ইজাজুল হক

‘নার হেয়ুতুন কাজালভানাস’ (কাজালভানাসে আগুন) ফারুক নাজকির সেরা কীর্তি। কাশ্মীরী ভাষার এই কাব্যগ্রন্থ তাঁকে ১৯৯৫ সালে ভারতের সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কার ‘সাহিত্য অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড’ এনে দেয়। কাশ্মীরি সাহিত্যে মৌলিক কবিতা রচনার পাশাপাশি উর্দু-হিন্দি সাহিত্যের বেশ কিছু ধ্রুপদি কবিতার অনুবাদও তিনি করেছেন, যেখানে তিনি নিজস্বতা ধরে রাখার প্রয়াস চালান। কাশ্মীরি সাহিত্যে ইতিবাচকতা, আধুনিকতা ও রোমান্টিকতার নতুন মাইলফলক হয়ে থাকবে নাজকির এসব কবিতা।
‘নার হেয়ুতুন কাজালভানাস’ নামটি চয়ন করেন বিখ্যাত কাশ্মীরি সাহিত্যিক মাস্টার জিন্দা কৌলের ‘নার হা!’ (সাবধান! আগুন!) কবিতা থেকে। বইয়ের সূচনাপাতায় মাস্টারজির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতাও নিবেদন করেন। এই কাব্য দশকের পর দশক জ্বলতে থাকা নাজকির জন্মভূমি কাশ্মীরের দুঃখ, বেদনা, অস্থিরতা, ভয়, ক্ষোভ, অসহিষ্ণুতা, আশা ও হতাশার কথা বলে। বইয়ের নাম থেকে সেই তীব্র আগুনের আঁচ আমরা অনুভব করতে পারি। নাজকি লিখছেন—
‘কাজালভানাস জ্বলছে!
এবং এখানে রয়েছে বসন্তের আগমনী হাহাকারও।
জ্বলছে আগুন এ হৃদয়েও—
‘আগুন’-এর সঙ্গে; কান্না সর্বাঙ্গে।’
কাশ্মীরে বিরাজমান এই আগুন-আগুন খেলার সামনে নিদারুণ অসহায় নাজকি। দরজার ফাঁক গলে বাতাসের ডানায় ভর করে বসতঘরের ভেতরে ঢুকে পড়ছে সংঘাত-অস্থিরতা। ইট দিয়ে সেই দরজা এঁটে দিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না। বরং অনেক মানুষের মতো কবি নাজকিও দরজা-বাতাসের ইঁদুর-বিড়াল খেলার এই উপদ্রব থেকে বাঁচতে ভিন্ন পথে ঘরে প্রবেশ করছেন। মানুষজন আজকাল জানালা দিয়ে চলাচল শুরু করেছে। এমন অভিনব উপমায় কবি সময়ের সংকটকে আমাদের সামনে স্পষ্ট করে তোলেন। পড়ুন—
‘আবার বাতাস আসে, দরজা ঠেলে করে আধখোলা
ওঠো, রেখে এসো দরজার পেছনে ইটটি আরেকবার
আজকাল জানালা দিয়েই ঢুকে পড়ছে লোকজন
দরজাগুলো এক সময় কত শ্রদ্ধাই না ভোগ করত।’
১৯৯০ সাল থেকে চলে আসা কাশ্মীরের ত্রাসের জগৎকে খুল্লম খোলা বয়ান করেন নাজকি। এ ক্ষেত্রে কোনো রাখঢাক করার প্রয়োজন মনে করেন না। আতঙ্কের মুহূর্ত বয়ানে কবি অত্যন্ত স্পষ্টবাদী, দ্ব্যর্থহীন। তবে কবির সব দুঃখের আশ্রয় কাশ্মীরের প্রকৃতি, ফুল ও তুষার এবং অরণ্য। পড়ুন—
‘দরজা-জানালায় ঝুলে থাকে আতঙ্ক
উঠোনে অপেক্ষা করে মুখোশপরা শয়তান
চিনার গাছের খোঁড়ল থেকে মিউমিউ ডাকে বিড়াল
শব্দের জন্য তোতলাই আমরা—কী করে কাঁদব
যৌবনোচ্ছল আইরিশ লুটিয়ে পড়ে ধুলোয়,
মাটির তৈরি ছাদে বন্য হয়ে ওঠে টিউলিপেরা
এবং মারমুখী বাতাস ওড়ে—যেভাবে ক্ষুধার্ত সিংহ
মধ্য জানুয়ারিতে নেমে আসে লোকালয়ে
অরণ্য ছেড়ে, শীতের তুষারপাতের পর
এবং হিংস্র হয়ে ওঠে আরও, প্রতিটি শিকারের পর।’
দুই.
সাধারণ মানুষের জীবনে অকথ্য ভোগান্তি নিয়ে আসা ধ্বংসের নতুন আড়তদারদের অপকর্ম অত্যন্ত নির্মোহ ভঙ্গিতে তুলে আনেন। বিদ্রূপ, কটাক্ষ কিংবা শ্লেষ মেশাতেও যেন কবির আত্মমর্যাদায় লাগে। কতটা নির্লজ্জ হলে খুনের পর খুন করেও ঘাতকেরা নিজেদের কাশ্মীরি পরিচয় দিতে পারে—নাজকি অবাক হন। তিনি লিখেন—
‘এখানে, নদীতীরে
(সদ্যবিবাহিত) ছেলেদের রক্তমাখা কাপড় ধুতে আসেন মায়েরা
আগুনে ভস্ম হয় নববধুদের দামি পোশাকও
এবং দেখো—স্তন্যদায়ী মায়েরা মরছে অনাহারে
অথচ ঝিলম বয়ে চলে আপন মনে
সরাইখানায় তালা লাগিয়ে দেয় তারা
নজরদারির আওতায় আনে মাজার ও সৌন্দর্য
গুন্ডারা তছনছ করে পুরো শহর
ঝকঝকে দিন বাঁক নেয় বিমর্ষ সন্ধ্যায়
জাফরানের খেতে
লজ্জা দিতে খুনিরা রাখে ফুল—হিমলের দেহের মতো
এবং দেখো—কী করে ঘাতকেরা উচ্চস্বরে গাইছে লালভাখ
এবং আবৃত্তি করছে রেশিনামা থেকেও…।’
সশস্ত্র তৎপরতার মাতাল হাওয়া কাশ্মীরে হিংসা-অসহিষ্ণুতার উন্মত্ত ঢেউ তোলে। একজন খাঁটি কাশ্মীরি হিসেবে কবির আত্মা বেদনায় পুড়ে ছারখার হয়; ভেঙে খানখান হয় নির্মল কাচের হৃদয়। উপত্যকা থেকে হিন্দু অভিজাত শ্রেণির পণ্ডিতদের নির্বাসন, খুন ও তাদের ওপর চলা ধ্বংসযজ্ঞ তাঁকে অত্যন্ত ব্যথিত করে। তিনি উপলব্ধি করেন, হিংসার বিষাক্ত বায়ু কাশ্মীরের বহুদিনের পুরোনো বহুরৈখিক সাংস্কৃতিক চাদরকে ছিন্নভিন্ন করে দিচ্ছে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল কাশ্মীরিকেই এই মাতাল হাওয়া বিভাজন, দুঃখ ও হতাশার রাজ্যে হারিয়ে দিচ্ছে। কাশ্মীরের মানুষের শরণার্থীশিবিরে দেখার দুঃখ ভুলতে পারেন না তিনি। তিনি লিখেন—
‘চোখের আড়ালে স্বপ্ন লুকিয়ে
তাঁবুর ছায়ায় দিন কাটায় তারা
দিনের সূর্যে দেহ মুড়িয়ে এবং
রাতের বালিশে গোলাপ রেখে
আশা করেছিল এক সাধারণ ঘুমের।
অথচ সাপগুলো ক্রমেই তাঁবুর কাছে আসে
পৃথিবী পরিণত হয় জ্বলন্ত হাপরে
আকাশ থেকে ঝরে পড়ে আগুনের গোলা
আমরা কোনো গান শুনি না—
নাম ধরে কেউই ডাকে না তাদের
ফুলের পাপড়ি হাতে দেবী পুজো করে না কেউ
অংশ নেয় না কেউ চারার-ই-শরিফের ওরসে
আমাকে রুখো না—
অনুভূতিগুলো ঢেলে দিতে হবে আমার।’
সংঘাত-সহিংসতায় ধীরে-ধীরে ম্লান হতে থাকে কাশ্মীরের ধর্মপ্রাণ মানুষের আরাধনার স্বর্গীয় সুর। রক্তের নেশায় মাতাল ঘাতকেরা মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাপক বাধাগ্রস্ত করে। ঘর থেকে বেরোনোর জো নেই মানুষের। উপত্যকা যেন অমাবস্যার রাতের সুনসান ভুতুড়ে কবরস্থান! নাজকির ভাষায়—
‘ছাদের ওপর জ্বলজ্বল করছে টকটকে লাল পপি
তবে আফসোস! বাতাসে বলছে ভীতিকর তরঙ্গ
শীতের রাতে, ক্ষুধায় মাতাল এক সিংহ
শিকারের খোঁজে হামলে পড়ে লোকালয়ে
ভারী করে তোলে নিশ্বাস অসুস্থ আকাঙ্ক্ষারা
এবং ধেয়ে আসে দরজা-জানালা অভিমুখে
সেঁটে রাখা মেহেদির কৌটাটি খেয়াল করে না কেউ
জিন-তাড়ানো ভেষজের ধোঁয়াও কেউ শুঁকে না
রক্ত ও কাদা মিলেমিশে একাকার ভেজা পিণ্ডে…
শুকনো নদী বানের অপেক্ষায়, শিরায় ফুটছে কালো রক্ত
এবং সিঁদুর মাখা সাদা পাথর…
শহরের উপকণ্ঠে ওঠে দূষিত বর্জ্য
এবং বাতাসেরা হাহাকার করে সুনসান কবরস্থানে।’
তিন.
১৯৯০-২০০০ সময়ের অশান্তিঘেরা কালো দশকে, যখন কাশ্মীর মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়, তখনো নাজকি শান্তির আশায় বুক বাঁধেন। ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে রচনা করতে থাকেন কবিতা। দুঃখ, হতাশার নর্দমা মাড়িয়ে কবি উঠে আসেন গভীর নীল ও নির্মল আকাশে। সেখান থেকে প্রভাতের নতুন আলো, হলুদ পাতাঝরা বসন্ত এবং মানবকল্যাণের গান গেয়ে যান। তিনি মনে করেন, এসব দাঙ্গা, হাঙ্গামা, খুনোখুনির রাজনীতি কাশ্মীরের ঐতিহ্য নয়। বরং রক্তের এই জলোচ্ছ্বাসের তোড়ে ভেসে গেছে এই স্বর্গীয় উপত্যকার ৫ হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সহিষ্ণু ঐতিহ্যের সৌধ। নাজকি বলেন—
‘আমাকে রুখো না—হৃদয়টা বের করে আনতে হবে আমার
এই বিজন মরুর বুকে ফুটবে গোলাপ
কাল ফুল ফুটবে এ পরিত্যক্ত বাগানেও
সেই ফুলের সঙ্গে আমাকে কথা বলতে হবে নির্জনে
চোখজোড়া আমার উলার হ্রদের পানির মতো উতলা
তাদের জানাতে হবে আমাদের সরল আর্তনাদ
জানাতে হবে—বসন্তের বুলবুলি গাইছে এখনো সুরেলা গান
নৌকাকে নিরাপদ কূলে নিয়ে যাবে এই মাতাল ঝড়
তাদের জানাতে হবে
এই দেহের গভীরে
স্ফুরণ ঘটতে চলেছে একটি আগ্নেয়গিরির
আমাকে রুখো না—
ভেতরের সবকিছু আমাকে ঢেলে দিতে হবে।’
নাজকি বুঝতে পারেন না, কেন হলুদ পাতাঝরা বসন্ত তাঁর পণ্ডিত বন্ধুদের উপত্যকায় ফিরিয়ে আনতে পারে না। কাশ্মীরের মানুষ কেন এই স্বর্গ ছেড়ে সমতলের অসমতল জীবনযাপন করবে? তাদের অনুপস্থিতি কবিকে পোড়ায়। কাশ্মীরের তুষারাবৃত শীত কিংবা সোনালি পাতামোড়ানো বসন্তও কবির এই দুঃখ ভোলাতে পারে না। তাঁর ভাষায়—
‘আবার আমাদের ফিরে তাকাতে হবে দূর অতীতে?
বসন্ত আমাদের আসবে আগের মতো
আগের মতোই উল্লাস করবে ফুরফুরে হাওয়া
ফুলের প্রস্ফুটিত কলি বুকে নিয়ে
এবং শরৎ আস্থার বসন্তকে বিদ্রূপ করে বলবে—
‘পৃথিবী পোশাক পরে না—তুলো উৎপাদন করে কী হবে!’
ঘ্রাণ-সৌরভে অবগাহন করে
আবারও এই পথে আসবে বসন্ত
কয়েকটি সুখবর নিয়ে
আহা! ঘর থেকে বেরোনো মানুষগুলো
আর কখনো ফিরে আসেনি
অথবা এই বসন্ত পায়নি তাদের কোনো খোঁজ।’
চার.
ভূস্বর্গ কাশ্মীরকে এই দুর্দশা থেকে মুক্ত করার জন্য এক মহামানবের পথ চেয়ে দিন গোনেন নাজকি। কাশ্মীরের আকাশ, মেঘ, পাহাড় ও প্রকৃতির মাঝে তাঁকে খুঁজে ফেরেন। রাতের ঘুমোনোর সময় খোলা রাখেন দরজা-জানালা—পাছে তিনি এসে পড়েন! কবিতার ভাষায় পড়ুন—
‘খুঁজে ফিরি তাঁকে প্রখর সূর্যের নিচে
তুষারবাহী বাতাসে; তাঁকে খুঁজতে ছুঁই আকাশ
খোলা রাখি ঘরের দরজা-জানালা
আমাকে বলো—কখন তিনি এসেছিলেন এবং কোন গন্তব্যে করেছেন যাত্রা।’
কিন্তু মহামানব আসে না; শেষ হয় না অপেক্ষার প্রহর। অসহায় নাজকি আপসের পথে হাঁটেন। অসহায়-নিঃস্ব কাশ্মীরি মানুষের মুখ নাজকি ক্ষমতার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত হতে চান না। ক্ষমতা ক্ষমতাবানদের হাতেই থাকুক—তবে আমাদের, সাধারণ কাশ্মীরিদের শান্তিতে থাকে দাও। তিনি লেখেন—
‘তোমার সঙ্গে কী করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করি—সেই যোগ্যতা কি আমার আছে?
ঘোড়ার পিঠে তুমিই নাহয় চড়ো
আমাকে তোমার ওড়ানো ধুলো মেখেই সুখী থাকতে দাও।’
কবি দুই পক্ষকে মিলিয়ে দেওয়ার চেষ্টাও করেন। অতীতের দুঃখ ভুলে সবার সঙ্গে মিলেমিশে সুখে দিন কাটাতে চান। উদার বক্ষ খুলে ঘোষণা দেন ক্ষমার। তিনি বলেন—
‘চলো ফের নতুন করে দিল খুলে হাসার ওয়াদা করি
তোমরাও মনে রাখবে না বিভীষিকার দিনগুলো
আমিও গোপন জখম বলে বেড়াব না যুগ-যুগান্তরে।’
তবে কে শোনে কার কথা! নাজকি রাগে-ক্ষোভে ফেটে পড়েন এবং হতাশার চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে যান। অসহিষ্ণুতার আড়তদারদের গলা ফাটিয়ে বলেন—
‘আমাকে শূলে চড়াও
ভস্ম করো আমাকে
উদীয়মান সূর্যের পুজো আমি করেছি
ছিটকে পড়া থেকে উদ্ধার করেছি অস্তগামী চাঁদকেও।’
আরও পড়ুন:

‘নার হেয়ুতুন কাজালভানাস’ (কাজালভানাসে আগুন) ফারুক নাজকির সেরা কীর্তি। কাশ্মীরী ভাষার এই কাব্যগ্রন্থ তাঁকে ১৯৯৫ সালে ভারতের সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কার ‘সাহিত্য অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড’ এনে দেয়। কাশ্মীরি সাহিত্যে মৌলিক কবিতা রচনার পাশাপাশি উর্দু-হিন্দি সাহিত্যের বেশ কিছু ধ্রুপদি কবিতার অনুবাদও তিনি করেছেন, যেখানে তিনি নিজস্বতা ধরে রাখার প্রয়াস চালান। কাশ্মীরি সাহিত্যে ইতিবাচকতা, আধুনিকতা ও রোমান্টিকতার নতুন মাইলফলক হয়ে থাকবে নাজকির এসব কবিতা।
‘নার হেয়ুতুন কাজালভানাস’ নামটি চয়ন করেন বিখ্যাত কাশ্মীরি সাহিত্যিক মাস্টার জিন্দা কৌলের ‘নার হা!’ (সাবধান! আগুন!) কবিতা থেকে। বইয়ের সূচনাপাতায় মাস্টারজির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতাও নিবেদন করেন। এই কাব্য দশকের পর দশক জ্বলতে থাকা নাজকির জন্মভূমি কাশ্মীরের দুঃখ, বেদনা, অস্থিরতা, ভয়, ক্ষোভ, অসহিষ্ণুতা, আশা ও হতাশার কথা বলে। বইয়ের নাম থেকে সেই তীব্র আগুনের আঁচ আমরা অনুভব করতে পারি। নাজকি লিখছেন—
‘কাজালভানাস জ্বলছে!
এবং এখানে রয়েছে বসন্তের আগমনী হাহাকারও।
জ্বলছে আগুন এ হৃদয়েও—
‘আগুন’-এর সঙ্গে; কান্না সর্বাঙ্গে।’
কাশ্মীরে বিরাজমান এই আগুন-আগুন খেলার সামনে নিদারুণ অসহায় নাজকি। দরজার ফাঁক গলে বাতাসের ডানায় ভর করে বসতঘরের ভেতরে ঢুকে পড়ছে সংঘাত-অস্থিরতা। ইট দিয়ে সেই দরজা এঁটে দিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না। বরং অনেক মানুষের মতো কবি নাজকিও দরজা-বাতাসের ইঁদুর-বিড়াল খেলার এই উপদ্রব থেকে বাঁচতে ভিন্ন পথে ঘরে প্রবেশ করছেন। মানুষজন আজকাল জানালা দিয়ে চলাচল শুরু করেছে। এমন অভিনব উপমায় কবি সময়ের সংকটকে আমাদের সামনে স্পষ্ট করে তোলেন। পড়ুন—
‘আবার বাতাস আসে, দরজা ঠেলে করে আধখোলা
ওঠো, রেখে এসো দরজার পেছনে ইটটি আরেকবার
আজকাল জানালা দিয়েই ঢুকে পড়ছে লোকজন
দরজাগুলো এক সময় কত শ্রদ্ধাই না ভোগ করত।’
১৯৯০ সাল থেকে চলে আসা কাশ্মীরের ত্রাসের জগৎকে খুল্লম খোলা বয়ান করেন নাজকি। এ ক্ষেত্রে কোনো রাখঢাক করার প্রয়োজন মনে করেন না। আতঙ্কের মুহূর্ত বয়ানে কবি অত্যন্ত স্পষ্টবাদী, দ্ব্যর্থহীন। তবে কবির সব দুঃখের আশ্রয় কাশ্মীরের প্রকৃতি, ফুল ও তুষার এবং অরণ্য। পড়ুন—
‘দরজা-জানালায় ঝুলে থাকে আতঙ্ক
উঠোনে অপেক্ষা করে মুখোশপরা শয়তান
চিনার গাছের খোঁড়ল থেকে মিউমিউ ডাকে বিড়াল
শব্দের জন্য তোতলাই আমরা—কী করে কাঁদব
যৌবনোচ্ছল আইরিশ লুটিয়ে পড়ে ধুলোয়,
মাটির তৈরি ছাদে বন্য হয়ে ওঠে টিউলিপেরা
এবং মারমুখী বাতাস ওড়ে—যেভাবে ক্ষুধার্ত সিংহ
মধ্য জানুয়ারিতে নেমে আসে লোকালয়ে
অরণ্য ছেড়ে, শীতের তুষারপাতের পর
এবং হিংস্র হয়ে ওঠে আরও, প্রতিটি শিকারের পর।’
দুই.
সাধারণ মানুষের জীবনে অকথ্য ভোগান্তি নিয়ে আসা ধ্বংসের নতুন আড়তদারদের অপকর্ম অত্যন্ত নির্মোহ ভঙ্গিতে তুলে আনেন। বিদ্রূপ, কটাক্ষ কিংবা শ্লেষ মেশাতেও যেন কবির আত্মমর্যাদায় লাগে। কতটা নির্লজ্জ হলে খুনের পর খুন করেও ঘাতকেরা নিজেদের কাশ্মীরি পরিচয় দিতে পারে—নাজকি অবাক হন। তিনি লিখেন—
‘এখানে, নদীতীরে
(সদ্যবিবাহিত) ছেলেদের রক্তমাখা কাপড় ধুতে আসেন মায়েরা
আগুনে ভস্ম হয় নববধুদের দামি পোশাকও
এবং দেখো—স্তন্যদায়ী মায়েরা মরছে অনাহারে
অথচ ঝিলম বয়ে চলে আপন মনে
সরাইখানায় তালা লাগিয়ে দেয় তারা
নজরদারির আওতায় আনে মাজার ও সৌন্দর্য
গুন্ডারা তছনছ করে পুরো শহর
ঝকঝকে দিন বাঁক নেয় বিমর্ষ সন্ধ্যায়
জাফরানের খেতে
লজ্জা দিতে খুনিরা রাখে ফুল—হিমলের দেহের মতো
এবং দেখো—কী করে ঘাতকেরা উচ্চস্বরে গাইছে লালভাখ
এবং আবৃত্তি করছে রেশিনামা থেকেও…।’
সশস্ত্র তৎপরতার মাতাল হাওয়া কাশ্মীরে হিংসা-অসহিষ্ণুতার উন্মত্ত ঢেউ তোলে। একজন খাঁটি কাশ্মীরি হিসেবে কবির আত্মা বেদনায় পুড়ে ছারখার হয়; ভেঙে খানখান হয় নির্মল কাচের হৃদয়। উপত্যকা থেকে হিন্দু অভিজাত শ্রেণির পণ্ডিতদের নির্বাসন, খুন ও তাদের ওপর চলা ধ্বংসযজ্ঞ তাঁকে অত্যন্ত ব্যথিত করে। তিনি উপলব্ধি করেন, হিংসার বিষাক্ত বায়ু কাশ্মীরের বহুদিনের পুরোনো বহুরৈখিক সাংস্কৃতিক চাদরকে ছিন্নভিন্ন করে দিচ্ছে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল কাশ্মীরিকেই এই মাতাল হাওয়া বিভাজন, দুঃখ ও হতাশার রাজ্যে হারিয়ে দিচ্ছে। কাশ্মীরের মানুষের শরণার্থীশিবিরে দেখার দুঃখ ভুলতে পারেন না তিনি। তিনি লিখেন—
‘চোখের আড়ালে স্বপ্ন লুকিয়ে
তাঁবুর ছায়ায় দিন কাটায় তারা
দিনের সূর্যে দেহ মুড়িয়ে এবং
রাতের বালিশে গোলাপ রেখে
আশা করেছিল এক সাধারণ ঘুমের।
অথচ সাপগুলো ক্রমেই তাঁবুর কাছে আসে
পৃথিবী পরিণত হয় জ্বলন্ত হাপরে
আকাশ থেকে ঝরে পড়ে আগুনের গোলা
আমরা কোনো গান শুনি না—
নাম ধরে কেউই ডাকে না তাদের
ফুলের পাপড়ি হাতে দেবী পুজো করে না কেউ
অংশ নেয় না কেউ চারার-ই-শরিফের ওরসে
আমাকে রুখো না—
অনুভূতিগুলো ঢেলে দিতে হবে আমার।’
সংঘাত-সহিংসতায় ধীরে-ধীরে ম্লান হতে থাকে কাশ্মীরের ধর্মপ্রাণ মানুষের আরাধনার স্বর্গীয় সুর। রক্তের নেশায় মাতাল ঘাতকেরা মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাপক বাধাগ্রস্ত করে। ঘর থেকে বেরোনোর জো নেই মানুষের। উপত্যকা যেন অমাবস্যার রাতের সুনসান ভুতুড়ে কবরস্থান! নাজকির ভাষায়—
‘ছাদের ওপর জ্বলজ্বল করছে টকটকে লাল পপি
তবে আফসোস! বাতাসে বলছে ভীতিকর তরঙ্গ
শীতের রাতে, ক্ষুধায় মাতাল এক সিংহ
শিকারের খোঁজে হামলে পড়ে লোকালয়ে
ভারী করে তোলে নিশ্বাস অসুস্থ আকাঙ্ক্ষারা
এবং ধেয়ে আসে দরজা-জানালা অভিমুখে
সেঁটে রাখা মেহেদির কৌটাটি খেয়াল করে না কেউ
জিন-তাড়ানো ভেষজের ধোঁয়াও কেউ শুঁকে না
রক্ত ও কাদা মিলেমিশে একাকার ভেজা পিণ্ডে…
শুকনো নদী বানের অপেক্ষায়, শিরায় ফুটছে কালো রক্ত
এবং সিঁদুর মাখা সাদা পাথর…
শহরের উপকণ্ঠে ওঠে দূষিত বর্জ্য
এবং বাতাসেরা হাহাকার করে সুনসান কবরস্থানে।’
তিন.
১৯৯০-২০০০ সময়ের অশান্তিঘেরা কালো দশকে, যখন কাশ্মীর মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়, তখনো নাজকি শান্তির আশায় বুক বাঁধেন। ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে রচনা করতে থাকেন কবিতা। দুঃখ, হতাশার নর্দমা মাড়িয়ে কবি উঠে আসেন গভীর নীল ও নির্মল আকাশে। সেখান থেকে প্রভাতের নতুন আলো, হলুদ পাতাঝরা বসন্ত এবং মানবকল্যাণের গান গেয়ে যান। তিনি মনে করেন, এসব দাঙ্গা, হাঙ্গামা, খুনোখুনির রাজনীতি কাশ্মীরের ঐতিহ্য নয়। বরং রক্তের এই জলোচ্ছ্বাসের তোড়ে ভেসে গেছে এই স্বর্গীয় উপত্যকার ৫ হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সহিষ্ণু ঐতিহ্যের সৌধ। নাজকি বলেন—
‘আমাকে রুখো না—হৃদয়টা বের করে আনতে হবে আমার
এই বিজন মরুর বুকে ফুটবে গোলাপ
কাল ফুল ফুটবে এ পরিত্যক্ত বাগানেও
সেই ফুলের সঙ্গে আমাকে কথা বলতে হবে নির্জনে
চোখজোড়া আমার উলার হ্রদের পানির মতো উতলা
তাদের জানাতে হবে আমাদের সরল আর্তনাদ
জানাতে হবে—বসন্তের বুলবুলি গাইছে এখনো সুরেলা গান
নৌকাকে নিরাপদ কূলে নিয়ে যাবে এই মাতাল ঝড়
তাদের জানাতে হবে
এই দেহের গভীরে
স্ফুরণ ঘটতে চলেছে একটি আগ্নেয়গিরির
আমাকে রুখো না—
ভেতরের সবকিছু আমাকে ঢেলে দিতে হবে।’
নাজকি বুঝতে পারেন না, কেন হলুদ পাতাঝরা বসন্ত তাঁর পণ্ডিত বন্ধুদের উপত্যকায় ফিরিয়ে আনতে পারে না। কাশ্মীরের মানুষ কেন এই স্বর্গ ছেড়ে সমতলের অসমতল জীবনযাপন করবে? তাদের অনুপস্থিতি কবিকে পোড়ায়। কাশ্মীরের তুষারাবৃত শীত কিংবা সোনালি পাতামোড়ানো বসন্তও কবির এই দুঃখ ভোলাতে পারে না। তাঁর ভাষায়—
‘আবার আমাদের ফিরে তাকাতে হবে দূর অতীতে?
বসন্ত আমাদের আসবে আগের মতো
আগের মতোই উল্লাস করবে ফুরফুরে হাওয়া
ফুলের প্রস্ফুটিত কলি বুকে নিয়ে
এবং শরৎ আস্থার বসন্তকে বিদ্রূপ করে বলবে—
‘পৃথিবী পোশাক পরে না—তুলো উৎপাদন করে কী হবে!’
ঘ্রাণ-সৌরভে অবগাহন করে
আবারও এই পথে আসবে বসন্ত
কয়েকটি সুখবর নিয়ে
আহা! ঘর থেকে বেরোনো মানুষগুলো
আর কখনো ফিরে আসেনি
অথবা এই বসন্ত পায়নি তাদের কোনো খোঁজ।’
চার.
ভূস্বর্গ কাশ্মীরকে এই দুর্দশা থেকে মুক্ত করার জন্য এক মহামানবের পথ চেয়ে দিন গোনেন নাজকি। কাশ্মীরের আকাশ, মেঘ, পাহাড় ও প্রকৃতির মাঝে তাঁকে খুঁজে ফেরেন। রাতের ঘুমোনোর সময় খোলা রাখেন দরজা-জানালা—পাছে তিনি এসে পড়েন! কবিতার ভাষায় পড়ুন—
‘খুঁজে ফিরি তাঁকে প্রখর সূর্যের নিচে
তুষারবাহী বাতাসে; তাঁকে খুঁজতে ছুঁই আকাশ
খোলা রাখি ঘরের দরজা-জানালা
আমাকে বলো—কখন তিনি এসেছিলেন এবং কোন গন্তব্যে করেছেন যাত্রা।’
কিন্তু মহামানব আসে না; শেষ হয় না অপেক্ষার প্রহর। অসহায় নাজকি আপসের পথে হাঁটেন। অসহায়-নিঃস্ব কাশ্মীরি মানুষের মুখ নাজকি ক্ষমতার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত হতে চান না। ক্ষমতা ক্ষমতাবানদের হাতেই থাকুক—তবে আমাদের, সাধারণ কাশ্মীরিদের শান্তিতে থাকে দাও। তিনি লেখেন—
‘তোমার সঙ্গে কী করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করি—সেই যোগ্যতা কি আমার আছে?
ঘোড়ার পিঠে তুমিই নাহয় চড়ো
আমাকে তোমার ওড়ানো ধুলো মেখেই সুখী থাকতে দাও।’
কবি দুই পক্ষকে মিলিয়ে দেওয়ার চেষ্টাও করেন। অতীতের দুঃখ ভুলে সবার সঙ্গে মিলেমিশে সুখে দিন কাটাতে চান। উদার বক্ষ খুলে ঘোষণা দেন ক্ষমার। তিনি বলেন—
‘চলো ফের নতুন করে দিল খুলে হাসার ওয়াদা করি
তোমরাও মনে রাখবে না বিভীষিকার দিনগুলো
আমিও গোপন জখম বলে বেড়াব না যুগ-যুগান্তরে।’
তবে কে শোনে কার কথা! নাজকি রাগে-ক্ষোভে ফেটে পড়েন এবং হতাশার চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে যান। অসহিষ্ণুতার আড়তদারদের গলা ফাটিয়ে বলেন—
‘আমাকে শূলে চড়াও
ভস্ম করো আমাকে
উদীয়মান সূর্যের পুজো আমি করেছি
ছিটকে পড়া থেকে উদ্ধার করেছি অস্তগামী চাঁদকেও।’
আরও পড়ুন:

আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
১২ ঘণ্টা আগে
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
২ দিন আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
৩ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

দক্ষিণ ভারতের কোচি শহরের সরু, নুড়ি-পাথর বিছানো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ চোখে পড়ে ছোট্ট একটি ফলক। তাতে লেখা, ‘সারা কোহেনের বাড়ি।’ জনাকীর্ণ এই রাস্তাটির নাম জু টাউন। কয়েক দশক আগেও এখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বসবাস করত ইহুদি পরিবার। প্রাচীন সামগ্রী, পারস্যের কার্পেট আর মসলার দোকানে ঠাসা এই এলাকাই একসময় পরিচিত ছিল কোচির ইহুদি পাড়া হিসেবে।
এই রাস্তাতেই রয়েছে থাহা ইব্রাহিমের দোকান। কোচির শেষ ইহুদি নকশার দোকান। এক তপ্ত দুপুরে কয়েকজন মার্কিন পর্যটক দোকানে ঢুকতেই দেখা গেল, ৫৫ বছর বয়সী থাহা মনোযোগ দিয়ে একটি কিপ্পা (ইহুদি পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী ছোট, বৃত্তাকার টুপি যা তারা ঈশ্বরকে সম্মান জানাতে এবং নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশ করতে পরে থাকে) সেলাই করছেন। দোকানের দেয়ালে ঝোলানো একটি ছবির সামনে পর্যটকেরা ভিড় জমালেন। ছবিটি ২০১৩ সালের। তৎকালীন ব্রিটিশ যুবরাজ (বর্তমানে রাজা) চার্লস জু টাউনের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন।
ছবির দিকে আঙুল তুলে থাহা বললেন, ‘ওই ইনিই সারা আন্টি।’ এরপর যোগ করলেন, ‘এটা ছিল সারা কোহেনের বাড়ি ও তাঁর সেলাইয়ের দোকান।’
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬ বছর বয়সে মারা যাওয়ার পর পুরোপুরি দায়িত্ব নেন তিনি।
থাহা বলেন, ‘আমি ছিলাম তাঁর ছেলের মতো। নিজের মায়ের চেয়েও বেশি সময় তাঁর দেখাশোনা করেছি। আমি তাঁর জন্য কোশার (ইহুদিদের এক ধরনের খাবার) আর মাছ কিনে আনতাম। সময় কাটাতাম আর দোকান বন্ধ করার পরই কেবল ফিরতাম।’
এক ইহুদি নারী আর ভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক পটভূমির এক মুসলমান পুরুষের এই বন্ধুত্ব প্রায় চার দশক ধরে টিকে ছিল। মৃত্যুর আগে সারা তাঁর দোকানটি থাহার নামে উইল করে যান। থাহা প্রতিজ্ঞা করেন, জু টাউনে তিনি সারার স্মৃতি আর ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখবেন। যেখানে আঠারো শতকে প্রায় আড়াই হাজার ইহুদি বাস করতেন, সেখানে এখন কেবল একজন অবশিষ্ট। থাহা বলেন, ‘এক দিক থেকে, এখানকার ইহুদি সম্প্রদায় যাতে বিস্মৃত না হয়, আমিও সেই চেষ্টাই করছি।’
কেরালায় ইহুদিদের আগমনের সবচেয়ে প্রচলিত কাহিনি বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে উল্লিখিত রাজা সোলোমনের সময়ের, প্রায় দুই হাজার বছর আগেকার। প্রথমে তাঁরা মালাবার উপকূলে ক্রাঙ্গানোরে, বর্তমান কোডুঙ্গাল্লুরের কাছে প্রাচীন বন্দরের আশপাশে বণিক হিসেবে বসতি গড়েন। পরে তাঁরা কোচিতে চলে আসেন। এই প্রাচীন বসতির কারণে তাঁরা পরিচিত হন মালাবারি ইহুদি নামে।
এর বহু পরে, ১৫৯২ সালে, স্প্যানিশ নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা সেফার্ডিক ইহুদিরা কেরালায় পৌঁছান। পর্তুগাল, তুরস্ক আর বাগদাদ হয়ে তাঁরা কোচিতে বসতি গড়ে তোলেন এবং পরিচিত হন পারাদেসি বা বিদেশি ইহুদি নামে। মালাবারি ও পারাদেসি—এই দুই ধারার মানুষ মিলেই পরিচিত হন কোচিন ইহুদি নামে।

পর্তুগিজ, আরব, ব্রিটিশ আর ওলন্দাজদের দীর্ঘদিনের বাণিজ্যকেন্দ্র কোচিতে তাঁরা রাজাদের সুরক্ষায় নিরাপদে বসবাস করতেন। বিশ শতকের গোড়ায় সারা কোহেনের জন্ম। তখন জু টাউন ছিল প্রাণবন্ত। সারা আর তাঁর স্বামী জ্যাকব—যাঁর জন্মও এখানেই—১৯৪৪ সালে বিয়ে করেন।
আশির দশকের গোড়ায় আচমকাই থাহার সঙ্গে কোহেন দম্পতির পরিচয় হয়। তেরো বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দেওয়া থাহা তখন পর্যটকদের কাছে পোস্টকার্ড বিক্রি করে জীবিকা চালাতেন। জু টাউনে আসা পর্যটকেরা নিয়মিতই যেতেন পারাদেসি সিনাগগে, যা ১৫৬৮ সালে কোচিনের রাজার দেওয়া জমিতে নির্মিত।
থাহা বলেন, ‘তখন প্রচুর পর্যটক আসত আর আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পোস্টকার্ড বেচতাম।’ এক রোববার, যে গুদামঘরে থাহা পোস্টকার্ড রাখতেন, তার মালিক না আসায় জ্যাকব তাঁকে তাঁদের বাড়িতে জায়গা দেন। সারা এতে খুশি ছিলেন না। থাহার মনে আছে, প্রায় তিন বছর তিনি তাঁর সঙ্গে তেমন কথা বলেননি।
ইব্রাহিম থাহা বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমি তাঁর স্বামীর ছোটখাটো কাজ করে দিতাম। অথবা যখন তাঁদের জানালার বাইরে থেকে টিভিতে ক্রিকেট দেখতাম, তিনি আমাকে ভেতরে আসতে বলতেন।’ একদিন সারা তাঁকে সিনাগগের জন্য একটি কুশন কভার সেলাই করতে সাহায্য করতে বলেন। তখনই বোঝা যায়, থাহার মধ্যে সেলাই ও নকশার সহজাত দক্ষতা আছে। সম্ভবত দরজি বাবাকে ছোটবেলা থেকে সাহায্য করার ফলেই। তিনি বলেন, ‘আমি যে নকশা আঁকতে আর সেলাই করতে পারি, তা জানতামই না।’
উনিশ বছর বয়সে থাহা সারাকে সাহায্য করেন তাঁদের বৈঠকখানা থেকে ‘সারার হস্ত-সেলাই’ নামে একটি দোকান খুলতে। দোকানটি আজও সেই নামেই পরিচিত। সেখানে বিক্রি হতো কিপ্পাহ, চাল্লাহ কভার আর মেনোরাহ। তিনি বলেন, ‘তিনিই আমাকে সব শিখিয়েছেন।’
এই বন্ধুত্ব নিয়ে থাহা বেশ দার্শনিক। তিনি বলেন, ‘জু টাউনে ইহুদি আর মুসলমানেরা একে অপরের সঙ্গে তেমন মিশতেন না। তাঁরা একে অপরের প্রতি সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু সারা আন্টি আর জ্যাকব আংকেল কখনোই আমাকে বহিরাগত মনে করতে দেননি, যদিও আমাদের পটভূমি আলাদা ছিল।’

থাহার বাবা-মা এই সম্পর্কে আপত্তি করেননি। তাঁরা দেখেছিলেন, কোহেন পরিবার তাঁদের ছেলেকে জীবনের একটি উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করছে। কিন্তু এই ঘনিষ্ঠতার সময়েই কোচির ইহুদি জনসংখ্যা দ্রুত কমতে থাকে। চল্লিশের দশকে যেখানে ছিল প্রায় ২৫০ জন, নব্বইয়ের দশকে তা নেমে আসে ২০ জনে। এখন মাত্র একজন আছেন—৬৭ বছর বয়সী কিথ হ্যালেগুয়া।
১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর অনেক পরিবার সেখানে চলে যায়। কেরালার ইহুদিদের ওপর ডক্টরেট থিসিস করা আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘কোচিন ইহুদিরা হয়তো স্বদেশে ফিরে যাওয়ার ধারণায় ইসরায়েলে গিয়েছিলেন। তবে উন্নত জীবনের আকর্ষণের মতো অর্থনৈতিক কারণও ছিল। তাঁরা এটাও অনুভব করেছিলেন যে কেরালায় উপযুক্ত জীবনসঙ্গীর অভাব ছিল।’
ধর্মীয় নিপীড়ন কখনোই তাঁদের কোচি ছাড়ার কারণ ছিল না। শহরটি শত শত বছর ধরে তাঁদের স্বাগত জানিয়েছে। কিছু বয়স্ক ইহুদি থেকে গিয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে নিঃসন্তান কোহেন দম্পতিও ছিলেন। ১৯৯৯ সালে জ্যাকব মারা যাওয়ার আগে থাহাকে সারার দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে যান। তখন থাহা বিবাহিত, তিন সন্তানের জনক।
থাহা বলেন, ‘আমি জ্যাকব আংকেলকে বলেছিলাম, সারা আন্টি যদি আমাকে সুযোগ দেন, তবে আমি তাঁর দেখাশোনা করব। আমি তাঁকে সুযোগ দিতে বলেছিলাম, কারণ ইসলামে মৃতপ্রায় ব্যক্তির শেষ ইচ্ছা পূরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। না করলে পাপ হয়।’
সারার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে থাহা তাঁর পরিবারকে জু টাউনের কাছাকাছি নিয়ে আসেন। সারা মারা গেলে তিনি তাঁর কফিনের জন্য স্টার অব ডেভিড (ইসরায়েলি পতাকায় অঙ্কিত তারকা) আঁকা একটি কফিন কভার তৈরি করান। আজও তিনি নিয়মিত ইহুদি কবরস্থানে তাঁর সমাধিতে যান। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক কোচি ঘুরতে আসেন। তাঁদের মধ্যে অনেক ইহুদিও থাকেন। আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে ইহুদিরা জু টাউনে আসেন এক ধরনের আপন অনুভব করার জন্য।’
তিনি বলেন, এখানকার ইহুদিরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সমাজের মধ্যেও নিজেদের পরিচয় বজায় রেখেছিলেন। একই সঙ্গে সমাজের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। স্থানীয় ভাষা মালয়ালমই ছিল তাঁদের দৈনন্দিন ভাষা। থাহা যেভাবে সারা কোহেনের ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন, তা তাঁকে মুগ্ধ করে। তিনি বলেন, ‘একজন মুসলমান কীভাবে এক ইহুদি নারীর যত্ন নিয়েছেন, তা দৃষ্টান্তস্বরূপ। তিনি এখনো সারা-র ধর্মীয় ঐতিহ্যগুলো বজায় রেখেছেন।’
থাহা দোকানটিকে ঠিক সেভাবেই রেখেছেন, যেমনটি সারা চালাতেন। ইহুদিদের সাব্বাথ উপলক্ষে তিনি শনিবার দোকান বন্ধ রাখেন। ইব্রাহিম থাহা আরও বলেন, ‘আমি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা মুসলমান, কিন্তু সারা আন্টির জন্য এটা খুব জরুরি ছিল বলে আমি শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি প্রদীপ জ্বালাই। কারণ, এই ক্ষণ সাব্বাথের শুরু হওয়াকে চিহ্নিত করে। এই বিষয়টি আমার কাছে এটা ধর্ম সংক্রান্ত নয়, পুরোটাই মানবিক।’
বিবিসি থেকে অনূদিত

দক্ষিণ ভারতের কোচি শহরের সরু, নুড়ি-পাথর বিছানো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ চোখে পড়ে ছোট্ট একটি ফলক। তাতে লেখা, ‘সারা কোহেনের বাড়ি।’ জনাকীর্ণ এই রাস্তাটির নাম জু টাউন। কয়েক দশক আগেও এখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বসবাস করত ইহুদি পরিবার। প্রাচীন সামগ্রী, পারস্যের কার্পেট আর মসলার দোকানে ঠাসা এই এলাকাই একসময় পরিচিত ছিল কোচির ইহুদি পাড়া হিসেবে।
এই রাস্তাতেই রয়েছে থাহা ইব্রাহিমের দোকান। কোচির শেষ ইহুদি নকশার দোকান। এক তপ্ত দুপুরে কয়েকজন মার্কিন পর্যটক দোকানে ঢুকতেই দেখা গেল, ৫৫ বছর বয়সী থাহা মনোযোগ দিয়ে একটি কিপ্পা (ইহুদি পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী ছোট, বৃত্তাকার টুপি যা তারা ঈশ্বরকে সম্মান জানাতে এবং নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশ করতে পরে থাকে) সেলাই করছেন। দোকানের দেয়ালে ঝোলানো একটি ছবির সামনে পর্যটকেরা ভিড় জমালেন। ছবিটি ২০১৩ সালের। তৎকালীন ব্রিটিশ যুবরাজ (বর্তমানে রাজা) চার্লস জু টাউনের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন।
ছবির দিকে আঙুল তুলে থাহা বললেন, ‘ওই ইনিই সারা আন্টি।’ এরপর যোগ করলেন, ‘এটা ছিল সারা কোহেনের বাড়ি ও তাঁর সেলাইয়ের দোকান।’
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬ বছর বয়সে মারা যাওয়ার পর পুরোপুরি দায়িত্ব নেন তিনি।
থাহা বলেন, ‘আমি ছিলাম তাঁর ছেলের মতো। নিজের মায়ের চেয়েও বেশি সময় তাঁর দেখাশোনা করেছি। আমি তাঁর জন্য কোশার (ইহুদিদের এক ধরনের খাবার) আর মাছ কিনে আনতাম। সময় কাটাতাম আর দোকান বন্ধ করার পরই কেবল ফিরতাম।’
এক ইহুদি নারী আর ভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক পটভূমির এক মুসলমান পুরুষের এই বন্ধুত্ব প্রায় চার দশক ধরে টিকে ছিল। মৃত্যুর আগে সারা তাঁর দোকানটি থাহার নামে উইল করে যান। থাহা প্রতিজ্ঞা করেন, জু টাউনে তিনি সারার স্মৃতি আর ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখবেন। যেখানে আঠারো শতকে প্রায় আড়াই হাজার ইহুদি বাস করতেন, সেখানে এখন কেবল একজন অবশিষ্ট। থাহা বলেন, ‘এক দিক থেকে, এখানকার ইহুদি সম্প্রদায় যাতে বিস্মৃত না হয়, আমিও সেই চেষ্টাই করছি।’
কেরালায় ইহুদিদের আগমনের সবচেয়ে প্রচলিত কাহিনি বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে উল্লিখিত রাজা সোলোমনের সময়ের, প্রায় দুই হাজার বছর আগেকার। প্রথমে তাঁরা মালাবার উপকূলে ক্রাঙ্গানোরে, বর্তমান কোডুঙ্গাল্লুরের কাছে প্রাচীন বন্দরের আশপাশে বণিক হিসেবে বসতি গড়েন। পরে তাঁরা কোচিতে চলে আসেন। এই প্রাচীন বসতির কারণে তাঁরা পরিচিত হন মালাবারি ইহুদি নামে।
এর বহু পরে, ১৫৯২ সালে, স্প্যানিশ নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা সেফার্ডিক ইহুদিরা কেরালায় পৌঁছান। পর্তুগাল, তুরস্ক আর বাগদাদ হয়ে তাঁরা কোচিতে বসতি গড়ে তোলেন এবং পরিচিত হন পারাদেসি বা বিদেশি ইহুদি নামে। মালাবারি ও পারাদেসি—এই দুই ধারার মানুষ মিলেই পরিচিত হন কোচিন ইহুদি নামে।

পর্তুগিজ, আরব, ব্রিটিশ আর ওলন্দাজদের দীর্ঘদিনের বাণিজ্যকেন্দ্র কোচিতে তাঁরা রাজাদের সুরক্ষায় নিরাপদে বসবাস করতেন। বিশ শতকের গোড়ায় সারা কোহেনের জন্ম। তখন জু টাউন ছিল প্রাণবন্ত। সারা আর তাঁর স্বামী জ্যাকব—যাঁর জন্মও এখানেই—১৯৪৪ সালে বিয়ে করেন।
আশির দশকের গোড়ায় আচমকাই থাহার সঙ্গে কোহেন দম্পতির পরিচয় হয়। তেরো বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দেওয়া থাহা তখন পর্যটকদের কাছে পোস্টকার্ড বিক্রি করে জীবিকা চালাতেন। জু টাউনে আসা পর্যটকেরা নিয়মিতই যেতেন পারাদেসি সিনাগগে, যা ১৫৬৮ সালে কোচিনের রাজার দেওয়া জমিতে নির্মিত।
থাহা বলেন, ‘তখন প্রচুর পর্যটক আসত আর আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পোস্টকার্ড বেচতাম।’ এক রোববার, যে গুদামঘরে থাহা পোস্টকার্ড রাখতেন, তার মালিক না আসায় জ্যাকব তাঁকে তাঁদের বাড়িতে জায়গা দেন। সারা এতে খুশি ছিলেন না। থাহার মনে আছে, প্রায় তিন বছর তিনি তাঁর সঙ্গে তেমন কথা বলেননি।
ইব্রাহিম থাহা বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমি তাঁর স্বামীর ছোটখাটো কাজ করে দিতাম। অথবা যখন তাঁদের জানালার বাইরে থেকে টিভিতে ক্রিকেট দেখতাম, তিনি আমাকে ভেতরে আসতে বলতেন।’ একদিন সারা তাঁকে সিনাগগের জন্য একটি কুশন কভার সেলাই করতে সাহায্য করতে বলেন। তখনই বোঝা যায়, থাহার মধ্যে সেলাই ও নকশার সহজাত দক্ষতা আছে। সম্ভবত দরজি বাবাকে ছোটবেলা থেকে সাহায্য করার ফলেই। তিনি বলেন, ‘আমি যে নকশা আঁকতে আর সেলাই করতে পারি, তা জানতামই না।’
উনিশ বছর বয়সে থাহা সারাকে সাহায্য করেন তাঁদের বৈঠকখানা থেকে ‘সারার হস্ত-সেলাই’ নামে একটি দোকান খুলতে। দোকানটি আজও সেই নামেই পরিচিত। সেখানে বিক্রি হতো কিপ্পাহ, চাল্লাহ কভার আর মেনোরাহ। তিনি বলেন, ‘তিনিই আমাকে সব শিখিয়েছেন।’
এই বন্ধুত্ব নিয়ে থাহা বেশ দার্শনিক। তিনি বলেন, ‘জু টাউনে ইহুদি আর মুসলমানেরা একে অপরের সঙ্গে তেমন মিশতেন না। তাঁরা একে অপরের প্রতি সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু সারা আন্টি আর জ্যাকব আংকেল কখনোই আমাকে বহিরাগত মনে করতে দেননি, যদিও আমাদের পটভূমি আলাদা ছিল।’

থাহার বাবা-মা এই সম্পর্কে আপত্তি করেননি। তাঁরা দেখেছিলেন, কোহেন পরিবার তাঁদের ছেলেকে জীবনের একটি উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করছে। কিন্তু এই ঘনিষ্ঠতার সময়েই কোচির ইহুদি জনসংখ্যা দ্রুত কমতে থাকে। চল্লিশের দশকে যেখানে ছিল প্রায় ২৫০ জন, নব্বইয়ের দশকে তা নেমে আসে ২০ জনে। এখন মাত্র একজন আছেন—৬৭ বছর বয়সী কিথ হ্যালেগুয়া।
১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর অনেক পরিবার সেখানে চলে যায়। কেরালার ইহুদিদের ওপর ডক্টরেট থিসিস করা আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘কোচিন ইহুদিরা হয়তো স্বদেশে ফিরে যাওয়ার ধারণায় ইসরায়েলে গিয়েছিলেন। তবে উন্নত জীবনের আকর্ষণের মতো অর্থনৈতিক কারণও ছিল। তাঁরা এটাও অনুভব করেছিলেন যে কেরালায় উপযুক্ত জীবনসঙ্গীর অভাব ছিল।’
ধর্মীয় নিপীড়ন কখনোই তাঁদের কোচি ছাড়ার কারণ ছিল না। শহরটি শত শত বছর ধরে তাঁদের স্বাগত জানিয়েছে। কিছু বয়স্ক ইহুদি থেকে গিয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে নিঃসন্তান কোহেন দম্পতিও ছিলেন। ১৯৯৯ সালে জ্যাকব মারা যাওয়ার আগে থাহাকে সারার দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে যান। তখন থাহা বিবাহিত, তিন সন্তানের জনক।
থাহা বলেন, ‘আমি জ্যাকব আংকেলকে বলেছিলাম, সারা আন্টি যদি আমাকে সুযোগ দেন, তবে আমি তাঁর দেখাশোনা করব। আমি তাঁকে সুযোগ দিতে বলেছিলাম, কারণ ইসলামে মৃতপ্রায় ব্যক্তির শেষ ইচ্ছা পূরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। না করলে পাপ হয়।’
সারার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে থাহা তাঁর পরিবারকে জু টাউনের কাছাকাছি নিয়ে আসেন। সারা মারা গেলে তিনি তাঁর কফিনের জন্য স্টার অব ডেভিড (ইসরায়েলি পতাকায় অঙ্কিত তারকা) আঁকা একটি কফিন কভার তৈরি করান। আজও তিনি নিয়মিত ইহুদি কবরস্থানে তাঁর সমাধিতে যান। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক কোচি ঘুরতে আসেন। তাঁদের মধ্যে অনেক ইহুদিও থাকেন। আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে ইহুদিরা জু টাউনে আসেন এক ধরনের আপন অনুভব করার জন্য।’
তিনি বলেন, এখানকার ইহুদিরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সমাজের মধ্যেও নিজেদের পরিচয় বজায় রেখেছিলেন। একই সঙ্গে সমাজের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। স্থানীয় ভাষা মালয়ালমই ছিল তাঁদের দৈনন্দিন ভাষা। থাহা যেভাবে সারা কোহেনের ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন, তা তাঁকে মুগ্ধ করে। তিনি বলেন, ‘একজন মুসলমান কীভাবে এক ইহুদি নারীর যত্ন নিয়েছেন, তা দৃষ্টান্তস্বরূপ। তিনি এখনো সারা-র ধর্মীয় ঐতিহ্যগুলো বজায় রেখেছেন।’
থাহা দোকানটিকে ঠিক সেভাবেই রেখেছেন, যেমনটি সারা চালাতেন। ইহুদিদের সাব্বাথ উপলক্ষে তিনি শনিবার দোকান বন্ধ রাখেন। ইব্রাহিম থাহা আরও বলেন, ‘আমি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা মুসলমান, কিন্তু সারা আন্টির জন্য এটা খুব জরুরি ছিল বলে আমি শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি প্রদীপ জ্বালাই। কারণ, এই ক্ষণ সাব্বাথের শুরু হওয়াকে চিহ্নিত করে। এই বিষয়টি আমার কাছে এটা ধর্ম সংক্রান্ত নয়, পুরোটাই মানবিক।’
বিবিসি থেকে অনূদিত

কাশ্মীরে বিরাজমান এই আগুন-আগুন খেলার সামনে নিদারুণ অসহায় নাজকি। দরজার ফাঁক গলে বাতাসের ডানায় ভর করে বসতঘরের ভেতরে ঢুকে পড়ছে সংঘাত-অস্থিরতা। ইট দিয়ে সেই দরজা এঁটে দিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না। বরং অনেক মানুষের মতো কবি নাজকিও দরজা-বাতাসের ইঁদুর-বিড়াল খেলার এই উপদ্রব থেকে বাঁচতে ভিন্ন পথে ঘরে প্রবেশ করছেন।
০২ জুলাই ২০২২
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
২ দিন আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
৩ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৯ দিন আগেসম্পাদকীয়

মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল পাশবিক হত্যাযজ্ঞ। ঢাকার গাবতলীর পাশের তুরাগ নদের উত্তর পারেই সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নের ইসাকাবাদ গ্রাম অবস্থিত। গ্রামটি থেকে স্পষ্ট দেখা যেত গাবতলী সেতু। সেই গ্রামেরই বয়স্ক এক ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা করেছেন এভাবে, প্রতিদিন রাতের বেলা মিলিটারি আর বিহারিরা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে করে এই সেতুতে মানুষদের নিয়ে আসত। রাত গভীর হলে সেতুর দুই পাশের বাতি নিভিয়ে গুলি চালানো হতো। পুরো যুদ্ধের সময় এখানে এমন রাত ছিল না, যে রাতের বেলা সেখানে লাশ ফেলানো হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পাঁচ দশকের বেশি সময় পার হলেও এখনো এ জায়গাকে বধ্যভূমি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ছবি: সংগৃহীত

মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল পাশবিক হত্যাযজ্ঞ। ঢাকার গাবতলীর পাশের তুরাগ নদের উত্তর পারেই সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নের ইসাকাবাদ গ্রাম অবস্থিত। গ্রামটি থেকে স্পষ্ট দেখা যেত গাবতলী সেতু। সেই গ্রামেরই বয়স্ক এক ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা করেছেন এভাবে, প্রতিদিন রাতের বেলা মিলিটারি আর বিহারিরা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে করে এই সেতুতে মানুষদের নিয়ে আসত। রাত গভীর হলে সেতুর দুই পাশের বাতি নিভিয়ে গুলি চালানো হতো। পুরো যুদ্ধের সময় এখানে এমন রাত ছিল না, যে রাতের বেলা সেখানে লাশ ফেলানো হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পাঁচ দশকের বেশি সময় পার হলেও এখনো এ জায়গাকে বধ্যভূমি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ছবি: সংগৃহীত

কাশ্মীরে বিরাজমান এই আগুন-আগুন খেলার সামনে নিদারুণ অসহায় নাজকি। দরজার ফাঁক গলে বাতাসের ডানায় ভর করে বসতঘরের ভেতরে ঢুকে পড়ছে সংঘাত-অস্থিরতা। ইট দিয়ে সেই দরজা এঁটে দিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না। বরং অনেক মানুষের মতো কবি নাজকিও দরজা-বাতাসের ইঁদুর-বিড়াল খেলার এই উপদ্রব থেকে বাঁচতে ভিন্ন পথে ঘরে প্রবেশ করছেন।
০২ জুলাই ২০২২
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
১২ ঘণ্টা আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
৩ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৯ দিন আগেসম্পাদকীয়

সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
অনেক লেখকই আছেন যাঁরা খুব ধর্মপ্রাণ, কেউবা আবার কমিউনিস্ট ৷ হিউম্যানিস্ট লেখক যেমন আছেন, তেমনই আছেন অথোরিটারিয়ান লেখক।
তবে সে যা-ই হোক, ভালো সাহিত্যিকের মধ্যে দুটো কমিটমেন্ট থাকতেই হবে—সততা আর স্টাইলের দক্ষতা। নিজের কাছেই যে-লেখক অসৎ, যা লেখেন তা যদি তিনি নিজেই না বিশ্বাস করেন, তাহলে সেই লেখকের পতন অনিবার্য।
কোনো লেখক আবার যদি নিজের ভাষার ঐশ্বর্যকে ছেঁকে তুলতে ব্যর্থ হন, একজন সংগীতশিল্পীকে ঠিক যেভাবে তাঁর যন্ত্রটিকে নিজের বশে আনতে হয়, ভাষার ক্ষেত্রেও তেমনটা যদি কোনো লেখক করতে না পারেন, তাহলে একজন সাংবাদিক ছাড়া আর কিছুই হতে পারবেন না তিনি। সত্য এবং স্টাইল—একজন সাহিত্যিকের বেসিক কমিটমেন্ট হলো শুধু এই দুটো।
সূত্র: সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘বাংলাদেশ টুডে’ পত্রিকার মার্চ, ১৯৮৪ সংখ্যায়, সাক্ষাৎকার গ্রহীতা সেরাজুল ইসলাম কাদির, অনুবাদক নীলাজ্জ দাস, শিবনারায়ণ রায়ের সাক্ষাৎকার সংগ্রহ, পৃষ্ঠা-২৭।

সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
অনেক লেখকই আছেন যাঁরা খুব ধর্মপ্রাণ, কেউবা আবার কমিউনিস্ট ৷ হিউম্যানিস্ট লেখক যেমন আছেন, তেমনই আছেন অথোরিটারিয়ান লেখক।
তবে সে যা-ই হোক, ভালো সাহিত্যিকের মধ্যে দুটো কমিটমেন্ট থাকতেই হবে—সততা আর স্টাইলের দক্ষতা। নিজের কাছেই যে-লেখক অসৎ, যা লেখেন তা যদি তিনি নিজেই না বিশ্বাস করেন, তাহলে সেই লেখকের পতন অনিবার্য।
কোনো লেখক আবার যদি নিজের ভাষার ঐশ্বর্যকে ছেঁকে তুলতে ব্যর্থ হন, একজন সংগীতশিল্পীকে ঠিক যেভাবে তাঁর যন্ত্রটিকে নিজের বশে আনতে হয়, ভাষার ক্ষেত্রেও তেমনটা যদি কোনো লেখক করতে না পারেন, তাহলে একজন সাংবাদিক ছাড়া আর কিছুই হতে পারবেন না তিনি। সত্য এবং স্টাইল—একজন সাহিত্যিকের বেসিক কমিটমেন্ট হলো শুধু এই দুটো।
সূত্র: সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘বাংলাদেশ টুডে’ পত্রিকার মার্চ, ১৯৮৪ সংখ্যায়, সাক্ষাৎকার গ্রহীতা সেরাজুল ইসলাম কাদির, অনুবাদক নীলাজ্জ দাস, শিবনারায়ণ রায়ের সাক্ষাৎকার সংগ্রহ, পৃষ্ঠা-২৭।

কাশ্মীরে বিরাজমান এই আগুন-আগুন খেলার সামনে নিদারুণ অসহায় নাজকি। দরজার ফাঁক গলে বাতাসের ডানায় ভর করে বসতঘরের ভেতরে ঢুকে পড়ছে সংঘাত-অস্থিরতা। ইট দিয়ে সেই দরজা এঁটে দিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না। বরং অনেক মানুষের মতো কবি নাজকিও দরজা-বাতাসের ইঁদুর-বিড়াল খেলার এই উপদ্রব থেকে বাঁচতে ভিন্ন পথে ঘরে প্রবেশ করছেন।
০২ জুলাই ২০২২
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
১২ ঘণ্টা আগে
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
২ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৯ দিন আগেসম্পাদকীয়

বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে। প্রায় ৫০০ বছর আগে বদ্রী নারায়ণের যোশী মঠের সন্ন্যাসী গোপাল গিরি ঢাকায় এসে রমনায় প্রথমে একটি আখড়া স্থাপন করেন। তখন এ আখড়াটি কাঠঘর নামে পরিচিত ছিল।
পরে সম্ভবত ১৭ শতকের প্রথম দিকে এ স্থানেই হরিচরণ গিরি মূল মন্দিরটি নির্মাণ করেন। কালীবাড়ি মন্দিরটি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়। তারা মন্দির ও আশ্রমটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মন্দিরের সেবায়েতসহ প্রায় ১০০ সন্ন্যাসী, ভক্ত এবং সেখানে বসবাসরত সাধারণ মানুষ নিহত হন। যদিও এখন বধ্যভূমির কোনো চিহ্ন নেই। তবে সেটাকে বধ্যভূমি হিসেবে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ছবি: সংগৃহীত

বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে। প্রায় ৫০০ বছর আগে বদ্রী নারায়ণের যোশী মঠের সন্ন্যাসী গোপাল গিরি ঢাকায় এসে রমনায় প্রথমে একটি আখড়া স্থাপন করেন। তখন এ আখড়াটি কাঠঘর নামে পরিচিত ছিল।
পরে সম্ভবত ১৭ শতকের প্রথম দিকে এ স্থানেই হরিচরণ গিরি মূল মন্দিরটি নির্মাণ করেন। কালীবাড়ি মন্দিরটি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়। তারা মন্দির ও আশ্রমটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মন্দিরের সেবায়েতসহ প্রায় ১০০ সন্ন্যাসী, ভক্ত এবং সেখানে বসবাসরত সাধারণ মানুষ নিহত হন। যদিও এখন বধ্যভূমির কোনো চিহ্ন নেই। তবে সেটাকে বধ্যভূমি হিসেবে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ছবি: সংগৃহীত

কাশ্মীরে বিরাজমান এই আগুন-আগুন খেলার সামনে নিদারুণ অসহায় নাজকি। দরজার ফাঁক গলে বাতাসের ডানায় ভর করে বসতঘরের ভেতরে ঢুকে পড়ছে সংঘাত-অস্থিরতা। ইট দিয়ে সেই দরজা এঁটে দিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না। বরং অনেক মানুষের মতো কবি নাজকিও দরজা-বাতাসের ইঁদুর-বিড়াল খেলার এই উপদ্রব থেকে বাঁচতে ভিন্ন পথে ঘরে প্রবেশ করছেন।
০২ জুলাই ২০২২
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
১২ ঘণ্টা আগে
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
২ দিন আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
৩ দিন আগে