মান্নান হীরা

সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭: ৫১
মান্নান হীরা। ছবি: সংগৃহীত

মান্নান হীরা ছিলেন নাটকের অন্তঃপ্রাণ মানুষ। নাটকের মাধ্যমে তিনি দেশের অবস্থা এবং নিরন্ন মানুষের কান্না তুলে ধরে, তা জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন। তিন দশকের বেশি সময় ধরে তিনি দেশের নাট্যজগতের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। অভিনয় করেছেন মঞ্চে ও টেলিভিশনে। একাধারে তিনি ছিলেন একজন অভিনেতা, নাট্যকার, নির্দেশক ও চলচ্চিত্রকার।

মান্নান হীরার জন্ম ১৯৫৭ সালের ৭ জুলাই সিরাজগঞ্জে। জন্মের শহর থেকে মাধ্যমিক, রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক এবং পরবর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালে তিনি আরণ্যক নাট্যদলের সঙ্গে যুক্ত হন।

নাট্যকার হলেও মঞ্চের অন্যান্য শাখার সঙ্গে তাঁর নিবিড় সম্পর্ক ছিল। তাঁর নাটকের প্রধান উপাদান ছিল নিরন্ন মানুষ ও দরিদ্র জনপদ। বিশেষ করে তাঁর পথনাটকগুলো কৃষিজীবী মানুষ ও তাদের উৎপাদন সম্পর্ককে কেন্দ্র করে লেখা। তীক্ষ্ণ সংলাপের ঘাত-প্রতিঘাতে মান্নান হীরার নাটক যেমন অভিনয় উপযোগী, তেমনি সুখপাঠ্যও। প্রচ্ছন্ন রাজনীতিকে কেন্দ্রে রেখে প্রেম ও অন্যান্য সামাজিক সম্পর্ক আবর্তিত হয়েছে তাঁর নাটকে; উচ্চারিত হয়েছে প্রথাগত সমাজ ও রাষ্ট্রকাঠামো ভেঙে ফেলার বক্তব্য।

যে কজন নাট্যকার এ দেশের পথনাটককে সমৃদ্ধ করেছেন, মান্নান হীরা তাঁদের অন্যতম। তাঁর রচিত রাজনীতি-আশ্রয়ী পথনাটক প্রশংসিত হয়েছে দেশ-বিদেশে। মান্নান হীরার একাধিক নাটক বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়ে দিল্লি, হংকং, পাকিস্তান, নেপালসহ অনেক দেশের শহরের মঞ্চে প্রদর্শিত হয়েছে।

মান্নান হীরা নিজেই বলেছেন, ‘আমি লিখেছি মূলত কূপমণ্ডূকতাবিরোধী, নারী নির্যাতনবিরোধী এবং সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী নাটক’। তিনি ১৫টির মতো নাটক লিখেছেন। তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য নাটকগুলো হলো— ‘ক্ষুদিরামের দেশে’, ‘ফেরারী নিশান’, ‘আদাব’, ‘ঘুমের মানুষ’ ‘মৃগনাভি’, ‘শেকল’, ‘মেহেরজান’, ‘ফুটপাত’, ‘রেফারী’, ‘বাংলার বাদশা’, ‘সুখদৈত্য’, ‘লাল জমিন’ প্রভৃতি। তিনি ‘একাত্তরের ক্ষুদিরাম’ নামের একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন। এ ছাড়া ‘গরম ভাতের গল্প’ ও ‘৭১-এর রঙপেন্সিল’ নামের দুটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন।

২০২০ সালের ২৩ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত