রজত কান্তি রায়, ঢাকা
সম্প্রতি একখানা কবিতা পড়িয়া বড়ই চমৎকৃত হইয়াছি। সেই কবিতায় কবি বলিতেছেন, ‘তোমার লাগিয়া এই নোলক পাঠাইলাম,/ পরিয়ো।/ বাক্সে উঠাইয়া রাখিয়ো না।’ তাহার পরে কবি বলিতেছেন—
‘বর্ষা আসিতেছে।
মেঘ ডাকিবে। সর্বত্র জল থৈ থৈ করিবে।
লতা দুলিবে। পাখী ভিজিবে।
নোলক পাঠাইলাম,—পরিয়ো।
ইহা শুধু রূপের লাগিয়া নহে,
মনে রাখিয়ো
পরিয়ো।’
কবির নাম নারায়ণ মুখোপাধ্যায়। শুধু বর্ষা আসিতেছে না বলিয়া বলিতে হইবে, বর্ষা আসিয়াছে। আজ আষাঢ়ের প্রথম দিন। আষাঢ়স্য প্রথম দিবস।
এই নীল নীল বর্ষায় এমন একখানা কবিতার নতুন অর্থ তৈরি করা যায়। শুনেছি রোমান্সের শুরু বসন্তে। শেষও বসন্তে। তখন নাকি জীবজগৎ কী এক অদ্ভুত মাদকতায় ভাসিতে থাকে চামিন্দা ভাসের বলে উড়ে যাওয়া মিডিল স্ট্যাম্পের মতো। কিন্তু বর্ষাতেও যে ‘নোলক পাঠাইলাম,—পরিয়ো।’ বলা যায়, তাহা এই কবিতা পাঠের পরেই বুঝিতে পারিলাম। শুধু কি তাই? কবি বলিয়াছেন, ‘ইহা শুধু রূপের লাগিয়া নহে,/ মনে রাখিয়ো/ পরিয়ো।’ এর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের ‘এমন দিনে তারে বলা যায়/ এমন ঘনঘোর বরিষায়/ এমন দিনে মন খোলা যায়/ এমন মেঘস্বরে বাদল ঝরোঝরে/ তপনহীন ঘন তমসায়/ এমন দিনে তারে বলা যায়…’ গানটির কোথায় যেন অন্তর্গত একটা মিল খুঁজে পাওয়া যায়। একজন বলছেন, মনে রাখিয়ো/ পরিয়ো। আর একজন বলছেন, এমন ঘনঘোর বরিষায়/এমন দিনে মন খোলা যায়…। দুজনের কথার মধ্যমণি ‘মন’। এই মনের আধার দেহ। দেহের মালিক মানুষ। সেই মানুষকে দূর থেকে বলা যায়, মনে রাখিয়ো, পরিয়ো। কিংবা এই বাদলঘন কালে মনের মালিকের সামনে মন খোলা যায়। আসলে গ্রেট ম্যানেরা একই রকম ভাবেন, সব কালে, সব দেশে।
আর হ্যাঁ, বলে রাখি। বর্ষাকাল মানেই পুরো দুখানা মাস ২৪ ইনটু ৭ বৃষ্টি হবে—এমনটা ভাবা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। বৃষ্টি হবে যখন, মেঘের মন চাইবে। ধরুন, ঠিক আপনি যখন অফিসের জন্য বাসার বাইরে বেরোলেন, বৃষ্টি নামল। আবার ধরুন খাঁ খাঁ রোদ একেবারে অতিষ্ঠ করে দিচ্ছে। নীল আকাশের কোথাও মেঘের কোনো চিহ্ন না দেখে যখন আপনি হতাশ হয়ে খিচুড়ির সরঞ্জাম তুলে রেখে পাতিলেবুর শরবত বানাতে বসলেন, ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি এল। মন খারাপ করা যাবে না। ব্রিটিশ দেশে এখনো রানির সিংহাসন থাকলেও পৃথিবীটা গণতান্ত্রিক। এই গণতান্ত্রিক পৃথিবীতে মেঘের যখন-তখন ভেঙেচুরে নামার সমালোচনা করা ফ্যাসিবাদী আচরণের বহিঃপ্রকাশ। আপনি ভেবে দেখুন ফ্যাসিবাদকে সমর্থন করবেন কি না।
যখন ফ্যাসিবাদকে সমর্থন করবেন কি-না, সেটা ভেবে আপনি দ্বিধান্বিত, সে সময়টা হয়তো বিকেল। ঠান্ডা হাওয়ার পরশ পেলেন দেহে। আপনার গলা থেকে এমনিই বেরিয়ে আসতে পারে, ‘মন খারাপ করা বিকেল মানেই মেঘ করেছে/ দূরে কোথাও দু-এক পশলা বৃষ্টি হচ্ছে…।’ কবির সুমন লোকটাই এমন। তাঁকে না পারবেন গিলতে, না পারবেন ফেলতে। কিন্তু লোকটা চিত্রকল্প তৈরি করে বটে। দূরে কোথাও দু’-এক পশলা বৃষ্টি হচ্ছে…।
এই টিপটপ বৃষ্টি দেখতে দেখতে আপনি গাইতেই পারেন, টিপ টিপ বর্ষা পানি… না মানে, এই চিত্রকল্পে বেশি দূর এগোনো আমাদের সঙ্গে ঠিক যায় না। বরং আপনি বৃষ্টি দেখুন আর ভাবুন, আপনি বৃষ্টি দেখেছেন। বৃষ্টির ছবি এঁকেছেন। অনেক অনেক ঘুরেফিরে আপনি ভালোই আছেন। হয়তো ফটিকজলের তৃষ্ণা মেটানো বর্ষায় আপনার মনে হতে পারে, চারটে দেয়াল মানেই নয়তো ঘর…। মনে হতেই পারে। এক উদ্ভাসিত নক্ষত্র ভরা রাতে বুদ্ধদেবেরও মনে হয়েছিল, চারটে দেয়াল মানেই ঘর নয়। এই ব্রহ্মাণ্ড এতটা অসার নয়। এতে প্রাণ আছে। সেটা আষাঢ়ী পূর্ণিমার রাত ছিল না বটে। কিন্তু উথালপাতাল বৃষ্টি দেখে আপনার মনে হতেই পারে, এই বিশাল পৃথিবীতে চার দেয়ালের কোনো অর্থ নেই।
টিনের চালে বৃষ্টির শব্দ থাক আর না থাক, চিরল চিরল নারকেল পাতা চুঁইয়ে বৃষ্টির ধারা নামুক আর নাই নামুক, জানালার পাশে বৃষ্টি ভেজা টকটকে লাল জবা দুলতে থাক আর নাই থাক, জানালার কার্নিশে পরা বৃষ্টির ধারাকে স্লোমোশনে চূর্ণ বিচূর্ণ হতে দেখুন আর নাই দেখুন, খিচুড়ির সঙ্গে ইলিশের সংগত থাক আর নাই থাক, কদম ফুল খোঁপায় গুঁজুন আর নাই গুঁজুন—বর্ষা এসেছে। মেঘে মেঘে শুয়ে মেঘমল্লার শোনার দিন এসেছে। মেজাজি মানুষ আপনি, মেজাজ আপনার দাস, এমন দিনে তানসেনকে এত্তেলা পাঠিয়ে বলতেই পারেন—
‘বাতাসে বৃষ্টির ঘ্রাণ পাই,
মেঘে মেঘে শুয়ে শুনি মেঘমল্লার।
আহা তানসেন!
বাজাও বাজাও!
ইছামতী ভিজে যাক হঠাৎ বর্ষায়।’
সম্প্রতি একখানা কবিতা পড়িয়া বড়ই চমৎকৃত হইয়াছি। সেই কবিতায় কবি বলিতেছেন, ‘তোমার লাগিয়া এই নোলক পাঠাইলাম,/ পরিয়ো।/ বাক্সে উঠাইয়া রাখিয়ো না।’ তাহার পরে কবি বলিতেছেন—
‘বর্ষা আসিতেছে।
মেঘ ডাকিবে। সর্বত্র জল থৈ থৈ করিবে।
লতা দুলিবে। পাখী ভিজিবে।
নোলক পাঠাইলাম,—পরিয়ো।
ইহা শুধু রূপের লাগিয়া নহে,
মনে রাখিয়ো
পরিয়ো।’
কবির নাম নারায়ণ মুখোপাধ্যায়। শুধু বর্ষা আসিতেছে না বলিয়া বলিতে হইবে, বর্ষা আসিয়াছে। আজ আষাঢ়ের প্রথম দিন। আষাঢ়স্য প্রথম দিবস।
এই নীল নীল বর্ষায় এমন একখানা কবিতার নতুন অর্থ তৈরি করা যায়। শুনেছি রোমান্সের শুরু বসন্তে। শেষও বসন্তে। তখন নাকি জীবজগৎ কী এক অদ্ভুত মাদকতায় ভাসিতে থাকে চামিন্দা ভাসের বলে উড়ে যাওয়া মিডিল স্ট্যাম্পের মতো। কিন্তু বর্ষাতেও যে ‘নোলক পাঠাইলাম,—পরিয়ো।’ বলা যায়, তাহা এই কবিতা পাঠের পরেই বুঝিতে পারিলাম। শুধু কি তাই? কবি বলিয়াছেন, ‘ইহা শুধু রূপের লাগিয়া নহে,/ মনে রাখিয়ো/ পরিয়ো।’ এর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের ‘এমন দিনে তারে বলা যায়/ এমন ঘনঘোর বরিষায়/ এমন দিনে মন খোলা যায়/ এমন মেঘস্বরে বাদল ঝরোঝরে/ তপনহীন ঘন তমসায়/ এমন দিনে তারে বলা যায়…’ গানটির কোথায় যেন অন্তর্গত একটা মিল খুঁজে পাওয়া যায়। একজন বলছেন, মনে রাখিয়ো/ পরিয়ো। আর একজন বলছেন, এমন ঘনঘোর বরিষায়/এমন দিনে মন খোলা যায়…। দুজনের কথার মধ্যমণি ‘মন’। এই মনের আধার দেহ। দেহের মালিক মানুষ। সেই মানুষকে দূর থেকে বলা যায়, মনে রাখিয়ো, পরিয়ো। কিংবা এই বাদলঘন কালে মনের মালিকের সামনে মন খোলা যায়। আসলে গ্রেট ম্যানেরা একই রকম ভাবেন, সব কালে, সব দেশে।
আর হ্যাঁ, বলে রাখি। বর্ষাকাল মানেই পুরো দুখানা মাস ২৪ ইনটু ৭ বৃষ্টি হবে—এমনটা ভাবা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। বৃষ্টি হবে যখন, মেঘের মন চাইবে। ধরুন, ঠিক আপনি যখন অফিসের জন্য বাসার বাইরে বেরোলেন, বৃষ্টি নামল। আবার ধরুন খাঁ খাঁ রোদ একেবারে অতিষ্ঠ করে দিচ্ছে। নীল আকাশের কোথাও মেঘের কোনো চিহ্ন না দেখে যখন আপনি হতাশ হয়ে খিচুড়ির সরঞ্জাম তুলে রেখে পাতিলেবুর শরবত বানাতে বসলেন, ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি এল। মন খারাপ করা যাবে না। ব্রিটিশ দেশে এখনো রানির সিংহাসন থাকলেও পৃথিবীটা গণতান্ত্রিক। এই গণতান্ত্রিক পৃথিবীতে মেঘের যখন-তখন ভেঙেচুরে নামার সমালোচনা করা ফ্যাসিবাদী আচরণের বহিঃপ্রকাশ। আপনি ভেবে দেখুন ফ্যাসিবাদকে সমর্থন করবেন কি না।
যখন ফ্যাসিবাদকে সমর্থন করবেন কি-না, সেটা ভেবে আপনি দ্বিধান্বিত, সে সময়টা হয়তো বিকেল। ঠান্ডা হাওয়ার পরশ পেলেন দেহে। আপনার গলা থেকে এমনিই বেরিয়ে আসতে পারে, ‘মন খারাপ করা বিকেল মানেই মেঘ করেছে/ দূরে কোথাও দু-এক পশলা বৃষ্টি হচ্ছে…।’ কবির সুমন লোকটাই এমন। তাঁকে না পারবেন গিলতে, না পারবেন ফেলতে। কিন্তু লোকটা চিত্রকল্প তৈরি করে বটে। দূরে কোথাও দু’-এক পশলা বৃষ্টি হচ্ছে…।
এই টিপটপ বৃষ্টি দেখতে দেখতে আপনি গাইতেই পারেন, টিপ টিপ বর্ষা পানি… না মানে, এই চিত্রকল্পে বেশি দূর এগোনো আমাদের সঙ্গে ঠিক যায় না। বরং আপনি বৃষ্টি দেখুন আর ভাবুন, আপনি বৃষ্টি দেখেছেন। বৃষ্টির ছবি এঁকেছেন। অনেক অনেক ঘুরেফিরে আপনি ভালোই আছেন। হয়তো ফটিকজলের তৃষ্ণা মেটানো বর্ষায় আপনার মনে হতে পারে, চারটে দেয়াল মানেই নয়তো ঘর…। মনে হতেই পারে। এক উদ্ভাসিত নক্ষত্র ভরা রাতে বুদ্ধদেবেরও মনে হয়েছিল, চারটে দেয়াল মানেই ঘর নয়। এই ব্রহ্মাণ্ড এতটা অসার নয়। এতে প্রাণ আছে। সেটা আষাঢ়ী পূর্ণিমার রাত ছিল না বটে। কিন্তু উথালপাতাল বৃষ্টি দেখে আপনার মনে হতেই পারে, এই বিশাল পৃথিবীতে চার দেয়ালের কোনো অর্থ নেই।
টিনের চালে বৃষ্টির শব্দ থাক আর না থাক, চিরল চিরল নারকেল পাতা চুঁইয়ে বৃষ্টির ধারা নামুক আর নাই নামুক, জানালার পাশে বৃষ্টি ভেজা টকটকে লাল জবা দুলতে থাক আর নাই থাক, জানালার কার্নিশে পরা বৃষ্টির ধারাকে স্লোমোশনে চূর্ণ বিচূর্ণ হতে দেখুন আর নাই দেখুন, খিচুড়ির সঙ্গে ইলিশের সংগত থাক আর নাই থাক, কদম ফুল খোঁপায় গুঁজুন আর নাই গুঁজুন—বর্ষা এসেছে। মেঘে মেঘে শুয়ে মেঘমল্লার শোনার দিন এসেছে। মেজাজি মানুষ আপনি, মেজাজ আপনার দাস, এমন দিনে তানসেনকে এত্তেলা পাঠিয়ে বলতেই পারেন—
‘বাতাসে বৃষ্টির ঘ্রাণ পাই,
মেঘে মেঘে শুয়ে শুনি মেঘমল্লার।
আহা তানসেন!
বাজাও বাজাও!
ইছামতী ভিজে যাক হঠাৎ বর্ষায়।’
প্রকৃত নাম জন গ্রিফিথ চেইনে হলেও জ্যাক লন্ডন নামে খ্যাতি পেয়েছেন এই বিখ্যাত মার্কিন লেখক। তাঁর জন্ম ১৮৭৬ সালের ১২ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায়।
১৩ ঘণ্টা আগেআবদুস সালাম ছিলেন বিজ্ঞানে নোবেল পাওয়া প্রথম মুসলিম এবং প্রথম পাকিস্তানি বিজ্ঞানী। পাকিস্তানি এই তাত্ত্বিক পদার্থবিদ ইলেক্ট্রোউইক ইউনিফিকেশন থিওরির জন্য নোবেল পুরস্কার পান।
২ দিন আগেঢাকা কলেজ, এ দেশের শিক্ষা ইতিহাসেই শুধু নয়, জাতির ইতিহাসেরও এক অনন্য অধ্যায়ের সঙ্গে জড়িত এক নাম। ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ, ’৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ সব গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে এ কলেজের ছাত্রদের অবদান অনস্বীকার্য। এ কলেজের কৃ
২ দিন আগে‘ভাষাকন্যা’ হিসেবে খ্যাত সুফিয়া আহমেদের জন্ম ১৯৩২ সালের ২০ নভেম্বর ফরিদপুরে। ভাষা আন্দোলনের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের এই ছাত্রী একুশে ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গকারীদের মধ্যে অন্যতম। সেদিন তিনি পুলিশি নির্যাতনে আহত হন। পরবর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্য...
৩ দিন আগে