Ajker Patrika

ফাগুনের রঙে রাঙল একুশ

মোক্তার হোসেন
আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১০: ২৬
ফাগুনের রঙে রাঙল একুশ

১৯৪৭ সাল। দীর্ঘ প্রতীক্ষার প্রহর শেষে ইংরেজদের শৃঙ্খলমুক্ত হয়ে নতুন সূর্যোদয় হয়েছিল ভারতীয় উপমহাদেশে। দ্বিজাতিতত্ত্বের খড়ির দাগে সৃষ্টি হয়েছিল ভারত আর পাকিস্তান। সবার দুয়ারে নতুন সূর্যের কিরণ দ্যুতি ছড়ালেও এই তত্ত্বের গোলকধাঁধায় অদৃশ্য এক কালো ছায়ায় নতুন আলোর বিচ্ছুরণ দেখার সুযোগ হয়নি পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের। শুভংকরের ফাঁকির প্রহসনে পূর্ব বাংলার নিরীহ জনগণের স্বাধীনতা আবারও থেকে গেছে অন্তরীণ। পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগণ স্থলাভিষিক্ত হন ইংরেজদের স্থানে। এই পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে বাঙালি জাতির আকাশে নেমে আসে ঘুটঘুটে অন্ধকার কালো এক অভিশপ্ত অধ্যায়ের। আর এই অধ্যায়ের প্রথম শিকার বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্যে লালিত প্রাণপ্রিয় মাতৃভাষা।

সেই দিন অশুভ প্রেতাত্মা ঘোষণা করে—উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। প্রতিবাদে ফেটে পড়ে ছাত্রসমাজ। সমস্বরে স্লোগান তোলে, রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই। আর চাওয়াটাই তো স্বাভাবিক। কারণ, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রায় সব মানুষ আর পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫৪ শতাংশের ভাষা ছিল বাংলা। 

এর পরও পূর্ব পাকিস্তানি শাসকেরা একদিকে চালিয়ে যায় তাদের হীন ষড়যন্ত্র, অন্যদিকে প্রতিবাদী ছাত্রসমাজ সেই ষড়যন্ত্র রুখতে অব্যাহত রাখে তাদের মাতৃভাষা রক্ষার আন্দোলন। এভাবেই সংগ্রামে সংগ্রামে পার হয়ে যায় ৪৭-৫১। 

নতুন পরাধীনতার দিন পঞ্জিকায় সাল তখন ১৯৫২, ফেব্রুয়ারি ২১; বাঙলা ৮ই ফাল্গুন। একদিকে দখিনা বাতাসে সুর তুলেছে ঋতুরাজ বসন্ত, অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগ্রামী ছাত্রসমাজ স্লোগান ধরেছে–রাষ্ট্রভাষা বাঙলা চাই। সেদিন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর কর্ণকূহরে প্রবেশ করেনি বসন্তরে হাওয়ায় মিশে যাওয়া সংগ্রামী জনতার স্লোগান। বাঙালির কণ্ঠ রোধে বেছে নেয় তারা অত্যাচারের নতুন কৌশল। উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার অংশ হিসেবে জারি করা হয় ১৪৪ ধারা। 

কিন্তু তারা বুঝতে পারেনি, এই আইন জারি করেছে কার বিরুদ্ধে। তারা ভুলে গিয়েছিল, সেদিনের ফাল্গুন সাজতে চেয়েছিল লাল পলাশের রক্তিম আভায়। শিমুলের ডালে ডালে গান গাইতে চেয়েছিল হলদে পাখি। পাতাঝরার দিনের শেষে সেদিনের ফাল্গুন পসরা সাজাতে চেয়েছিল নতুন সবুজ পাতার। কৃষ্ণচূড়ার ডালে ডালে নব আনন্দে প্রেমের কবিতা লিখতে চেয়েছিল সেদিনের বসন্ত। এই ১৪৪ ধারা কি ছিল সেসবের বিরুদ্ধে? 

প্রতিদিনের মতো সেদিন সকালের সূর্য ছড়াচ্ছিল সোনালি আলো। আর সেই আলোয় মমতামাখা মায়ের মুখের দিকে স্বচ্ছ চোখে অপলক তাকাতে চেয়েছিল অবুঝ শিশুটি। বহমান নদীর স্রোতের ধারা সেদিন বয়ে চলেছিল মোহনার দিকে প্রতিদিনের মতো। দখিনা ঝিরঝির বাতাসে যখন বসন্তের ফুলের সুবাস বয়ে চলেছিল বাংলার এই প্রান্ত থেকে ওই প্রান্ত। ঠিক তখন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর চাপিয়ে দেওয়া ১৪৪ ধারা ছিল একেবারেই তুচ্ছ খড়কুটোর মতো। ততক্ষণে ছাত্রসমাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছে সাধারণ মানুষ। রাস্তার টোকাইয়ের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে দিয়েছে ইটের দেয়ালে প্রাচুর্যে বেড়ে ওঠা শিশুটিও। তেমনিভাবে নদীর স্রোতের সঙ্গে দখিনা বাতাস মিশে সৃষ্টি করেছিল প্রলয়। মুহূর্তেই ঢাকার রাজপথে জমে থাকা সহস্র বাধার দেয়াল ভেঙে চৌচির। 

এসবের মধ্যে থেমে ছিল না পাকিস্তানি নরপিশাচদের হিংস্র থাবা। আঁচড়ে আঁচড়ে তারা বিক্ষত করেছে সালাম, বরকত, রফিক, শফিকের বুক। বিক্ষত বুকের প্রতিটি রক্তের ফোঁটা তখনো স্লোগান দিচ্ছিল—রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই। ঢাকা মেডিকেল কলেজের উত্তর তোরণে তখন মৃত্যুর মিছিল। তপ্ত দুপুর সেদিন স্তব্ধ হয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতার উত্তপ্ত স্লোগানে। দাবি আদায়ের সংগ্রামে বাংলার আপামর জনতার সঙ্গে তাল মিলিয়েছিল সেদিনের বসন্ত। আর সেই বসন্তের পলাশ, শিমুল আর কৃষ্ণচূড়া অঞ্জলি পেতে নিয়েছে শহীদের রক্তের প্রতিটি কণা। এখনো প্রতিটি ফাল্গুনে তাদের রক্তের আভায় বসন্ত রাঙিয়ে তোলে বাংলার মাঠঘাট-প্রান্তর। আর ফুলে ফুলে প্রতিটি ভ্রমর এখন গুনগুন করে মায়ের ভাষায় গান গেয়ে যায় ছোট্ট শিশুটির সঙ্গে। 

তাই এখন আর পৃথিবীর উত্তর থেকে দক্ষিণ মেরুর অনাগত শিশুটির ভাবতে হয় না জন্মের পরে সে কোন ভাষায় কথা বলবে। কারণ বায়ান্নর ৮ই ফাল্গুনে ভাষার সংগ্রামে সে ফিরে পেয়েছে তার আজন্ম অধিকার। সারা পৃথিবী এখন সুর মিলিয়ে গেয়ে চলেছে ৮ই ফাল্গুনের গান। আর এই ফাল্গুনের সুরের মূর্ছনায় বাঙালির ভাষার সংগ্রামের বীরত্বগাঁথা বেঁচে থাকবে অনন্তকাল। সহস্রকাল পরও প্রভাতফেরিতে বাংলার পথে প্রান্তরে গাইবে সবাই—‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি...’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

৫ ফুট উচ্চতার সুড়ঙ্গ খুঁড়ে বেলারুশ থেকে পোল্যান্ডে ১৮০ অভিবাসী, চাঞ্চল্যকর ভিডিও প্রকাশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গাবতলী সেতু বধ্যভূমি

সম্পাদকীয়
গাবতলী সেতু বধ্যভূমি

মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল পাশবিক হত্যাযজ্ঞ। ঢাকার গাবতলীর পাশের তুরাগ নদের উত্তর পারেই সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নের ইসাকাবাদ গ্রাম অবস্থিত। গ্রামটি থেকে স্পষ্ট দেখা যেত গাবতলী সেতু। সেই গ্রামেরই বয়স্ক এক ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা করেছেন এভাবে, প্রতিদিন রাতের বেলা মিলিটারি আর বিহারিরা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে করে এই সেতুতে মানুষদের নিয়ে আসত। রাত গভীর হলে সেতুর দুই পাশের বাতি নিভিয়ে গুলি চালানো হতো। পুরো যুদ্ধের সময় এখানে এমন রাত ছিল না, যে রাতের বেলা সেখানে লাশ ফেলানো হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পাঁচ দশকের বেশি সময় পার হলেও এখনো এ জায়গাকে বধ্যভূমি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ছবি: সংগৃহীত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

৫ ফুট উচ্চতার সুড়ঙ্গ খুঁড়ে বেলারুশ থেকে পোল্যান্ডে ১৮০ অভিবাসী, চাঞ্চল্যকর ভিডিও প্রকাশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সাহিত্যচর্চা এবং মানুষের প্রতি কমিটমেন্ট

সম্পাদকীয়
সাহিত্যচর্চা এবং মানুষের প্রতি কমিটমেন্ট

সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।

অনেক লেখকই আছেন যাঁরা খুব ধর্মপ্রাণ, কেউবা আবার কমিউনিস্ট ৷ হিউম্যানিস্ট লেখক যেমন আছেন, তেমনই আছেন অথোরিটারিয়ান লেখক।

তবে সে যা-ই হোক, ভালো সাহিত্যিকের মধ্যে দুটো কমিটমেন্ট থাকতেই হবে—সততা আর স্টাইলের দক্ষতা। নিজের কাছেই যে-লেখক অসৎ, যা লেখেন তা যদি তিনি নিজেই না বিশ্বাস করেন, তাহলে সেই লেখকের পতন অনিবার্য।

কোনো লেখক আবার যদি নিজের ভাষার ঐশ্বর্যকে ছেঁকে তুলতে ব্যর্থ হন, একজন সংগীতশিল্পীকে ঠিক যেভাবে তাঁর যন্ত্রটিকে নিজের বশে আনতে হয়, ভাষার ক্ষেত্রেও তেমনটা যদি কোনো লেখক করতে না পারেন, তাহলে একজন সাংবাদিক ছাড়া আর কিছুই হতে পারবেন না তিনি। সত্য এবং স্টাইল—একজন সাহিত্যিকের বেসিক কমিটমেন্ট হলো শুধু এই দুটো।

সূত্র: সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘বাংলাদেশ টুডে’ পত্রিকার মার্চ, ১৯৮৪ সংখ্যায়, সাক্ষাৎকার গ্রহীতা সেরাজুল ইসলাম কাদির, অনুবাদক নীলাজ্জ দাস, শিবনারায়ণ রায়ের সাক্ষাৎকার সংগ্রহ, পৃষ্ঠা-২৭।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

৫ ফুট উচ্চতার সুড়ঙ্গ খুঁড়ে বেলারুশ থেকে পোল্যান্ডে ১৮০ অভিবাসী, চাঞ্চল্যকর ভিডিও প্রকাশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রমনা কালীবাড়ি বধ্যভূমি

সম্পাদকীয়
রমনা কালীবাড়ি বধ্যভূমি

বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে। প্রায় ৫০০ বছর আগে বদ্রী নারায়ণের যোশী মঠের সন্ন্যাসী গোপাল গিরি ঢাকায় এসে রমনায় প্রথমে একটি আখড়া স্থাপন করেন। তখন এ আখড়াটি কাঠঘর নামে পরিচিত ছিল।

পরে সম্ভবত ১৭ শতকের প্রথম দিকে এ স্থানেই হরিচরণ গিরি মূল মন্দিরটি নির্মাণ করেন। কালীবাড়ি মন্দিরটি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়। তারা মন্দির ও আশ্রমটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মন্দিরের সেবায়েতসহ প্রায় ১০০ সন্ন্যাসী, ভক্ত এবং সেখানে বসবাসরত সাধারণ মানুষ নিহত হন। যদিও এখন বধ্যভূমির কোনো চিহ্ন নেই। তবে সেটাকে বধ্যভূমি হিসেবে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ছবি: সংগৃহীত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

৫ ফুট উচ্চতার সুড়ঙ্গ খুঁড়ে বেলারুশ থেকে পোল্যান্ডে ১৮০ অভিবাসী, চাঞ্চল্যকর ভিডিও প্রকাশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আমাদের অর্জন অনেক

সম্পাদকীয়
আমাদের অর্জন অনেক

...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।

এগুলো নিয়ে কোনো বিতর্ক আছে বলে মনে করি না। কিন্তু বর্তমানে এটা কী হচ্ছে? যদি বলি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সঠিক পথে এগোচ্ছে না, তাহলে সেই না এগোনোর কারণটা কী, তা নিয়ে কেন অর্থপূর্ণ আলোচনা হচ্ছে না? আমি আপনাদের কাছে প্রশ্ন আকারেই উত্থাপন করছি। আমাদের অর্জন অনেক। আজ আমাদের গার্মেন্টসশিল্প বিশ্বে তৃতীয়। আমরা খুব দ্রুত দ্বিতীয় বা প্রথমের কাতারে চলে যাব। আমাদের লাখ লাখ ছেলে-মেয়ে বিদেশে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে দেশে টাকা পাঠাচ্ছে। প্রতিবছর কৃষির উৎপাদন বাড়ছে। কিন্তু এসবের পরেও কী হচ্ছে? বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে।

... পাকিস্তানিদের কথা আর কী বলব! আক্ষরিক অর্থেই তারা তখন আমাদের পা ধরেছিল। ‘তোমরা এদের ছেড়ে দাও, আমরা নিজের দেশে নিয়ে গিয়ে এদের বিচার করব।’ ১৯৫ জনকে আমরা চিহ্নিত করি তখন। বঙ্গবন্ধু তখন রাশিয়াতে ছিলেন, তারা সেখানে বঙ্গবন্ধুর কাছে লোক পাঠিয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে বলেছে, ‘আপনারা যদি এ বিচার করেন তাহলে ভুট্টোর কল্লা থাকবে না। আমাদের কাছে ফেরত দিন, আমরা এদের বিচার করব।’ এটা সে সময় ‘লন্ডন টাইমস’-এ প্রকাশিত হয়েছে। একেবারে তারা আন্ডারটেকিং দিয়েছে, ‘ছেড়ে দিন, আমরা বিচার করব। আর কোনো সাক্ষী লাগলে তোমাদের ডেকে পাঠানো হবে।’ শিল্পকলা একাডেমির যে বিল্ডিং ভেঙে এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট হয়েছে, ওই বিল্ডিংয়ে ভর্তি ছিল স্টেটমেন্টগুলো। এগুলো কী হয়েছে, কে গুম করেছে, আমি জানি না। এর মধ্যে অনেক সরকার এসেছে, গেছে। তবে আমরা খুব পরিশ্রম করেই এগুলো সংগ্রহ করেছিলাম।

সূত্র: শারমিনুর নাহার কর্তৃক ড. কামাল হোসেনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ; ‘সময় সমাজ ও রাজনীতির ভাষ্য’, পৃষ্ঠা: ৩১-৩২।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

৫ ফুট উচ্চতার সুড়ঙ্গ খুঁড়ে বেলারুশ থেকে পোল্যান্ডে ১৮০ অভিবাসী, চাঞ্চল্যকর ভিডিও প্রকাশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত