আব্দুর রহমান
ভারতের পাঁচটি রাজ্যে রাজ্যসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়েছে। ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে চারটির। এর মধ্যে তিনটিই গেছে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপির দখলে। এমনকি কংগ্রেসের দখলে থাকা দুই রাজ্য রাজস্থান ও ছত্তিশগড় ছিনিয়ে নিয়েছে বিজেপি। কংগ্রেসের জন্য সান্ত্বনা পুরস্কার শুধু তেলেঙ্গানা। এই নির্বাচন দেশটিতে ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের ফলাফল অনেকটাই নির্ধারণ করে দিতে পারে।
ভারতে বর্তমানে বিজেপির সরাসরি নিয়ন্ত্রণ রয়েছে ১২টি রাজ্যে। সেগুলো হলো—উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, গুজরাট, আসাম, ছত্তিশগড়, হরিয়ানা, উত্তারখণ্ড, ত্রিপুরা, মণিপুর, গোয়া এবং অরুণাচল। এই ১২ রাজ্যের বাইরে আরও ৪ রাজ্যে বিজেপির মিত্ররা রয়েছে ক্ষমতায়। সেগুলো হলো—মহারাষ্ট্র, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড ও সিকিম। বিপরীতে কংগ্রেসের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে মাত্র তিনটি রাজ্য—কর্ণাটক, তেলেঙ্গানা ও হিমাচল। কংগ্রেসের মিত্রদের শাসন রয়েছে মাত্র দুটি রাজ্যে—বিহার ও ঝাড়খণ্ড।
জাতীয় নির্বাচন বিবেচনায় নিয়ে ভোটারের হার আমলে নিলে এগিয়ে থাকবে বিজেপি। কেবল এগিয়ে থাকা নয়, বিপুল ব্যবধানে এগিয়ে থাকবে বিজেপি। এনডিটিভির বিশ্লেষণ বলছে, বিজেপির সরাসরি নিয়ন্ত্রণে থাকা ১২টি রাজ্যে ভারতের ৪১ শতাংশ জনগণের বাস। আর মিত্রদের হিসাব ধরলে তা ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। বিপরীতে কংগ্রেস শাসনাধীনে থাকা রাজ্য ও মিত্র রাজ্য মিলে মাত্র ২০ শতাংশের কাছাকাছি মানুষের বাস। এর মধ্যে কংগ্রেসের ৩ রাজ্য এককভাবে আমলে নিলে তা দাঁড়াবে ৮ দশমিক ৫১ শতাংশে।
বিজেপি কেবল রাজ্যসভা নির্বাচনে জিতেছে বিষয়টি এমন নয়। জয়ের পাশাপাশি ভোটের ব্যবধানেও বিজেপি এগিয়ে গেছে। যেমন, ছত্তিশগড়ে বিজেপি আগের নির্বাচনে পেয়েছিল ৩৩ শতাংশ ভোট। এবারের নির্বাচনে তারা পেয়েছে ৪৬ শতাংশ। বিপরীতে কংগ্রেসের ভোট ৪৩ শতাংশ থেকে নেমে দাঁড়িয়েছে ৪২ দশমিক ১৯ শতাংশে। ছত্তিশগড়ে বিজেপির ভোট ব্যাংকের উল্লম্ফনটা উল্লেখযোগ্য।
মধ্যপ্রদেশের নির্বাচনে বিজেপি ব্যাপক আসনের পাশাপাশি ভোটব্যাংকের রাজনীতিতেও এগিয়ে গেছে। দলটি ২৩০ আসনের মধ্যে ১৬৫ আসন পেয়েছে। বিপরীতে কংগ্রেস পেয়েছে মাত্র ৬৫টি আসন। কিন্তু গত রাজ্যসভা নির্বাচনে যেখানে বিজেপির মোট ভোট ছিল ৪১ শতাংশ, সর্বশেষ নির্বাচনে সেটি ৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৯ শতাংশে।
রাজস্থানের নির্বাচনে কংগ্রেস বিগত নির্বাচনে যে পরিমাণ ভোট পেয়েছিল, তার চেয়ে এবার সামান্য বেশি পেয়েও সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আসন পেতে ব্যর্থ হয়েছে। আর বিজেপি মাত্র ২ শতাংশ বেশি ভোট পেয়ে ১১৫টি আসন নিয়ে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। এবারের নির্বাচনে বিজেপি মোট ভোট পেয়েছে ৪১ দশমিক ৬৯ শতাংশ এবং কংগ্রেস ৩৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ। আগের নির্বাচনে বিজেপির ভোট ব্যাংকে গিয়েছিল শতকরা ৩৮ দশমিক ০৮ শতাংশ ভোট এবং কংগ্রেসের ৩৯ দশমিক ৩ শতাংশ।
ওপরের তথ্য–উপাত্ত থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট যে, ভারতের রাজনীতি ক্রমেই বিজেপি ও কংগ্রেসকে কেন্দ্র করে দ্বিমেরু হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, বিজেপি ও তার মিত্ররাই এখন নির্বাচনের মাঠের অন্তত ৫০ শতাংশের বেশি ভোটারের আস্থায় রয়েছে। এর পুরোটাই প্রায় উত্তর ভারতে। এই অবস্থায় কোনো দল যদি বিজেপিকে আগামী নির্বাচনে হারাতে চায় তাহলে এই বিষয়গুলো মাথায় রেখেই পদক্ষেপ নিতে হবে তাদের।
একটা সময় ছিল যখন ভারতের নির্বাচনে বহুমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগে কোনো কোনো দল মাত্র ৩০ শতাংশ ভোট পেয়েও ক্ষমতায় আসত। সেই দিন চলে গেছে। ২০১২ সালে উত্তর প্রদেশ রাজ্যসভা নির্বাচনে সমাজবাদী পার্টি মাত্র ২৮ শতাংশ ভোট পেয়েও ২ শতাধিক আসনে জয়লাভ করে। ২০০৭ সালে বহুজন সমাজ পার্টি ৩০ শতাংশের কিছু বেশি ভোট নিয়ে উত্তর প্রদেশে সরকার গঠন করেছিল। কিন্তু এই দল দুটি যখন ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৪০ শতাংশ ভোট পেয়েও পিছিয়ে পড়ে। কারণ বিজেপি একাই পেয়েছিল প্রায় ৫০ শতাংশ ভোট।
উত্তর প্রদেশের মতো একই ধরনের প্রবণতা দেখা যায় উত্তর ভারতের অধিকাংশ রাজ্যে। এসব রাজ্যে বিজেপি টানা কয়েক দফায় নির্বাচন জিতে জয়ের এক আলাদা বেঞ্চমার্ক স্থাপন করেছে, যা বিজেপিকে বিরোধীদের হারিয়ে টানা ক্ষমতা ধরে রাখায় সহায়তা করেছে।
উত্তরের রাজ্যগুলোতে বিজেপি কংগ্রেসকে হারিয়ে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করলেও দক্ষিণ ভারতে এখনো নিজেদের অবস্থান সেভাবে গড়তে পারেনি দলটি। তবে কংগ্রেসও যে খুব ভালো অবস্থানে আছে তা নয়। তবে উত্তরের চেয়ে দক্ষিণেই বোধ হয় কংগ্রেসের প্রতি মানুষের আস্থা বেশি। কারণ কর্ণাটক ও তেলেঙ্গানার নির্বাচন থেকে সেই বিষয়টিই প্রতীয়মান হয়।
রাজ্যে রাজ্যে নির্বাচনে ভারতের সবচেয়ে পুরোনো রাজনৈতিক দলটির এমন ব্যর্থতার পেছনের মূল কারণ অনেকগুলো। এর মধ্যে বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি যেমন একটা শক্তিশালী প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে, তেমনি দল হিসেবে প্রতিপক্ষের ভুল ও দুর্বলতা থেকে ফায়দা তুলতে না পারার কারণে কংগ্রেসের ভরাডুবি হয়েছে।
ভারতের রাজনৈতিক গতিপথ বিশ্লেষক রুচি গুপ্তের মতে, কংগ্রেসের ভরাডুবির পেছনে নেতৃত্বের ব্যর্থতা, জনগণের কাছে বার্তা পৌঁছাতে না পারার ব্যর্থতা, রাজনৈতিক দল হিসেবে ভূমিকা রাখার ব্যর্থতা এবং প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বিচক্ষণতার অভাব অনেক বেশি দায়ী। এ ছাড়া জাতীয় রাজনীতির ডামাডোলে স্থানীয় বা আঞ্চলিক রাজনীতির চাল বুঝতে ভুল করেছে কংগ্রেস।
রুচি গুপ্ত বলছেন, বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির বিপরীতে নিজেদের রাজনৈতিক প্রচার চালাতে নিদারুণভাবে ব্যর্থ হয়েছে কংগ্রেস। বিজেপি যেখানে হিন্দুত্ববাদ ছাড়াও জাতীয়তাবাদ ও নিম্নবর্গের রাজনীতির বিষয়টিকে সামনে এনেছে সেখানে কংগ্রেস সত্যিকার অর্থেই নিজস্ব রাজনৈতিক স্ট্যান্ড পয়েন্ট দৃঢ়ভাবে প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হয়েছে। রাহুল গান্ধীর ‘ভারত জোড়ো’ যাত্রা কংগ্রেসকে রাজনৈতিকভাবে উজ্জীবিত করলেও দলটির স্পষ্ট কোনো মেনিফেস্টো সেভাবে সামনে আসেনি। পুরোনো আমলের মতো বিজেপি সরকারের দুর্নীতি কিংবা অপরাপর অন্য যেসব অতি সাধারণ অভিযোগ রয়েছে সেগুলোকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার ফলে খুব বেশি সুফল মেলেনি।
ফলে জনগণের কল্যাণের জন্য ব্যাপক নীতি গ্রহণ করলেও বিজেপির হিন্দুত্ববাদ, উগ্র জাতীয়তাবাদ ও নিম্নবর্গের রাজনীতির বিপরীতে দাঁড়ানোর মতো মতাদর্শিক কোনো জায়গা তৈরি করতে পারেনি কংগ্রেস। বিপরীতে বিজেপিও জনগণের জন্য আরও আরও কল্যাণ নীতি গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এসবের পরিপ্রেক্ষিতে কংগ্রেসের রাজনীতি এখানেই শেষ হয়ে যাচ্ছে, এমনটা ভাবার কোনো সুযোগ নেই। কারণ এটা সত্য যে, রাজ্য নির্বাচন জাতীয় নির্বাচন থেকে একেবারেই আলাদা এবং এসব নির্বাচনের ফলাফলকে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের ফলাফল হিসেবে পূর্বানুমান করে নেওয়াও ঠিক হবে না।
এরপরও বাস্তবতা হলো— কংগ্রেস যদি নিজের সুস্পষ্ট রাজনৈতিক মেনিফেস্টো নিয়ে পাটাতন শক্ত না করে এবং বিজেপি উপস্থাপিত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নতুন করে না ভাবে তবে জাতীয় নির্বাচনেও তারা আশানুরূপ ফল করতে পারবে না—এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
ভারতের পাঁচটি রাজ্যে রাজ্যসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়েছে। ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে চারটির। এর মধ্যে তিনটিই গেছে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপির দখলে। এমনকি কংগ্রেসের দখলে থাকা দুই রাজ্য রাজস্থান ও ছত্তিশগড় ছিনিয়ে নিয়েছে বিজেপি। কংগ্রেসের জন্য সান্ত্বনা পুরস্কার শুধু তেলেঙ্গানা। এই নির্বাচন দেশটিতে ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের ফলাফল অনেকটাই নির্ধারণ করে দিতে পারে।
ভারতে বর্তমানে বিজেপির সরাসরি নিয়ন্ত্রণ রয়েছে ১২টি রাজ্যে। সেগুলো হলো—উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, গুজরাট, আসাম, ছত্তিশগড়, হরিয়ানা, উত্তারখণ্ড, ত্রিপুরা, মণিপুর, গোয়া এবং অরুণাচল। এই ১২ রাজ্যের বাইরে আরও ৪ রাজ্যে বিজেপির মিত্ররা রয়েছে ক্ষমতায়। সেগুলো হলো—মহারাষ্ট্র, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড ও সিকিম। বিপরীতে কংগ্রেসের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে মাত্র তিনটি রাজ্য—কর্ণাটক, তেলেঙ্গানা ও হিমাচল। কংগ্রেসের মিত্রদের শাসন রয়েছে মাত্র দুটি রাজ্যে—বিহার ও ঝাড়খণ্ড।
জাতীয় নির্বাচন বিবেচনায় নিয়ে ভোটারের হার আমলে নিলে এগিয়ে থাকবে বিজেপি। কেবল এগিয়ে থাকা নয়, বিপুল ব্যবধানে এগিয়ে থাকবে বিজেপি। এনডিটিভির বিশ্লেষণ বলছে, বিজেপির সরাসরি নিয়ন্ত্রণে থাকা ১২টি রাজ্যে ভারতের ৪১ শতাংশ জনগণের বাস। আর মিত্রদের হিসাব ধরলে তা ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। বিপরীতে কংগ্রেস শাসনাধীনে থাকা রাজ্য ও মিত্র রাজ্য মিলে মাত্র ২০ শতাংশের কাছাকাছি মানুষের বাস। এর মধ্যে কংগ্রেসের ৩ রাজ্য এককভাবে আমলে নিলে তা দাঁড়াবে ৮ দশমিক ৫১ শতাংশে।
বিজেপি কেবল রাজ্যসভা নির্বাচনে জিতেছে বিষয়টি এমন নয়। জয়ের পাশাপাশি ভোটের ব্যবধানেও বিজেপি এগিয়ে গেছে। যেমন, ছত্তিশগড়ে বিজেপি আগের নির্বাচনে পেয়েছিল ৩৩ শতাংশ ভোট। এবারের নির্বাচনে তারা পেয়েছে ৪৬ শতাংশ। বিপরীতে কংগ্রেসের ভোট ৪৩ শতাংশ থেকে নেমে দাঁড়িয়েছে ৪২ দশমিক ১৯ শতাংশে। ছত্তিশগড়ে বিজেপির ভোট ব্যাংকের উল্লম্ফনটা উল্লেখযোগ্য।
মধ্যপ্রদেশের নির্বাচনে বিজেপি ব্যাপক আসনের পাশাপাশি ভোটব্যাংকের রাজনীতিতেও এগিয়ে গেছে। দলটি ২৩০ আসনের মধ্যে ১৬৫ আসন পেয়েছে। বিপরীতে কংগ্রেস পেয়েছে মাত্র ৬৫টি আসন। কিন্তু গত রাজ্যসভা নির্বাচনে যেখানে বিজেপির মোট ভোট ছিল ৪১ শতাংশ, সর্বশেষ নির্বাচনে সেটি ৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৯ শতাংশে।
রাজস্থানের নির্বাচনে কংগ্রেস বিগত নির্বাচনে যে পরিমাণ ভোট পেয়েছিল, তার চেয়ে এবার সামান্য বেশি পেয়েও সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আসন পেতে ব্যর্থ হয়েছে। আর বিজেপি মাত্র ২ শতাংশ বেশি ভোট পেয়ে ১১৫টি আসন নিয়ে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। এবারের নির্বাচনে বিজেপি মোট ভোট পেয়েছে ৪১ দশমিক ৬৯ শতাংশ এবং কংগ্রেস ৩৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ। আগের নির্বাচনে বিজেপির ভোট ব্যাংকে গিয়েছিল শতকরা ৩৮ দশমিক ০৮ শতাংশ ভোট এবং কংগ্রেসের ৩৯ দশমিক ৩ শতাংশ।
ওপরের তথ্য–উপাত্ত থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট যে, ভারতের রাজনীতি ক্রমেই বিজেপি ও কংগ্রেসকে কেন্দ্র করে দ্বিমেরু হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, বিজেপি ও তার মিত্ররাই এখন নির্বাচনের মাঠের অন্তত ৫০ শতাংশের বেশি ভোটারের আস্থায় রয়েছে। এর পুরোটাই প্রায় উত্তর ভারতে। এই অবস্থায় কোনো দল যদি বিজেপিকে আগামী নির্বাচনে হারাতে চায় তাহলে এই বিষয়গুলো মাথায় রেখেই পদক্ষেপ নিতে হবে তাদের।
একটা সময় ছিল যখন ভারতের নির্বাচনে বহুমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগে কোনো কোনো দল মাত্র ৩০ শতাংশ ভোট পেয়েও ক্ষমতায় আসত। সেই দিন চলে গেছে। ২০১২ সালে উত্তর প্রদেশ রাজ্যসভা নির্বাচনে সমাজবাদী পার্টি মাত্র ২৮ শতাংশ ভোট পেয়েও ২ শতাধিক আসনে জয়লাভ করে। ২০০৭ সালে বহুজন সমাজ পার্টি ৩০ শতাংশের কিছু বেশি ভোট নিয়ে উত্তর প্রদেশে সরকার গঠন করেছিল। কিন্তু এই দল দুটি যখন ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৪০ শতাংশ ভোট পেয়েও পিছিয়ে পড়ে। কারণ বিজেপি একাই পেয়েছিল প্রায় ৫০ শতাংশ ভোট।
উত্তর প্রদেশের মতো একই ধরনের প্রবণতা দেখা যায় উত্তর ভারতের অধিকাংশ রাজ্যে। এসব রাজ্যে বিজেপি টানা কয়েক দফায় নির্বাচন জিতে জয়ের এক আলাদা বেঞ্চমার্ক স্থাপন করেছে, যা বিজেপিকে বিরোধীদের হারিয়ে টানা ক্ষমতা ধরে রাখায় সহায়তা করেছে।
উত্তরের রাজ্যগুলোতে বিজেপি কংগ্রেসকে হারিয়ে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করলেও দক্ষিণ ভারতে এখনো নিজেদের অবস্থান সেভাবে গড়তে পারেনি দলটি। তবে কংগ্রেসও যে খুব ভালো অবস্থানে আছে তা নয়। তবে উত্তরের চেয়ে দক্ষিণেই বোধ হয় কংগ্রেসের প্রতি মানুষের আস্থা বেশি। কারণ কর্ণাটক ও তেলেঙ্গানার নির্বাচন থেকে সেই বিষয়টিই প্রতীয়মান হয়।
রাজ্যে রাজ্যে নির্বাচনে ভারতের সবচেয়ে পুরোনো রাজনৈতিক দলটির এমন ব্যর্থতার পেছনের মূল কারণ অনেকগুলো। এর মধ্যে বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি যেমন একটা শক্তিশালী প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে, তেমনি দল হিসেবে প্রতিপক্ষের ভুল ও দুর্বলতা থেকে ফায়দা তুলতে না পারার কারণে কংগ্রেসের ভরাডুবি হয়েছে।
ভারতের রাজনৈতিক গতিপথ বিশ্লেষক রুচি গুপ্তের মতে, কংগ্রেসের ভরাডুবির পেছনে নেতৃত্বের ব্যর্থতা, জনগণের কাছে বার্তা পৌঁছাতে না পারার ব্যর্থতা, রাজনৈতিক দল হিসেবে ভূমিকা রাখার ব্যর্থতা এবং প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বিচক্ষণতার অভাব অনেক বেশি দায়ী। এ ছাড়া জাতীয় রাজনীতির ডামাডোলে স্থানীয় বা আঞ্চলিক রাজনীতির চাল বুঝতে ভুল করেছে কংগ্রেস।
রুচি গুপ্ত বলছেন, বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির বিপরীতে নিজেদের রাজনৈতিক প্রচার চালাতে নিদারুণভাবে ব্যর্থ হয়েছে কংগ্রেস। বিজেপি যেখানে হিন্দুত্ববাদ ছাড়াও জাতীয়তাবাদ ও নিম্নবর্গের রাজনীতির বিষয়টিকে সামনে এনেছে সেখানে কংগ্রেস সত্যিকার অর্থেই নিজস্ব রাজনৈতিক স্ট্যান্ড পয়েন্ট দৃঢ়ভাবে প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হয়েছে। রাহুল গান্ধীর ‘ভারত জোড়ো’ যাত্রা কংগ্রেসকে রাজনৈতিকভাবে উজ্জীবিত করলেও দলটির স্পষ্ট কোনো মেনিফেস্টো সেভাবে সামনে আসেনি। পুরোনো আমলের মতো বিজেপি সরকারের দুর্নীতি কিংবা অপরাপর অন্য যেসব অতি সাধারণ অভিযোগ রয়েছে সেগুলোকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার ফলে খুব বেশি সুফল মেলেনি।
ফলে জনগণের কল্যাণের জন্য ব্যাপক নীতি গ্রহণ করলেও বিজেপির হিন্দুত্ববাদ, উগ্র জাতীয়তাবাদ ও নিম্নবর্গের রাজনীতির বিপরীতে দাঁড়ানোর মতো মতাদর্শিক কোনো জায়গা তৈরি করতে পারেনি কংগ্রেস। বিপরীতে বিজেপিও জনগণের জন্য আরও আরও কল্যাণ নীতি গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এসবের পরিপ্রেক্ষিতে কংগ্রেসের রাজনীতি এখানেই শেষ হয়ে যাচ্ছে, এমনটা ভাবার কোনো সুযোগ নেই। কারণ এটা সত্য যে, রাজ্য নির্বাচন জাতীয় নির্বাচন থেকে একেবারেই আলাদা এবং এসব নির্বাচনের ফলাফলকে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের ফলাফল হিসেবে পূর্বানুমান করে নেওয়াও ঠিক হবে না।
এরপরও বাস্তবতা হলো— কংগ্রেস যদি নিজের সুস্পষ্ট রাজনৈতিক মেনিফেস্টো নিয়ে পাটাতন শক্ত না করে এবং বিজেপি উপস্থাপিত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নতুন করে না ভাবে তবে জাতীয় নির্বাচনেও তারা আশানুরূপ ফল করতে পারবে না—এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
একটা সময় ইসরায়েলের ছোট ও সুসংহত সমাজকে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে প্রায় অপ্রতিরোধ্য বলে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু এখন বিষয়টি কার্যত বদলে গেছে। বর্তমান সংঘাত, ইসরায়েলে উগ্র ডানপন্থার উত্থান এবং নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে ২০২৩ সালের বিচার বিভাগ সংস্কারের মতো বিষয়গুলো দেশটির সমাজে বিদ্যমান সূক্ষ্ম বিভাজনগুলো
৪ ঘণ্টা আগেট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের রূপ এবং যুদ্ধ ও বাণিজ্য সম্পর্কের পরিবর্তন নিয়ে বিশ্লেষণ। চীন, রাশিয়া ও ইউরোপের সাথে নতুন কৌশল এবং মার্কিন আধিপত্যের ভবিষ্যৎ।
২ দিন আগেকোভিড-১৯ মহামারির পর সোশ্যাল মিডিয়া ফাস্ট ফ্যাশন শিল্পকে ভঙ্গুর করে তুলেছে। জায়গা করে নিচ্ছে ভয়াবহ মানবাধিকার সংকট সৃস্টিকারী ‘আলট্রা-ফাস্ট ফ্যাশন’। সেই শিল্পে তৈরি মানুষেরই ‘রক্তে’ রঞ্জিত পোশাক সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্রল করে কিনছে অনবরত। আর রক্তের বেসাতি থেকে মালিক শ্রেণি মুনাফা কামিয়েই যাচ্ছে।
৪ দিন আগেনবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ডিপার্টমেন্ট অব গর্ভমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা সরকারি কার্যকারী বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প জানিয়েছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা পুনর্গ
৮ দিন আগে