এ যেন সত্যিই ফেলুদা!

সম্পাদকীয়
Thumbnail image

সত্যজিৎ রায় তাঁর গোয়েন্দা ফেলুদার চরিত্রে বেছে নিয়েছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে। এরপর সত্যজিৎপুত্র সন্দীপ রায় যখন ফেলুদা সিরিজ করা শুরু করলেন টেলিভিশনে, তখন তিনি এই চরিত্রের জন্য পছন্দ করলেন সব্যসাচী চক্রবর্তীকে।

‘গোসাইপুর সরগরম’ গল্পটার কাহিনি সত্যজিৎ রায় লিখেছিলেন গ্রামেরই একটি অভিজাত বাড়িকে কেন্দ্র করে। মল্লিকবাড়ি তার নাম। সেই গল্পের ভিলেন ছিলেন থিয়োজফিস্ট মৃগাঙ্গ ভট্টাচার্য। নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্যই এই ভদ্রলোক মৃত লোকের আত্মা নামিয়ে আনতেন। বিষয়টি যে বুজরুকি, সেটা ফেলুদা ধরে ফেলেন।

এই গল্পে একটা জায়গা ছিল, ফেলুদার নির্দেশে জীবনলাল নামের একজনকে জীবিতাবস্থায় মৃতের ভূমিকায় অভিনয় করতে হবে। তো সেই দৃশ্যটাকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার জন্য দৌড়াদৌড়ি থেকে শুরু করে নানা কিছু করতে হবে। ঠিক সে সময় সব্যসাচী চক্রবর্তী কাজ করতে গিয়েই এক দুর্ঘটনায় পড়লেন। তাতে তাঁর ডান পায়ের পাতায় বেয়ারা রকমের ফ্র্যাকচার ধরা পড়ল। পায়ে চোট নিয়ে এই দৌড়াদৌড়ির দৃশ্যে সব্যসাচী অভিনয় করতে পারবেন তো? অথচ ওই দৃশ্যের ওপরই রহস্যভেদের পর্বটা দাঁড়িয়ে আছে। সন্দীপ রায় তাঁর সংশয়ের কথা জানালেন সব্যসাচীকে। সব্যসাচী আমলেই নিলেন না তা। বললেন, ‘কোনো ভয় নেই বাবুদা, শুটিং হবে।’ তখনো সব্যসাচীর পায়ে খুব যন্ত্রণা হচ্ছে।

সব্যসাচীর ডান পায়ের পাতা থেকে গোড়ালির ওপর পর্যন্ত তখন ব্যান্ডেজ করা। যন্ত্রণা যে হচ্ছে, তা সব্যসাচীর স্টেপিং দেখেই বোঝা যায়। কিন্তু যখনই শুটিং শুরু হলো, তখন বোঝারই উপায় নেই যে সব্যসাচীর পায়ে ব্যথা। টেক-রিটেক হচ্ছে স্বাভাবিকভাবেই। ছবির এই সময়কার কোনো দৃশ্যেই সব্যসাচীর মুখ দেখে বোঝা যায়নি তাঁর যন্ত্রণা হচ্ছে।

সন্দীপ রায় জানলেন, নিজের সুবিধা-অসুবিধা বা অস্বাচ্ছন্দ্যকে সব্যসাচী কখনোই কাজের সময় সামনে আসতে দেন না। ওর চেহারায় ওর মানসিক অবস্থাটা কখনোই ধরা পড়ে না। এ যেন সত্যিই ফেলুদা! 

সূত্র: সন্দীপ রায়, আমি আর ফেলুদা, পৃষ্ঠা ১৬-১৭

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত