খান মুহাম্মদ রুমেল

রোববার ছিল অমর একুশে বইমেলার দ্বিতীয় দিন। কর্মদিবসের প্রথম দিনে মানুষের সমাগম কম হবে অনুমিত ছিল, হয়েছেও তা-ই। তবে মেলা জমতে শুরু করেছে! প্রায় সব স্টল সাজিয়ে-গুছিয়ে বসেছে। ক্রেতা-পাঠক-দর্শনার্থী বাড়ছে, মেলা জমছে।
এবারের মেলায় একটা ব্যতিক্রম চোখে পড়ছে শুরুর দিন থেকে। প্রতিবছর প্রকাশনীগুলো পরিচিত ও জনপ্রিয় লেখকদের বড় বড় ছবি ব্যবহার করেন স্টল প্যাভিলিয়নের সামনে, ভেতরে, ওপরে। এবার সেটা অনেকটাই কম। তবে এই ব্যতিক্রমের মাঝেও একজন লেখক আছেন যথারীতি স্বমহিমায়। তিনি হুমায়ূন আহমেদ। তাঁর বই আছে এমন সব প্রকাশনীই তাঁর বিশাল ছবি ব্যবহার করেছে। মেলার প্রথম দিকে হুমায়ূন আহমেদের বই ঘিরেই পাঠকের আগ্রহ। মাসজুড়েই এটি থাকবে নিশ্চিত করে বলা যায়।
জীবন-মৃত্যুর ভেদরেখা মুছে অসীম আকাশের তারা হয়ে গেছেন হুমায়ূন আহমেদ—সেও তো হয়ে গেল এক যুগ। ২০১২ সালের ১৯শে জুলাই রাতটা চাঁদনি পসর ছিল কি না, কিংবা নিউইয়র্কের নীল আকাশে সেদিন ঝকঝকে রোদ ছিল কি না, এখন হয়তো অনেকেরই মনে নেই। তবে এটি নিশ্চিত করে বলা যায়—আজও পূর্ণিমা আলোয় ভেসে গেলে রাতের আকাশ নীল শাড়ি পরে ছাদে চলে যায় বিষণ্ন কোনো তরুণী। স্বপ্নতাড়িত তরুণ আজও জোছনা দেখলে হাঁটতে থাকে শহুরে পথ ধরে উদ্দেশ্যহীন। শহর থেকে দূর লোকালয়ে একই রকম আবেগ নিয়ে হুমায়ূনকে স্মরণ করে এই সময়ের কিশোর তারুণ্য।
শুধু কিশোর-তারুণ্য কেন—মৃত্যুর বারো বছর পর এও তো স্পষ্ট-বয়সী পাঠকেরাও লুকিয়ে কিংবা প্রকাশ্যে এখনো হুমায়ূন পড়েন একই রকম মাদকতায়।
সাহিত্যে মান এবং জনপ্রিয়তা নিয়ে তর্ক দীর্ঘদিনের। আর এই তর্ক থেকেই অনেকেই প্রশ্ন তুলতেন, অনেক বেশি লিখে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। কিন্তু মানের দিক থেকে তার লেখা অতটা কালোত্তীর্ণ কি না—সেই দ্বন্দ্বের বিচার করতে যাওয়া এই আলোচনার উদ্দেশ্য নয়। একজন লেখক প্রায় পাঁচ দশক ধরে মায়াময় মোহাচ্ছন্ন লেখনীতে আবিষ্ট করে রেখেছেন কয়েকটি প্রজন্মকে। একা হাতে দাঁড় দিয়েছেন বাংলা প্রকাশনা শিল্পকে। এমন কৃতিত্ব পৃথিবীর ইতিহাসে কজন লেখকের আছে? তিনি যা-ই লিখতেন হুমড়ি খেয়ে পড়তেন পাঠকেরা। এমনকি মৃত্যুর বারো বছর পেরিয়ে গেলেও তার মোহ থেকে বের হতে পারেননি বাংলা ভাষার পাঠক। কী এমন মায়া, কী এমন জাদু তাঁর লেখায়? কেন হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো টানতে পেরেছেন তিনি পাঠককে?
রোববার সন্ধ্যায় মেলা চত্বরে দাঁড়িয়ে একজন লেখক বলছিলেন—হুমায়ূন আহমেদ বাংলা সাহিত্যের পাঠক তৈরি করতে পারেননি। তিনি নিজের পাঠক তৈরি করেছেন।
—হুম, আপনার কথা অনেকটাই সত্যি। কিন্তু এই যে নিজের অগুনতি পাঠক তিনি তৈরি করেছেন, কয়েকটি প্রজন্মকে পাঠমুখী করেছেন সেটার কোনো কৃতিত্ব দেবেন না? আমি তো এমন অনেককে চিনি, যারা হুমায়ূন পড়তে পড়তে নিবিষ্ট পাঠক হয়ে উঠেছেন। খুব শান্ত স্বরে বলি আমি!
—হুম, সেটা আপনি বলতে পারেন। কিন্তু তাঁর কারণে মানুষের পাঠের অভ্যাস একটা গণ্ডিতে আটক গেছে। এর বাইরে মানুষ আর কিছু পড়তে চায় না।
—সেটা তো ভাই হুমায়ূন আহমেদের দায় না। বরং অন্য সবার সম্মিলিত ব্যর্থতা।
—শোনেন, আপনাদের মতো অন্ধ ভক্তদের সঙ্গে আলাপ করে লাভ নেই।
কথাটা বলেই তিনি হাসতে থাকেন। হাসিতে যোগ দিই আমিও।
—আমি ভাই অন্ধ ভক্ত নই। আপনি যুক্তি দিয়ে বোঝালে আমি অবশ্যই মেনে নেব।
—থাক, এ নিয়ে আপনার সঙ্গে পরে আলাপ করব।
তিনি চলে যান তার পথে। আমিও হাঁটতে থাকি একা একা। মেলার ভিড় দেখি। মেলার মানুষ দেখি। মাথার মধ্যে তখনো ভর করে থাকেন হুমায়ূন আহমেদ।
হুমায়ূন আহমেদ গল্প বলতেন আমাদের চেনা পরিসরের। মধ্যবিত্তের নিত্য জীবন যাপনের টানাপোড়েনের। বোহিমিয়ান বাউন্ডুলে জীবন তাঁর লেখায় যেমন উঠে এসেছে, তেমনি তিনি গল্প বলেছেন তুখোড় যুক্তিবাদীর। আর এ কারণেই হয়তো হিমু মিসির আলি, জরি পরি রূপা শুভ্ররা সাহিত্যের কাল্পনিক চরিত্রের অবয়ব ছাপিয়ে পাঠকের কাছে হয়ে উঠেছেন রক্ত মাংসের জীবন্ত মানুষ। শুরুতে যে বলছিলাম জোছনা রাতে এখনো শাড়ি পরে ছাদে চলে যান কোনো বিষণ্ন তরুণী, কিংবা হিমুর মতো খালি পায়ে হাঁটতে বের হয়ে যান কোনো বোহিমিয়ান তরুণ—প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের এভাবে ভাবতে শিখিয়েছেন হুমায়ূন আহমেদ ছাড়া আর কে?
হুমায়ূন আহমেদ যেখানে হাত দিয়েছেন ফলেছে সোনা। স্যাটেলাইট যুগের আগে বিটিভির জন্য নাটক লিখলেন ‘এইসব দিনরাত্রি’। নাটকের ছোট্ট শিশুর চরিত্র টুনির ক্যানসারের খবর শুনে কেঁদে বুক ভাসিয়েছেন দেশের হাজারো মানুষ। ‘বহুব্রীহি’ নাটকে পাখির মুখে তিনি বলালেন রাজাকার শব্দটি। অথচ স্বৈরশাসনের আমলে বিটিভিতে তখন নিষিদ্ধ এই শব্দ। আর ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকের বাকের চরিত্রের জন্য দেশে এবং দেশের বাইরে কী তুলকালাম হয়েছে, সেটি আর নতুন করে বলার কিছু আছে? নাটকের একটি চরিত্রের ফাঁসি হচ্ছে, আর এই ফাঁসি বন্ধের জন্য দেশজুড়ে মিছিল হচ্ছে। বাংলাদেশ তো বটেই পৃথিবীর ইতিহাসে এমন নজির আর কয়টা আছে। এরপর ‘আজ রবিবার’, ‘নক্ষত্রের রাত’ হয়ে ধারাবাহিকের তালিকাটা হয়তো খুব বেশি দীর্ঘ নয়। কিন্তু তিনি লিখেছেন পরিচালনা করেছেন আরও অনেক নাটক। যেগুলো এখনো ইউটিউবের ট্রেন্ডিং তালিকায় আছে বছরের পর বছর ধরে। বলা চলে বাংলা নাটকের ভাষা ও নির্মাণশৈলী একাই বদলে দিয়েছেন তিনি।
লেখক হুমায়ূন আহমেদ নাটকের পথে হেঁটে একসময় এলেন চলচ্চিত্রে। প্রথমে চলচ্চিত্রের স্ক্রিপ্ট লিখলেন। তারপর নিজেই এলেন পরিচালনায়। এখানেও জয়জয়কার। একসময় ওপার বাংলার লেখকদের বইয়ে বুঁদ হয়ে থাকা পাঠককে তিনি যেমন বাংলাদেশমুখী করেছেন, তেমনই হিন্দি সিরিয়াল আর সিনেমায় বুঁদ দর্শককে তিনি টেনে এনেছেন বিটিভিতে, দেশি স্যাটেলাইট চ্যানেলে কিংবা সিনেমা হলে।
এখনো বইমেলায় সবচেয়ে ভিড় সেসব প্রকাশনীতে যেগুলোতে হুমায়ূন আহমেদের বই আছে। কোনো বইয়ের দোকানে গেলেও তাঁর লেখা বইয়ের তাক ঘিরেই ভিড় চোখে পড়ে বেশি। সবচেয়ে বড় কথা হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর এত বছর পরেও বাংলা ফিকশনে তাঁকে ছাপিয়ে যেতে পারেননি কেউ। এটা কি তবে অন্য লেখকদের সীমাবদ্ধতা? নিশ্চয় না। আদতে এটি হুমায়ূন আহমেদের আশ্চর্য জাদুকরী লেখার ক্ষমতা। আর সেই ক্ষমতাতেই তিনি এখনো অধীশ্বর হয়ে আছেন বাঙালি পাঠকের কাছে।
একজন মানুষকে প্রথমে পাঠক হয়ে উঠতে হয়। অর্থাৎ পাঠের অভ্যাস গড়ে উঠলে তারপর একজন পাঠক বাছবিচার করে পড়তে শেখেন। চিন্তার দরজা খুলতে থাকলে তিনি হয়ে ওঠেন প্রকৃত পাঠক। তাঁর সমালোচকদের কেউ কেউ বলেন—যেমনটা একটু আগে পরিচিত লেখক বলছিলেন—হুমায়ূন আহমেদ নিজের পাঠক করেছেন, বাংলা সাহিত্যের পাঠক তৈরি করতে পারেননি। এ ক্ষেত্রে তাঁর পক্ষে কলম ধরেন এমন মানুষেরা বলেন, নিজের পাঠক তৈরি করার মধ্য দিয়েই তিনি কয়েকটি প্রজন্মকে বইমুখী করেছেন। অন্য সব আলাপ বাদ দিয়ে শুধু পাঠক তৈরির দিকটি বিবেচনায় নিলেও বলা যায়—হুমায়ূন আহমেদ এখনো প্রাসঙ্গিক। বাঙালিকে পাঠমুখী এবং এখনকার বৈশ্বিক অস্থির সময়ে কোথাও দু-দণ্ড স্থির হয়ে বসে নতুন ভাবনায় মশগুল হতেও হুমায়ূন আহমেদ বড় বেশি প্রয়োজনীয়। চিন্তার শৃঙ্খল মুক্তির বড় অনুষঙ্গ এখনো হুমায়ূন আহমেদ।
সময় বাড়ছে। সন্ধ্যা পেরিয়েছে অনেকক্ষণ। হঠাৎ আনমনে আকাশের দিকে তাকাই। চাঁদহীন আকাশে ধূসর মেঘ। হুমায়ূন আহমেদ কি দেখছেন ওপর থেকে তাঁর ভক্ত পাঠকদের? যেখানে এখন তিনি থাকেন সেখান থেকে অনুভব করা যায় মর্ত্যলোকের আনন্দ বেদনা?

রোববার ছিল অমর একুশে বইমেলার দ্বিতীয় দিন। কর্মদিবসের প্রথম দিনে মানুষের সমাগম কম হবে অনুমিত ছিল, হয়েছেও তা-ই। তবে মেলা জমতে শুরু করেছে! প্রায় সব স্টল সাজিয়ে-গুছিয়ে বসেছে। ক্রেতা-পাঠক-দর্শনার্থী বাড়ছে, মেলা জমছে।
এবারের মেলায় একটা ব্যতিক্রম চোখে পড়ছে শুরুর দিন থেকে। প্রতিবছর প্রকাশনীগুলো পরিচিত ও জনপ্রিয় লেখকদের বড় বড় ছবি ব্যবহার করেন স্টল প্যাভিলিয়নের সামনে, ভেতরে, ওপরে। এবার সেটা অনেকটাই কম। তবে এই ব্যতিক্রমের মাঝেও একজন লেখক আছেন যথারীতি স্বমহিমায়। তিনি হুমায়ূন আহমেদ। তাঁর বই আছে এমন সব প্রকাশনীই তাঁর বিশাল ছবি ব্যবহার করেছে। মেলার প্রথম দিকে হুমায়ূন আহমেদের বই ঘিরেই পাঠকের আগ্রহ। মাসজুড়েই এটি থাকবে নিশ্চিত করে বলা যায়।
জীবন-মৃত্যুর ভেদরেখা মুছে অসীম আকাশের তারা হয়ে গেছেন হুমায়ূন আহমেদ—সেও তো হয়ে গেল এক যুগ। ২০১২ সালের ১৯শে জুলাই রাতটা চাঁদনি পসর ছিল কি না, কিংবা নিউইয়র্কের নীল আকাশে সেদিন ঝকঝকে রোদ ছিল কি না, এখন হয়তো অনেকেরই মনে নেই। তবে এটি নিশ্চিত করে বলা যায়—আজও পূর্ণিমা আলোয় ভেসে গেলে রাতের আকাশ নীল শাড়ি পরে ছাদে চলে যায় বিষণ্ন কোনো তরুণী। স্বপ্নতাড়িত তরুণ আজও জোছনা দেখলে হাঁটতে থাকে শহুরে পথ ধরে উদ্দেশ্যহীন। শহর থেকে দূর লোকালয়ে একই রকম আবেগ নিয়ে হুমায়ূনকে স্মরণ করে এই সময়ের কিশোর তারুণ্য।
শুধু কিশোর-তারুণ্য কেন—মৃত্যুর বারো বছর পর এও তো স্পষ্ট-বয়সী পাঠকেরাও লুকিয়ে কিংবা প্রকাশ্যে এখনো হুমায়ূন পড়েন একই রকম মাদকতায়।
সাহিত্যে মান এবং জনপ্রিয়তা নিয়ে তর্ক দীর্ঘদিনের। আর এই তর্ক থেকেই অনেকেই প্রশ্ন তুলতেন, অনেক বেশি লিখে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। কিন্তু মানের দিক থেকে তার লেখা অতটা কালোত্তীর্ণ কি না—সেই দ্বন্দ্বের বিচার করতে যাওয়া এই আলোচনার উদ্দেশ্য নয়। একজন লেখক প্রায় পাঁচ দশক ধরে মায়াময় মোহাচ্ছন্ন লেখনীতে আবিষ্ট করে রেখেছেন কয়েকটি প্রজন্মকে। একা হাতে দাঁড় দিয়েছেন বাংলা প্রকাশনা শিল্পকে। এমন কৃতিত্ব পৃথিবীর ইতিহাসে কজন লেখকের আছে? তিনি যা-ই লিখতেন হুমড়ি খেয়ে পড়তেন পাঠকেরা। এমনকি মৃত্যুর বারো বছর পেরিয়ে গেলেও তার মোহ থেকে বের হতে পারেননি বাংলা ভাষার পাঠক। কী এমন মায়া, কী এমন জাদু তাঁর লেখায়? কেন হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো টানতে পেরেছেন তিনি পাঠককে?
রোববার সন্ধ্যায় মেলা চত্বরে দাঁড়িয়ে একজন লেখক বলছিলেন—হুমায়ূন আহমেদ বাংলা সাহিত্যের পাঠক তৈরি করতে পারেননি। তিনি নিজের পাঠক তৈরি করেছেন।
—হুম, আপনার কথা অনেকটাই সত্যি। কিন্তু এই যে নিজের অগুনতি পাঠক তিনি তৈরি করেছেন, কয়েকটি প্রজন্মকে পাঠমুখী করেছেন সেটার কোনো কৃতিত্ব দেবেন না? আমি তো এমন অনেককে চিনি, যারা হুমায়ূন পড়তে পড়তে নিবিষ্ট পাঠক হয়ে উঠেছেন। খুব শান্ত স্বরে বলি আমি!
—হুম, সেটা আপনি বলতে পারেন। কিন্তু তাঁর কারণে মানুষের পাঠের অভ্যাস একটা গণ্ডিতে আটক গেছে। এর বাইরে মানুষ আর কিছু পড়তে চায় না।
—সেটা তো ভাই হুমায়ূন আহমেদের দায় না। বরং অন্য সবার সম্মিলিত ব্যর্থতা।
—শোনেন, আপনাদের মতো অন্ধ ভক্তদের সঙ্গে আলাপ করে লাভ নেই।
কথাটা বলেই তিনি হাসতে থাকেন। হাসিতে যোগ দিই আমিও।
—আমি ভাই অন্ধ ভক্ত নই। আপনি যুক্তি দিয়ে বোঝালে আমি অবশ্যই মেনে নেব।
—থাক, এ নিয়ে আপনার সঙ্গে পরে আলাপ করব।
তিনি চলে যান তার পথে। আমিও হাঁটতে থাকি একা একা। মেলার ভিড় দেখি। মেলার মানুষ দেখি। মাথার মধ্যে তখনো ভর করে থাকেন হুমায়ূন আহমেদ।
হুমায়ূন আহমেদ গল্প বলতেন আমাদের চেনা পরিসরের। মধ্যবিত্তের নিত্য জীবন যাপনের টানাপোড়েনের। বোহিমিয়ান বাউন্ডুলে জীবন তাঁর লেখায় যেমন উঠে এসেছে, তেমনি তিনি গল্প বলেছেন তুখোড় যুক্তিবাদীর। আর এ কারণেই হয়তো হিমু মিসির আলি, জরি পরি রূপা শুভ্ররা সাহিত্যের কাল্পনিক চরিত্রের অবয়ব ছাপিয়ে পাঠকের কাছে হয়ে উঠেছেন রক্ত মাংসের জীবন্ত মানুষ। শুরুতে যে বলছিলাম জোছনা রাতে এখনো শাড়ি পরে ছাদে চলে যান কোনো বিষণ্ন তরুণী, কিংবা হিমুর মতো খালি পায়ে হাঁটতে বের হয়ে যান কোনো বোহিমিয়ান তরুণ—প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের এভাবে ভাবতে শিখিয়েছেন হুমায়ূন আহমেদ ছাড়া আর কে?
হুমায়ূন আহমেদ যেখানে হাত দিয়েছেন ফলেছে সোনা। স্যাটেলাইট যুগের আগে বিটিভির জন্য নাটক লিখলেন ‘এইসব দিনরাত্রি’। নাটকের ছোট্ট শিশুর চরিত্র টুনির ক্যানসারের খবর শুনে কেঁদে বুক ভাসিয়েছেন দেশের হাজারো মানুষ। ‘বহুব্রীহি’ নাটকে পাখির মুখে তিনি বলালেন রাজাকার শব্দটি। অথচ স্বৈরশাসনের আমলে বিটিভিতে তখন নিষিদ্ধ এই শব্দ। আর ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকের বাকের চরিত্রের জন্য দেশে এবং দেশের বাইরে কী তুলকালাম হয়েছে, সেটি আর নতুন করে বলার কিছু আছে? নাটকের একটি চরিত্রের ফাঁসি হচ্ছে, আর এই ফাঁসি বন্ধের জন্য দেশজুড়ে মিছিল হচ্ছে। বাংলাদেশ তো বটেই পৃথিবীর ইতিহাসে এমন নজির আর কয়টা আছে। এরপর ‘আজ রবিবার’, ‘নক্ষত্রের রাত’ হয়ে ধারাবাহিকের তালিকাটা হয়তো খুব বেশি দীর্ঘ নয়। কিন্তু তিনি লিখেছেন পরিচালনা করেছেন আরও অনেক নাটক। যেগুলো এখনো ইউটিউবের ট্রেন্ডিং তালিকায় আছে বছরের পর বছর ধরে। বলা চলে বাংলা নাটকের ভাষা ও নির্মাণশৈলী একাই বদলে দিয়েছেন তিনি।
লেখক হুমায়ূন আহমেদ নাটকের পথে হেঁটে একসময় এলেন চলচ্চিত্রে। প্রথমে চলচ্চিত্রের স্ক্রিপ্ট লিখলেন। তারপর নিজেই এলেন পরিচালনায়। এখানেও জয়জয়কার। একসময় ওপার বাংলার লেখকদের বইয়ে বুঁদ হয়ে থাকা পাঠককে তিনি যেমন বাংলাদেশমুখী করেছেন, তেমনই হিন্দি সিরিয়াল আর সিনেমায় বুঁদ দর্শককে তিনি টেনে এনেছেন বিটিভিতে, দেশি স্যাটেলাইট চ্যানেলে কিংবা সিনেমা হলে।
এখনো বইমেলায় সবচেয়ে ভিড় সেসব প্রকাশনীতে যেগুলোতে হুমায়ূন আহমেদের বই আছে। কোনো বইয়ের দোকানে গেলেও তাঁর লেখা বইয়ের তাক ঘিরেই ভিড় চোখে পড়ে বেশি। সবচেয়ে বড় কথা হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর এত বছর পরেও বাংলা ফিকশনে তাঁকে ছাপিয়ে যেতে পারেননি কেউ। এটা কি তবে অন্য লেখকদের সীমাবদ্ধতা? নিশ্চয় না। আদতে এটি হুমায়ূন আহমেদের আশ্চর্য জাদুকরী লেখার ক্ষমতা। আর সেই ক্ষমতাতেই তিনি এখনো অধীশ্বর হয়ে আছেন বাঙালি পাঠকের কাছে।
একজন মানুষকে প্রথমে পাঠক হয়ে উঠতে হয়। অর্থাৎ পাঠের অভ্যাস গড়ে উঠলে তারপর একজন পাঠক বাছবিচার করে পড়তে শেখেন। চিন্তার দরজা খুলতে থাকলে তিনি হয়ে ওঠেন প্রকৃত পাঠক। তাঁর সমালোচকদের কেউ কেউ বলেন—যেমনটা একটু আগে পরিচিত লেখক বলছিলেন—হুমায়ূন আহমেদ নিজের পাঠক করেছেন, বাংলা সাহিত্যের পাঠক তৈরি করতে পারেননি। এ ক্ষেত্রে তাঁর পক্ষে কলম ধরেন এমন মানুষেরা বলেন, নিজের পাঠক তৈরি করার মধ্য দিয়েই তিনি কয়েকটি প্রজন্মকে বইমুখী করেছেন। অন্য সব আলাপ বাদ দিয়ে শুধু পাঠক তৈরির দিকটি বিবেচনায় নিলেও বলা যায়—হুমায়ূন আহমেদ এখনো প্রাসঙ্গিক। বাঙালিকে পাঠমুখী এবং এখনকার বৈশ্বিক অস্থির সময়ে কোথাও দু-দণ্ড স্থির হয়ে বসে নতুন ভাবনায় মশগুল হতেও হুমায়ূন আহমেদ বড় বেশি প্রয়োজনীয়। চিন্তার শৃঙ্খল মুক্তির বড় অনুষঙ্গ এখনো হুমায়ূন আহমেদ।
সময় বাড়ছে। সন্ধ্যা পেরিয়েছে অনেকক্ষণ। হঠাৎ আনমনে আকাশের দিকে তাকাই। চাঁদহীন আকাশে ধূসর মেঘ। হুমায়ূন আহমেদ কি দেখছেন ওপর থেকে তাঁর ভক্ত পাঠকদের? যেখানে এখন তিনি থাকেন সেখান থেকে অনুভব করা যায় মর্ত্যলোকের আনন্দ বেদনা?
খান মুহাম্মদ রুমেল

রোববার ছিল অমর একুশে বইমেলার দ্বিতীয় দিন। কর্মদিবসের প্রথম দিনে মানুষের সমাগম কম হবে অনুমিত ছিল, হয়েছেও তা-ই। তবে মেলা জমতে শুরু করেছে! প্রায় সব স্টল সাজিয়ে-গুছিয়ে বসেছে। ক্রেতা-পাঠক-দর্শনার্থী বাড়ছে, মেলা জমছে।
এবারের মেলায় একটা ব্যতিক্রম চোখে পড়ছে শুরুর দিন থেকে। প্রতিবছর প্রকাশনীগুলো পরিচিত ও জনপ্রিয় লেখকদের বড় বড় ছবি ব্যবহার করেন স্টল প্যাভিলিয়নের সামনে, ভেতরে, ওপরে। এবার সেটা অনেকটাই কম। তবে এই ব্যতিক্রমের মাঝেও একজন লেখক আছেন যথারীতি স্বমহিমায়। তিনি হুমায়ূন আহমেদ। তাঁর বই আছে এমন সব প্রকাশনীই তাঁর বিশাল ছবি ব্যবহার করেছে। মেলার প্রথম দিকে হুমায়ূন আহমেদের বই ঘিরেই পাঠকের আগ্রহ। মাসজুড়েই এটি থাকবে নিশ্চিত করে বলা যায়।
জীবন-মৃত্যুর ভেদরেখা মুছে অসীম আকাশের তারা হয়ে গেছেন হুমায়ূন আহমেদ—সেও তো হয়ে গেল এক যুগ। ২০১২ সালের ১৯শে জুলাই রাতটা চাঁদনি পসর ছিল কি না, কিংবা নিউইয়র্কের নীল আকাশে সেদিন ঝকঝকে রোদ ছিল কি না, এখন হয়তো অনেকেরই মনে নেই। তবে এটি নিশ্চিত করে বলা যায়—আজও পূর্ণিমা আলোয় ভেসে গেলে রাতের আকাশ নীল শাড়ি পরে ছাদে চলে যায় বিষণ্ন কোনো তরুণী। স্বপ্নতাড়িত তরুণ আজও জোছনা দেখলে হাঁটতে থাকে শহুরে পথ ধরে উদ্দেশ্যহীন। শহর থেকে দূর লোকালয়ে একই রকম আবেগ নিয়ে হুমায়ূনকে স্মরণ করে এই সময়ের কিশোর তারুণ্য।
শুধু কিশোর-তারুণ্য কেন—মৃত্যুর বারো বছর পর এও তো স্পষ্ট-বয়সী পাঠকেরাও লুকিয়ে কিংবা প্রকাশ্যে এখনো হুমায়ূন পড়েন একই রকম মাদকতায়।
সাহিত্যে মান এবং জনপ্রিয়তা নিয়ে তর্ক দীর্ঘদিনের। আর এই তর্ক থেকেই অনেকেই প্রশ্ন তুলতেন, অনেক বেশি লিখে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। কিন্তু মানের দিক থেকে তার লেখা অতটা কালোত্তীর্ণ কি না—সেই দ্বন্দ্বের বিচার করতে যাওয়া এই আলোচনার উদ্দেশ্য নয়। একজন লেখক প্রায় পাঁচ দশক ধরে মায়াময় মোহাচ্ছন্ন লেখনীতে আবিষ্ট করে রেখেছেন কয়েকটি প্রজন্মকে। একা হাতে দাঁড় দিয়েছেন বাংলা প্রকাশনা শিল্পকে। এমন কৃতিত্ব পৃথিবীর ইতিহাসে কজন লেখকের আছে? তিনি যা-ই লিখতেন হুমড়ি খেয়ে পড়তেন পাঠকেরা। এমনকি মৃত্যুর বারো বছর পেরিয়ে গেলেও তার মোহ থেকে বের হতে পারেননি বাংলা ভাষার পাঠক। কী এমন মায়া, কী এমন জাদু তাঁর লেখায়? কেন হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো টানতে পেরেছেন তিনি পাঠককে?
রোববার সন্ধ্যায় মেলা চত্বরে দাঁড়িয়ে একজন লেখক বলছিলেন—হুমায়ূন আহমেদ বাংলা সাহিত্যের পাঠক তৈরি করতে পারেননি। তিনি নিজের পাঠক তৈরি করেছেন।
—হুম, আপনার কথা অনেকটাই সত্যি। কিন্তু এই যে নিজের অগুনতি পাঠক তিনি তৈরি করেছেন, কয়েকটি প্রজন্মকে পাঠমুখী করেছেন সেটার কোনো কৃতিত্ব দেবেন না? আমি তো এমন অনেককে চিনি, যারা হুমায়ূন পড়তে পড়তে নিবিষ্ট পাঠক হয়ে উঠেছেন। খুব শান্ত স্বরে বলি আমি!
—হুম, সেটা আপনি বলতে পারেন। কিন্তু তাঁর কারণে মানুষের পাঠের অভ্যাস একটা গণ্ডিতে আটক গেছে। এর বাইরে মানুষ আর কিছু পড়তে চায় না।
—সেটা তো ভাই হুমায়ূন আহমেদের দায় না। বরং অন্য সবার সম্মিলিত ব্যর্থতা।
—শোনেন, আপনাদের মতো অন্ধ ভক্তদের সঙ্গে আলাপ করে লাভ নেই।
কথাটা বলেই তিনি হাসতে থাকেন। হাসিতে যোগ দিই আমিও।
—আমি ভাই অন্ধ ভক্ত নই। আপনি যুক্তি দিয়ে বোঝালে আমি অবশ্যই মেনে নেব।
—থাক, এ নিয়ে আপনার সঙ্গে পরে আলাপ করব।
তিনি চলে যান তার পথে। আমিও হাঁটতে থাকি একা একা। মেলার ভিড় দেখি। মেলার মানুষ দেখি। মাথার মধ্যে তখনো ভর করে থাকেন হুমায়ূন আহমেদ।
হুমায়ূন আহমেদ গল্প বলতেন আমাদের চেনা পরিসরের। মধ্যবিত্তের নিত্য জীবন যাপনের টানাপোড়েনের। বোহিমিয়ান বাউন্ডুলে জীবন তাঁর লেখায় যেমন উঠে এসেছে, তেমনি তিনি গল্প বলেছেন তুখোড় যুক্তিবাদীর। আর এ কারণেই হয়তো হিমু মিসির আলি, জরি পরি রূপা শুভ্ররা সাহিত্যের কাল্পনিক চরিত্রের অবয়ব ছাপিয়ে পাঠকের কাছে হয়ে উঠেছেন রক্ত মাংসের জীবন্ত মানুষ। শুরুতে যে বলছিলাম জোছনা রাতে এখনো শাড়ি পরে ছাদে চলে যান কোনো বিষণ্ন তরুণী, কিংবা হিমুর মতো খালি পায়ে হাঁটতে বের হয়ে যান কোনো বোহিমিয়ান তরুণ—প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের এভাবে ভাবতে শিখিয়েছেন হুমায়ূন আহমেদ ছাড়া আর কে?
হুমায়ূন আহমেদ যেখানে হাত দিয়েছেন ফলেছে সোনা। স্যাটেলাইট যুগের আগে বিটিভির জন্য নাটক লিখলেন ‘এইসব দিনরাত্রি’। নাটকের ছোট্ট শিশুর চরিত্র টুনির ক্যানসারের খবর শুনে কেঁদে বুক ভাসিয়েছেন দেশের হাজারো মানুষ। ‘বহুব্রীহি’ নাটকে পাখির মুখে তিনি বলালেন রাজাকার শব্দটি। অথচ স্বৈরশাসনের আমলে বিটিভিতে তখন নিষিদ্ধ এই শব্দ। আর ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকের বাকের চরিত্রের জন্য দেশে এবং দেশের বাইরে কী তুলকালাম হয়েছে, সেটি আর নতুন করে বলার কিছু আছে? নাটকের একটি চরিত্রের ফাঁসি হচ্ছে, আর এই ফাঁসি বন্ধের জন্য দেশজুড়ে মিছিল হচ্ছে। বাংলাদেশ তো বটেই পৃথিবীর ইতিহাসে এমন নজির আর কয়টা আছে। এরপর ‘আজ রবিবার’, ‘নক্ষত্রের রাত’ হয়ে ধারাবাহিকের তালিকাটা হয়তো খুব বেশি দীর্ঘ নয়। কিন্তু তিনি লিখেছেন পরিচালনা করেছেন আরও অনেক নাটক। যেগুলো এখনো ইউটিউবের ট্রেন্ডিং তালিকায় আছে বছরের পর বছর ধরে। বলা চলে বাংলা নাটকের ভাষা ও নির্মাণশৈলী একাই বদলে দিয়েছেন তিনি।
লেখক হুমায়ূন আহমেদ নাটকের পথে হেঁটে একসময় এলেন চলচ্চিত্রে। প্রথমে চলচ্চিত্রের স্ক্রিপ্ট লিখলেন। তারপর নিজেই এলেন পরিচালনায়। এখানেও জয়জয়কার। একসময় ওপার বাংলার লেখকদের বইয়ে বুঁদ হয়ে থাকা পাঠককে তিনি যেমন বাংলাদেশমুখী করেছেন, তেমনই হিন্দি সিরিয়াল আর সিনেমায় বুঁদ দর্শককে তিনি টেনে এনেছেন বিটিভিতে, দেশি স্যাটেলাইট চ্যানেলে কিংবা সিনেমা হলে।
এখনো বইমেলায় সবচেয়ে ভিড় সেসব প্রকাশনীতে যেগুলোতে হুমায়ূন আহমেদের বই আছে। কোনো বইয়ের দোকানে গেলেও তাঁর লেখা বইয়ের তাক ঘিরেই ভিড় চোখে পড়ে বেশি। সবচেয়ে বড় কথা হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর এত বছর পরেও বাংলা ফিকশনে তাঁকে ছাপিয়ে যেতে পারেননি কেউ। এটা কি তবে অন্য লেখকদের সীমাবদ্ধতা? নিশ্চয় না। আদতে এটি হুমায়ূন আহমেদের আশ্চর্য জাদুকরী লেখার ক্ষমতা। আর সেই ক্ষমতাতেই তিনি এখনো অধীশ্বর হয়ে আছেন বাঙালি পাঠকের কাছে।
একজন মানুষকে প্রথমে পাঠক হয়ে উঠতে হয়। অর্থাৎ পাঠের অভ্যাস গড়ে উঠলে তারপর একজন পাঠক বাছবিচার করে পড়তে শেখেন। চিন্তার দরজা খুলতে থাকলে তিনি হয়ে ওঠেন প্রকৃত পাঠক। তাঁর সমালোচকদের কেউ কেউ বলেন—যেমনটা একটু আগে পরিচিত লেখক বলছিলেন—হুমায়ূন আহমেদ নিজের পাঠক করেছেন, বাংলা সাহিত্যের পাঠক তৈরি করতে পারেননি। এ ক্ষেত্রে তাঁর পক্ষে কলম ধরেন এমন মানুষেরা বলেন, নিজের পাঠক তৈরি করার মধ্য দিয়েই তিনি কয়েকটি প্রজন্মকে বইমুখী করেছেন। অন্য সব আলাপ বাদ দিয়ে শুধু পাঠক তৈরির দিকটি বিবেচনায় নিলেও বলা যায়—হুমায়ূন আহমেদ এখনো প্রাসঙ্গিক। বাঙালিকে পাঠমুখী এবং এখনকার বৈশ্বিক অস্থির সময়ে কোথাও দু-দণ্ড স্থির হয়ে বসে নতুন ভাবনায় মশগুল হতেও হুমায়ূন আহমেদ বড় বেশি প্রয়োজনীয়। চিন্তার শৃঙ্খল মুক্তির বড় অনুষঙ্গ এখনো হুমায়ূন আহমেদ।
সময় বাড়ছে। সন্ধ্যা পেরিয়েছে অনেকক্ষণ। হঠাৎ আনমনে আকাশের দিকে তাকাই। চাঁদহীন আকাশে ধূসর মেঘ। হুমায়ূন আহমেদ কি দেখছেন ওপর থেকে তাঁর ভক্ত পাঠকদের? যেখানে এখন তিনি থাকেন সেখান থেকে অনুভব করা যায় মর্ত্যলোকের আনন্দ বেদনা?

রোববার ছিল অমর একুশে বইমেলার দ্বিতীয় দিন। কর্মদিবসের প্রথম দিনে মানুষের সমাগম কম হবে অনুমিত ছিল, হয়েছেও তা-ই। তবে মেলা জমতে শুরু করেছে! প্রায় সব স্টল সাজিয়ে-গুছিয়ে বসেছে। ক্রেতা-পাঠক-দর্শনার্থী বাড়ছে, মেলা জমছে।
এবারের মেলায় একটা ব্যতিক্রম চোখে পড়ছে শুরুর দিন থেকে। প্রতিবছর প্রকাশনীগুলো পরিচিত ও জনপ্রিয় লেখকদের বড় বড় ছবি ব্যবহার করেন স্টল প্যাভিলিয়নের সামনে, ভেতরে, ওপরে। এবার সেটা অনেকটাই কম। তবে এই ব্যতিক্রমের মাঝেও একজন লেখক আছেন যথারীতি স্বমহিমায়। তিনি হুমায়ূন আহমেদ। তাঁর বই আছে এমন সব প্রকাশনীই তাঁর বিশাল ছবি ব্যবহার করেছে। মেলার প্রথম দিকে হুমায়ূন আহমেদের বই ঘিরেই পাঠকের আগ্রহ। মাসজুড়েই এটি থাকবে নিশ্চিত করে বলা যায়।
জীবন-মৃত্যুর ভেদরেখা মুছে অসীম আকাশের তারা হয়ে গেছেন হুমায়ূন আহমেদ—সেও তো হয়ে গেল এক যুগ। ২০১২ সালের ১৯শে জুলাই রাতটা চাঁদনি পসর ছিল কি না, কিংবা নিউইয়র্কের নীল আকাশে সেদিন ঝকঝকে রোদ ছিল কি না, এখন হয়তো অনেকেরই মনে নেই। তবে এটি নিশ্চিত করে বলা যায়—আজও পূর্ণিমা আলোয় ভেসে গেলে রাতের আকাশ নীল শাড়ি পরে ছাদে চলে যায় বিষণ্ন কোনো তরুণী। স্বপ্নতাড়িত তরুণ আজও জোছনা দেখলে হাঁটতে থাকে শহুরে পথ ধরে উদ্দেশ্যহীন। শহর থেকে দূর লোকালয়ে একই রকম আবেগ নিয়ে হুমায়ূনকে স্মরণ করে এই সময়ের কিশোর তারুণ্য।
শুধু কিশোর-তারুণ্য কেন—মৃত্যুর বারো বছর পর এও তো স্পষ্ট-বয়সী পাঠকেরাও লুকিয়ে কিংবা প্রকাশ্যে এখনো হুমায়ূন পড়েন একই রকম মাদকতায়।
সাহিত্যে মান এবং জনপ্রিয়তা নিয়ে তর্ক দীর্ঘদিনের। আর এই তর্ক থেকেই অনেকেই প্রশ্ন তুলতেন, অনেক বেশি লিখে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। কিন্তু মানের দিক থেকে তার লেখা অতটা কালোত্তীর্ণ কি না—সেই দ্বন্দ্বের বিচার করতে যাওয়া এই আলোচনার উদ্দেশ্য নয়। একজন লেখক প্রায় পাঁচ দশক ধরে মায়াময় মোহাচ্ছন্ন লেখনীতে আবিষ্ট করে রেখেছেন কয়েকটি প্রজন্মকে। একা হাতে দাঁড় দিয়েছেন বাংলা প্রকাশনা শিল্পকে। এমন কৃতিত্ব পৃথিবীর ইতিহাসে কজন লেখকের আছে? তিনি যা-ই লিখতেন হুমড়ি খেয়ে পড়তেন পাঠকেরা। এমনকি মৃত্যুর বারো বছর পেরিয়ে গেলেও তার মোহ থেকে বের হতে পারেননি বাংলা ভাষার পাঠক। কী এমন মায়া, কী এমন জাদু তাঁর লেখায়? কেন হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো টানতে পেরেছেন তিনি পাঠককে?
রোববার সন্ধ্যায় মেলা চত্বরে দাঁড়িয়ে একজন লেখক বলছিলেন—হুমায়ূন আহমেদ বাংলা সাহিত্যের পাঠক তৈরি করতে পারেননি। তিনি নিজের পাঠক তৈরি করেছেন।
—হুম, আপনার কথা অনেকটাই সত্যি। কিন্তু এই যে নিজের অগুনতি পাঠক তিনি তৈরি করেছেন, কয়েকটি প্রজন্মকে পাঠমুখী করেছেন সেটার কোনো কৃতিত্ব দেবেন না? আমি তো এমন অনেককে চিনি, যারা হুমায়ূন পড়তে পড়তে নিবিষ্ট পাঠক হয়ে উঠেছেন। খুব শান্ত স্বরে বলি আমি!
—হুম, সেটা আপনি বলতে পারেন। কিন্তু তাঁর কারণে মানুষের পাঠের অভ্যাস একটা গণ্ডিতে আটক গেছে। এর বাইরে মানুষ আর কিছু পড়তে চায় না।
—সেটা তো ভাই হুমায়ূন আহমেদের দায় না। বরং অন্য সবার সম্মিলিত ব্যর্থতা।
—শোনেন, আপনাদের মতো অন্ধ ভক্তদের সঙ্গে আলাপ করে লাভ নেই।
কথাটা বলেই তিনি হাসতে থাকেন। হাসিতে যোগ দিই আমিও।
—আমি ভাই অন্ধ ভক্ত নই। আপনি যুক্তি দিয়ে বোঝালে আমি অবশ্যই মেনে নেব।
—থাক, এ নিয়ে আপনার সঙ্গে পরে আলাপ করব।
তিনি চলে যান তার পথে। আমিও হাঁটতে থাকি একা একা। মেলার ভিড় দেখি। মেলার মানুষ দেখি। মাথার মধ্যে তখনো ভর করে থাকেন হুমায়ূন আহমেদ।
হুমায়ূন আহমেদ গল্প বলতেন আমাদের চেনা পরিসরের। মধ্যবিত্তের নিত্য জীবন যাপনের টানাপোড়েনের। বোহিমিয়ান বাউন্ডুলে জীবন তাঁর লেখায় যেমন উঠে এসেছে, তেমনি তিনি গল্প বলেছেন তুখোড় যুক্তিবাদীর। আর এ কারণেই হয়তো হিমু মিসির আলি, জরি পরি রূপা শুভ্ররা সাহিত্যের কাল্পনিক চরিত্রের অবয়ব ছাপিয়ে পাঠকের কাছে হয়ে উঠেছেন রক্ত মাংসের জীবন্ত মানুষ। শুরুতে যে বলছিলাম জোছনা রাতে এখনো শাড়ি পরে ছাদে চলে যান কোনো বিষণ্ন তরুণী, কিংবা হিমুর মতো খালি পায়ে হাঁটতে বের হয়ে যান কোনো বোহিমিয়ান তরুণ—প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের এভাবে ভাবতে শিখিয়েছেন হুমায়ূন আহমেদ ছাড়া আর কে?
হুমায়ূন আহমেদ যেখানে হাত দিয়েছেন ফলেছে সোনা। স্যাটেলাইট যুগের আগে বিটিভির জন্য নাটক লিখলেন ‘এইসব দিনরাত্রি’। নাটকের ছোট্ট শিশুর চরিত্র টুনির ক্যানসারের খবর শুনে কেঁদে বুক ভাসিয়েছেন দেশের হাজারো মানুষ। ‘বহুব্রীহি’ নাটকে পাখির মুখে তিনি বলালেন রাজাকার শব্দটি। অথচ স্বৈরশাসনের আমলে বিটিভিতে তখন নিষিদ্ধ এই শব্দ। আর ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকের বাকের চরিত্রের জন্য দেশে এবং দেশের বাইরে কী তুলকালাম হয়েছে, সেটি আর নতুন করে বলার কিছু আছে? নাটকের একটি চরিত্রের ফাঁসি হচ্ছে, আর এই ফাঁসি বন্ধের জন্য দেশজুড়ে মিছিল হচ্ছে। বাংলাদেশ তো বটেই পৃথিবীর ইতিহাসে এমন নজির আর কয়টা আছে। এরপর ‘আজ রবিবার’, ‘নক্ষত্রের রাত’ হয়ে ধারাবাহিকের তালিকাটা হয়তো খুব বেশি দীর্ঘ নয়। কিন্তু তিনি লিখেছেন পরিচালনা করেছেন আরও অনেক নাটক। যেগুলো এখনো ইউটিউবের ট্রেন্ডিং তালিকায় আছে বছরের পর বছর ধরে। বলা চলে বাংলা নাটকের ভাষা ও নির্মাণশৈলী একাই বদলে দিয়েছেন তিনি।
লেখক হুমায়ূন আহমেদ নাটকের পথে হেঁটে একসময় এলেন চলচ্চিত্রে। প্রথমে চলচ্চিত্রের স্ক্রিপ্ট লিখলেন। তারপর নিজেই এলেন পরিচালনায়। এখানেও জয়জয়কার। একসময় ওপার বাংলার লেখকদের বইয়ে বুঁদ হয়ে থাকা পাঠককে তিনি যেমন বাংলাদেশমুখী করেছেন, তেমনই হিন্দি সিরিয়াল আর সিনেমায় বুঁদ দর্শককে তিনি টেনে এনেছেন বিটিভিতে, দেশি স্যাটেলাইট চ্যানেলে কিংবা সিনেমা হলে।
এখনো বইমেলায় সবচেয়ে ভিড় সেসব প্রকাশনীতে যেগুলোতে হুমায়ূন আহমেদের বই আছে। কোনো বইয়ের দোকানে গেলেও তাঁর লেখা বইয়ের তাক ঘিরেই ভিড় চোখে পড়ে বেশি। সবচেয়ে বড় কথা হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর এত বছর পরেও বাংলা ফিকশনে তাঁকে ছাপিয়ে যেতে পারেননি কেউ। এটা কি তবে অন্য লেখকদের সীমাবদ্ধতা? নিশ্চয় না। আদতে এটি হুমায়ূন আহমেদের আশ্চর্য জাদুকরী লেখার ক্ষমতা। আর সেই ক্ষমতাতেই তিনি এখনো অধীশ্বর হয়ে আছেন বাঙালি পাঠকের কাছে।
একজন মানুষকে প্রথমে পাঠক হয়ে উঠতে হয়। অর্থাৎ পাঠের অভ্যাস গড়ে উঠলে তারপর একজন পাঠক বাছবিচার করে পড়তে শেখেন। চিন্তার দরজা খুলতে থাকলে তিনি হয়ে ওঠেন প্রকৃত পাঠক। তাঁর সমালোচকদের কেউ কেউ বলেন—যেমনটা একটু আগে পরিচিত লেখক বলছিলেন—হুমায়ূন আহমেদ নিজের পাঠক করেছেন, বাংলা সাহিত্যের পাঠক তৈরি করতে পারেননি। এ ক্ষেত্রে তাঁর পক্ষে কলম ধরেন এমন মানুষেরা বলেন, নিজের পাঠক তৈরি করার মধ্য দিয়েই তিনি কয়েকটি প্রজন্মকে বইমুখী করেছেন। অন্য সব আলাপ বাদ দিয়ে শুধু পাঠক তৈরির দিকটি বিবেচনায় নিলেও বলা যায়—হুমায়ূন আহমেদ এখনো প্রাসঙ্গিক। বাঙালিকে পাঠমুখী এবং এখনকার বৈশ্বিক অস্থির সময়ে কোথাও দু-দণ্ড স্থির হয়ে বসে নতুন ভাবনায় মশগুল হতেও হুমায়ূন আহমেদ বড় বেশি প্রয়োজনীয়। চিন্তার শৃঙ্খল মুক্তির বড় অনুষঙ্গ এখনো হুমায়ূন আহমেদ।
সময় বাড়ছে। সন্ধ্যা পেরিয়েছে অনেকক্ষণ। হঠাৎ আনমনে আকাশের দিকে তাকাই। চাঁদহীন আকাশে ধূসর মেঘ। হুমায়ূন আহমেদ কি দেখছেন ওপর থেকে তাঁর ভক্ত পাঠকদের? যেখানে এখন তিনি থাকেন সেখান থেকে অনুভব করা যায় মর্ত্যলোকের আনন্দ বেদনা?

আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
১২ ঘণ্টা আগে
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
২ দিন আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
৩ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

দক্ষিণ ভারতের কোচি শহরের সরু, নুড়ি-পাথর বিছানো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ চোখে পড়ে ছোট্ট একটি ফলক। তাতে লেখা, ‘সারা কোহেনের বাড়ি।’ জনাকীর্ণ এই রাস্তাটির নাম জু টাউন। কয়েক দশক আগেও এখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বসবাস করত ইহুদি পরিবার। প্রাচীন সামগ্রী, পারস্যের কার্পেট আর মসলার দোকানে ঠাসা এই এলাকাই একসময় পরিচিত ছিল কোচির ইহুদি পাড়া হিসেবে।
এই রাস্তাতেই রয়েছে থাহা ইব্রাহিমের দোকান। কোচির শেষ ইহুদি নকশার দোকান। এক তপ্ত দুপুরে কয়েকজন মার্কিন পর্যটক দোকানে ঢুকতেই দেখা গেল, ৫৫ বছর বয়সী থাহা মনোযোগ দিয়ে একটি কিপ্পা (ইহুদি পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী ছোট, বৃত্তাকার টুপি যা তারা ঈশ্বরকে সম্মান জানাতে এবং নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশ করতে পরে থাকে) সেলাই করছেন। দোকানের দেয়ালে ঝোলানো একটি ছবির সামনে পর্যটকেরা ভিড় জমালেন। ছবিটি ২০১৩ সালের। তৎকালীন ব্রিটিশ যুবরাজ (বর্তমানে রাজা) চার্লস জু টাউনের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন।
ছবির দিকে আঙুল তুলে থাহা বললেন, ‘ওই ইনিই সারা আন্টি।’ এরপর যোগ করলেন, ‘এটা ছিল সারা কোহেনের বাড়ি ও তাঁর সেলাইয়ের দোকান।’
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬ বছর বয়সে মারা যাওয়ার পর পুরোপুরি দায়িত্ব নেন তিনি।
থাহা বলেন, ‘আমি ছিলাম তাঁর ছেলের মতো। নিজের মায়ের চেয়েও বেশি সময় তাঁর দেখাশোনা করেছি। আমি তাঁর জন্য কোশার (ইহুদিদের এক ধরনের খাবার) আর মাছ কিনে আনতাম। সময় কাটাতাম আর দোকান বন্ধ করার পরই কেবল ফিরতাম।’
এক ইহুদি নারী আর ভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক পটভূমির এক মুসলমান পুরুষের এই বন্ধুত্ব প্রায় চার দশক ধরে টিকে ছিল। মৃত্যুর আগে সারা তাঁর দোকানটি থাহার নামে উইল করে যান। থাহা প্রতিজ্ঞা করেন, জু টাউনে তিনি সারার স্মৃতি আর ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখবেন। যেখানে আঠারো শতকে প্রায় আড়াই হাজার ইহুদি বাস করতেন, সেখানে এখন কেবল একজন অবশিষ্ট। থাহা বলেন, ‘এক দিক থেকে, এখানকার ইহুদি সম্প্রদায় যাতে বিস্মৃত না হয়, আমিও সেই চেষ্টাই করছি।’
কেরালায় ইহুদিদের আগমনের সবচেয়ে প্রচলিত কাহিনি বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে উল্লিখিত রাজা সোলোমনের সময়ের, প্রায় দুই হাজার বছর আগেকার। প্রথমে তাঁরা মালাবার উপকূলে ক্রাঙ্গানোরে, বর্তমান কোডুঙ্গাল্লুরের কাছে প্রাচীন বন্দরের আশপাশে বণিক হিসেবে বসতি গড়েন। পরে তাঁরা কোচিতে চলে আসেন। এই প্রাচীন বসতির কারণে তাঁরা পরিচিত হন মালাবারি ইহুদি নামে।
এর বহু পরে, ১৫৯২ সালে, স্প্যানিশ নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা সেফার্ডিক ইহুদিরা কেরালায় পৌঁছান। পর্তুগাল, তুরস্ক আর বাগদাদ হয়ে তাঁরা কোচিতে বসতি গড়ে তোলেন এবং পরিচিত হন পারাদেসি বা বিদেশি ইহুদি নামে। মালাবারি ও পারাদেসি—এই দুই ধারার মানুষ মিলেই পরিচিত হন কোচিন ইহুদি নামে।

পর্তুগিজ, আরব, ব্রিটিশ আর ওলন্দাজদের দীর্ঘদিনের বাণিজ্যকেন্দ্র কোচিতে তাঁরা রাজাদের সুরক্ষায় নিরাপদে বসবাস করতেন। বিশ শতকের গোড়ায় সারা কোহেনের জন্ম। তখন জু টাউন ছিল প্রাণবন্ত। সারা আর তাঁর স্বামী জ্যাকব—যাঁর জন্মও এখানেই—১৯৪৪ সালে বিয়ে করেন।
আশির দশকের গোড়ায় আচমকাই থাহার সঙ্গে কোহেন দম্পতির পরিচয় হয়। তেরো বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দেওয়া থাহা তখন পর্যটকদের কাছে পোস্টকার্ড বিক্রি করে জীবিকা চালাতেন। জু টাউনে আসা পর্যটকেরা নিয়মিতই যেতেন পারাদেসি সিনাগগে, যা ১৫৬৮ সালে কোচিনের রাজার দেওয়া জমিতে নির্মিত।
থাহা বলেন, ‘তখন প্রচুর পর্যটক আসত আর আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পোস্টকার্ড বেচতাম।’ এক রোববার, যে গুদামঘরে থাহা পোস্টকার্ড রাখতেন, তার মালিক না আসায় জ্যাকব তাঁকে তাঁদের বাড়িতে জায়গা দেন। সারা এতে খুশি ছিলেন না। থাহার মনে আছে, প্রায় তিন বছর তিনি তাঁর সঙ্গে তেমন কথা বলেননি।
ইব্রাহিম থাহা বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমি তাঁর স্বামীর ছোটখাটো কাজ করে দিতাম। অথবা যখন তাঁদের জানালার বাইরে থেকে টিভিতে ক্রিকেট দেখতাম, তিনি আমাকে ভেতরে আসতে বলতেন।’ একদিন সারা তাঁকে সিনাগগের জন্য একটি কুশন কভার সেলাই করতে সাহায্য করতে বলেন। তখনই বোঝা যায়, থাহার মধ্যে সেলাই ও নকশার সহজাত দক্ষতা আছে। সম্ভবত দরজি বাবাকে ছোটবেলা থেকে সাহায্য করার ফলেই। তিনি বলেন, ‘আমি যে নকশা আঁকতে আর সেলাই করতে পারি, তা জানতামই না।’
উনিশ বছর বয়সে থাহা সারাকে সাহায্য করেন তাঁদের বৈঠকখানা থেকে ‘সারার হস্ত-সেলাই’ নামে একটি দোকান খুলতে। দোকানটি আজও সেই নামেই পরিচিত। সেখানে বিক্রি হতো কিপ্পাহ, চাল্লাহ কভার আর মেনোরাহ। তিনি বলেন, ‘তিনিই আমাকে সব শিখিয়েছেন।’
এই বন্ধুত্ব নিয়ে থাহা বেশ দার্শনিক। তিনি বলেন, ‘জু টাউনে ইহুদি আর মুসলমানেরা একে অপরের সঙ্গে তেমন মিশতেন না। তাঁরা একে অপরের প্রতি সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু সারা আন্টি আর জ্যাকব আংকেল কখনোই আমাকে বহিরাগত মনে করতে দেননি, যদিও আমাদের পটভূমি আলাদা ছিল।’

থাহার বাবা-মা এই সম্পর্কে আপত্তি করেননি। তাঁরা দেখেছিলেন, কোহেন পরিবার তাঁদের ছেলেকে জীবনের একটি উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করছে। কিন্তু এই ঘনিষ্ঠতার সময়েই কোচির ইহুদি জনসংখ্যা দ্রুত কমতে থাকে। চল্লিশের দশকে যেখানে ছিল প্রায় ২৫০ জন, নব্বইয়ের দশকে তা নেমে আসে ২০ জনে। এখন মাত্র একজন আছেন—৬৭ বছর বয়সী কিথ হ্যালেগুয়া।
১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর অনেক পরিবার সেখানে চলে যায়। কেরালার ইহুদিদের ওপর ডক্টরেট থিসিস করা আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘কোচিন ইহুদিরা হয়তো স্বদেশে ফিরে যাওয়ার ধারণায় ইসরায়েলে গিয়েছিলেন। তবে উন্নত জীবনের আকর্ষণের মতো অর্থনৈতিক কারণও ছিল। তাঁরা এটাও অনুভব করেছিলেন যে কেরালায় উপযুক্ত জীবনসঙ্গীর অভাব ছিল।’
ধর্মীয় নিপীড়ন কখনোই তাঁদের কোচি ছাড়ার কারণ ছিল না। শহরটি শত শত বছর ধরে তাঁদের স্বাগত জানিয়েছে। কিছু বয়স্ক ইহুদি থেকে গিয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে নিঃসন্তান কোহেন দম্পতিও ছিলেন। ১৯৯৯ সালে জ্যাকব মারা যাওয়ার আগে থাহাকে সারার দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে যান। তখন থাহা বিবাহিত, তিন সন্তানের জনক।
থাহা বলেন, ‘আমি জ্যাকব আংকেলকে বলেছিলাম, সারা আন্টি যদি আমাকে সুযোগ দেন, তবে আমি তাঁর দেখাশোনা করব। আমি তাঁকে সুযোগ দিতে বলেছিলাম, কারণ ইসলামে মৃতপ্রায় ব্যক্তির শেষ ইচ্ছা পূরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। না করলে পাপ হয়।’
সারার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে থাহা তাঁর পরিবারকে জু টাউনের কাছাকাছি নিয়ে আসেন। সারা মারা গেলে তিনি তাঁর কফিনের জন্য স্টার অব ডেভিড (ইসরায়েলি পতাকায় অঙ্কিত তারকা) আঁকা একটি কফিন কভার তৈরি করান। আজও তিনি নিয়মিত ইহুদি কবরস্থানে তাঁর সমাধিতে যান। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক কোচি ঘুরতে আসেন। তাঁদের মধ্যে অনেক ইহুদিও থাকেন। আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে ইহুদিরা জু টাউনে আসেন এক ধরনের আপন অনুভব করার জন্য।’
তিনি বলেন, এখানকার ইহুদিরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সমাজের মধ্যেও নিজেদের পরিচয় বজায় রেখেছিলেন। একই সঙ্গে সমাজের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। স্থানীয় ভাষা মালয়ালমই ছিল তাঁদের দৈনন্দিন ভাষা। থাহা যেভাবে সারা কোহেনের ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন, তা তাঁকে মুগ্ধ করে। তিনি বলেন, ‘একজন মুসলমান কীভাবে এক ইহুদি নারীর যত্ন নিয়েছেন, তা দৃষ্টান্তস্বরূপ। তিনি এখনো সারা-র ধর্মীয় ঐতিহ্যগুলো বজায় রেখেছেন।’
থাহা দোকানটিকে ঠিক সেভাবেই রেখেছেন, যেমনটি সারা চালাতেন। ইহুদিদের সাব্বাথ উপলক্ষে তিনি শনিবার দোকান বন্ধ রাখেন। ইব্রাহিম থাহা আরও বলেন, ‘আমি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা মুসলমান, কিন্তু সারা আন্টির জন্য এটা খুব জরুরি ছিল বলে আমি শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি প্রদীপ জ্বালাই। কারণ, এই ক্ষণ সাব্বাথের শুরু হওয়াকে চিহ্নিত করে। এই বিষয়টি আমার কাছে এটা ধর্ম সংক্রান্ত নয়, পুরোটাই মানবিক।’
বিবিসি থেকে অনূদিত

দক্ষিণ ভারতের কোচি শহরের সরু, নুড়ি-পাথর বিছানো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ চোখে পড়ে ছোট্ট একটি ফলক। তাতে লেখা, ‘সারা কোহেনের বাড়ি।’ জনাকীর্ণ এই রাস্তাটির নাম জু টাউন। কয়েক দশক আগেও এখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বসবাস করত ইহুদি পরিবার। প্রাচীন সামগ্রী, পারস্যের কার্পেট আর মসলার দোকানে ঠাসা এই এলাকাই একসময় পরিচিত ছিল কোচির ইহুদি পাড়া হিসেবে।
এই রাস্তাতেই রয়েছে থাহা ইব্রাহিমের দোকান। কোচির শেষ ইহুদি নকশার দোকান। এক তপ্ত দুপুরে কয়েকজন মার্কিন পর্যটক দোকানে ঢুকতেই দেখা গেল, ৫৫ বছর বয়সী থাহা মনোযোগ দিয়ে একটি কিপ্পা (ইহুদি পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী ছোট, বৃত্তাকার টুপি যা তারা ঈশ্বরকে সম্মান জানাতে এবং নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশ করতে পরে থাকে) সেলাই করছেন। দোকানের দেয়ালে ঝোলানো একটি ছবির সামনে পর্যটকেরা ভিড় জমালেন। ছবিটি ২০১৩ সালের। তৎকালীন ব্রিটিশ যুবরাজ (বর্তমানে রাজা) চার্লস জু টাউনের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন।
ছবির দিকে আঙুল তুলে থাহা বললেন, ‘ওই ইনিই সারা আন্টি।’ এরপর যোগ করলেন, ‘এটা ছিল সারা কোহেনের বাড়ি ও তাঁর সেলাইয়ের দোকান।’
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬ বছর বয়সে মারা যাওয়ার পর পুরোপুরি দায়িত্ব নেন তিনি।
থাহা বলেন, ‘আমি ছিলাম তাঁর ছেলের মতো। নিজের মায়ের চেয়েও বেশি সময় তাঁর দেখাশোনা করেছি। আমি তাঁর জন্য কোশার (ইহুদিদের এক ধরনের খাবার) আর মাছ কিনে আনতাম। সময় কাটাতাম আর দোকান বন্ধ করার পরই কেবল ফিরতাম।’
এক ইহুদি নারী আর ভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক পটভূমির এক মুসলমান পুরুষের এই বন্ধুত্ব প্রায় চার দশক ধরে টিকে ছিল। মৃত্যুর আগে সারা তাঁর দোকানটি থাহার নামে উইল করে যান। থাহা প্রতিজ্ঞা করেন, জু টাউনে তিনি সারার স্মৃতি আর ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখবেন। যেখানে আঠারো শতকে প্রায় আড়াই হাজার ইহুদি বাস করতেন, সেখানে এখন কেবল একজন অবশিষ্ট। থাহা বলেন, ‘এক দিক থেকে, এখানকার ইহুদি সম্প্রদায় যাতে বিস্মৃত না হয়, আমিও সেই চেষ্টাই করছি।’
কেরালায় ইহুদিদের আগমনের সবচেয়ে প্রচলিত কাহিনি বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে উল্লিখিত রাজা সোলোমনের সময়ের, প্রায় দুই হাজার বছর আগেকার। প্রথমে তাঁরা মালাবার উপকূলে ক্রাঙ্গানোরে, বর্তমান কোডুঙ্গাল্লুরের কাছে প্রাচীন বন্দরের আশপাশে বণিক হিসেবে বসতি গড়েন। পরে তাঁরা কোচিতে চলে আসেন। এই প্রাচীন বসতির কারণে তাঁরা পরিচিত হন মালাবারি ইহুদি নামে।
এর বহু পরে, ১৫৯২ সালে, স্প্যানিশ নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা সেফার্ডিক ইহুদিরা কেরালায় পৌঁছান। পর্তুগাল, তুরস্ক আর বাগদাদ হয়ে তাঁরা কোচিতে বসতি গড়ে তোলেন এবং পরিচিত হন পারাদেসি বা বিদেশি ইহুদি নামে। মালাবারি ও পারাদেসি—এই দুই ধারার মানুষ মিলেই পরিচিত হন কোচিন ইহুদি নামে।

পর্তুগিজ, আরব, ব্রিটিশ আর ওলন্দাজদের দীর্ঘদিনের বাণিজ্যকেন্দ্র কোচিতে তাঁরা রাজাদের সুরক্ষায় নিরাপদে বসবাস করতেন। বিশ শতকের গোড়ায় সারা কোহেনের জন্ম। তখন জু টাউন ছিল প্রাণবন্ত। সারা আর তাঁর স্বামী জ্যাকব—যাঁর জন্মও এখানেই—১৯৪৪ সালে বিয়ে করেন।
আশির দশকের গোড়ায় আচমকাই থাহার সঙ্গে কোহেন দম্পতির পরিচয় হয়। তেরো বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দেওয়া থাহা তখন পর্যটকদের কাছে পোস্টকার্ড বিক্রি করে জীবিকা চালাতেন। জু টাউনে আসা পর্যটকেরা নিয়মিতই যেতেন পারাদেসি সিনাগগে, যা ১৫৬৮ সালে কোচিনের রাজার দেওয়া জমিতে নির্মিত।
থাহা বলেন, ‘তখন প্রচুর পর্যটক আসত আর আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পোস্টকার্ড বেচতাম।’ এক রোববার, যে গুদামঘরে থাহা পোস্টকার্ড রাখতেন, তার মালিক না আসায় জ্যাকব তাঁকে তাঁদের বাড়িতে জায়গা দেন। সারা এতে খুশি ছিলেন না। থাহার মনে আছে, প্রায় তিন বছর তিনি তাঁর সঙ্গে তেমন কথা বলেননি।
ইব্রাহিম থাহা বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমি তাঁর স্বামীর ছোটখাটো কাজ করে দিতাম। অথবা যখন তাঁদের জানালার বাইরে থেকে টিভিতে ক্রিকেট দেখতাম, তিনি আমাকে ভেতরে আসতে বলতেন।’ একদিন সারা তাঁকে সিনাগগের জন্য একটি কুশন কভার সেলাই করতে সাহায্য করতে বলেন। তখনই বোঝা যায়, থাহার মধ্যে সেলাই ও নকশার সহজাত দক্ষতা আছে। সম্ভবত দরজি বাবাকে ছোটবেলা থেকে সাহায্য করার ফলেই। তিনি বলেন, ‘আমি যে নকশা আঁকতে আর সেলাই করতে পারি, তা জানতামই না।’
উনিশ বছর বয়সে থাহা সারাকে সাহায্য করেন তাঁদের বৈঠকখানা থেকে ‘সারার হস্ত-সেলাই’ নামে একটি দোকান খুলতে। দোকানটি আজও সেই নামেই পরিচিত। সেখানে বিক্রি হতো কিপ্পাহ, চাল্লাহ কভার আর মেনোরাহ। তিনি বলেন, ‘তিনিই আমাকে সব শিখিয়েছেন।’
এই বন্ধুত্ব নিয়ে থাহা বেশ দার্শনিক। তিনি বলেন, ‘জু টাউনে ইহুদি আর মুসলমানেরা একে অপরের সঙ্গে তেমন মিশতেন না। তাঁরা একে অপরের প্রতি সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু সারা আন্টি আর জ্যাকব আংকেল কখনোই আমাকে বহিরাগত মনে করতে দেননি, যদিও আমাদের পটভূমি আলাদা ছিল।’

থাহার বাবা-মা এই সম্পর্কে আপত্তি করেননি। তাঁরা দেখেছিলেন, কোহেন পরিবার তাঁদের ছেলেকে জীবনের একটি উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করছে। কিন্তু এই ঘনিষ্ঠতার সময়েই কোচির ইহুদি জনসংখ্যা দ্রুত কমতে থাকে। চল্লিশের দশকে যেখানে ছিল প্রায় ২৫০ জন, নব্বইয়ের দশকে তা নেমে আসে ২০ জনে। এখন মাত্র একজন আছেন—৬৭ বছর বয়সী কিথ হ্যালেগুয়া।
১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর অনেক পরিবার সেখানে চলে যায়। কেরালার ইহুদিদের ওপর ডক্টরেট থিসিস করা আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘কোচিন ইহুদিরা হয়তো স্বদেশে ফিরে যাওয়ার ধারণায় ইসরায়েলে গিয়েছিলেন। তবে উন্নত জীবনের আকর্ষণের মতো অর্থনৈতিক কারণও ছিল। তাঁরা এটাও অনুভব করেছিলেন যে কেরালায় উপযুক্ত জীবনসঙ্গীর অভাব ছিল।’
ধর্মীয় নিপীড়ন কখনোই তাঁদের কোচি ছাড়ার কারণ ছিল না। শহরটি শত শত বছর ধরে তাঁদের স্বাগত জানিয়েছে। কিছু বয়স্ক ইহুদি থেকে গিয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে নিঃসন্তান কোহেন দম্পতিও ছিলেন। ১৯৯৯ সালে জ্যাকব মারা যাওয়ার আগে থাহাকে সারার দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে যান। তখন থাহা বিবাহিত, তিন সন্তানের জনক।
থাহা বলেন, ‘আমি জ্যাকব আংকেলকে বলেছিলাম, সারা আন্টি যদি আমাকে সুযোগ দেন, তবে আমি তাঁর দেখাশোনা করব। আমি তাঁকে সুযোগ দিতে বলেছিলাম, কারণ ইসলামে মৃতপ্রায় ব্যক্তির শেষ ইচ্ছা পূরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। না করলে পাপ হয়।’
সারার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে থাহা তাঁর পরিবারকে জু টাউনের কাছাকাছি নিয়ে আসেন। সারা মারা গেলে তিনি তাঁর কফিনের জন্য স্টার অব ডেভিড (ইসরায়েলি পতাকায় অঙ্কিত তারকা) আঁকা একটি কফিন কভার তৈরি করান। আজও তিনি নিয়মিত ইহুদি কবরস্থানে তাঁর সমাধিতে যান। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক কোচি ঘুরতে আসেন। তাঁদের মধ্যে অনেক ইহুদিও থাকেন। আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে ইহুদিরা জু টাউনে আসেন এক ধরনের আপন অনুভব করার জন্য।’
তিনি বলেন, এখানকার ইহুদিরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সমাজের মধ্যেও নিজেদের পরিচয় বজায় রেখেছিলেন। একই সঙ্গে সমাজের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। স্থানীয় ভাষা মালয়ালমই ছিল তাঁদের দৈনন্দিন ভাষা। থাহা যেভাবে সারা কোহেনের ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন, তা তাঁকে মুগ্ধ করে। তিনি বলেন, ‘একজন মুসলমান কীভাবে এক ইহুদি নারীর যত্ন নিয়েছেন, তা দৃষ্টান্তস্বরূপ। তিনি এখনো সারা-র ধর্মীয় ঐতিহ্যগুলো বজায় রেখেছেন।’
থাহা দোকানটিকে ঠিক সেভাবেই রেখেছেন, যেমনটি সারা চালাতেন। ইহুদিদের সাব্বাথ উপলক্ষে তিনি শনিবার দোকান বন্ধ রাখেন। ইব্রাহিম থাহা আরও বলেন, ‘আমি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা মুসলমান, কিন্তু সারা আন্টির জন্য এটা খুব জরুরি ছিল বলে আমি শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি প্রদীপ জ্বালাই। কারণ, এই ক্ষণ সাব্বাথের শুরু হওয়াকে চিহ্নিত করে। এই বিষয়টি আমার কাছে এটা ধর্ম সংক্রান্ত নয়, পুরোটাই মানবিক।’
বিবিসি থেকে অনূদিত

এবারের মেলায় একটা ব্যতিক্রম চোখে পড়ছে শুরুর দিন থেকে। প্রতিবছর প্রকাশনীগুলো পরিচিত ও জনপ্রিয় লেখকদের বড় বড় ছবি ব্যবহার করেন স্টল প্যাভিলিয়নের সামনে, ভেতরে, ওপরে। এবার সেটা অনেকটাই কম। তবে এই ব্যতিক্রমের মাঝেও একজন লেখক আছেন যথারীতি স্বমহিমায়। তিনি হুমায়ূন আহমেদ। তাঁর বই আছে এমন সব প্রকাশনীই তাঁর বিশ
০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
২ দিন আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
৩ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৯ দিন আগেসম্পাদকীয়

মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল পাশবিক হত্যাযজ্ঞ। ঢাকার গাবতলীর পাশের তুরাগ নদের উত্তর পারেই সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নের ইসাকাবাদ গ্রাম অবস্থিত। গ্রামটি থেকে স্পষ্ট দেখা যেত গাবতলী সেতু। সেই গ্রামেরই বয়স্ক এক ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা করেছেন এভাবে, প্রতিদিন রাতের বেলা মিলিটারি আর বিহারিরা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে করে এই সেতুতে মানুষদের নিয়ে আসত। রাত গভীর হলে সেতুর দুই পাশের বাতি নিভিয়ে গুলি চালানো হতো। পুরো যুদ্ধের সময় এখানে এমন রাত ছিল না, যে রাতের বেলা সেখানে লাশ ফেলানো হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পাঁচ দশকের বেশি সময় পার হলেও এখনো এ জায়গাকে বধ্যভূমি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ছবি: সংগৃহীত

মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল পাশবিক হত্যাযজ্ঞ। ঢাকার গাবতলীর পাশের তুরাগ নদের উত্তর পারেই সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নের ইসাকাবাদ গ্রাম অবস্থিত। গ্রামটি থেকে স্পষ্ট দেখা যেত গাবতলী সেতু। সেই গ্রামেরই বয়স্ক এক ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা করেছেন এভাবে, প্রতিদিন রাতের বেলা মিলিটারি আর বিহারিরা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে করে এই সেতুতে মানুষদের নিয়ে আসত। রাত গভীর হলে সেতুর দুই পাশের বাতি নিভিয়ে গুলি চালানো হতো। পুরো যুদ্ধের সময় এখানে এমন রাত ছিল না, যে রাতের বেলা সেখানে লাশ ফেলানো হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পাঁচ দশকের বেশি সময় পার হলেও এখনো এ জায়গাকে বধ্যভূমি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ছবি: সংগৃহীত

এবারের মেলায় একটা ব্যতিক্রম চোখে পড়ছে শুরুর দিন থেকে। প্রতিবছর প্রকাশনীগুলো পরিচিত ও জনপ্রিয় লেখকদের বড় বড় ছবি ব্যবহার করেন স্টল প্যাভিলিয়নের সামনে, ভেতরে, ওপরে। এবার সেটা অনেকটাই কম। তবে এই ব্যতিক্রমের মাঝেও একজন লেখক আছেন যথারীতি স্বমহিমায়। তিনি হুমায়ূন আহমেদ। তাঁর বই আছে এমন সব প্রকাশনীই তাঁর বিশ
০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
১২ ঘণ্টা আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
৩ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৯ দিন আগেসম্পাদকীয়

সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
অনেক লেখকই আছেন যাঁরা খুব ধর্মপ্রাণ, কেউবা আবার কমিউনিস্ট ৷ হিউম্যানিস্ট লেখক যেমন আছেন, তেমনই আছেন অথোরিটারিয়ান লেখক।
তবে সে যা-ই হোক, ভালো সাহিত্যিকের মধ্যে দুটো কমিটমেন্ট থাকতেই হবে—সততা আর স্টাইলের দক্ষতা। নিজের কাছেই যে-লেখক অসৎ, যা লেখেন তা যদি তিনি নিজেই না বিশ্বাস করেন, তাহলে সেই লেখকের পতন অনিবার্য।
কোনো লেখক আবার যদি নিজের ভাষার ঐশ্বর্যকে ছেঁকে তুলতে ব্যর্থ হন, একজন সংগীতশিল্পীকে ঠিক যেভাবে তাঁর যন্ত্রটিকে নিজের বশে আনতে হয়, ভাষার ক্ষেত্রেও তেমনটা যদি কোনো লেখক করতে না পারেন, তাহলে একজন সাংবাদিক ছাড়া আর কিছুই হতে পারবেন না তিনি। সত্য এবং স্টাইল—একজন সাহিত্যিকের বেসিক কমিটমেন্ট হলো শুধু এই দুটো।
সূত্র: সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘বাংলাদেশ টুডে’ পত্রিকার মার্চ, ১৯৮৪ সংখ্যায়, সাক্ষাৎকার গ্রহীতা সেরাজুল ইসলাম কাদির, অনুবাদক নীলাজ্জ দাস, শিবনারায়ণ রায়ের সাক্ষাৎকার সংগ্রহ, পৃষ্ঠা-২৭।

সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
অনেক লেখকই আছেন যাঁরা খুব ধর্মপ্রাণ, কেউবা আবার কমিউনিস্ট ৷ হিউম্যানিস্ট লেখক যেমন আছেন, তেমনই আছেন অথোরিটারিয়ান লেখক।
তবে সে যা-ই হোক, ভালো সাহিত্যিকের মধ্যে দুটো কমিটমেন্ট থাকতেই হবে—সততা আর স্টাইলের দক্ষতা। নিজের কাছেই যে-লেখক অসৎ, যা লেখেন তা যদি তিনি নিজেই না বিশ্বাস করেন, তাহলে সেই লেখকের পতন অনিবার্য।
কোনো লেখক আবার যদি নিজের ভাষার ঐশ্বর্যকে ছেঁকে তুলতে ব্যর্থ হন, একজন সংগীতশিল্পীকে ঠিক যেভাবে তাঁর যন্ত্রটিকে নিজের বশে আনতে হয়, ভাষার ক্ষেত্রেও তেমনটা যদি কোনো লেখক করতে না পারেন, তাহলে একজন সাংবাদিক ছাড়া আর কিছুই হতে পারবেন না তিনি। সত্য এবং স্টাইল—একজন সাহিত্যিকের বেসিক কমিটমেন্ট হলো শুধু এই দুটো।
সূত্র: সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘বাংলাদেশ টুডে’ পত্রিকার মার্চ, ১৯৮৪ সংখ্যায়, সাক্ষাৎকার গ্রহীতা সেরাজুল ইসলাম কাদির, অনুবাদক নীলাজ্জ দাস, শিবনারায়ণ রায়ের সাক্ষাৎকার সংগ্রহ, পৃষ্ঠা-২৭।

এবারের মেলায় একটা ব্যতিক্রম চোখে পড়ছে শুরুর দিন থেকে। প্রতিবছর প্রকাশনীগুলো পরিচিত ও জনপ্রিয় লেখকদের বড় বড় ছবি ব্যবহার করেন স্টল প্যাভিলিয়নের সামনে, ভেতরে, ওপরে। এবার সেটা অনেকটাই কম। তবে এই ব্যতিক্রমের মাঝেও একজন লেখক আছেন যথারীতি স্বমহিমায়। তিনি হুমায়ূন আহমেদ। তাঁর বই আছে এমন সব প্রকাশনীই তাঁর বিশ
০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
১২ ঘণ্টা আগে
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
২ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৯ দিন আগেসম্পাদকীয়

বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে। প্রায় ৫০০ বছর আগে বদ্রী নারায়ণের যোশী মঠের সন্ন্যাসী গোপাল গিরি ঢাকায় এসে রমনায় প্রথমে একটি আখড়া স্থাপন করেন। তখন এ আখড়াটি কাঠঘর নামে পরিচিত ছিল।
পরে সম্ভবত ১৭ শতকের প্রথম দিকে এ স্থানেই হরিচরণ গিরি মূল মন্দিরটি নির্মাণ করেন। কালীবাড়ি মন্দিরটি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়। তারা মন্দির ও আশ্রমটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মন্দিরের সেবায়েতসহ প্রায় ১০০ সন্ন্যাসী, ভক্ত এবং সেখানে বসবাসরত সাধারণ মানুষ নিহত হন। যদিও এখন বধ্যভূমির কোনো চিহ্ন নেই। তবে সেটাকে বধ্যভূমি হিসেবে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ছবি: সংগৃহীত

বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে। প্রায় ৫০০ বছর আগে বদ্রী নারায়ণের যোশী মঠের সন্ন্যাসী গোপাল গিরি ঢাকায় এসে রমনায় প্রথমে একটি আখড়া স্থাপন করেন। তখন এ আখড়াটি কাঠঘর নামে পরিচিত ছিল।
পরে সম্ভবত ১৭ শতকের প্রথম দিকে এ স্থানেই হরিচরণ গিরি মূল মন্দিরটি নির্মাণ করেন। কালীবাড়ি মন্দিরটি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়। তারা মন্দির ও আশ্রমটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মন্দিরের সেবায়েতসহ প্রায় ১০০ সন্ন্যাসী, ভক্ত এবং সেখানে বসবাসরত সাধারণ মানুষ নিহত হন। যদিও এখন বধ্যভূমির কোনো চিহ্ন নেই। তবে সেটাকে বধ্যভূমি হিসেবে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ছবি: সংগৃহীত

এবারের মেলায় একটা ব্যতিক্রম চোখে পড়ছে শুরুর দিন থেকে। প্রতিবছর প্রকাশনীগুলো পরিচিত ও জনপ্রিয় লেখকদের বড় বড় ছবি ব্যবহার করেন স্টল প্যাভিলিয়নের সামনে, ভেতরে, ওপরে। এবার সেটা অনেকটাই কম। তবে এই ব্যতিক্রমের মাঝেও একজন লেখক আছেন যথারীতি স্বমহিমায়। তিনি হুমায়ূন আহমেদ। তাঁর বই আছে এমন সব প্রকাশনীই তাঁর বিশ
০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
১২ ঘণ্টা আগে
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
২ দিন আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
৩ দিন আগে