Ajker Patrika

খাসি তার সঙ্গে ঘুমাবে

শাহনাজ চৌধুরী
খাসি তার সঙ্গে ঘুমাবে

একেবারে ছোটবেলার ঈদটা ছিল অন্যরকম। আমার যখন পাঁচ বা ছয় বছর বয়স, সে সময়ের কথা মনে আছে। আমার আব্বা ওই সময়ে একটা গরু জবাই দিত। গ্রামের মানুষদের মাঝে মাংস বিলিয়ে দিত। আমাদের গ্রামে কোনো ফ্রিজ ছিল না। সব মাংস বিলানোর পরে অধিকাংশ মাংস রান্না করা হতো। আমাদের বাড়িতে দেখতাম অনেক মাংস জ্বাল দিয়ে দিয়ে রাখা হতো। ওইটার একটা অন্যরকম আবেশ ছিল। ঈদ সত্যিই অনেক আনন্দের ছিল।

পুরো বাড়িতে মাংস-মাংস গন্ধ থাকত। কয়েক দিন টানা মাংস খেতাম। এমনও হতো দরিদ্রদের খাওয়ানোর জন্য বাড়িতে বড় পাতিলে খিচুড়ি রান্না করা হতো এবং কলাপাতায় করে খিচুড়ি ও মাংস বণ্টন করা হতো। কী যে ভালো লাগত তখন!

যখন বড় হলাম। বিয়ের পরও আমার ঈদ ওভাবেই চলছে। শ্বশুরবাড়িতে পুরো একটা গরু কোরবানি দেয়। আমার বিয়ে হয়েছে, যখন আমি নবম শ্রেণিতে পড়ি। সালটা ছিল ১৯৮৩। আমার বিয়ে হয়েছে ভোলায়। শ্বশুরবাড়িতেও ফ্রিজ ছিল না। সেখানেও বাবার বাড়ির মতো ফিল হতো। আমার বাবার বাড়ি ভোলার একটা গ্রামে। আর শ্বশুরবাড়ি ভোলা শহরে। 

শহরে কিন্তু গ্রামের মতো অত ভিক্ষুক ও দরিদ্র মানুষ দেখিনি। ছিল সংখ্যায় কম। গরুর মাংস বিলিয়ে দেওয়ার পর সব মাংস রান্না করে কিংবা অল্প মসলা দিয়ে জ্বাল দিয়ে রাখা হতো। ১৯৯২ সালে আমি প্রথম ফ্রিজ কিনি। ওই ফ্রিজ কেনার পর ঈদ আর আগের মতো রইল না। বিলি করে দিচ্ছি। বড় হাঁড়িতে রান্না করছি। কিন্তু বাকি মাংস ফ্রিজে তুলে রাখছি। আগের মতো ঈদের অনুভূতি পাই না। অনেকটাই ফিকে হয়ে গেছে। ছোটবেলার ঈদটা অনেক মিস করি।

এখনকার বাচ্চারা তো দেখেও না উঠানে ইট দিয়ে চুলা বানিয়ে অনেক বড় হাঁড়িতে মাংস রান্নার ব্যাপারটা। হয়তো ছোট পাতিলে রান্না হলো। দু-এক দিন মাংস খাওয়া হলো। তারপর মাছ খাওয়া হয়। যেহেতু ফ্রিজে সব মাংস রেখে দেওয়া হয়। আগে সাত দিন পর্যন্ত যেন ঈদ-ঈদ একটা আবেশ থাকত। এখন নেই। আগে ঈদের দুদিন আগে থেকে পেঁয়াজ-রসুন মসলা কাটাকাটি করতাম। তারপর বাটার ব্যবস্থা করতাম। অনেক মসলা লাগত। এখন আগেই মসলা বেটে ফ্রিজে রেখে দিই। আর মাংস কম রান্না হলে এত মসলাও লাগে না।

আগে দেখা যেত, গ্রামে সাত দিন আগেই গরু কিনে ফেলেছে। যারা খাসি কোরবানি দিত, তারাও আগে থেকেই কিনে রাখত। ওই সময়ে গরু ও খাসিকে ঘাস আর খড় খাওয়ানোর বিষয়টাও মজার ছিল। গ্রামে দেখেছি অন্যরাও আমাদের গরু-খাসিকে ঘাস লতাপাতা খাওয়াত। তখন রাত ১০টা মানে অনেক রাত ছিল। সবাই ৭-৮টার মধ্যে ঘুমিয়ে যেত। গরু পাহারা দেওয়ার জন্য আমরা ১০টা-১১টা পর্যন্ত জেগে থাকতাম। গরুকে গোসল করানো, খাওয়ানো বিরাট মজার ছিল। গাছ থেকে ডাল কেটে এনে গরুকে খাওয়াতাম। আম্মা গরুকে ভাতের মাড় খেতে দিত। কিন্তু আমরা মাড়ের সঙ্গে ভাতও দিতাম। মনে হতো, গরুকে সব খেতে দিই। তাহলে সে আরও হৃষ্টপুষ্ট হবে। তখন তো বুঝতাম না গরু ভাত খায় না!

ওই সময় গরুকে সাজানোর বিষয়টাও খুব উপভোগ করতাম। মালা কিনে আনা হতো। আমার তো ইচ্ছে হতো গরুকে জামা কাপড় পরাতে, গরুর ঘরে মশারি টাঙিয়ে দিতে। 

এখন আমার ছেলেও কোরবানি খুব উপভোগ করে। সে তো বলে, আমার গ্যারেজে অনেক গরু থাকুক। আমার ছেলে একবার খাসি নিয়ে এসে ঘরের ভেতর রেখেছিল। সে বলছে, খাসি তার সঙ্গে ঘুমাবে। খাসিকে খাটের ওপর রেখেছে। আমি তো দেখে অবাক। তড়িঘড়ি করে নামালাম এবং সিঁড়ির সামনে রাখলাম। কিন্তু সে কিছুতেই খাসিকে বাইরে রাখবে না। তারপর ওয়াশ রুমে রাখতে হলো। দুদিন পর্যন্ত এভাবেই ছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত