হুসাইন আহমদ, ঢাকা
ডেনিম জিন্স প্যান্ট মাত্র ৯ ডলারে, তাও ইউরোপ-আমেরিকায়! চোখ কপালে ওঠার কথা বটে। সেকেন্ডহ্যান্ড অর্থাৎ একবার ব্যবহৃত পোশাকের কথা বলছি না। একেবারে আনকোরা হাল ফ্যাশনের কেতাদুরস্ত পোশাক নিয়ে কথা হচ্ছে। যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিনসের দাম গড়ে ১৫০ ডলারের বেশি এবং ব্রিটেনে সর্বনিম্ন ৩৭ ডলার থেকে সর্বোচ্চ ৯ হাজার ডলারের জিনস বিক্রি হয়। সেখানে মাত্র ৯ ডলারে ডেনিম জিন্স প্যান্ট বিক্রির প্রায় অসম্ভব কাজটি করছে ফাস্ট ফ্যাশনের জগতে চীনের অনলাইন রিটেইলার শি-ইন।
ফাস্ট ফ্যাশন এমন আড়ম্বরপূর্ণ সস্তা পোশাক, যা হালের চাহিদা পূরণে খুব দ্রুত ভোক্তাদের কাছে পৌঁছানো হয়। এই পোশাকগুলো একের একের এক বাজারে আসতে থাকে। সরবরাহ শৃঙ্খল বা উৎপাদন থেকে শুরু করে বিপণনের স্তরে স্তরে রিটেইলার বা খুচরা বিক্রেতাদের নতুন নতুন উদ্ভাবনের ফলেই ফাস্ট ফ্যাশন সম্ভব হয়েছে। শি-ইনের আগে এই খাতে শীর্ষ দুই রিটেইলার প্রতিষ্ঠান ছিল জারা ও এইচঅ্যান্ডএম।
পুরোনো এই দুই রিটেইলারকে এরই মধ্যে ছুঁয়ে ফেলেছে বাজার দখলের আগ্রাসী চেষ্টায় থাকা শি-ইন। নানা ধরনের বৈচিত্র্যময় ধাঁচের ১০ হাজার পোশাকের ছবিসহ বিবরণ প্রতিদিন ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে এই রিটেইলার। শুরুতেই খুব বেশি সংখ্যায় পোশাক তৈরি করে না। প্রথমে কয়েকশ পোশাক তৈরি করা হয়। বেশিসংখ্যক মানুষ কেনা শুরু করলে তখন বেশি করে অর্ডার দেওয়া হয়। নকশার পর মাত্র ১০ দিনে পোশাক বাজারে আসে।সস্তা শ্রমের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বসেরার অবস্থান চীনের, সেটা অদূর ভবিষ্যতে কেউ ছুঁতে পারবে না বলেই বিশ্লেষকদের ধারণা। বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম এর পরের অবস্থানে থাকলেও চীন থেকে বহু পিছিয়ে। চীনে কম খরচে পোশাক তৈরি হলেও হাজার হাজার মাইল দূরে একটি জিনস কীভাবে মাত্র ১০ ডলারে ভোক্তার কাছে পৌঁছে যাচ্ছে, তা অন্য দেশের পোশাক রপ্তানিকারকদের জন্য বড় উদ্বেগের কারণ।
গত বছরজুড়েই বিশ্বে তৈরি পোশাক খাতে আলোচনার কেন্দ্রে ছিল শি-ইন। স্বল্প সময়ের মধ্যে বিশ্বে ফাস্ট ফ্যাশনের বাজারে প্রশস্ত পথ তৈরি করে ফেলেছে এই রিটেইলার। ইনস্টাগ্রাম ও টিকটকের মতো সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তরুণদেরকে টার্গেট করে আগ্রাসী বিক্রি কৌশল নেওয়ায় মার্কিন ভোক্তাদের পছন্দের শীর্ষে উঠেছে। দ্য ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের তথ্য অনুসারে, বিক্রির হিসাবে শি-ইন এখন বিশ্বের সর্ববৃহৎ ফাস্ট ফ্যাশন রিটেইলার।
লন্ডনভিত্তিক পরামর্শক কোম্পানি গ্লোবাল ডেটার নিল সন্ডার্সের মতে, সস্তা দাম ও দক্ষতা দিয়ে বিশ্বের সর্ববৃহৎ অনলাইনভিত্তিক রিটেইলারে পরিণত হয়েছে শি-ইন। গত মাসে প্রকাশিত শি-ইনের আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রায় ৪ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের পণ্য বিক্রি করেছে শি-ইন। এতে রেকর্ড ২ বিলিয়ন বা ২০০ কোটি ডলারের বেশি মুনাফা হয়েছে। এর আগে যথাক্রমে ২০২২ সালে শি-ইনের মুনাফা ছিল প্রায় ১৪০ কোটি ও ২০২১ সালে ১১০ কোটি ডলার।
মূলত জেন জেড বা সবচেয়ে কমবয়সী এই শতকের তরুণ প্রজন্মকে টার্গেট করে পোশাক তৈরি করে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় কম দামেই পোশাক বিক্রি করে তাঁরা। সবচেয়ে বিস্ময়কর দাম ডেনিম জিনসের, মাত্র ৯ ডলার। শি-ইন কেন তরুণদের কাছে জনপ্রিয়, তারও আন্দাজ পাওয়া যায় ওয়েবসাইট ঘুরে। হরেক রকম অফার, ক্রেতারা আসক্ত না হয়ে যাবে কোথায়?
তাছাড়া পয়েন্ট সিস্টেম ও রিওয়ার্ডের ব্যবস্থা আছে। ফ্লাশ সেল ও সময়সীমা বেঁধে বিক্রির অফার দিয়ে কাউন্টডাউন করা হয়। স্বভাবতই এত সস্তায় পণ্য কেনার সুযোগ না হারানোর চাপ তৈরি হয় ক্রেতার উপর। এর সঙ্গে আছে তাৎক্ষণিক প্রাপ্তিযোগ: স্লট মেশিনের মতো লাকি ড্র ফিচারের মাধ্যমে প্রতিদিনই ছাড়, পয়েন্ট বা কোনো উপহার জেতার সুযোগ। শি-ইনের ওয়েবসাইট ঘুরে চক্ষু চড়কগাছ, এত সস্তায় আকর্ষণীয় সব পোশাক!
চীনা প্রতিষ্ঠানটির এই বাণিজ্য কৌশল নৈতিক কিনা সেটা একটা বড় প্রশ্ন। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো-এত স্বল্প দামে ডেনিম জিন্স কীভাবে দিচ্ছে শি-ইন, যা অন্য পোশাক বিক্রেতাদের পক্ষে অসম্ভবই বলা চলে। শি-ইন যে ব্যবসা কৌশল নিয়েছে তা নৈতিক না হলেও সফল। কারণ প্রতিবছরই কোম্পানির বিক্রি বাড়ছে ব্যাপক। আগের বছরের চেয়ে ২০২৩ সালে দ্বিগুণের বেশি আয় করেছে শি-ইন। এই কোম্পানি এখন ওয়াশিংটনের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে চায়। এর জন্য চীন সরকারের অনুমতির অপেক্ষায় আছে এই রিটেইলার। শি-ইনের আইপিওর আকার চলতি বছরের সবচেয়ে বড় হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
শি-ইন চীনে প্রতিষ্ঠিত হলেও সিঙ্গাপুরের সদর দপ্তর থেকে পরিচালিত হয়। শি-ইন ২০২২ সালে বিশ্বের বৃহত্তম ফ্যাশন রিটেইলারের স্বীকৃতি পায়। ওই বছর শেষে চীনে প্রতিষ্ঠানটির ১০ হাজার ৩৮২ জন কর্মী ছিল, আর সিঙ্গাপুরে ছিল প্রায় ২০০।
২০০৮ সালে গুয়াংজুর নানজিংয়ে শি-ইনের যাত্রা শুরু। তখন গুয়াংজুর পাইকারি বাজার থেকে পণ্য সংগ্রহ করে গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দিত এই প্রতিষ্ঠান। ২০১২ সালের শুরুতে নকশা থেকে শুরু থেকে উৎপাদনের জন্য নিজস্ব সরবরাহ শৃঙ্খল চালু করে। এরপর প্রতিষ্ঠানটি খুচরা বিক্রেতা হিসেবে রূপান্তরিত হয়। ২০২২ সাল পর্যন্ত এর তিন হাজারের বেশি সরবরাহকারীর নেটওয়ার্ক ছিল।
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানসহ তুলনামূলক সস্তা শ্রমের দেশ থেকে কেনা প্রতিদ্বন্দ্বী খুচরা বিক্রেতাদের ছাপিয়ে এই চীনা রিটেইলার কীভাবে পোশাক তৈরি করছে, সেটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। সম্প্রতি একটি ইংরেজি দৈনিকে এক নিবন্ধে এর বেশ কয়েকটি কারণ তুলে ধরেছেন বাংলাদেশের শীর্ষ ডেনিম প্রস্তুকারক এক্সপার্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুস্তাফিজ উদ্দিন।
প্রথমত, শি-ইন যে ব্যবসার মডেল অনুসরণ করছে, তা ব্যাপকভাবে ডেটা অ্যানালিটিকস ও হাল ফ্যাশনে রিয়েল-টাইম নজরদারির উপর নির্ভর করে। এর ফলে চাহিদা অনুযায়ী দ্রুত পোশাক তৈরি করতে পারে কোম্পানি এবং অবিক্রিত থাকার পরিমাণ কমে এবং বর্জ্যের পরিমাণও কমে।
দ্বিতীয়ত, ভোক্তার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক স্থাপনের কৌশলের কারণে মধ্যস্বত্বভোগীর দৌরাত্ম্য যেমন নেই, তেমনি দোকান খোলার বাড়তি খরচও নেই। এই কৌশলের কারণে শুধু পরিচালন ব্যয় যে কম তা নয়, সরবরাহ শৃঙ্খলও সুচারু হয় এবং দক্ষতা বাড়ে।
তাছাড়া শি-ইন ‘এজাইল সাপ্লাই চেইন’ অর্থাৎ উৎপাদনের পর দ্রুত বণ্টনের মডেল অনুসরণ করায় ছোট ছোট ব্যাচে উৎপাদন সম্ভব হয়। এর ফলে অতি উৎপাদনের ঝুঁকি কমে এবং কোম্পানিও সস্তায় বৈচিত্র্যময় পণ্য ক্রেতাদের দিতে পারে।
লন্ডনভিত্তিক ব্যবসা গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইউরোমনিটরের প্রতিবেদনে এত সস্তা দামে শি-ইনের পোশাক বিক্রির সক্ষমতার পেছনে এর পেছনে তিনটি বিশেষ দিক তুলে ধরা হয়েছে।
১. স্বল্প দাম
শি-ইনের পুরো সরবরাহ শৃঙ্খল গুয়াংজুভিত্তিক হওয়ায় পরিচালন ব্যয় অনেক কম। পরিবহন ব্যয় যেমন কমে, খরচও বাঁচে। আর এটাই বড় বড় ফ্যাশন কোম্পানির জন্য উদ্বেগের। কারণ, অন্যরা নানা জায়গায় বহু ধাপে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। এর ফলে তাঁদের ব্যয় অনেক বেশি।
উপরন্তু, সরাসরি ভোক্তার কাছে পণ্য পৌঁছে ২০১৮ সালের আগে যুক্তরাষ্ট্রে এবং পরে চীনে করছাড় পেয়েছে। চীনা কোম্পানির উপর যুক্তরাষ্ট্র যখন বাড়তি কর আরোপ করল, তখন চীন পুরো কর মওকুফ করা শুরু করল। তাছাড়া, ২০১৫ সালের আইন অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে ৮০০ ডলার পর্যন্ত আমদানি শুল্কমুক্ত। অর্থাৎ, ২০১৮ সাল থেকে শি-ইন আমদানি ও রপ্তানি শুল্কের আওতামুক্ত।
২. চমকপ্রদ স্টাইল
বিগ ডেটার উপর ভিত্তি করে কার্যক্রম পরিচালনা করে শি-ইন। যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া উদ্যোক্তা ক্রিস শু কোম্পানি প্রতিষ্ঠার আগে তিন বছর এসইও প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করেছেন। অ্যাপ ডেটা সংগ্রহ করে তা বিশ্লেষণের মাধ্যমে কৌশল নির্ধারণ শুরু করেন তিনি। এর ফলে নতুন পণ্যের নকশা, উৎপাদনের পরিমাণ ও সরবরাহকারী বাছাই সহজ হয়। গুগল ট্রেন্ডস ফাইন্ডারের মাধ্যমে স্থানীয় ফ্যাশনে ভালো দখল তৈরির জন্য গুগলের সঙ্গে চুক্তিও করেছে শি-ইন।
কোনো পণ্য বাজারে ছাড়ার আগে মাত্র ১০০টি নমুণা তৈরি করে শি-ইন, যেখানে জারার মতো রিটেইলারকে ন্যূনতম ৩০০-৫০০ অর্ডার করতে হয়। স্থানীয় কারখানাগুলোর সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক থাকায় শি-ইন এই বিশেষ সুবিধা পায়। এর ফলে তার পক্ষে দিনে ৩০০০ হাজার নমুনা তৈরি সম্ভব হয়, যেটা অন্যদের পক্ষে রীতিমতো অসম্ভব।
৩. সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং
শি-ইনের উদ্দিষ্ট ক্রেতারা জেনারেশন জেড বা একবিংশ শতকের প্রজন্ম। তারা ডিজিটাল বিশ্বে বড় হয়েছে এবং প্রযুক্তি ও সোশ্যাল মিডিয়ার সঙ্গে তাঁদের বসবাস। ইউরোমনিটর ইন্টারন্যাশনালের ‘ভয়েস অফ দ্য কনজিউমার: লাইফস্টাইল সার্ভে’ ২০২১ সালের এপ্রিলের এক জরিপে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে জেনারেশন জেডের ৩৩ শতাংশেরও বেশি সক্রিয়ভাবে কোম্পানির সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট এবং ফিড অনুসরণ করে। গুগল ট্রেন্ডস অনুসারে গত বছর বহুল অনুসন্ধান করা শীর্ষ ১০টি বিষয়ের মধ্যে দুটিই ছিল এই প্রজন্ম সম্পর্কিত ফ্যাশন (স্লিম-ফিট প্যান্ট, ফ্যাশন)। তাই শি-ইন যে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং থেকে উপকৃত হয়েছে, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
শি-ইন নামকরণের আগে প্রায় নয় বছর ধরে জোরালো সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং কৌশল নিয়েছিল কোম্পানি। পরে ভোক্তাদের কাছে ব্র্যান্ড ও পণ্যগুলিকে পরিচয় করিয়ে দিতে ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম ও পিনটারেস্টের ইনফ্লুয়েন্সারদের সঙ্গে জোট বাঁধে শি-ইন। ব্যবসার উদ্দেশ্যে টিকটকের ব্যবহারও শুরুতে করেছে শি-ইন।
এসব কারণকে বাস্তব ধরে নিলেও চীনে ডেনিম জিন্স তৈরি করে মাত্র ৯ ডলারে ইউরোপ বা আমেরিকায় ক্রেতার কাছে পৌঁছানো চাট্টিখানি কথা নয়! কারণ, কাঁচামাল, মজুরি, নানা পর্যায়ের উৎপাদন প্রক্রিয়া, ও পরিবহন বাবদ ব্যয় এর মধ্যেই অন্তর্ভুক্ত। এগুলো বাদ দিলে কোনো মুনাফা থাকা কঠিন।
ফ্যাশনের ব্যবসায় গোপন কিছু ব্যাপার যে থাকে, তা সবাই জানে। কিন্তু এই ক্ষেত্রে শি-ইনের সব কিছুই পর্দার আড়ালে। বিশ্বের প্রধান প্রধান ব্র্যান্ড এইচঅ্যান্ডএম, অ্যাসোস ও গ্যাপ এরই মধ্যে নিজেদের যাচাইয়ের সুযোগ দিয়েছে, তারা ওয়েবসাইটে সরবরাহকারীদের তালিকা প্রকাশ করেছে। শি-ইন সেই কাজটি এখনও করেনি। বাজারে প্রভাব ও বিস্তৃত তারুণ্যের মধ্যে জনপ্রিয়তা বিবেচনায় নিলে শি-ইন সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়।
তবে শিগগিরই হয়তো আরও কিছু জানা যাবে। কারণ, কোম্পানিটি নিউ ইয়র্ক ও লন্ডনের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার চেষ্টা করছে। সেক্ষেত্রে ব্যবসা কৌশলসহ যাবতীয় মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করতে হবে। এজন্য চীনের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক এবং লন্ডন স্টক এক্সেচেঞ্জের (এলএসই) কাছে আবেদন করেছে শি-ইন।
তবে এখন যেভাবে শি-ইনের ব্যবসা চলছে, তা নিয়ে শুধু বাংলাদেশ নয় সারা বিশ্বের তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের ভ্রু কুঁচকে আছে। এই মুহূর্তে বাজারে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী ছাড়া শি-ইনকে আর কিছু বলা যাচ্ছে না। এধরনের কোম্পানি যুগে যুগেই আসে এবং বাজারের নীতি উলট-পালট করে দেয়। কিন্তু এভাবে দীর্ঘদিন চলতে পারে না। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে সবার ক্ষেত্রে আইন ও সুযোগ সমান থাকতে হবে।
একটি কোম্পানির সরবরাহ শৃঙ্খল যখন পুরো আঁধারে ঢাকা, আর প্রতিযোগী সব কোম্পানির সবকিছু উন্মুক্ত, তখন বাজারে সুস্থ প্রতিযোগিতা থাকে না। তাই শি-ইন ব্যবসার তথ্য প্রকাশ না করলে বাজারে প্রতিযোগিতার পরিবেশ থাকবে না। তাতে বাংলাদেশের মতো অন্য দেশে রপ্তানিকারকরাও হুমকির মুখে পড়বেন।
লেখক: সহকারী বার্তা সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
ডেনিম জিন্স প্যান্ট মাত্র ৯ ডলারে, তাও ইউরোপ-আমেরিকায়! চোখ কপালে ওঠার কথা বটে। সেকেন্ডহ্যান্ড অর্থাৎ একবার ব্যবহৃত পোশাকের কথা বলছি না। একেবারে আনকোরা হাল ফ্যাশনের কেতাদুরস্ত পোশাক নিয়ে কথা হচ্ছে। যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিনসের দাম গড়ে ১৫০ ডলারের বেশি এবং ব্রিটেনে সর্বনিম্ন ৩৭ ডলার থেকে সর্বোচ্চ ৯ হাজার ডলারের জিনস বিক্রি হয়। সেখানে মাত্র ৯ ডলারে ডেনিম জিন্স প্যান্ট বিক্রির প্রায় অসম্ভব কাজটি করছে ফাস্ট ফ্যাশনের জগতে চীনের অনলাইন রিটেইলার শি-ইন।
ফাস্ট ফ্যাশন এমন আড়ম্বরপূর্ণ সস্তা পোশাক, যা হালের চাহিদা পূরণে খুব দ্রুত ভোক্তাদের কাছে পৌঁছানো হয়। এই পোশাকগুলো একের একের এক বাজারে আসতে থাকে। সরবরাহ শৃঙ্খল বা উৎপাদন থেকে শুরু করে বিপণনের স্তরে স্তরে রিটেইলার বা খুচরা বিক্রেতাদের নতুন নতুন উদ্ভাবনের ফলেই ফাস্ট ফ্যাশন সম্ভব হয়েছে। শি-ইনের আগে এই খাতে শীর্ষ দুই রিটেইলার প্রতিষ্ঠান ছিল জারা ও এইচঅ্যান্ডএম।
পুরোনো এই দুই রিটেইলারকে এরই মধ্যে ছুঁয়ে ফেলেছে বাজার দখলের আগ্রাসী চেষ্টায় থাকা শি-ইন। নানা ধরনের বৈচিত্র্যময় ধাঁচের ১০ হাজার পোশাকের ছবিসহ বিবরণ প্রতিদিন ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে এই রিটেইলার। শুরুতেই খুব বেশি সংখ্যায় পোশাক তৈরি করে না। প্রথমে কয়েকশ পোশাক তৈরি করা হয়। বেশিসংখ্যক মানুষ কেনা শুরু করলে তখন বেশি করে অর্ডার দেওয়া হয়। নকশার পর মাত্র ১০ দিনে পোশাক বাজারে আসে।সস্তা শ্রমের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বসেরার অবস্থান চীনের, সেটা অদূর ভবিষ্যতে কেউ ছুঁতে পারবে না বলেই বিশ্লেষকদের ধারণা। বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম এর পরের অবস্থানে থাকলেও চীন থেকে বহু পিছিয়ে। চীনে কম খরচে পোশাক তৈরি হলেও হাজার হাজার মাইল দূরে একটি জিনস কীভাবে মাত্র ১০ ডলারে ভোক্তার কাছে পৌঁছে যাচ্ছে, তা অন্য দেশের পোশাক রপ্তানিকারকদের জন্য বড় উদ্বেগের কারণ।
গত বছরজুড়েই বিশ্বে তৈরি পোশাক খাতে আলোচনার কেন্দ্রে ছিল শি-ইন। স্বল্প সময়ের মধ্যে বিশ্বে ফাস্ট ফ্যাশনের বাজারে প্রশস্ত পথ তৈরি করে ফেলেছে এই রিটেইলার। ইনস্টাগ্রাম ও টিকটকের মতো সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তরুণদেরকে টার্গেট করে আগ্রাসী বিক্রি কৌশল নেওয়ায় মার্কিন ভোক্তাদের পছন্দের শীর্ষে উঠেছে। দ্য ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের তথ্য অনুসারে, বিক্রির হিসাবে শি-ইন এখন বিশ্বের সর্ববৃহৎ ফাস্ট ফ্যাশন রিটেইলার।
লন্ডনভিত্তিক পরামর্শক কোম্পানি গ্লোবাল ডেটার নিল সন্ডার্সের মতে, সস্তা দাম ও দক্ষতা দিয়ে বিশ্বের সর্ববৃহৎ অনলাইনভিত্তিক রিটেইলারে পরিণত হয়েছে শি-ইন। গত মাসে প্রকাশিত শি-ইনের আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রায় ৪ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের পণ্য বিক্রি করেছে শি-ইন। এতে রেকর্ড ২ বিলিয়ন বা ২০০ কোটি ডলারের বেশি মুনাফা হয়েছে। এর আগে যথাক্রমে ২০২২ সালে শি-ইনের মুনাফা ছিল প্রায় ১৪০ কোটি ও ২০২১ সালে ১১০ কোটি ডলার।
মূলত জেন জেড বা সবচেয়ে কমবয়সী এই শতকের তরুণ প্রজন্মকে টার্গেট করে পোশাক তৈরি করে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় কম দামেই পোশাক বিক্রি করে তাঁরা। সবচেয়ে বিস্ময়কর দাম ডেনিম জিনসের, মাত্র ৯ ডলার। শি-ইন কেন তরুণদের কাছে জনপ্রিয়, তারও আন্দাজ পাওয়া যায় ওয়েবসাইট ঘুরে। হরেক রকম অফার, ক্রেতারা আসক্ত না হয়ে যাবে কোথায়?
তাছাড়া পয়েন্ট সিস্টেম ও রিওয়ার্ডের ব্যবস্থা আছে। ফ্লাশ সেল ও সময়সীমা বেঁধে বিক্রির অফার দিয়ে কাউন্টডাউন করা হয়। স্বভাবতই এত সস্তায় পণ্য কেনার সুযোগ না হারানোর চাপ তৈরি হয় ক্রেতার উপর। এর সঙ্গে আছে তাৎক্ষণিক প্রাপ্তিযোগ: স্লট মেশিনের মতো লাকি ড্র ফিচারের মাধ্যমে প্রতিদিনই ছাড়, পয়েন্ট বা কোনো উপহার জেতার সুযোগ। শি-ইনের ওয়েবসাইট ঘুরে চক্ষু চড়কগাছ, এত সস্তায় আকর্ষণীয় সব পোশাক!
চীনা প্রতিষ্ঠানটির এই বাণিজ্য কৌশল নৈতিক কিনা সেটা একটা বড় প্রশ্ন। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো-এত স্বল্প দামে ডেনিম জিন্স কীভাবে দিচ্ছে শি-ইন, যা অন্য পোশাক বিক্রেতাদের পক্ষে অসম্ভবই বলা চলে। শি-ইন যে ব্যবসা কৌশল নিয়েছে তা নৈতিক না হলেও সফল। কারণ প্রতিবছরই কোম্পানির বিক্রি বাড়ছে ব্যাপক। আগের বছরের চেয়ে ২০২৩ সালে দ্বিগুণের বেশি আয় করেছে শি-ইন। এই কোম্পানি এখন ওয়াশিংটনের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে চায়। এর জন্য চীন সরকারের অনুমতির অপেক্ষায় আছে এই রিটেইলার। শি-ইনের আইপিওর আকার চলতি বছরের সবচেয়ে বড় হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
শি-ইন চীনে প্রতিষ্ঠিত হলেও সিঙ্গাপুরের সদর দপ্তর থেকে পরিচালিত হয়। শি-ইন ২০২২ সালে বিশ্বের বৃহত্তম ফ্যাশন রিটেইলারের স্বীকৃতি পায়। ওই বছর শেষে চীনে প্রতিষ্ঠানটির ১০ হাজার ৩৮২ জন কর্মী ছিল, আর সিঙ্গাপুরে ছিল প্রায় ২০০।
২০০৮ সালে গুয়াংজুর নানজিংয়ে শি-ইনের যাত্রা শুরু। তখন গুয়াংজুর পাইকারি বাজার থেকে পণ্য সংগ্রহ করে গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দিত এই প্রতিষ্ঠান। ২০১২ সালের শুরুতে নকশা থেকে শুরু থেকে উৎপাদনের জন্য নিজস্ব সরবরাহ শৃঙ্খল চালু করে। এরপর প্রতিষ্ঠানটি খুচরা বিক্রেতা হিসেবে রূপান্তরিত হয়। ২০২২ সাল পর্যন্ত এর তিন হাজারের বেশি সরবরাহকারীর নেটওয়ার্ক ছিল।
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানসহ তুলনামূলক সস্তা শ্রমের দেশ থেকে কেনা প্রতিদ্বন্দ্বী খুচরা বিক্রেতাদের ছাপিয়ে এই চীনা রিটেইলার কীভাবে পোশাক তৈরি করছে, সেটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। সম্প্রতি একটি ইংরেজি দৈনিকে এক নিবন্ধে এর বেশ কয়েকটি কারণ তুলে ধরেছেন বাংলাদেশের শীর্ষ ডেনিম প্রস্তুকারক এক্সপার্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুস্তাফিজ উদ্দিন।
প্রথমত, শি-ইন যে ব্যবসার মডেল অনুসরণ করছে, তা ব্যাপকভাবে ডেটা অ্যানালিটিকস ও হাল ফ্যাশনে রিয়েল-টাইম নজরদারির উপর নির্ভর করে। এর ফলে চাহিদা অনুযায়ী দ্রুত পোশাক তৈরি করতে পারে কোম্পানি এবং অবিক্রিত থাকার পরিমাণ কমে এবং বর্জ্যের পরিমাণও কমে।
দ্বিতীয়ত, ভোক্তার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক স্থাপনের কৌশলের কারণে মধ্যস্বত্বভোগীর দৌরাত্ম্য যেমন নেই, তেমনি দোকান খোলার বাড়তি খরচও নেই। এই কৌশলের কারণে শুধু পরিচালন ব্যয় যে কম তা নয়, সরবরাহ শৃঙ্খলও সুচারু হয় এবং দক্ষতা বাড়ে।
তাছাড়া শি-ইন ‘এজাইল সাপ্লাই চেইন’ অর্থাৎ উৎপাদনের পর দ্রুত বণ্টনের মডেল অনুসরণ করায় ছোট ছোট ব্যাচে উৎপাদন সম্ভব হয়। এর ফলে অতি উৎপাদনের ঝুঁকি কমে এবং কোম্পানিও সস্তায় বৈচিত্র্যময় পণ্য ক্রেতাদের দিতে পারে।
লন্ডনভিত্তিক ব্যবসা গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইউরোমনিটরের প্রতিবেদনে এত সস্তা দামে শি-ইনের পোশাক বিক্রির সক্ষমতার পেছনে এর পেছনে তিনটি বিশেষ দিক তুলে ধরা হয়েছে।
১. স্বল্প দাম
শি-ইনের পুরো সরবরাহ শৃঙ্খল গুয়াংজুভিত্তিক হওয়ায় পরিচালন ব্যয় অনেক কম। পরিবহন ব্যয় যেমন কমে, খরচও বাঁচে। আর এটাই বড় বড় ফ্যাশন কোম্পানির জন্য উদ্বেগের। কারণ, অন্যরা নানা জায়গায় বহু ধাপে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। এর ফলে তাঁদের ব্যয় অনেক বেশি।
উপরন্তু, সরাসরি ভোক্তার কাছে পণ্য পৌঁছে ২০১৮ সালের আগে যুক্তরাষ্ট্রে এবং পরে চীনে করছাড় পেয়েছে। চীনা কোম্পানির উপর যুক্তরাষ্ট্র যখন বাড়তি কর আরোপ করল, তখন চীন পুরো কর মওকুফ করা শুরু করল। তাছাড়া, ২০১৫ সালের আইন অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে ৮০০ ডলার পর্যন্ত আমদানি শুল্কমুক্ত। অর্থাৎ, ২০১৮ সাল থেকে শি-ইন আমদানি ও রপ্তানি শুল্কের আওতামুক্ত।
২. চমকপ্রদ স্টাইল
বিগ ডেটার উপর ভিত্তি করে কার্যক্রম পরিচালনা করে শি-ইন। যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া উদ্যোক্তা ক্রিস শু কোম্পানি প্রতিষ্ঠার আগে তিন বছর এসইও প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করেছেন। অ্যাপ ডেটা সংগ্রহ করে তা বিশ্লেষণের মাধ্যমে কৌশল নির্ধারণ শুরু করেন তিনি। এর ফলে নতুন পণ্যের নকশা, উৎপাদনের পরিমাণ ও সরবরাহকারী বাছাই সহজ হয়। গুগল ট্রেন্ডস ফাইন্ডারের মাধ্যমে স্থানীয় ফ্যাশনে ভালো দখল তৈরির জন্য গুগলের সঙ্গে চুক্তিও করেছে শি-ইন।
কোনো পণ্য বাজারে ছাড়ার আগে মাত্র ১০০টি নমুণা তৈরি করে শি-ইন, যেখানে জারার মতো রিটেইলারকে ন্যূনতম ৩০০-৫০০ অর্ডার করতে হয়। স্থানীয় কারখানাগুলোর সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক থাকায় শি-ইন এই বিশেষ সুবিধা পায়। এর ফলে তার পক্ষে দিনে ৩০০০ হাজার নমুনা তৈরি সম্ভব হয়, যেটা অন্যদের পক্ষে রীতিমতো অসম্ভব।
৩. সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং
শি-ইনের উদ্দিষ্ট ক্রেতারা জেনারেশন জেড বা একবিংশ শতকের প্রজন্ম। তারা ডিজিটাল বিশ্বে বড় হয়েছে এবং প্রযুক্তি ও সোশ্যাল মিডিয়ার সঙ্গে তাঁদের বসবাস। ইউরোমনিটর ইন্টারন্যাশনালের ‘ভয়েস অফ দ্য কনজিউমার: লাইফস্টাইল সার্ভে’ ২০২১ সালের এপ্রিলের এক জরিপে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে জেনারেশন জেডের ৩৩ শতাংশেরও বেশি সক্রিয়ভাবে কোম্পানির সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট এবং ফিড অনুসরণ করে। গুগল ট্রেন্ডস অনুসারে গত বছর বহুল অনুসন্ধান করা শীর্ষ ১০টি বিষয়ের মধ্যে দুটিই ছিল এই প্রজন্ম সম্পর্কিত ফ্যাশন (স্লিম-ফিট প্যান্ট, ফ্যাশন)। তাই শি-ইন যে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং থেকে উপকৃত হয়েছে, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
শি-ইন নামকরণের আগে প্রায় নয় বছর ধরে জোরালো সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং কৌশল নিয়েছিল কোম্পানি। পরে ভোক্তাদের কাছে ব্র্যান্ড ও পণ্যগুলিকে পরিচয় করিয়ে দিতে ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম ও পিনটারেস্টের ইনফ্লুয়েন্সারদের সঙ্গে জোট বাঁধে শি-ইন। ব্যবসার উদ্দেশ্যে টিকটকের ব্যবহারও শুরুতে করেছে শি-ইন।
এসব কারণকে বাস্তব ধরে নিলেও চীনে ডেনিম জিন্স তৈরি করে মাত্র ৯ ডলারে ইউরোপ বা আমেরিকায় ক্রেতার কাছে পৌঁছানো চাট্টিখানি কথা নয়! কারণ, কাঁচামাল, মজুরি, নানা পর্যায়ের উৎপাদন প্রক্রিয়া, ও পরিবহন বাবদ ব্যয় এর মধ্যেই অন্তর্ভুক্ত। এগুলো বাদ দিলে কোনো মুনাফা থাকা কঠিন।
ফ্যাশনের ব্যবসায় গোপন কিছু ব্যাপার যে থাকে, তা সবাই জানে। কিন্তু এই ক্ষেত্রে শি-ইনের সব কিছুই পর্দার আড়ালে। বিশ্বের প্রধান প্রধান ব্র্যান্ড এইচঅ্যান্ডএম, অ্যাসোস ও গ্যাপ এরই মধ্যে নিজেদের যাচাইয়ের সুযোগ দিয়েছে, তারা ওয়েবসাইটে সরবরাহকারীদের তালিকা প্রকাশ করেছে। শি-ইন সেই কাজটি এখনও করেনি। বাজারে প্রভাব ও বিস্তৃত তারুণ্যের মধ্যে জনপ্রিয়তা বিবেচনায় নিলে শি-ইন সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়।
তবে শিগগিরই হয়তো আরও কিছু জানা যাবে। কারণ, কোম্পানিটি নিউ ইয়র্ক ও লন্ডনের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার চেষ্টা করছে। সেক্ষেত্রে ব্যবসা কৌশলসহ যাবতীয় মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করতে হবে। এজন্য চীনের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক এবং লন্ডন স্টক এক্সেচেঞ্জের (এলএসই) কাছে আবেদন করেছে শি-ইন।
তবে এখন যেভাবে শি-ইনের ব্যবসা চলছে, তা নিয়ে শুধু বাংলাদেশ নয় সারা বিশ্বের তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের ভ্রু কুঁচকে আছে। এই মুহূর্তে বাজারে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী ছাড়া শি-ইনকে আর কিছু বলা যাচ্ছে না। এধরনের কোম্পানি যুগে যুগেই আসে এবং বাজারের নীতি উলট-পালট করে দেয়। কিন্তু এভাবে দীর্ঘদিন চলতে পারে না। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে সবার ক্ষেত্রে আইন ও সুযোগ সমান থাকতে হবে।
একটি কোম্পানির সরবরাহ শৃঙ্খল যখন পুরো আঁধারে ঢাকা, আর প্রতিযোগী সব কোম্পানির সবকিছু উন্মুক্ত, তখন বাজারে সুস্থ প্রতিযোগিতা থাকে না। তাই শি-ইন ব্যবসার তথ্য প্রকাশ না করলে বাজারে প্রতিযোগিতার পরিবেশ থাকবে না। তাতে বাংলাদেশের মতো অন্য দেশে রপ্তানিকারকরাও হুমকির মুখে পড়বেন।
লেখক: সহকারী বার্তা সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের রূপ এবং যুদ্ধ ও বাণিজ্য সম্পর্কের পরিবর্তন নিয়ে বিশ্লেষণ। চীন, রাশিয়া ও ইউরোপের সাথে নতুন কৌশল এবং মার্কিন আধিপত্যের ভবিষ্যৎ।
১ দিন আগেকোভিড-১৯ মহামারির পর সোশ্যাল মিডিয়া ফাস্ট ফ্যাশন শিল্পকে ভঙ্গুর করে তুলেছে। জায়গা করে নিচ্ছে ভয়াবহ মানবাধিকার সংকট সৃস্টিকারী ‘আলট্রা-ফাস্ট ফ্যাশন’। সেই শিল্পে তৈরি মানুষেরই ‘রক্তে’ রঞ্জিত পোশাক সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্রল করে কিনছে অনবরত। আর রক্তের বেসাতি থেকে মালিক শ্রেণি মুনাফা কামিয়েই যাচ্ছে।
৪ দিন আগেনবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ডিপার্টমেন্ট অব গর্ভমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা সরকারি কার্যকারী বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প জানিয়েছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা পুনর্গ
৮ দিন আগেপরিশেষে বলা যায়, হাসিনার চীনা ধাঁচের স্বৈরশাসক শাসিত রাষ্ট্র গড়ে তোলার প্রয়াস ব্যর্থ হয় একাধিক কারণে। তাঁর বৈষম্যমূলক এবং এলিটপন্থী বাঙালি-আওয়ামী আদর্শ জনসাধারণ গ্রহণ করেনি, যা চীনের কমিউনিস্ট পার্টির গণমুখী আদর্শের বিপরীত। ২০২১ সাল থেকে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক মন্দা তাঁর শাসনকে দুর্বল করে দেয়, পাশাপাশি
১২ দিন আগে