রচি মম ফাল্গুনী

সানজিদা সামরিন, ঢাকা
আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৭: ১১
Thumbnail image

যেটুকু কাছেতে আসে ক্ষণিকের ফাঁকে ফাঁকে
চকিত মনের কোণে স্বপনের ছবি আঁকে
যেটুকু যায়রে দূরে, ভাবনা কাঁপায় সুরে
তাই নিয়ে যায় বেলা নূপুরের তাল গুনি
একটুকু ছোঁয়া লাগে, একটুকু কথা শুনি
তাই দিয়ে মনে মনে রচি মম ফাল্গুনী। 

শাড়ির পাড়ে ছন্দ তুলে মেয়েটি হেঁটে গেল তার সামনে দিয়ে। ‘কিছুতেই কিছু যায় আসে না মুখভঙ্গি’ নিয়ে বড্ড কাজের ভান ধরে মনিটরে মুখ গুঁজে আছে ছেলেটি। কিন্তু মেয়েটির খোঁপায় জড়ানো রজনীগন্ধার গন্ধ নির্ঘাত বুকে বাসা বেঁধে ফেলেছে তার। পড়ার ঘরের ইন্টেরিয়রে যেন ফুটতে লাগল বসন্তের ফুল, গাইছে তখন কোকিল…। আর মেয়েটি? তার সামনে দিয়ে হেঁটে আসার পর অন্তত দুই মিনিট তো সময় লেগেছে নিজেকে শান্ত করতে। 

একটা সময় ছিল, যখন তারা দুজনেই খুব স্বাভাবিক ও সাবলীলভাবে দুজনের সঙ্গে কথা বলত। ছেলেটা এক ক্লাস ওপরে পড়ে মেয়েটির। দুয়েকবার চা পর্বও হয়েছে, প্র্যাকটিকাল ও পড়াশোনার প্রয়োজনে। মানুষ হিসেবে দুজনই যে দুজনকে পছন্দ করে, সেটা বেশ ভালোভাবেই নিজেরা জানত। 

কল্পস্বর্গের জগৎটা আসলে এমনই, যেখানে অবাধ স্বাধীনতাকিন্তু এক মৌসুম না যেতেই এমন কেন হলো? দুজনই কথা বলা কমিয়ে দিল একে অপরের সঙ্গে। ছেলেটি হঠাৎ এসে যদি কখনো পাশে বসেও, মেয়েটির শ্বাসরোধ হয়ে আসে, কথা আটকে যায়। মন বলে, ‘আমি একটু একা থাকতে চাই।’ অথচ দেবদারুর মতো লম্বা এই পুরুষকে তো কখনোই সে এভাবে ভাবেনি, ভাবতেও চায়নি। কারণও তো নেই, না? তবে কবে যে ছেলেটির চোখে ভালোবাসার চিঠি পড়ে নিল সে, আসলেই কি তাই লেখা ছিল যা সে ভেবে নিচ্ছে। ভুল নয় তো! এসব হিসাব কষতে কষতেই বেলা কাটে মেয়েটির। 

কখনো আনন্দ ভর করে, কখনো অবাঞ্ছিত বলে ভূত তাড়ানোর মতো মগজ থেকে তাকে তাড়িয়ে দিতে মন চায়। আবার চারপাশের অবহেলায় মনের অবলম্বনও খুঁজে নিতে ইচ্ছে হয়—প্রিয় সেই মানুষটির চাহনিতে, তার হাতের গোটা গোটা অক্ষরে, রূপালী চুলের বাঁকে। ইউটোপিয়ার জগৎটা আসলে এমনই, যেখানে অবাধ স্বাধীনতা। যেখানে মন বোঝার মতো বন্ধু পাওয়া যায়, আরেকটু গভীরে গেলে প্রিয়তমর সাদা টি-শার্ট থেকে এরিয়েল ডিটারজেন্টের সুগন্ধও স্পষ্ট নাকে এসে লাগবে। সত্য়ি বলছি! 

সে যাই হোক, এমন করে নেমে এল বর্ষার দিন। ঘুরে বেড়াতে ঘরের বাইরে আর যেতে মন চায় না, তখন বিস্তর ব্রহ্মাণ্ড তো হৃদয় জুড়েই। মনে মনে স্নান কর ভেজা বরষায়, হৃদয়ে যখন অকূলপাথার, তখন চুপিসারে আশ্রয় নাও প্রিয়তমর বুকে। কারই বা সাধ্য আছে সে কথা জানার, বাধা দেওয়ার? শ্রাবণ আসতেই প্রবল বৃষ্টির ধারা যখন নেমে এল, খোলা বারান্দার দরজায় বসে কেবল একটি গানই কানে সুধা ঢালছিল মেয়েটির ‘এমনও দিনে তারে বলা যায়।’ 

মনে নিভৃতে যে ফাগুন নামে তাকেও কি প্রেম বলে না?ইউটোপিয়া বা কল্পস্বর্গের এ প্রেম, হৃদয়ে ঘনীভূত হয়, নিভৃতে। বলতে নেই, জানতে দিতে নেই, চাইতে নেই কোনো পরিণতির। ‘কেবল আঁখি দিয়ে আঁখির সুধা পিয়ে হৃদয় দিয়ে হৃদি অনুভব।’ 

‘হৃদয় দিয়ে হৃদি অনুভব’ এক হৃদয় থেকে অন্য় হৃদয়ে সুখানুভূতির লেনদেন। শব্দ, বাক্য়, যোগাযোগের ঊর্ধ্বে যে বিরাজ করে তারই নাম প্রেম। আবার সামনের মানুষটি যখন উদ্দীপক হয়ে ওঠে তখন কারও মনে নিভৃতে যে ফাগুন নামে তাকেও কি প্রেম বলে না? 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত