Ajker Patrika

বাংলাদেশ নিয়ে সাম্প্রদায়িক উসকানি সমানতালে চলছে ভারতীয় সামাজিক ও গণমাধ্যমে

আপডেট : ১৯ আগস্ট ২০২৪, ১৬: ৩০
বাংলাদেশ নিয়ে সাম্প্রদায়িক উসকানি সমানতালে চলছে ভারতীয় সামাজিক ও গণমাধ্যমে

ভারতের বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম বাংলাদেশের অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিততে সাম্প্রদায়িকতার আগুন উসকে দিয়েছে। আজকের পত্রিকার ফ্যাক্ট চেক বিভাগ এ ধরনের বেশ কয়েকটি ‘অপতথ্য’ নিয়ে কাজ করেছে। তার ভিত্তিতে দেখা গেছে, বাংলাদেশের অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ইস্যুতে বিভিন্ন সামাজিকমাধ্যম অ্যাকাউন্টের পাশাপাশি কয়েকটি ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের ভূমিকাও হতাশাজনক। 

বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা সম্পর্কে জাল ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হয়েছে যেসব অ্যাকাউন্ট থেকে তার একটি উল্লেখযোগ্য অংশই ভারতভিত্তিক। যেমন ৯ আগস্ট ‘বাবা বানারাস (Baba Banaras) ’ নামে একটি ভারতীয় একটি ভেরিফায়েড এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে ১ মিনিট ২৬ মিনিটের একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়, ঢাকায় একটি হিন্দু হোস্টেলে নিষিদ্ধ ঘোষিত রাজনৈতিক সংগঠন জামায়াতে ইসলামী হামলা চালিয়েছে। হামলা থেকে বাঁচতে হোস্টেলের কার্ণিশে এসে ঝুলতে থাকেন। এ সময় অনেক শিক্ষার্থী নিচে পড়ে যান আবার কেউ ভয়েও পড়ে যান। তাঁরা বেঁচে আছেন না মারা গেছেন তা জানা যায়নি। 

অথচ ভিডিওটি নিয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভাইরাল ভিডিওটির সঙ্গে সাম্প্রদায়িক হামলার কোনো সম্পর্ক নেই। ভাইরাল ভিডিওটি চট্টগ্রামের মুরাদপুরের। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে গত ১৬ জুলাই চট্টগ্রামের মুরাদপুরে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। 

একই ভেরিফায়েড এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে ৬ আগস্ট ভাস্কর্যের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা এক ব্যক্তির মরদেহের ২০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়, ঝুলিয়ে রাখা মৃত ব্যক্তিটি একজন বয়স্ক হিন্দু ধর্মাবলম্বী। তাঁকে মেরে ঝুলিয়ে রেখেছে জামায়াতে ইসলামী। অথচ, ভিডিওটি সম্পর্কে রিভার্স ইমেজ অনুসন্ধানে ‘করপোরেট সংবাদ’ নামের একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে ভাইরাল ভিডিওটি সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ঝুলিয়ে রাখা ব্যক্তির নাম শহিদুল ইসলাম হিরণ (৭৫)। তিনি ঝিনাইদহ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় পোড়াহাটী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। 

‘সুদর্শন বাংলা (Sudarshan Bangla) ’ নামের ভারতের একটি স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের ভেরিফায়েড এক্স অ্যাকাউন্টে ১৯ সেকেন্ডের একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, হিন্দু নারীদের বেঁধে রেখেছে মুসলিম নারীরা। ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, একদল তরুণী দুজন তরুণীকে পিলারের সঙ্গে বাঁধছেন। আজকের পত্রিকার ফ্যাক্ট চেক বিভাগের অনুসন্ধানে দেখা যায়, হিন্দু নারীদের মুসলিম নারীরা বেঁধে রেখেছেন দাবিতে ভাইরাল ভিডিওটি গত ১৭ জুলাইয়ের। ওই সময় বদরুন্নেসা কলেজের ছাত্রলীগ নেত্রীদের বেঁধে রাখেন কলেজটির শিক্ষার্থীরা। 

কেবল ভারতীয় এক্স হ্যান্ডেল নয়, রীতিমতো সংবাদমাধ্যম নামধারী কিছু ওয়েবসাইট ও তাদের পেজ থেকে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক উসকানি দেওয়া হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ ও সারজিস আলমের ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্টের পোস্ট ব্যবহার। 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও এক্সে (সাবেক টুইটার) সমন্বয়ক সারজিস আলমের একটি পোস্ট ছড়িয়ে পড়ে। তাতে দাবি করা হয়ে, ‘আগামীর রাষ্ট্র হবে ইসলাম, সংবিধান হবে আল কোরআন–ইনশা আল্লাহ।’ কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই না করেই ‘অপইন্ডিয়া’ নামে একটি ভারতীয় সংবাদমাধ্যমেও সারজিস আলমের কথিত পোস্টের ছবি শেয়ার করে একটি টুইট করে। তবে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্ট চেক বিভাগের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ফেসবুক ও এক্সে ছড়িয়ে পড়া এই পোস্ট সারজিস আলমের নয়। সেটি ছিল ভুয়া অ্যাকাউন্ট।

উল্লেখ্য, অপইন্ডিয়ার প্রধান সম্পাদক নূপুর শর্মা। যিনি ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির কর্মী ছিলেন। ভারতীয় ফ্যাক্টচেকিং প্ল্যাটফর্মগুলো নূপুরের বিরুদ্ধে অনেক আগে থেকেই জাল খবর ছড়ানোর অভিযোগ তুলেছে। 

গত ৯ আগস্ট এক হিন্দু ব্যক্তি তাঁর নিখোঁজ ছেলের হদিস চেয়ে একটি ভিডিও শেয়ার করেন। দাবি করা হয়, এটি বাংলাদেশের। ভারতের অন্তত তিনটি মূলধারার গণমাধ্যম—এশিয়ান নিউজ ইন্টারন্যাশনাল (এএনআই), এনডিটিভি এবং মিরর নাউ—তাদের এক্স হ্যান্ডেলে সেই ভিডিওটি বাংলাদেশের ঘটনা বলে শেয়ার করে। 

তবে সেই ব্যক্তিটি কোনো হিন্দু ছিলেন না। তাঁর নাম বাবুল হাওলাদার। তাঁর ধর্ম ইসলাম। তিনি ওই ভিডিওতে ২০১৩ সাল থেকে নিখোঁজ ছেলের বিষয়ে তথ্য চেয়েছিলেন এবং এই কারণে একটি প্রতিবাদে অংশ নিয়েছিলেন। পরে অবশ্য এএনআই সেই টুইটটির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। 

মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলো খুব একটা অংশ না নিলেও মূলত ভারতীয় এক্স অ্যাকাউন্টগুলো থেকেই সবচেয়ে বেশি গুজব ছড়ানো হয়েছে। এর আরেকটি প্রমাণ হলো—বিক্রম প্রতাপ সিং নামের একটি ভেরিফায়েড এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে গত ১২ আগস্ট বাংলাদেশি অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধনের বক্তব্যের ১৩ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ক্লিপ পোস্ট করে দাবি করা হয়, ‘এটি একজন হিন্দু নারীর আর্তনাদ। হিন্দুরা বাংলাদেশে আতঙ্কে আছে। তাঁদের সামনে দুটি পথ খোলা। হয় বাংলাদেশ ছাড়ো নয়তো ধর্মান্তরিত হও।’ 

ভিডিওটি নিয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ১ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৯ দফা দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন দৃশ্যমাধ্যম শিল্পী সমাজ। এ সমাবেশে অংশ নেন অভিনেতা মোশাররফ করিম, সিয়াম আহমেদ, জাকিয়া বারী মম, রোবেনা রেজা জুঁই, নির্মাতা অমিতাভ রেজাসহ অনেক শোবিজ তারকা। এতে অংশ নেন অভিনেত্রী আজমেরি হক বাঁধনও। সেখানে বক্তব্য দেওয়ার ফুটেজ ব্যবহার করে বাঁধনকে হিন্দু নারী হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে এক্সে। 
 
বাংলাদেশি ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমার স্ক্যানারের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা সম্পর্কে জাল ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর ক্ষেত্রে যেসব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাকাউন্টগুলো ব্যবহার করা হয়েছে তার ৭২ শতাংশ ভারতভিত্তিক বলে দাবি করেছে। প্ল্যাটফর্মটি অন্তত ৫০টি এমন অ্যাকাউন্ট শনাক্ত করেছে। এসব অ্যাকাউন্টে ভুয়া ও জাল তথ্য (ভিডিও, ছবি) অন্তত ১৫ কোটি ৪০ লাখের মানুষ সেসব পোস্ট দেখেছে। 

গুজব ছড়ানোর ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময়ই ভিডিওর আশ্রয় নিয়েছে অ্যাকাউন্টগুলো। ছবি ও বিভিন্ন পোস্টের স্ক্রিনশট ব্যবহার করা হয়েছে অল্প কিছু ক্ষেত্রে। বাকি ক্ষেত্রে সরাসরি টেক্সট ব্যবহার করে গুজব বা অপতথ্য ছড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মাত্র তিনজনের জন্য লাখ লাখ মানুষ মরছে, কাদের কথা বললেন ট্রাম্প

জুয়ার বিজ্ঞাপনের প্রচার: আলোচিত টিকটকার জান্নাতের স্বামী তোহা কারাগারে

বৈশাখী মেলার নাগরদোলায় চড়িয়ে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে গলা কেটে হত্যা

ঈদের ছুটিতে কৃষি প্রকল্পে পাতানো দরপত্র

বরিশালে ঘরের ফ্যানে ঝুলছিল স্বামীর লাশ, খাটের ওপর নিথর দেহ স্ত্রীর

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত