‘ইন্ডিয়া’ চ্যালেঞ্জ ছুড়তে পারবে কি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক
আপডেট : ০৫ আগস্ট ২০২৩, ১১: ১৫
Thumbnail image

ভারতে বিজেপির বিরুদ্ধে একজোট হয়ে লড়তে মঞ্চ গড়েছে বিরোধীরা। ঘোষিত লক্ষ্য একটাই—হারাতে হবে ৷ যদিও ‘ইন্ডিয়া’ জোটের একাধিক দলের মধ্যে বনিবনা নেই। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে কতটা চ্যালেঞ্জ ছুড়তে পারবে ‘ইন্ডিয়া’? খবর ডয়চে ভেলের।

নয়া জোটের জন্ম
প্রায় এক দশক ধরে ভারতের রাজনীতি মোদিময়। শুধু লোকসভা নয়, বিধানসভা ভোটেও বিজেপি জয় পেয়েছে তাঁর মুখ সামনে রেখে। মূল্যবৃদ্ধি, গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রশ্ন জোরালোভাবে উঠছে ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের মুখে। এর সঙ্গে রয়েছে ৯ বছরের প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা।

এই পরিস্থিতিতে একজোট দেশের কয়েকটি অগ্রণী বিরোধী শক্তি। কর্ণাটকের বেঙ্গালুরুতে ১৭ ও ১৮ জুলাই বিরোধীদের সম্মিলিত সভায় জন্ম হয়েছে নয়া জোটের। বিরোধীদের দ্বিতীয় বৈঠক হয়েছে বিহারের পাটনায়। জোটের নাম ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স (আইএনডিআইএ) বা ‘ইন্ডিয়া’।

জোটে রয়েছে ২৬টি দল। কংগ্রেস ও বামপন্থীদের পাশাপাশি শরিক পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস, উত্তরপ্রদেশের সমাজবাদী পার্টি, বিহারের জনতা দল ইউনাইটেড, রাষ্ট্রীয় জনতা দল, দিল্লির আম আদমি পার্টি, মহারাষ্ট্রের এনসিপির মতো গুরুত্বপূর্ণ একঝাঁক আঞ্চলিক দল।

শুধু বৈঠক নয়, ময়দানের লড়াইয়ে জোটের নেতাদের একসঙ্গে শামিল হতে দেখা যাচ্ছে। মণিপুর ইস্যুতে সংসদের ভেতরে ও বাইরে প্রতিবাদে একজোট বিরোধীরা। প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করে লোকসভার চলতি বাদল অধিবেশন অচল করে রেখেছে ‘ইন্ডিয়া’। 

বিজেপি উদ্বেগে? 
কিছুদিন আগেই নরেন্দ্র মোদি দাবি করেছিলেন, তিনি একাই সব বিরোধীর থেকে বেশি শক্তিশালী! ছবিটায় এখন বদল দেখা যাচ্ছে। পাটনায় যেদিন বৈঠকে বসেছিল বিরোধী জোট, সেই দিনই দিল্লিতে ‘মৃতপ্রায়’ এনডিএর সভা ডাকে বিজেপি। ৩৮টি দল তাতে যোগ দেয়।

২৫ বছর আগে এনডিএ তৈরি হয়েছিল। বছরের পর বছর বিজেপি নেতৃত্বাধীন এই জোট ছিল কার্যত অস্তিত্বহীন, তাকে ফের কেন জাগিয়ে তোলা? যেখানে ৩৮টি দলের মধ্যে ১৬টির লোকসভায় কোনো প্রতিনিধি নেই। কখনো ভোটে লড়েনি ৯টি দল।

প্রধানমন্ত্রী ‘ইন্ডিয়া’ জোটের নাম নিয়ে কটাক্ষ করেছেন। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, ইন্ডিয়ান মুজাহিদীনের মতো সংগঠনের প্রসঙ্গও টেনে এনেছেন। তাহলে কি বিজেপি বিরোধীদের সংঘবদ্ধ চেহারা দেখে উদ্বেগে?

বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য ডয়েচে ভেলেকে বলেন, ‘ভোটাররা অস্থায়ী সরকার চান না। তাই বিরোধীদের এই জমায়েত নিয়ে বিজেপি চিন্তিত নয়।’ 

‘ইন্ডিয়া’র অন্দরে
‘ইন্ডিয়া’র শরিকেরা একাধিক রাজ্যে যুযুধান। একের বিরুদ্ধে এক প্রার্থী দেওয়ার ফর্মুলা বের করা কি সহজ হবে? সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেই দিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের সঙ্গে বোঝাপড়া হবে না। কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এ বিষয়ে নীরব থাকলেও পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ নেতৃত্ব তৃণমূলের বিরুদ্ধে একেবারে খড়্গহস্ত।

জোটে চাপানউতোর 
তৃণমূল জাতীয় ও রাজ্যের পরিস্থিতিকে আলাদা করে দেখছে। তৃণমূল মুখপাত্র, আইনজীবী বিশ্বজিৎ দেব ডয়েচে ভেলেকে বলেন, রাজ্যে লড়াই হবে, কিন্তু কেন্দ্রীয় স্তরে সবাই একটি বিষয়ে একমত যে বিজেপি সরকারকে সরাতে হবে। রাজ্য ও কেন্দ্রের রাজনীতিকে গুলিয়ে ফেললে চলবে না। গণতন্ত্র, সংবিধান রক্ষার বৃহত্তর স্বার্থে এটা জরুরি।

কিন্তু তৃণমূলের বিরুদ্ধেই তো গণতন্ত্র হত্যার অভিযোগ উঠছে! বিশ্বজিতের ব্যাখ্যা, ‘বিরোধীরা পরিকল্পিত সন্ত্রাস চালিয়েছে। আমাদের ১৮ জন কর্মী খুন হয়েছেন। ৬০ হাজারের বেশি বুথের কতগুলোতে গন্ডগোল হয়েছে? ভোটের ফলই বলছে মানুষ কাদের পক্ষে।’

এই সংঘাত কি ‘ইন্ডিয়া’র সম্ভাবনায় জল ঢেলে দিতে পারে? সিনিয়র সাংবাদিক সুমন ভট্টাচার্য ডয়েচে ভেলেকে বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে যেমন বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের লড়াই, তেমনই কেরলে বাম ও কংগ্রেস মুখোমুখি। দিল্লি ও পাঞ্জাবে কংগ্রেস ও আম আদমি পার্টির লড়াই। এটা কেন্দ্রে সরকার নির্বাচনের ভোট। বিজেপি বিরোধিতার লক্ষ্যে সবাই এক থাকলে রাজ্যের পরিস্থিতি বাধা হবে না।’

ভোটের অঙ্ক
এমন জটিল সমীকরণের মধ্যে ভোটের পাটিগণিত নিয়ে কাটাছেঁড়া চলছে। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি একাই ৩০৩টি আসনে জিতেছিল। উত্তরপ্রদেশ, গুজরাট, মহারাষ্ট্র, বিহারের মতো যে রাজ্যগুলোতে বেশি আসন রয়েছে, সেখানে বিজেপি চূড়ান্ত ভালো ফল করেছিল। পশ্চিমবঙ্গে অভাবনীয়ভাবে ১৮টি আসনে জেতে তারা। এসব রাজ্যে তাদের আসনসংখ্যা কমার আশঙ্কা রয়েছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত