অনলাইন ডেস্ক
গত সপ্তাহে একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ‘ইসরায়েল যদি রাফাহতে পরিকল্পিত হামলা চালায়, তাহলে কী হবে?’ জো বাইডেন সোজাসাপ্টা বলেছিলেন, ‘আমি অস্ত্র সরবরাহ করছি না।’ আর এতেই মধ্যপ্রাচ্যে গত চল্লিশ বছরের প্রধান মিত্রের সঙ্গে এই প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। কেননা মার্কিন–ইসরায়েল সম্পর্কের মূল ভিত্তি অস্ত্রের চালান।
গাজায় আরও বেসামরিক নাগরিক হত্যা রোধ এবং ক্রমবর্ধমান মানবিক সংকট নিয়ে দেশ–বিদেশে অব্যাহত চাপের মধ্যে রয়েছেন জো বাইডেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট অবশেষে এই অঞ্চলে আমেরিকার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ কৌশলগত মিত্র ইসরায়েলের কাছে অস্ত্রের চালান আটকে দিয়েছেন। আশির দশকে প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের পর এমন ঘটনা আর দেখা যায়নি।
মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের সাবেক বিশ্লেষক এবং মধ্যপ্রাচ্যে শান্তিপ্রতিষ্ঠা বিষয়ক সমন্বয়ক অ্যারন ডেভিড মিলার বলেছেন, ‘রিপাবলিকান পার্টি নিঃসন্দেহে ইসরায়েলপন্থী। কিন্তু, ডেমোক্রেটিক পার্টির মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন নিয়ে বিভাজন রয়েছে। ফলে গাজা–ইসরায়েল যুদ্ধ শুরুর পর থেকে জো বাইডেন একটি রাজনৈতিক দ্বিধায় আটকা পড়েছেন। এখন পর্যন্ত মার্কিন–ইসরায়েল সম্পর্কের ক্ষতি হয় এমন কিছু করতে অনিচ্ছুক বলে মনে হচ্ছে জো বাইডেনকে।’
কিন্তু ইসরায়েল রাফাহতে স্থল অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর বাইডেনের দৃষ্টিভঙ্গিতেও পরিবর্তন দেখা যায়।
গত সোমবার ইসরায়েল জানায়, তারা শহরটির পূর্বে হামাসকে লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে। এসব এলাকায় ইসরায়েলি ট্যাংক অবস্থান করছে। স্থানীয়রা বিরামহীন বিস্ফোরণের কথা জানাচ্ছেন। একই সঙ্গে প্রায় অকার্যকর হাসপাতালগুলোতে আহতদের সংখ্যা মাত্রা ছাড়িয়েছে।
জাতিসংঘ বলছে, প্রায় ১ লাখ মানুষ ওই এলাকা থেকে পালিয়েছে এবং তারা খাবার, আশ্রয়, পানি ও স্যানিটেশনের ভয়াবহ সংকটে আছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বারবার শহরটিতে পূর্ণমাত্রায় স্থল অভিযান চালানোর কথা বলে আসছেন, যেখানে প্রায় ১০ লাখ বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছেন। নেতানিয়াহু বলছেন, এখানে লুকিয়ে থাকা হামাসের অবশিষ্ট চার ব্যাটালিয়ন যোদ্ধাকে নিশ্চিহ্ন করতে এই অভিযান জরুরি, যুদ্ধবিরতির কোনো প্রস্তাব সফল হলেও অভিযান বন্ধ থাকবে না।
ওয়াশিংটন নেতানিয়াহুকে রাফাহতে কোনো ধরনের সামরিক অভিযান পরিচালনা না করতে বারবার অনুরোধ জানিয়ে আসছে। অ্যারন ডেভিড মিলার বলছেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেনের আশঙ্কা, রাফাহ অভিযানের কারণে যুদ্ধ বন্ধ বা জিম্মিদের উদ্ধারের সব পথ বন্ধ হয়ে যাবে। এ কারণেই তিনি ইসারায়েলকে কঠোর বার্তা দিয়েছেন।
গত বুধবার বাইডেনের সাক্ষাৎকার প্রচারের পরপর আমেরিকা ইসরায়েলের জন্য বরাদ্দ প্রতিটি ২ হাজার ও ৫০০ পাউন্ড ওজনের বোমার দুটি চালান স্থগিত করেছে। মার্কিন প্রশাসনের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘এই বোমাগুলো ঘনবসতিপূর্ণ একটি এলাকায় ব্যবহার করলে যে প্রভাব পড়বে তাতে আমেরিকা উদ্বিগ্ন, যা আমরা গাজার অন্য এলাকাগুলোতে দেখেছি।’
ইসরায়েলের অস্ত্রাগারে থাকা নানা অস্ত্রের মধ্যে ২ হাজার পাউন্ড ওজনের বোমা সবচেয়ে বিধ্বংসী। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলছে, হামাসকে নির্মূল করতে এই ধরনের অস্ত্র ব্যবহার জরুরি। ওই মার্কিন কর্মকর্তা আরও বলেছেন, এ ছাড়া জয়েন্ট ডাইরেক্ট অ্যাটাক মিউনিশন (জেডিএএম) কিটের একটি চালানও বিবেচনায় রয়েছে। এই কিট আনগাইডেড বোমাকে গাইডেডে পরিণত করতে পারে।
গত শুক্রবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, গাজা যুদ্ধে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আইন অমান্য করে আমেরিকার সরবরাহ করা অস্ত্র ব্যবহার করে থাকতে পারে। কিন্তু এতে আরও বলা হয়, এ সংক্রান্ত পূর্ণ তথ্য আমেরিকার কাছে নেই। যার অর্থ সামরিক সহায়তা চালু থাকতে পারে।
মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সেনা কমান্ড সেন্টকমের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ও মার্কিন সেনাবাহিনীর সাবেক গোলন্দাজ কর্নেল জো বুকিনো জানিয়েছেন, ইসরায়েলের কাছে এখনো যে পরিমাণ গোলাবারুদ মজুত আছে, তা দিয়ে রাফাহকে ‘মাটিতে মিশিয়ে’ দেওয়া সম্ভব।
ইসরায়েলকে বছরে ৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা দিয়ে থাকে ওয়াশিংটন। সম্প্রতি কংগ্রেস অস্ত্র ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের জন্য আরও ১৭ বিলিয়ন ডলার এর সঙ্গে যুক্ত করেছে। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মার্কিন প্রাণঘাতী অস্ত্রের সহায়তা পাওয়া দেশ ইসরায়েল।
কর্নেল জো বুকিনোর মতে, রাফাহতে আক্রমণ ঠেকাতে অস্ত্রের যে চালান স্থগিত করা হয়েছে তা নগণ্য। তিনি বলেন, ‘এটা মার্কিন জনগণকে একটা বুঝ দিতে ছোটখাটো রাজনৈতিক খেলা, যারা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন।’
কারণ যাই হোক, এতে বাইডেন যে রাজনৈতিকভাবে চাপে পড়েছেন তাতে সন্দেহ নেই। মার্কিন সিনেটে রিপাবলিকানরা বাইডেনকে তুলোধুনো করছেন।
মার্কিন সিনেটর পেট রিকেটস বলেন, ‘আমি মনে করি, এই স্থগিতাদেশ ক্ষোভ তৈরি হওয়ার মতো পরিস্থিতি ডেকে এনেছে। প্রেসিডেন্টের এমন কাজ করার কোনো মানে নেই।’
ইসরায়েল তাদের পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী রাফাহতে আক্রমণ পরিচালনা করতে চায়, এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো একটি সন্ত্রাসী সংগঠনের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো মিত্র ইসরায়েলকে আমাদের সমর্থন করতে হবে।’
আরেক রিপাবলিকান সিনেটর জন বারাসো বলেন, ‘নিজেদের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ইসরায়েলের যা খুশি তা করার অধিকার আছে।’ বারাসোর মতে, এই সিদ্ধান্তের ফলে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে।
তবে বাইডেনের নিজের দলে কিন্তু এ সিদ্ধান্তকে বেশ ভালোভাবেই স্বাগত জানানো হয়েছে।
ডেমোক্রেটিক সিনেটর ক্রিশ কুনস দুই মাস আগে বলেছিলেন, ফিলিস্তিনি জনগণের সুরক্ষার ব্যবস্থা না করে ইসরায়েল রাফাহতে অভিযান চালালে সামরিক সহায়তা বন্ধ করে দেওয়া উচিত। তিনি সে সময় বলেছিলেন, ‘গাজা সংঘাত আমাদের যেদিকে নিয়ে যাচ্ছে তা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। আমরা যারা ইসরায়েলের কট্টর সমর্থক, তাঁরাও মানুষের কষ্ট এবং মানবিক বিপর্যয়ে উদ্বিগ্ন।’
ক্রিশ কুনস মনে করেন, নেতানিয়াহুর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে প্রেসিডেন্ট বাইডেন ক্রমাগত চেষ্টা করেছেন। কিন্তু উগ্র জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক শক্তির ওপর ভিত্তি করে ইসরায়েলি সরকার এখনো টিকে আছে। তারা গাজায় মানবিক সহযোগিতা ঢুকতে দিতে চায় না। পাশাপাশি পশ্চিম তীর থেকেও ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করতে চায়। ফলে পরিস্থিতি প্রতিকূলে।
কায়রোতে হামাসের সঙ্গে জিম্মি মুক্তির যে আলোচনা চলছিল তা গত সপ্তাহে ভেস্তে যায়। কয়েকজন ইসরায়েলি বিশ্লেষক বাইডেনকে সতর্ক করে বলেছেন, তাঁর এ সিদ্ধান্ত জিম্মি মুক্তির মধ্যস্থতায় বাধা তৈরি করতে পারে। পাশাপাশি রাফাহ আক্রমণ না করতে যে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে এতে হামাস লাভবান হবে।
গত ৭ অক্টোবরের হামলার পর বাইডেন তেল আবিব সফর করেন এবং নেতানিয়াহুর পাশে নিজের অবস্থানের জানান দেন। কিন্তু একই সঙ্গে তিনি নেতানিয়াহুকে সতর্ক করে বলেছিলেন, ‘৯/১১–এর পর আমরা যে ভুল করেছি তোমরা সেটি থেকে বিরত থাক।’
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনের মানুষও অনেক কষ্ট করছে এবং পুরো পৃথিবীর মতো আমরাও নিরপরাধ ফিলিস্তিনিদের প্রাণহানির জন্য শোক জানাই।’
বাইডেন এবং নেতানিয়াহুর সম্পর্ক পাঁচ দশকের। ছাত্রজীবন থেকেই তাঁরা একে অপরকে চেনেন। সে সম্পর্ক যত পুরোনোই হোক না কেন, তাঁদের সম্পর্কের যত পেছনের দিকে চোখ যায় ততই তিক্ততার চিত্র ভেসে ওঠে। যৌবনকালে বাইডেন নেতানিয়াহুকে বলেছিলেন, ‘বিবি, (নেতানিয়াহু) আমি তোমাকে ভালোবাসি, তবে তোমার বলার যত কিছুই থাকুক না কেন, আমি তার একটির সঙ্গেও একমত নই!’
বাইডেন অস্ত্র সরবরাহ স্থগিতের ঘোষণা দেওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার নেতানিয়াহুও কড়া প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি বলেন, ‘আমাদের যদি একলা লড়তে হয়, আমরা তা–ই করব। আমি আগেই বলেছি, যদি প্রয়োজন হয় তাহলে আমরা আমাদের নখ দিয়েও যুদ্ধ করব।’
নেতানিয়াহুর এই বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ডেমোক্রেটিক সিনেটর ক্রিশ কুনস বলেন, ‘তাদের নখ দিয়ে যুদ্ধ করার প্রয়োজন নেই। তাদের আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র দিয়েই যুদ্ধ করা উচিত, যেগুলো মার্কিনদের সঙ্গে যৌথভাবে বানানো হয়েছে। এর অনেকগুলোই আমরা তাদের দিয়েছি বিভিন্ন সময়। কিন্তু তাদের এমনভাবে যুদ্ধ করতে হবে যাতে বেসামরিক প্রাণহানি কমিয়ে আনা যায়।’
গত সপ্তাহে একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ‘ইসরায়েল যদি রাফাহতে পরিকল্পিত হামলা চালায়, তাহলে কী হবে?’ জো বাইডেন সোজাসাপ্টা বলেছিলেন, ‘আমি অস্ত্র সরবরাহ করছি না।’ আর এতেই মধ্যপ্রাচ্যে গত চল্লিশ বছরের প্রধান মিত্রের সঙ্গে এই প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। কেননা মার্কিন–ইসরায়েল সম্পর্কের মূল ভিত্তি অস্ত্রের চালান।
গাজায় আরও বেসামরিক নাগরিক হত্যা রোধ এবং ক্রমবর্ধমান মানবিক সংকট নিয়ে দেশ–বিদেশে অব্যাহত চাপের মধ্যে রয়েছেন জো বাইডেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট অবশেষে এই অঞ্চলে আমেরিকার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ কৌশলগত মিত্র ইসরায়েলের কাছে অস্ত্রের চালান আটকে দিয়েছেন। আশির দশকে প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের পর এমন ঘটনা আর দেখা যায়নি।
মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের সাবেক বিশ্লেষক এবং মধ্যপ্রাচ্যে শান্তিপ্রতিষ্ঠা বিষয়ক সমন্বয়ক অ্যারন ডেভিড মিলার বলেছেন, ‘রিপাবলিকান পার্টি নিঃসন্দেহে ইসরায়েলপন্থী। কিন্তু, ডেমোক্রেটিক পার্টির মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন নিয়ে বিভাজন রয়েছে। ফলে গাজা–ইসরায়েল যুদ্ধ শুরুর পর থেকে জো বাইডেন একটি রাজনৈতিক দ্বিধায় আটকা পড়েছেন। এখন পর্যন্ত মার্কিন–ইসরায়েল সম্পর্কের ক্ষতি হয় এমন কিছু করতে অনিচ্ছুক বলে মনে হচ্ছে জো বাইডেনকে।’
কিন্তু ইসরায়েল রাফাহতে স্থল অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর বাইডেনের দৃষ্টিভঙ্গিতেও পরিবর্তন দেখা যায়।
গত সোমবার ইসরায়েল জানায়, তারা শহরটির পূর্বে হামাসকে লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে। এসব এলাকায় ইসরায়েলি ট্যাংক অবস্থান করছে। স্থানীয়রা বিরামহীন বিস্ফোরণের কথা জানাচ্ছেন। একই সঙ্গে প্রায় অকার্যকর হাসপাতালগুলোতে আহতদের সংখ্যা মাত্রা ছাড়িয়েছে।
জাতিসংঘ বলছে, প্রায় ১ লাখ মানুষ ওই এলাকা থেকে পালিয়েছে এবং তারা খাবার, আশ্রয়, পানি ও স্যানিটেশনের ভয়াবহ সংকটে আছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বারবার শহরটিতে পূর্ণমাত্রায় স্থল অভিযান চালানোর কথা বলে আসছেন, যেখানে প্রায় ১০ লাখ বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছেন। নেতানিয়াহু বলছেন, এখানে লুকিয়ে থাকা হামাসের অবশিষ্ট চার ব্যাটালিয়ন যোদ্ধাকে নিশ্চিহ্ন করতে এই অভিযান জরুরি, যুদ্ধবিরতির কোনো প্রস্তাব সফল হলেও অভিযান বন্ধ থাকবে না।
ওয়াশিংটন নেতানিয়াহুকে রাফাহতে কোনো ধরনের সামরিক অভিযান পরিচালনা না করতে বারবার অনুরোধ জানিয়ে আসছে। অ্যারন ডেভিড মিলার বলছেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেনের আশঙ্কা, রাফাহ অভিযানের কারণে যুদ্ধ বন্ধ বা জিম্মিদের উদ্ধারের সব পথ বন্ধ হয়ে যাবে। এ কারণেই তিনি ইসারায়েলকে কঠোর বার্তা দিয়েছেন।
গত বুধবার বাইডেনের সাক্ষাৎকার প্রচারের পরপর আমেরিকা ইসরায়েলের জন্য বরাদ্দ প্রতিটি ২ হাজার ও ৫০০ পাউন্ড ওজনের বোমার দুটি চালান স্থগিত করেছে। মার্কিন প্রশাসনের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘এই বোমাগুলো ঘনবসতিপূর্ণ একটি এলাকায় ব্যবহার করলে যে প্রভাব পড়বে তাতে আমেরিকা উদ্বিগ্ন, যা আমরা গাজার অন্য এলাকাগুলোতে দেখেছি।’
ইসরায়েলের অস্ত্রাগারে থাকা নানা অস্ত্রের মধ্যে ২ হাজার পাউন্ড ওজনের বোমা সবচেয়ে বিধ্বংসী। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলছে, হামাসকে নির্মূল করতে এই ধরনের অস্ত্র ব্যবহার জরুরি। ওই মার্কিন কর্মকর্তা আরও বলেছেন, এ ছাড়া জয়েন্ট ডাইরেক্ট অ্যাটাক মিউনিশন (জেডিএএম) কিটের একটি চালানও বিবেচনায় রয়েছে। এই কিট আনগাইডেড বোমাকে গাইডেডে পরিণত করতে পারে।
গত শুক্রবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, গাজা যুদ্ধে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আইন অমান্য করে আমেরিকার সরবরাহ করা অস্ত্র ব্যবহার করে থাকতে পারে। কিন্তু এতে আরও বলা হয়, এ সংক্রান্ত পূর্ণ তথ্য আমেরিকার কাছে নেই। যার অর্থ সামরিক সহায়তা চালু থাকতে পারে।
মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সেনা কমান্ড সেন্টকমের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ও মার্কিন সেনাবাহিনীর সাবেক গোলন্দাজ কর্নেল জো বুকিনো জানিয়েছেন, ইসরায়েলের কাছে এখনো যে পরিমাণ গোলাবারুদ মজুত আছে, তা দিয়ে রাফাহকে ‘মাটিতে মিশিয়ে’ দেওয়া সম্ভব।
ইসরায়েলকে বছরে ৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা দিয়ে থাকে ওয়াশিংটন। সম্প্রতি কংগ্রেস অস্ত্র ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের জন্য আরও ১৭ বিলিয়ন ডলার এর সঙ্গে যুক্ত করেছে। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মার্কিন প্রাণঘাতী অস্ত্রের সহায়তা পাওয়া দেশ ইসরায়েল।
কর্নেল জো বুকিনোর মতে, রাফাহতে আক্রমণ ঠেকাতে অস্ত্রের যে চালান স্থগিত করা হয়েছে তা নগণ্য। তিনি বলেন, ‘এটা মার্কিন জনগণকে একটা বুঝ দিতে ছোটখাটো রাজনৈতিক খেলা, যারা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন।’
কারণ যাই হোক, এতে বাইডেন যে রাজনৈতিকভাবে চাপে পড়েছেন তাতে সন্দেহ নেই। মার্কিন সিনেটে রিপাবলিকানরা বাইডেনকে তুলোধুনো করছেন।
মার্কিন সিনেটর পেট রিকেটস বলেন, ‘আমি মনে করি, এই স্থগিতাদেশ ক্ষোভ তৈরি হওয়ার মতো পরিস্থিতি ডেকে এনেছে। প্রেসিডেন্টের এমন কাজ করার কোনো মানে নেই।’
ইসরায়েল তাদের পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী রাফাহতে আক্রমণ পরিচালনা করতে চায়, এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো একটি সন্ত্রাসী সংগঠনের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো মিত্র ইসরায়েলকে আমাদের সমর্থন করতে হবে।’
আরেক রিপাবলিকান সিনেটর জন বারাসো বলেন, ‘নিজেদের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ইসরায়েলের যা খুশি তা করার অধিকার আছে।’ বারাসোর মতে, এই সিদ্ধান্তের ফলে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে।
তবে বাইডেনের নিজের দলে কিন্তু এ সিদ্ধান্তকে বেশ ভালোভাবেই স্বাগত জানানো হয়েছে।
ডেমোক্রেটিক সিনেটর ক্রিশ কুনস দুই মাস আগে বলেছিলেন, ফিলিস্তিনি জনগণের সুরক্ষার ব্যবস্থা না করে ইসরায়েল রাফাহতে অভিযান চালালে সামরিক সহায়তা বন্ধ করে দেওয়া উচিত। তিনি সে সময় বলেছিলেন, ‘গাজা সংঘাত আমাদের যেদিকে নিয়ে যাচ্ছে তা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। আমরা যারা ইসরায়েলের কট্টর সমর্থক, তাঁরাও মানুষের কষ্ট এবং মানবিক বিপর্যয়ে উদ্বিগ্ন।’
ক্রিশ কুনস মনে করেন, নেতানিয়াহুর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে প্রেসিডেন্ট বাইডেন ক্রমাগত চেষ্টা করেছেন। কিন্তু উগ্র জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক শক্তির ওপর ভিত্তি করে ইসরায়েলি সরকার এখনো টিকে আছে। তারা গাজায় মানবিক সহযোগিতা ঢুকতে দিতে চায় না। পাশাপাশি পশ্চিম তীর থেকেও ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করতে চায়। ফলে পরিস্থিতি প্রতিকূলে।
কায়রোতে হামাসের সঙ্গে জিম্মি মুক্তির যে আলোচনা চলছিল তা গত সপ্তাহে ভেস্তে যায়। কয়েকজন ইসরায়েলি বিশ্লেষক বাইডেনকে সতর্ক করে বলেছেন, তাঁর এ সিদ্ধান্ত জিম্মি মুক্তির মধ্যস্থতায় বাধা তৈরি করতে পারে। পাশাপাশি রাফাহ আক্রমণ না করতে যে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে এতে হামাস লাভবান হবে।
গত ৭ অক্টোবরের হামলার পর বাইডেন তেল আবিব সফর করেন এবং নেতানিয়াহুর পাশে নিজের অবস্থানের জানান দেন। কিন্তু একই সঙ্গে তিনি নেতানিয়াহুকে সতর্ক করে বলেছিলেন, ‘৯/১১–এর পর আমরা যে ভুল করেছি তোমরা সেটি থেকে বিরত থাক।’
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনের মানুষও অনেক কষ্ট করছে এবং পুরো পৃথিবীর মতো আমরাও নিরপরাধ ফিলিস্তিনিদের প্রাণহানির জন্য শোক জানাই।’
বাইডেন এবং নেতানিয়াহুর সম্পর্ক পাঁচ দশকের। ছাত্রজীবন থেকেই তাঁরা একে অপরকে চেনেন। সে সম্পর্ক যত পুরোনোই হোক না কেন, তাঁদের সম্পর্কের যত পেছনের দিকে চোখ যায় ততই তিক্ততার চিত্র ভেসে ওঠে। যৌবনকালে বাইডেন নেতানিয়াহুকে বলেছিলেন, ‘বিবি, (নেতানিয়াহু) আমি তোমাকে ভালোবাসি, তবে তোমার বলার যত কিছুই থাকুক না কেন, আমি তার একটির সঙ্গেও একমত নই!’
বাইডেন অস্ত্র সরবরাহ স্থগিতের ঘোষণা দেওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার নেতানিয়াহুও কড়া প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি বলেন, ‘আমাদের যদি একলা লড়তে হয়, আমরা তা–ই করব। আমি আগেই বলেছি, যদি প্রয়োজন হয় তাহলে আমরা আমাদের নখ দিয়েও যুদ্ধ করব।’
নেতানিয়াহুর এই বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ডেমোক্রেটিক সিনেটর ক্রিশ কুনস বলেন, ‘তাদের নখ দিয়ে যুদ্ধ করার প্রয়োজন নেই। তাদের আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র দিয়েই যুদ্ধ করা উচিত, যেগুলো মার্কিনদের সঙ্গে যৌথভাবে বানানো হয়েছে। এর অনেকগুলোই আমরা তাদের দিয়েছি বিভিন্ন সময়। কিন্তু তাদের এমনভাবে যুদ্ধ করতে হবে যাতে বেসামরিক প্রাণহানি কমিয়ে আনা যায়।’
ইউক্রেনের ছয়টি ক্ষেপণাস্ত্র সারা বিশ্বে আতঙ্ক সৃষ্টি করলেও, রাশিয়ার এ ধরনের আক্রমণকে স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে মেনে নেওয়া হয়েছে—যেমনটি ইসরায়েল উত্তর গাজাকে ধ্বংস করার ক্ষেত্রে হয়েছে।
৯ ঘণ্টা আগেট্রাম্প ফিরে আসায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে উদ্বেগ আরও বেড়েছে। দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতিতে দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষেত্রে বাইডেন প্রশাসনের ধারাবাহিকতাই বজায় থাকতে পারে, সামান্য কিছু পরিবর্তন নিয়ে। ট্রাম্পের নতুন মেয়াদে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে আফগানিস্তান ও পাকিস্তান পেছনের সারিতে থাকলেও বাংলাদেশ,
১৫ ঘণ্টা আগেড. ইউনূস যখন অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন পুরো জাতি তাঁকে স্বাগত জানিয়েছিল। তবে তাঁকে পরিষ্কারভাবে এই পরিকল্পনা প্রকাশ করতে হবে যে, তিনি কীভাবে দেশ শাসন করবেন এবং ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন।
২ দিন আগেসম্প্রতি দুই বিলিয়ন ডলার মূল্যের মার্কিন ডলারনির্ভর বন্ড বিক্রি করেছে চীন। গত তিন বছরের মধ্যে এবারই প্রথম দেশটি এমন উদ্যোগ নিয়েছে। ঘটনাটি বিশ্লেষকদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তাঁরা মনে করছেন, এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একটি বার্তা দিয়েছে চীন।
২ দিন আগে