্টে দিয়েছেন। একেবারে শিশুকাল থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সচেতন না হলে দুর্নীতিবাজদের টুঁটি টিপে ধরা যাবে না।

শিক্ষক পিতাকে কায়ক্লেশে জীবনযাপন করতে দেখা সন্তান যখন দেখে, ঘুষখোর কর্মকর্তা হাইব্রিড গাড়িতে করে মহা ফুর্তি করে বেড়াচ্ছেন, তাঁর কোনো সাজা হচ্ছে না, তখন সে কোন পথ বেছে নেবে? গরিবানা সততার পথ, নাকি বিচার বিহীনভাবে হাওয়ায় উড়তে থাকা ঘুষখোরের পথ? 
প্রশ্নটির উত্তর কিন্তু সহজ নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

ব্রিটেনে নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে কোটি মুসলিম, বেশির ভাগই বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের

মা-বাবাকে নির্যাতন, ছেলেকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রাখল প্রতিবেশীরা

আজকের রাশিফল: চায়ের বিল না দেওয়া বন্ধুদের সাহায্য করুন, সন্ধ্যার দিকে ভালো খবর

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

ব্রিটেনে নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে কোটি মুসলিম, বেশির ভাগই বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের

মা-বাবাকে নির্যাতন, ছেলেকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রাখল প্রতিবেশীরা

আজকের রাশিফল: চায়ের বিল না দেওয়া বন্ধুদের সাহায্য করুন, সন্ধ্যার দিকে ভালো খবর

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

ব্রিটেনে নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে কোটি মুসলিম, বেশির ভাগই বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের

মা-বাবাকে নির্যাতন, ছেলেকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রাখল প্রতিবেশীরা

আজকের রাশিফল: চায়ের বিল না দেওয়া বন্ধুদের সাহায্য করুন, সন্ধ্যার দিকে ভালো খবর

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

ব্রিটেনে নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে কোটি মুসলিম, বেশির ভাগই বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের

মা-বাবাকে নির্যাতন, ছেলেকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রাখল প্রতিবেশীরা

আজকের রাশিফল: চায়ের বিল না দেওয়া বন্ধুদের সাহায্য করুন, সন্ধ্যার দিকে ভালো খবর

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

ব্রিটেনে নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে কোটি মুসলিম, বেশির ভাগই বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের

মা-বাবাকে নির্যাতন, ছেলেকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রাখল প্রতিবেশীরা

আজকের রাশিফল: চায়ের বিল না দেওয়া বন্ধুদের সাহায্য করুন, সন্ধ্যার দিকে ভালো খবর

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত