অনলাইন ডেস্ক
নরেন্দ্র মোদির ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ক্ষমতায় আসে ২০১৪ সালে। এরপর থেকে ২০২২ পর্যন্ত ১২১ জন নেতার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেট—ইডি। তাঁদের কেউ গ্রেপ্তার হয়েছেন, কেউ দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হয়েছেন। ১২১ জনের মধ্যে ১১৫ জনই বিভিন্ন বিরোধী দলের নেতা। এই তালিকায় সর্বশেষ যুক্ত হয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিজেপি সরকারের আমলে ইডির জিজ্ঞাসাবাদ–গ্রেপ্তারের মুখোমুখি হওয়া নেতাদের ৯৫ শতাংশই বিরোধী দলের। বিপরীতে ২০০৪–১০ সাল পর্যন্ত কংগ্রেসের ইউনাইটেড প্রগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স (ইউপিএ) জোট ক্ষমতায় থাকার সময় ইডি ২৬ জন রাজনীতিকের বিরুদ্ধে তদন্ত চালিয়েছিল। তাঁদের মধ্যে ১৪ জন অর্থাৎ ৫৪ শতাংশ বিরোধী দলের।
বিজেপি আমলে যেসব বিরোধী দলের নেতাদের ইডির মুখোমুখি হতে হয়েছে সেগুলোর মধ্যে—ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের ২৪ জন, তৃণমূল কংগ্রেসের ১৯ জন, ন্যাশনাল কংগ্রেস পার্টির ১১ জন, শিব সেনার ৮ জন, দ্রাবিড় মুনেত্রা কাজাগামের ৬ জন, বিজু জনতা দলের ৬ জন, রাষ্ট্রীয় জনতা দলের ৫ জন, বহুজন সমাজবাদী পার্টির ৫ জন, সমাজবাদী পার্টির ৫ জন, তেলেগু দেশম পার্টির ৫ জন, আম আদমি পার্টির ৩ জন এবং বাকিরা অন্যান্য আঞ্চলিক দলের নেতা।
তবে ২০২২ সালের পরও বেশ কয়েকজনের নাম ইডির তালিকায় উঠেছে। তাঁদের মধ্যে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, উপমুখ্যমন্ত্রী মনিষ সিসোদিয়া, ঝাড়খণ্ডের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সরেন, তেলেঙ্গানার ভারত রাষ্ট্র সমিতির নেতা কে কবিতাসহ আরও অনেকে।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এসব নেতার সবার বিরুদ্ধেই মূলত অর্থপাচার প্রতিরোধ আইনে মামলা ও তদন্ত চলছে। ২০০৫ সালে তৎকালীন ইউপিএ সরকার এই আইন পাস করে। এই আইন বলে ইডি অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার ও তাঁর বা তাঁদের সম্পত্তি জব্দ করতে পারে। এর জন্য আদালতের অনুমতিও লাগে না। এ ছাড়া, তদন্ত শেষ হওয়ার আগে ও আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের আগে এ বিষয়ে গণমাধ্যমে কথা বলতে পারেন সংস্থার কর্মকর্তারা।
মজার ব্যাপার হলো, ইউপিএ সরকারের আমলে সংখ্যায় কম হলেও একই ধরনের কার্যক্রম চালাত আরেক গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই। সেই সংস্থাটিও একইভাবে রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ আনত। তবে এসব নেতা তুলনামূলকভাবে কংগ্রেসের বা ইউপিএ জোটের প্রতি অনুরাগী হতেন। পরে তাঁরা জোটে ভিড়ে গেলে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা থমকে যেত।
একই কৌশল নিয়েছে বিজেপির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স বা এনডিএ জোট সরকার। এই জোটের দ্বিতীয় মেয়াদ অর্থাৎ ২০১৪–১৯ মেয়াদে এই কাজ করেছে তারা। এর মাধ্যমে কংগ্রেসের সাবেক নেতা হিমান্ত বিশ্বশর্মাকে ভাগিয়ে এনেছে বিজেপি। হিমান্ত বর্তমানে আসামের মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর বিরুদ্ধে সারদা চিট ফান্ডসহ যত মামলা ছিল সবই এখন থেমে গেছে।
এর বাইরে, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসে এক সময়ের ডাকসাইটে নেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে নারদা চিট ফান্ডের অভিযোগ আনা হয়। সিবিআই ও ইডি এই মামলার তদন্ত করে। কিন্তু শুভেন্দু ২০১৭ সালে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর তাঁর বিরুদ্ধে সব মামলা থেমে গেছে। একই কথা তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া মুকুল রায়ের বেলায়ও প্রযোজ্য।
ইডির মামলা আছে গান্ধী পরিবারের বিরুদ্ধেও। কংগ্রেসের মুখপাত্র ন্যাশনাল হেরাল্ড সংবাদপত্র মামলায় ইডি বেশ কয়েক দফায় সোনিয়া গান্ধী ও রাহুল গান্ধীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। অর্থপাচার মামলায় সোনিয়ার জামাতা প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর স্বামী রবার্ট ভদ্রকেও কয়েক দফা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ইডি। এমনকি আসন্ন নির্বাচনের আগমুহূর্তে কংগ্রেসের ব্যাংক অ্যাকাউন্টও জব্দ করেছে সংস্থাটি। এ ছাড়া ইডির মামলা আছে কংগ্রেস নেতা সাবেক অর্থমন্ত্রী পি চিদাম্বরম ও তাঁর ছেলে কীর্তির বিরুদ্ধেও।
ইডি কেবল নেতাদের বিরুদ্ধেই খড়্গহস্ত হয়েছে এমন নয়। কিছু নেতার আত্মীয়–স্বজনের বিরুদ্ধেও কার্যক্রম পরিচালনা করেছে সংস্থাটি। কংগ্রেস নেতা কমল নাথের পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়সহ ৬ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত চালাচ্ছে সংস্থাটি। কেরালার নেতা কাদিয়েরি বালাকৃষ্ণনের ছেলের বিরুদ্ধে চলছে কার্যক্রম। ২০২০ সালে রাজস্থানের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলতের ভাই অগ্রসেন গেহলতের বিরুদ্ধে সার পাচারের অভিযোগ এনে তদন্ত শুরু করে ইডি।
আরও যেসব বিজেপি–বিরোধী নেতা ইডির মামলা–তদন্তের মুখোমুখি হয়েছেন তাঁরা হলেন—কর্ণাটকের কংগ্রেস নেতা ডি কে শিবকুমার, হরিয়ানার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দর সিং হুদা, প্রয়াত রাজ্যসভা সদস্য আহমেদ প্যাটেলসহ আরও অনেকে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাতিজা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও চলছে ইডির তদন্ত।
মহারাষ্ট্রের বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দল শিব সেনা ও ন্যাশনাল কংগ্রেস পার্টির অন্য নেতাদের বিরুদ্ধেও আছে ইডির মামলা। বিহারের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদব ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধেও মামলা চলছে।
তবে অতি অল্প হলেও ইডি বিজেপির নেতাদের বিরুদ্ধে দু–চারটি মামলা–তদন্ত চালাচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন—কর্ণাটকের খনি ব্যবসায়ী গালি জনার্দন রেড্ডি ও রাজস্থানের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে। এ ছাড়া কর্ণাটকের বিজেপি নেতা লক্ষ্মীকান্ত শর্মা, রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বিএন ইয়েদুরাপ্পার বিরুদ্ধে ইডির মামলা আছে।
যাই হোক, ইডি ইউপিএ জোটের আমলেও কংগ্রেসের শীর্ষস্থানীয় অনেক নেতার বিরুদ্ধে তদন্ত চালিয়েছিল। তবে বিজেপির আমলে এসে সেই ধারাবাহিকতা বদলে গেছে। কারণ, ১২১ জন নেতার মধ্যে ১১৫ জনই যখন বিরোধী নেতা হন তখন সংস্থাটির উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। বিরোধীরা বারবার এই অভিযোগ করে এসেছে। বিজেপি সরকার ও ইডি বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বিরোধীদের এই অভিযোগ নিয়ে ইডির কাছে জানতে চাইলে তাঁরা সে বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছে। কিন্তু নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা বলেছেন, ইডি হলো শেষ সংস্থা, যার বিরুদ্ধে আপনি রাজনৈতিক পক্ষপাতের অভিযোগ করতে পারেন না। কারণ এটি নিজে থেকে মামলা নথিভুক্ত করতে পারে না। রাজ্য পুলিশ বা কোনো কেন্দ্রীয় সংস্থা কোনো নেতার বিরুদ্ধে মামলা করার পরেই কেবল ইডি অর্থপাচারের মামলা নথিভুক্ত করতে পারে। আমরা বিজেপির অনেক রাজনীতিকের বিরুদ্ধেও তদন্ত করছি। মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর গালি জনার্দন রেড্ডির বিরুদ্ধে নতুন মামলা শুরু হয়েছে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘এ ছাড়া, আমরা যথাযথ যাচাই–বাছাই করে মামলা নথিভুক্ত করি। আমাদের সব চার্জশিট আদালত আমলে নিচ্ছে। অভিযুক্তরা জামিন পায় না, কারণ আদালত তাঁদের নির্দোষ হওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারে না।’
সম্প্রতি ভারতের নির্বাচন কমিশন ইলেকটোরাল বন্ড ক্রেতাদের তালিকা প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যাচ্ছে, বন্ড বিক্রির মাধ্যমে যে ১৫০ কোটি ডলারের সমান অর্থ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সংগ্রহ করেছে, তার মধ্যে শুধু বিজেপিই পেয়েছে ৭৩ কোটি ডলার। যা ২০১৯ সালের এপ্রিলে বন্ড বিক্রি শুরুর পর থেকে সংগৃহীত মোট অনুদানের প্রায় ৪৭ শতাংশ। আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অনুদান পেয়েছে কংগ্রেস— ১৭ কোটি ১০ লাখ ডলার।
বার্তা সংস্থা এএফপি এই বন্ডের তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখেছে, ১৫০ কোটি ডলারের মধ্যে কমপক্ষে ৯ কোটি ৪০ লাখ ডলার অনুদান দিয়েছে ১৭টি কোম্পানি। এসব কোম্পানি বা তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান কর ফাঁকি, প্রতারণা এবং অন্যান্য করপোরেট দুর্নীতির অভিযোগে তদন্তের মুখে পড়েছে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে বিরোধী দলগুলো বলছে, নরেন্দ্র মোদি সরকার ইডিকে ব্যবহার করে মূলত বড় বড় কোম্পানির কাছে চাঁদাবাজি করছে!
এই অবস্থায় একটি প্রশ্নই বারবার আসছে—তবে কি মোদি সরকার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য ব্যবহার করছে? মোদি সরকার উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এমনটা করছে কি করছে না—তার চেয়েও বড় বিষয় হলো, এতে ফায়দা আসলে বিজেপিরই হচ্ছে। কারণ, তাদের সামনে আর শক্ত কোনো প্রতিপক্ষ থাকছে না।
নরেন্দ্র মোদির ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ক্ষমতায় আসে ২০১৪ সালে। এরপর থেকে ২০২২ পর্যন্ত ১২১ জন নেতার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেট—ইডি। তাঁদের কেউ গ্রেপ্তার হয়েছেন, কেউ দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হয়েছেন। ১২১ জনের মধ্যে ১১৫ জনই বিভিন্ন বিরোধী দলের নেতা। এই তালিকায় সর্বশেষ যুক্ত হয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিজেপি সরকারের আমলে ইডির জিজ্ঞাসাবাদ–গ্রেপ্তারের মুখোমুখি হওয়া নেতাদের ৯৫ শতাংশই বিরোধী দলের। বিপরীতে ২০০৪–১০ সাল পর্যন্ত কংগ্রেসের ইউনাইটেড প্রগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স (ইউপিএ) জোট ক্ষমতায় থাকার সময় ইডি ২৬ জন রাজনীতিকের বিরুদ্ধে তদন্ত চালিয়েছিল। তাঁদের মধ্যে ১৪ জন অর্থাৎ ৫৪ শতাংশ বিরোধী দলের।
বিজেপি আমলে যেসব বিরোধী দলের নেতাদের ইডির মুখোমুখি হতে হয়েছে সেগুলোর মধ্যে—ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের ২৪ জন, তৃণমূল কংগ্রেসের ১৯ জন, ন্যাশনাল কংগ্রেস পার্টির ১১ জন, শিব সেনার ৮ জন, দ্রাবিড় মুনেত্রা কাজাগামের ৬ জন, বিজু জনতা দলের ৬ জন, রাষ্ট্রীয় জনতা দলের ৫ জন, বহুজন সমাজবাদী পার্টির ৫ জন, সমাজবাদী পার্টির ৫ জন, তেলেগু দেশম পার্টির ৫ জন, আম আদমি পার্টির ৩ জন এবং বাকিরা অন্যান্য আঞ্চলিক দলের নেতা।
তবে ২০২২ সালের পরও বেশ কয়েকজনের নাম ইডির তালিকায় উঠেছে। তাঁদের মধ্যে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, উপমুখ্যমন্ত্রী মনিষ সিসোদিয়া, ঝাড়খণ্ডের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সরেন, তেলেঙ্গানার ভারত রাষ্ট্র সমিতির নেতা কে কবিতাসহ আরও অনেকে।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এসব নেতার সবার বিরুদ্ধেই মূলত অর্থপাচার প্রতিরোধ আইনে মামলা ও তদন্ত চলছে। ২০০৫ সালে তৎকালীন ইউপিএ সরকার এই আইন পাস করে। এই আইন বলে ইডি অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার ও তাঁর বা তাঁদের সম্পত্তি জব্দ করতে পারে। এর জন্য আদালতের অনুমতিও লাগে না। এ ছাড়া, তদন্ত শেষ হওয়ার আগে ও আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের আগে এ বিষয়ে গণমাধ্যমে কথা বলতে পারেন সংস্থার কর্মকর্তারা।
মজার ব্যাপার হলো, ইউপিএ সরকারের আমলে সংখ্যায় কম হলেও একই ধরনের কার্যক্রম চালাত আরেক গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই। সেই সংস্থাটিও একইভাবে রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ আনত। তবে এসব নেতা তুলনামূলকভাবে কংগ্রেসের বা ইউপিএ জোটের প্রতি অনুরাগী হতেন। পরে তাঁরা জোটে ভিড়ে গেলে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা থমকে যেত।
একই কৌশল নিয়েছে বিজেপির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স বা এনডিএ জোট সরকার। এই জোটের দ্বিতীয় মেয়াদ অর্থাৎ ২০১৪–১৯ মেয়াদে এই কাজ করেছে তারা। এর মাধ্যমে কংগ্রেসের সাবেক নেতা হিমান্ত বিশ্বশর্মাকে ভাগিয়ে এনেছে বিজেপি। হিমান্ত বর্তমানে আসামের মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর বিরুদ্ধে সারদা চিট ফান্ডসহ যত মামলা ছিল সবই এখন থেমে গেছে।
এর বাইরে, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসে এক সময়ের ডাকসাইটে নেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে নারদা চিট ফান্ডের অভিযোগ আনা হয়। সিবিআই ও ইডি এই মামলার তদন্ত করে। কিন্তু শুভেন্দু ২০১৭ সালে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর তাঁর বিরুদ্ধে সব মামলা থেমে গেছে। একই কথা তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া মুকুল রায়ের বেলায়ও প্রযোজ্য।
ইডির মামলা আছে গান্ধী পরিবারের বিরুদ্ধেও। কংগ্রেসের মুখপাত্র ন্যাশনাল হেরাল্ড সংবাদপত্র মামলায় ইডি বেশ কয়েক দফায় সোনিয়া গান্ধী ও রাহুল গান্ধীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। অর্থপাচার মামলায় সোনিয়ার জামাতা প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর স্বামী রবার্ট ভদ্রকেও কয়েক দফা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ইডি। এমনকি আসন্ন নির্বাচনের আগমুহূর্তে কংগ্রেসের ব্যাংক অ্যাকাউন্টও জব্দ করেছে সংস্থাটি। এ ছাড়া ইডির মামলা আছে কংগ্রেস নেতা সাবেক অর্থমন্ত্রী পি চিদাম্বরম ও তাঁর ছেলে কীর্তির বিরুদ্ধেও।
ইডি কেবল নেতাদের বিরুদ্ধেই খড়্গহস্ত হয়েছে এমন নয়। কিছু নেতার আত্মীয়–স্বজনের বিরুদ্ধেও কার্যক্রম পরিচালনা করেছে সংস্থাটি। কংগ্রেস নেতা কমল নাথের পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়সহ ৬ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত চালাচ্ছে সংস্থাটি। কেরালার নেতা কাদিয়েরি বালাকৃষ্ণনের ছেলের বিরুদ্ধে চলছে কার্যক্রম। ২০২০ সালে রাজস্থানের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলতের ভাই অগ্রসেন গেহলতের বিরুদ্ধে সার পাচারের অভিযোগ এনে তদন্ত শুরু করে ইডি।
আরও যেসব বিজেপি–বিরোধী নেতা ইডির মামলা–তদন্তের মুখোমুখি হয়েছেন তাঁরা হলেন—কর্ণাটকের কংগ্রেস নেতা ডি কে শিবকুমার, হরিয়ানার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দর সিং হুদা, প্রয়াত রাজ্যসভা সদস্য আহমেদ প্যাটেলসহ আরও অনেকে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাতিজা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও চলছে ইডির তদন্ত।
মহারাষ্ট্রের বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দল শিব সেনা ও ন্যাশনাল কংগ্রেস পার্টির অন্য নেতাদের বিরুদ্ধেও আছে ইডির মামলা। বিহারের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদব ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধেও মামলা চলছে।
তবে অতি অল্প হলেও ইডি বিজেপির নেতাদের বিরুদ্ধে দু–চারটি মামলা–তদন্ত চালাচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন—কর্ণাটকের খনি ব্যবসায়ী গালি জনার্দন রেড্ডি ও রাজস্থানের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে। এ ছাড়া কর্ণাটকের বিজেপি নেতা লক্ষ্মীকান্ত শর্মা, রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বিএন ইয়েদুরাপ্পার বিরুদ্ধে ইডির মামলা আছে।
যাই হোক, ইডি ইউপিএ জোটের আমলেও কংগ্রেসের শীর্ষস্থানীয় অনেক নেতার বিরুদ্ধে তদন্ত চালিয়েছিল। তবে বিজেপির আমলে এসে সেই ধারাবাহিকতা বদলে গেছে। কারণ, ১২১ জন নেতার মধ্যে ১১৫ জনই যখন বিরোধী নেতা হন তখন সংস্থাটির উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। বিরোধীরা বারবার এই অভিযোগ করে এসেছে। বিজেপি সরকার ও ইডি বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বিরোধীদের এই অভিযোগ নিয়ে ইডির কাছে জানতে চাইলে তাঁরা সে বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছে। কিন্তু নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা বলেছেন, ইডি হলো শেষ সংস্থা, যার বিরুদ্ধে আপনি রাজনৈতিক পক্ষপাতের অভিযোগ করতে পারেন না। কারণ এটি নিজে থেকে মামলা নথিভুক্ত করতে পারে না। রাজ্য পুলিশ বা কোনো কেন্দ্রীয় সংস্থা কোনো নেতার বিরুদ্ধে মামলা করার পরেই কেবল ইডি অর্থপাচারের মামলা নথিভুক্ত করতে পারে। আমরা বিজেপির অনেক রাজনীতিকের বিরুদ্ধেও তদন্ত করছি। মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর গালি জনার্দন রেড্ডির বিরুদ্ধে নতুন মামলা শুরু হয়েছে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘এ ছাড়া, আমরা যথাযথ যাচাই–বাছাই করে মামলা নথিভুক্ত করি। আমাদের সব চার্জশিট আদালত আমলে নিচ্ছে। অভিযুক্তরা জামিন পায় না, কারণ আদালত তাঁদের নির্দোষ হওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারে না।’
সম্প্রতি ভারতের নির্বাচন কমিশন ইলেকটোরাল বন্ড ক্রেতাদের তালিকা প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যাচ্ছে, বন্ড বিক্রির মাধ্যমে যে ১৫০ কোটি ডলারের সমান অর্থ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সংগ্রহ করেছে, তার মধ্যে শুধু বিজেপিই পেয়েছে ৭৩ কোটি ডলার। যা ২০১৯ সালের এপ্রিলে বন্ড বিক্রি শুরুর পর থেকে সংগৃহীত মোট অনুদানের প্রায় ৪৭ শতাংশ। আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অনুদান পেয়েছে কংগ্রেস— ১৭ কোটি ১০ লাখ ডলার।
বার্তা সংস্থা এএফপি এই বন্ডের তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখেছে, ১৫০ কোটি ডলারের মধ্যে কমপক্ষে ৯ কোটি ৪০ লাখ ডলার অনুদান দিয়েছে ১৭টি কোম্পানি। এসব কোম্পানি বা তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান কর ফাঁকি, প্রতারণা এবং অন্যান্য করপোরেট দুর্নীতির অভিযোগে তদন্তের মুখে পড়েছে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে বিরোধী দলগুলো বলছে, নরেন্দ্র মোদি সরকার ইডিকে ব্যবহার করে মূলত বড় বড় কোম্পানির কাছে চাঁদাবাজি করছে!
এই অবস্থায় একটি প্রশ্নই বারবার আসছে—তবে কি মোদি সরকার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য ব্যবহার করছে? মোদি সরকার উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এমনটা করছে কি করছে না—তার চেয়েও বড় বিষয় হলো, এতে ফায়দা আসলে বিজেপিরই হচ্ছে। কারণ, তাদের সামনে আর শক্ত কোনো প্রতিপক্ষ থাকছে না।
ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের রূপ এবং যুদ্ধ ও বাণিজ্য সম্পর্কের পরিবর্তন নিয়ে বিশ্লেষণ। চীন, রাশিয়া ও ইউরোপের সাথে নতুন কৌশল এবং মার্কিন আধিপত্যের ভবিষ্যৎ।
২ দিন আগেকোভিড-১৯ মহামারির পর সোশ্যাল মিডিয়া ফাস্ট ফ্যাশন শিল্পকে ভঙ্গুর করে তুলেছে। জায়গা করে নিচ্ছে ভয়াবহ মানবাধিকার সংকট সৃস্টিকারী ‘আলট্রা-ফাস্ট ফ্যাশন’। সেই শিল্পে তৈরি মানুষেরই ‘রক্তে’ রঞ্জিত পোশাক সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্রল করে কিনছে অনবরত। আর রক্তের বেসাতি থেকে মালিক শ্রেণি মুনাফা কামিয়েই যাচ্ছে।
৪ দিন আগেনবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ডিপার্টমেন্ট অব গর্ভমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা সরকারি কার্যকারী বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প জানিয়েছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা পুনর্গ
৮ দিন আগেপরিশেষে বলা যায়, হাসিনার চীনা ধাঁচের স্বৈরশাসক শাসিত রাষ্ট্র গড়ে তোলার প্রয়াস ব্যর্থ হয় একাধিক কারণে। তাঁর বৈষম্যমূলক এবং এলিটপন্থী বাঙালি-আওয়ামী আদর্শ জনসাধারণ গ্রহণ করেনি, যা চীনের কমিউনিস্ট পার্টির গণমুখী আদর্শের বিপরীত। ২০২১ সাল থেকে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক মন্দা তাঁর শাসনকে দুর্বল করে দেয়, পাশাপাশি
১২ দিন আগে