ফারজানা লিজা
ক্রিং ক্রিং সকাল সাতটার অ্যালার্মে ঘুম ভাঙল। দ্রুত ফ্রেশ হয়ে রেডি হলাম। বিওআইডির টি-শার্ট পরা ম্যান্ডেটরি ছিল। এত সকালে খাওয়ার অভ্যাস না থাকায় শুধু তিনটা খেজুর খেয়ে সকালের নাশতা শেষ করলাম। ইতিমধ্যে ফোন এল গাড়ি চলে এসেছে, ড্রাইভার নিচে অপেক্ষা করছেন। রুমমেটদের বিদায় জানিয়ে বের হয়ে গেলাম। নির্ঝর ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে বিমানবন্দর পৌঁছাতে মাত্র ১৫ মিনিট সময় লেগেছে। সকাল সকাল রাস্তা একদম খালি ছিল। ২ নম্বর গেটে ঢোকার সময় দেখা হলো ত্রিদিব দাদার সঙ্গে। উনি ইন্ডিয়া হাইকমিশনের একজন কর্মকর্তা। সঙ্গে ছিলেন নাম না-জানা আরও দুজন বিওআইডি মেম্বার। ভেতরে ঢুকে চোখে পড়ল সাদা আর ব্লু কম্বিনেশন টি-শার্ট পরিহিত একঝাঁক তরুণ।
অনেকে চলে এসেছেন। কিছু সময় বাদে আমাদের গ্রুপলিডার রুদ্র দাদা হাতে একটা লিস্ট ধরিয়ে বললেন, গ্রুপের পাঁচজন একসঙ্গে গিয়ে বোর্ডিং পাস নেবেন, যার দায়িত্ব দেওয়া হলো আমাকে। ইতিমধ্যে তিনজন গ্রুপ মেম্বার চলে এসেছেন, বাকি আরও দুজন। বসে অপেক্ষা করছিলাম আর উত্তম কুমার দাদার সঙ্গে পরিচয়পর্ব শেষ করলাম।। মাথায় ঝাঁকড়া চুল, মঞ্চনাটক করেন। সিলেট জেলায় বেশ সুনাম আছে তাঁর। আরও পরিচিত হলাম তারকা সমতুল্য সজল দাদার সঙ্গে। তিনি নিউজ ২৪ টেলিভিশনে কাজ করেন। বেশ হাস্যরসাত্মক একজন মানুষ। পাশাপাশি ব্লগ করেন, ১০০ জন ডেলিগেটের মধ্যে অনেকেই দেখলাম ব্লগ করেন।
দেখা হলো সুর্মি আর নন্দিতার সঙ্গে। এই দুজন আমার সঙ্গে শুরু থেকেই আছে। সবার সঙ্গে কথা বলে সময় পার করছিলাম। চারজন মেম্বার চলে এসেছেন, বাকি রইল নম্রতা বর্মন দিদি। উনার জন্য এখন অপেক্ষা। বাকি গ্রুপের সবাই আস্তে আস্তে বোর্ডিং পাস নিয়ে ইমিগ্রেশন করছেন। পরিচিত হলাম সৌমিত্র দাদার সঙ্গে, তিনি একজন সরকারি কর্মকর্তা, নানা দেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা শেয়ার করলেন। বেশ ভালো একজন মানুষ। এর সঙ্গে বিমানে জানালার পাশে সিট পাওয়ার একটা বিশেষ টেকনিক শিখিয়ে দিলেন। ১০টা বাজার অনেক পরে এলেন নম্রতা বর্মন দিদি। ওনাকে অনেকবার ফোন করা হয়েছে কিন্তু ফোন রিসিভ করলেন না। ভাবছিলাম হয়তো ফ্লাইট মিস করবেন কি না। অবশেষে পাঁচজন গেলাম বোর্ডিং পাস নিতে। সৌমিত্র দাদা শিখিয়ে দিয়েছিলেন বোর্ডিং পাস নেওয়ার সময় বলবে, তোমার প্রথম বিমান ভ্রমণ, যেন জানালার পাশে সিট দেয়। অফিসারকে বলার পর উনি বলেন, দুঃখিত, ইতিমধ্যে সব সিট বুক হয়ে গেছে, আরও আগে এলে দেওয়া যেত।
মনটা ভিশন খারাপ হয়ে গেল, আর দিদির ওপর অনেক রাগ লাগছিল। উনি লেট করে না এলে আমি জানালার পাশে সিটটা পেতাম। ইমিগ্রেশন সেন্টারে গিয়ে লাইনে দাঁড়ালাম। অনেক লম্বা লাইন, একাধিক ফ্লাইটের মানুষ একসঙ্গে। অনেক সময় বাদে আমার পালা এল, ইমিগ্রেশন অফিসারকে পাসপোর্টটা এগিয়ে দিলাম। উনি ছোট ছোট কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করছিলেন, সবশেষে একটা সিল বসিয়ে দিলেন। এই দৃশ্যটা আমি অনেক সিনেমার আর শর্ট ভিডিওতে দেখেছি। আজ নিজেই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হলাম, অন্য রকম এক ভালো লাগার অনুভূতি। সামনে এগিয়ে গেলাম, আশপাশে সব বিওআইডি মেম্বার। ওই পাশে দেখা যাচ্ছে বড় বড় বিমান। এত কাছ থেকে আগে কখনো বিমান দেখিনি। বিমানবন্দরের ভেতরে আসা হয়নি। সবাই ফটোসেশনে অংশ নিচ্ছেন, সিঙ্গেল ছবি, গ্রুপ ছবি নানা ভঙ্গিতে ছবি তুলছেন। আমিও কিছু তুলেছি। শেষবার মাকে ফোন দিয়ে দোয়া ও বিদায় নিলাম। ফ্লাইটের টাইম হয়ে গেছে, সবাই লাইন ধরে নিচে নামতে থাকলাম। আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল কতগুলো বাস, সেই বাস একদম বিমানের সামনে গিয়ে থামল। টার্মিনাল থেকে বিমান অনেক দূরে থাকে, বৃষ্টি হয়েছিল, পানি জমে আছে। বাস থেকে নেমে সবাই সিঁড়ি ধরে বিমানে উঠছে। প্রথমবার বিমানে উঠছি, অন্য রকম অনুভূতি। জানি না বাকিদের কেমন লাগছে। আস্তে আস্তে সামনে এগিয়ে নাম্বার দেখে সিট খুঁজে বের করলাম। আমি সুর্মি আর সুপ্তা আপু একসঙ্গে বসলাম। সুপ্তা আপু বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়। বাংলাদেশের এক রত্ন। সবাই সিটে বসার পর এয়ার হোস্ট কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিলেন। বিমানজুড়ে শুধু বিওআইডি মেম্বারদের দেখা যাচ্ছে, ফাঁকে ফাঁকে অন্য যাত্রী। বিমানের ভেতরে এক অন্য রকম উৎসবমুখর পরিবেশ। ১০০ জন একসঙ্গে থাকলে এমনই হওয়ার কথা। অনেক সময় পর বিমান রানওয়েতে এল। হঠাৎ করে সম্পূর্ণ বিমান কেঁপে উঠল আর প্রচণ্ড গতিতে সামনে যেতে লাগল। সবাই পেছনের দিকে ঝুঁকে সিটের সঙ্গে চুম্বকের মতো লেগে আছে। আমি ছোট জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি। মুহূর্তে বিমান বাতাসে ভাসছে, উত্তরার বড় বড় বিল্ডিং ক্রমেই ছোট হয়ে যাচ্ছে। সাদা তুলার মতো মেঘ দেখা যাচ্ছে। আমি ভীষণ এক্সাইটেড ছিলাম। সুপ্তা আপু আমার এক্সাইটেড দেখে বললেন, ‘তুমি কি জানালার পাশে বসবা?’ আমি বললাম, জি আপু, আমার প্রথম বিমান ভ্রমণ। আপু বললেন, ঠিক আছে বিমান পুরোপুরি ওপরে উঠুক, যখন সিটবেল খুলতে বলবে তখন এসো। আমি তখন অনেক খুশি হয়ে পড়েছিলাম। উনার হাতে দুইটা পাসপোর্ট, কত দেশ-বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। বিমান পুরোপুরি ওপরে ওঠার পর আমাকে জানালার পাশে বসতে দিলেন।
আকাশটা গাঢ় নীল, এখন আর কোনো বিল্ডিং দেখা যাচ্ছে না, নিচে বড় বড় মেঘের পাহাড় দেখা যাচ্ছে। জানালার ফাঁক দিয়ে সূর্যটা চোখে পড়ছিল, প্রচণ্ড তাপ। ইতিমধ্যে জানালার গ্লাসটা গরম হয়ে গেছে। আমার জায়গাটা ছিল ঠিক উইংসের ওপর। তাকিয়ে থেকে বিমানের মেকানিজমটা চিন্তা করছিলাম।
কোনোভাবে মাথায় ঢুকছিল না। সামনে, পেছনে, পাশে সব আমাদের বিওআইডি ডেলিগেটস। তাদের সঙ্গে গল্প করছিলাম, সবাই সবার সঙ্গে সেলফি তুলছেন, বিমানের ভেতরটা সত্যিই বেশ আমেজ লাগছিল। সবাইকে একটা ওয়েলকাম ড্রিংকস দিল, প্রায় ১০ মিনিট পর দুপুরের খাবার সার্ভ করল। আমরা তিনজন একজন আরেকজনের সঙ্গে গল্প করছিলাম। লাঞ্চ আইটেমটা একটু ভিন্ন ভিন্ন ছিল। প্রায় ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট পর দিল্লিতে পৌঁছে গেলাম। দিল্লি ইন্দিরা গান্ধী ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট বেশ বড় আর সুন্দর। সবাই লাইন ধরে ইমিগ্রেশন সেন্টারে দাঁড়িয়ে আছি। ইংরেজি আর হিন্দি মিলে ইমিগ্রেশন অফিসারের প্রশ্নের উত্তর দিলাম। এয়ারপোর্টের বাইরে আমাদের জন্য ইন্ডিয়া হাইকমিশনের কর্মকর্তারা অপেক্ষা করছেন, সবাইকে গোলাপ ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হচ্ছিল। বেশ সুন্দর একটা অনুভূতি। পাঁচটা গ্রুপের জন্য তিনটা এসি বাস দেওয়া হয়েছে, গ্রুপ অনুযায়ী বাসে ওঠা হলো। আমি আর সুর্মি এক নাম্বার বাসে। বাসে করে বিমানবন্দর থেকে রওনা হলাম। চারপাশটা অনেক সুন্দর। রাস্তাগুলো বেশ পরিচ্ছন্ন আর চওড়া। বাসের ভেতরে সবাই অনেক আনন্দ-উল্লাস করছেন, বিনয় দাদা আর সাহস ভাই দুজনে গান ধরেছেন। বাকিরা সবাই সুর দিচ্ছেন। গানে গানে মুখরিত বাস। আমাদের সঙ্গে যুক্ত হলেন ইন্ডিয়া হাইকমিশনারের এক দাদা। তিনিও গান গাইছিলেন, বাংলা না বোঝার জন্য শুধু হিন্দি গানের সঙ্গে সুর দিচ্ছেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর আমরা পৌঁছে গেলাম প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহশালায়।
এটা জাদুঘর বলতে পারেন। পুরোনো ভবনের পাশে উঠেছে নতুন ভবন। ভেতরটা খুবই সুন্দর আলোকসজ্জায় সাজানো হয়েছে। ভারত ইতিহাসের বেশ কিছু নিদর্শন ছবি, ভিডিও, প্রত্যেক প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ছবি দিয়ে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। আরও আছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ছবি। বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের ছবি। অনেকটা আমাদের বাংলাদেশের স্বাধীনতা আর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের মতো। দিল্লির তিন মূর্তি ভবন আগে, যা নেহরু মেমোরিয়াল মিউজিয়াম নামে পরিচিত ছিল কিন্তু এখন নাম পরিবর্তন করে প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহশালা নামে পরিচিত। এখন পর্যন্ত ভারতের সব প্রধানমন্ত্রীর জীবন দর্শন তুলে ধরা হয়েছে এ সংগ্রহশালায়। সংগ্রহশালাটি প্রায় ১০ হাজার বর্গমিটার জমিতে নির্মিত, যা নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৭১ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে অনুমোদিত হয়ে চার বছরের মধ্যে নির্মিত হয়েছে। গত ১৪ এপ্রিল উদ্বোধন করেন নরেন্দ্র মোদি, যা ভারতে সংবিধান ও প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহশালা স্থান পেয়েছে। এই সংগ্রহশালা প্রধানমন্ত্রীদের জীবন ও অবদানের মাধ্যমে স্বাধীনতা-পরবর্তী ভারতের গল্প বলবে—তরুণ প্রজন্মকে নেতৃত্বদান, দেশ গড়ার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং প্রত্যেক প্রধানমন্ত্রীর সাফল্যের কথা সবাইকে জানানোর জন্য। সংগ্রহশালা বিভিন্ন তথ্য প্রসার ভারতী দূরদর্শন, ফিল্ম মিডিয়া, সংসদ টিভি, দেশ-বিদেশের সংবাদমাধ্যম ইত্যাদি থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। আর বিভিন্ন সাহিত্যে নিদর্শন প্রধানমন্ত্রীদের চিঠিপত্র, ব্যক্তিগত ব্যবহারসামগ্রী, উপহার, বিভিন্ন সম্মাননা, মুদ্রা ইত্যাদি তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়া এখানে ডিসপ্লে বোর্ডে নানা তথ্য প্রদর্শনী আছে। হলোগ্রাম মাল্টিমিডিয়া সংগ্রহ সংঘটিতে মোট ৪৩টি প্রদর্শনশালা আছে। অসম্ভব সুন্দর একটা সংগ্রহশালা। বাইরে বেরিয়ে দেখি বেলা ডুবে যাচ্ছে। আমাদের অল্প সময়ের মধ্যেই বের হতে হবে, বিওআইডির ব্যানার দিয়ে গ্রুপ ছবি তোলা হলো। মেইন গেটের কাছে আসতেই দেখি খোলা মাঠে ময়ূর হাঁটছে, আশপাশে গাছগুলোতে অনেক ময়ূর। এত কাছ থেকে আগে কখনো ময়ূর দেখিনি। কী সুন্দর দেখতে!
সবাই আস্তে আস্তে বাসে উঠতে লাগলেন। আমাদের আজকের শেষ গন্তব্য হোটেল সুরিয়া। বাসে বসেই বিকেলের নাশতা করা হলো। সন্ধ্যায় দিল্লিতে ভালোই ট্রাফিক থাকে। আবার শুরু হলো গানের পালা। সাহস ভাই গান ধরেন, বাকিরা সঙ্গে সুর মেলাচ্ছেন। আমি কাচঘেরা জানালা দিয়ে দেখছি অচেনা এক নতুন শহরের রঙিন সব বাতি। প্রায় দুই ঘণ্টা পর আমরা পৌঁছে গেলাম ফ্রেন্ড কলোনি হোটেল সুরিয়াতে। হোটেলের কর্মকর্তা আমাদের সাদরে আমন্ত্রণ জানালেন। সবাই মিলে লবিতে বসলাম। বিশাল বড় একটা হলরুম। হোটেল কর্তৃপক্ষ আর ভারতীয় হাইকমিশনের কর্মকর্তারা আমাদের সেবাদানে মহাব্যস্ত।
পাশেই ছিল ডিনারের আয়োজন। গোলটেবিলে বসে একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হতে লাগলাম, একটা অন্য রকম আমেজ কাজ করছিল। ডিনারে বিশাল আয়োজন, নাম না-জানা অনেক খাবার। লাইন ধরে আস্তে আস্তে খাবার নেওয়া শুরু করলাম। খাবারের স্বাদ অনেক ভিন্ন, আমাদের বাঙালি স্বাদ একদমই নেই। নাহ্! খাবার খেয়ে তৃপ্তি পাওয়া যাচ্ছে না। একটা ভেজিটেবল সুপ ছিল, বেশ ভালো খেতে। দুই বাটি খাওয়া হলো, এনার্জি স্টোর করার জন্য যথেষ্ট।
খানিক বাদে ব্রিফিং দেওয়া হচ্ছে কে কোন রুমে। এক রুমে দুজন নাম ডেকে সামনে নেওয়া হচ্ছে, সঙ্গে রুমের কি কার্ড দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমার সঙ্গে রুমমেট আশা আপু। সুর্মির সঙ্গে মুক্তা, সুর্মি আমার সঙ্গে থাকতে চায়, মুক্তা আবার তার বান্ধবী ইফফাতের সঙ্গে থাকতে চায়। এখন দেখা যাচ্ছে তিন রুমে মোট ছয়জন পরিবর্তন করতে হচ্ছে। বিষয়টা কোনোভাবেই অথরিটিকে জানানো যাবে না। ছয়জনের সঙ্গে নানা আলোচনা করার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো একজন করে চেঞ্জ করব। অবশেষে আমি আর সুর্মি এক রুম। ইফফাত আর মুক্তা এক রুমে যাবে। দুজন অন্য রুমে। দীর্ঘ এক ঘণ্টা সময় লাগল এই সিদ্ধান্ত নিতে। নানাভাবে কনভেন্স করতে হলো, এমন সমস্যা আরও অনেকেরই হচ্ছিল। রুমটা মূলত সিরিয়াল নাম্বার অনুযায়ী দেওয়া হচ্ছিল। অবশেষে রুমের ভেতরে যাওয়া গেল। বেশ পরিপাটি একটা রুম, টিভি দেখা, চা-কফি খাওয়া, ঠান্ডা প্রায় সব ধরনের ব্যবস্থা আছে। জিনিসপত্র বের করে গোসল করে ফ্রেশ হতে হতে প্রায় ১২টা বেজে গেল। বাসায় মা আর ভাইয়ের সঙ্গে কথা বললাম। আগামীকাল সকালে আগ্রা যাওয়া হবে। অনেক দূরের পথ, সকাল সকাল ওঠা লাগবে, ক্লান্ত শরীর নরম বিছানায় এলিয়ে দিতেই ঘুমের সমুদ্রে তলিয়ে গেলাম...।
ক্রিং ক্রিং সকাল সাতটার অ্যালার্মে ঘুম ভাঙল। দ্রুত ফ্রেশ হয়ে রেডি হলাম। বিওআইডির টি-শার্ট পরা ম্যান্ডেটরি ছিল। এত সকালে খাওয়ার অভ্যাস না থাকায় শুধু তিনটা খেজুর খেয়ে সকালের নাশতা শেষ করলাম। ইতিমধ্যে ফোন এল গাড়ি চলে এসেছে, ড্রাইভার নিচে অপেক্ষা করছেন। রুমমেটদের বিদায় জানিয়ে বের হয়ে গেলাম। নির্ঝর ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে বিমানবন্দর পৌঁছাতে মাত্র ১৫ মিনিট সময় লেগেছে। সকাল সকাল রাস্তা একদম খালি ছিল। ২ নম্বর গেটে ঢোকার সময় দেখা হলো ত্রিদিব দাদার সঙ্গে। উনি ইন্ডিয়া হাইকমিশনের একজন কর্মকর্তা। সঙ্গে ছিলেন নাম না-জানা আরও দুজন বিওআইডি মেম্বার। ভেতরে ঢুকে চোখে পড়ল সাদা আর ব্লু কম্বিনেশন টি-শার্ট পরিহিত একঝাঁক তরুণ।
অনেকে চলে এসেছেন। কিছু সময় বাদে আমাদের গ্রুপলিডার রুদ্র দাদা হাতে একটা লিস্ট ধরিয়ে বললেন, গ্রুপের পাঁচজন একসঙ্গে গিয়ে বোর্ডিং পাস নেবেন, যার দায়িত্ব দেওয়া হলো আমাকে। ইতিমধ্যে তিনজন গ্রুপ মেম্বার চলে এসেছেন, বাকি আরও দুজন। বসে অপেক্ষা করছিলাম আর উত্তম কুমার দাদার সঙ্গে পরিচয়পর্ব শেষ করলাম।। মাথায় ঝাঁকড়া চুল, মঞ্চনাটক করেন। সিলেট জেলায় বেশ সুনাম আছে তাঁর। আরও পরিচিত হলাম তারকা সমতুল্য সজল দাদার সঙ্গে। তিনি নিউজ ২৪ টেলিভিশনে কাজ করেন। বেশ হাস্যরসাত্মক একজন মানুষ। পাশাপাশি ব্লগ করেন, ১০০ জন ডেলিগেটের মধ্যে অনেকেই দেখলাম ব্লগ করেন।
দেখা হলো সুর্মি আর নন্দিতার সঙ্গে। এই দুজন আমার সঙ্গে শুরু থেকেই আছে। সবার সঙ্গে কথা বলে সময় পার করছিলাম। চারজন মেম্বার চলে এসেছেন, বাকি রইল নম্রতা বর্মন দিদি। উনার জন্য এখন অপেক্ষা। বাকি গ্রুপের সবাই আস্তে আস্তে বোর্ডিং পাস নিয়ে ইমিগ্রেশন করছেন। পরিচিত হলাম সৌমিত্র দাদার সঙ্গে, তিনি একজন সরকারি কর্মকর্তা, নানা দেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা শেয়ার করলেন। বেশ ভালো একজন মানুষ। এর সঙ্গে বিমানে জানালার পাশে সিট পাওয়ার একটা বিশেষ টেকনিক শিখিয়ে দিলেন। ১০টা বাজার অনেক পরে এলেন নম্রতা বর্মন দিদি। ওনাকে অনেকবার ফোন করা হয়েছে কিন্তু ফোন রিসিভ করলেন না। ভাবছিলাম হয়তো ফ্লাইট মিস করবেন কি না। অবশেষে পাঁচজন গেলাম বোর্ডিং পাস নিতে। সৌমিত্র দাদা শিখিয়ে দিয়েছিলেন বোর্ডিং পাস নেওয়ার সময় বলবে, তোমার প্রথম বিমান ভ্রমণ, যেন জানালার পাশে সিট দেয়। অফিসারকে বলার পর উনি বলেন, দুঃখিত, ইতিমধ্যে সব সিট বুক হয়ে গেছে, আরও আগে এলে দেওয়া যেত।
মনটা ভিশন খারাপ হয়ে গেল, আর দিদির ওপর অনেক রাগ লাগছিল। উনি লেট করে না এলে আমি জানালার পাশে সিটটা পেতাম। ইমিগ্রেশন সেন্টারে গিয়ে লাইনে দাঁড়ালাম। অনেক লম্বা লাইন, একাধিক ফ্লাইটের মানুষ একসঙ্গে। অনেক সময় বাদে আমার পালা এল, ইমিগ্রেশন অফিসারকে পাসপোর্টটা এগিয়ে দিলাম। উনি ছোট ছোট কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করছিলেন, সবশেষে একটা সিল বসিয়ে দিলেন। এই দৃশ্যটা আমি অনেক সিনেমার আর শর্ট ভিডিওতে দেখেছি। আজ নিজেই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হলাম, অন্য রকম এক ভালো লাগার অনুভূতি। সামনে এগিয়ে গেলাম, আশপাশে সব বিওআইডি মেম্বার। ওই পাশে দেখা যাচ্ছে বড় বড় বিমান। এত কাছ থেকে আগে কখনো বিমান দেখিনি। বিমানবন্দরের ভেতরে আসা হয়নি। সবাই ফটোসেশনে অংশ নিচ্ছেন, সিঙ্গেল ছবি, গ্রুপ ছবি নানা ভঙ্গিতে ছবি তুলছেন। আমিও কিছু তুলেছি। শেষবার মাকে ফোন দিয়ে দোয়া ও বিদায় নিলাম। ফ্লাইটের টাইম হয়ে গেছে, সবাই লাইন ধরে নিচে নামতে থাকলাম। আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল কতগুলো বাস, সেই বাস একদম বিমানের সামনে গিয়ে থামল। টার্মিনাল থেকে বিমান অনেক দূরে থাকে, বৃষ্টি হয়েছিল, পানি জমে আছে। বাস থেকে নেমে সবাই সিঁড়ি ধরে বিমানে উঠছে। প্রথমবার বিমানে উঠছি, অন্য রকম অনুভূতি। জানি না বাকিদের কেমন লাগছে। আস্তে আস্তে সামনে এগিয়ে নাম্বার দেখে সিট খুঁজে বের করলাম। আমি সুর্মি আর সুপ্তা আপু একসঙ্গে বসলাম। সুপ্তা আপু বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়। বাংলাদেশের এক রত্ন। সবাই সিটে বসার পর এয়ার হোস্ট কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিলেন। বিমানজুড়ে শুধু বিওআইডি মেম্বারদের দেখা যাচ্ছে, ফাঁকে ফাঁকে অন্য যাত্রী। বিমানের ভেতরে এক অন্য রকম উৎসবমুখর পরিবেশ। ১০০ জন একসঙ্গে থাকলে এমনই হওয়ার কথা। অনেক সময় পর বিমান রানওয়েতে এল। হঠাৎ করে সম্পূর্ণ বিমান কেঁপে উঠল আর প্রচণ্ড গতিতে সামনে যেতে লাগল। সবাই পেছনের দিকে ঝুঁকে সিটের সঙ্গে চুম্বকের মতো লেগে আছে। আমি ছোট জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি। মুহূর্তে বিমান বাতাসে ভাসছে, উত্তরার বড় বড় বিল্ডিং ক্রমেই ছোট হয়ে যাচ্ছে। সাদা তুলার মতো মেঘ দেখা যাচ্ছে। আমি ভীষণ এক্সাইটেড ছিলাম। সুপ্তা আপু আমার এক্সাইটেড দেখে বললেন, ‘তুমি কি জানালার পাশে বসবা?’ আমি বললাম, জি আপু, আমার প্রথম বিমান ভ্রমণ। আপু বললেন, ঠিক আছে বিমান পুরোপুরি ওপরে উঠুক, যখন সিটবেল খুলতে বলবে তখন এসো। আমি তখন অনেক খুশি হয়ে পড়েছিলাম। উনার হাতে দুইটা পাসপোর্ট, কত দেশ-বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। বিমান পুরোপুরি ওপরে ওঠার পর আমাকে জানালার পাশে বসতে দিলেন।
আকাশটা গাঢ় নীল, এখন আর কোনো বিল্ডিং দেখা যাচ্ছে না, নিচে বড় বড় মেঘের পাহাড় দেখা যাচ্ছে। জানালার ফাঁক দিয়ে সূর্যটা চোখে পড়ছিল, প্রচণ্ড তাপ। ইতিমধ্যে জানালার গ্লাসটা গরম হয়ে গেছে। আমার জায়গাটা ছিল ঠিক উইংসের ওপর। তাকিয়ে থেকে বিমানের মেকানিজমটা চিন্তা করছিলাম।
কোনোভাবে মাথায় ঢুকছিল না। সামনে, পেছনে, পাশে সব আমাদের বিওআইডি ডেলিগেটস। তাদের সঙ্গে গল্প করছিলাম, সবাই সবার সঙ্গে সেলফি তুলছেন, বিমানের ভেতরটা সত্যিই বেশ আমেজ লাগছিল। সবাইকে একটা ওয়েলকাম ড্রিংকস দিল, প্রায় ১০ মিনিট পর দুপুরের খাবার সার্ভ করল। আমরা তিনজন একজন আরেকজনের সঙ্গে গল্প করছিলাম। লাঞ্চ আইটেমটা একটু ভিন্ন ভিন্ন ছিল। প্রায় ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট পর দিল্লিতে পৌঁছে গেলাম। দিল্লি ইন্দিরা গান্ধী ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট বেশ বড় আর সুন্দর। সবাই লাইন ধরে ইমিগ্রেশন সেন্টারে দাঁড়িয়ে আছি। ইংরেজি আর হিন্দি মিলে ইমিগ্রেশন অফিসারের প্রশ্নের উত্তর দিলাম। এয়ারপোর্টের বাইরে আমাদের জন্য ইন্ডিয়া হাইকমিশনের কর্মকর্তারা অপেক্ষা করছেন, সবাইকে গোলাপ ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হচ্ছিল। বেশ সুন্দর একটা অনুভূতি। পাঁচটা গ্রুপের জন্য তিনটা এসি বাস দেওয়া হয়েছে, গ্রুপ অনুযায়ী বাসে ওঠা হলো। আমি আর সুর্মি এক নাম্বার বাসে। বাসে করে বিমানবন্দর থেকে রওনা হলাম। চারপাশটা অনেক সুন্দর। রাস্তাগুলো বেশ পরিচ্ছন্ন আর চওড়া। বাসের ভেতরে সবাই অনেক আনন্দ-উল্লাস করছেন, বিনয় দাদা আর সাহস ভাই দুজনে গান ধরেছেন। বাকিরা সবাই সুর দিচ্ছেন। গানে গানে মুখরিত বাস। আমাদের সঙ্গে যুক্ত হলেন ইন্ডিয়া হাইকমিশনারের এক দাদা। তিনিও গান গাইছিলেন, বাংলা না বোঝার জন্য শুধু হিন্দি গানের সঙ্গে সুর দিচ্ছেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর আমরা পৌঁছে গেলাম প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহশালায়।
এটা জাদুঘর বলতে পারেন। পুরোনো ভবনের পাশে উঠেছে নতুন ভবন। ভেতরটা খুবই সুন্দর আলোকসজ্জায় সাজানো হয়েছে। ভারত ইতিহাসের বেশ কিছু নিদর্শন ছবি, ভিডিও, প্রত্যেক প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ছবি দিয়ে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। আরও আছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ছবি। বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের ছবি। অনেকটা আমাদের বাংলাদেশের স্বাধীনতা আর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের মতো। দিল্লির তিন মূর্তি ভবন আগে, যা নেহরু মেমোরিয়াল মিউজিয়াম নামে পরিচিত ছিল কিন্তু এখন নাম পরিবর্তন করে প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহশালা নামে পরিচিত। এখন পর্যন্ত ভারতের সব প্রধানমন্ত্রীর জীবন দর্শন তুলে ধরা হয়েছে এ সংগ্রহশালায়। সংগ্রহশালাটি প্রায় ১০ হাজার বর্গমিটার জমিতে নির্মিত, যা নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৭১ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে অনুমোদিত হয়ে চার বছরের মধ্যে নির্মিত হয়েছে। গত ১৪ এপ্রিল উদ্বোধন করেন নরেন্দ্র মোদি, যা ভারতে সংবিধান ও প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহশালা স্থান পেয়েছে। এই সংগ্রহশালা প্রধানমন্ত্রীদের জীবন ও অবদানের মাধ্যমে স্বাধীনতা-পরবর্তী ভারতের গল্প বলবে—তরুণ প্রজন্মকে নেতৃত্বদান, দেশ গড়ার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং প্রত্যেক প্রধানমন্ত্রীর সাফল্যের কথা সবাইকে জানানোর জন্য। সংগ্রহশালা বিভিন্ন তথ্য প্রসার ভারতী দূরদর্শন, ফিল্ম মিডিয়া, সংসদ টিভি, দেশ-বিদেশের সংবাদমাধ্যম ইত্যাদি থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। আর বিভিন্ন সাহিত্যে নিদর্শন প্রধানমন্ত্রীদের চিঠিপত্র, ব্যক্তিগত ব্যবহারসামগ্রী, উপহার, বিভিন্ন সম্মাননা, মুদ্রা ইত্যাদি তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়া এখানে ডিসপ্লে বোর্ডে নানা তথ্য প্রদর্শনী আছে। হলোগ্রাম মাল্টিমিডিয়া সংগ্রহ সংঘটিতে মোট ৪৩টি প্রদর্শনশালা আছে। অসম্ভব সুন্দর একটা সংগ্রহশালা। বাইরে বেরিয়ে দেখি বেলা ডুবে যাচ্ছে। আমাদের অল্প সময়ের মধ্যেই বের হতে হবে, বিওআইডির ব্যানার দিয়ে গ্রুপ ছবি তোলা হলো। মেইন গেটের কাছে আসতেই দেখি খোলা মাঠে ময়ূর হাঁটছে, আশপাশে গাছগুলোতে অনেক ময়ূর। এত কাছ থেকে আগে কখনো ময়ূর দেখিনি। কী সুন্দর দেখতে!
সবাই আস্তে আস্তে বাসে উঠতে লাগলেন। আমাদের আজকের শেষ গন্তব্য হোটেল সুরিয়া। বাসে বসেই বিকেলের নাশতা করা হলো। সন্ধ্যায় দিল্লিতে ভালোই ট্রাফিক থাকে। আবার শুরু হলো গানের পালা। সাহস ভাই গান ধরেন, বাকিরা সঙ্গে সুর মেলাচ্ছেন। আমি কাচঘেরা জানালা দিয়ে দেখছি অচেনা এক নতুন শহরের রঙিন সব বাতি। প্রায় দুই ঘণ্টা পর আমরা পৌঁছে গেলাম ফ্রেন্ড কলোনি হোটেল সুরিয়াতে। হোটেলের কর্মকর্তা আমাদের সাদরে আমন্ত্রণ জানালেন। সবাই মিলে লবিতে বসলাম। বিশাল বড় একটা হলরুম। হোটেল কর্তৃপক্ষ আর ভারতীয় হাইকমিশনের কর্মকর্তারা আমাদের সেবাদানে মহাব্যস্ত।
পাশেই ছিল ডিনারের আয়োজন। গোলটেবিলে বসে একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হতে লাগলাম, একটা অন্য রকম আমেজ কাজ করছিল। ডিনারে বিশাল আয়োজন, নাম না-জানা অনেক খাবার। লাইন ধরে আস্তে আস্তে খাবার নেওয়া শুরু করলাম। খাবারের স্বাদ অনেক ভিন্ন, আমাদের বাঙালি স্বাদ একদমই নেই। নাহ্! খাবার খেয়ে তৃপ্তি পাওয়া যাচ্ছে না। একটা ভেজিটেবল সুপ ছিল, বেশ ভালো খেতে। দুই বাটি খাওয়া হলো, এনার্জি স্টোর করার জন্য যথেষ্ট।
খানিক বাদে ব্রিফিং দেওয়া হচ্ছে কে কোন রুমে। এক রুমে দুজন নাম ডেকে সামনে নেওয়া হচ্ছে, সঙ্গে রুমের কি কার্ড দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমার সঙ্গে রুমমেট আশা আপু। সুর্মির সঙ্গে মুক্তা, সুর্মি আমার সঙ্গে থাকতে চায়, মুক্তা আবার তার বান্ধবী ইফফাতের সঙ্গে থাকতে চায়। এখন দেখা যাচ্ছে তিন রুমে মোট ছয়জন পরিবর্তন করতে হচ্ছে। বিষয়টা কোনোভাবেই অথরিটিকে জানানো যাবে না। ছয়জনের সঙ্গে নানা আলোচনা করার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো একজন করে চেঞ্জ করব। অবশেষে আমি আর সুর্মি এক রুম। ইফফাত আর মুক্তা এক রুমে যাবে। দুজন অন্য রুমে। দীর্ঘ এক ঘণ্টা সময় লাগল এই সিদ্ধান্ত নিতে। নানাভাবে কনভেন্স করতে হলো, এমন সমস্যা আরও অনেকেরই হচ্ছিল। রুমটা মূলত সিরিয়াল নাম্বার অনুযায়ী দেওয়া হচ্ছিল। অবশেষে রুমের ভেতরে যাওয়া গেল। বেশ পরিপাটি একটা রুম, টিভি দেখা, চা-কফি খাওয়া, ঠান্ডা প্রায় সব ধরনের ব্যবস্থা আছে। জিনিসপত্র বের করে গোসল করে ফ্রেশ হতে হতে প্রায় ১২টা বেজে গেল। বাসায় মা আর ভাইয়ের সঙ্গে কথা বললাম। আগামীকাল সকালে আগ্রা যাওয়া হবে। অনেক দূরের পথ, সকাল সকাল ওঠা লাগবে, ক্লান্ত শরীর নরম বিছানায় এলিয়ে দিতেই ঘুমের সমুদ্রে তলিয়ে গেলাম...।
আকাশি রঙের বাড়ি। দোতলায় দুটি কক্ষে আলো জ্বলছে। সন্ধ্যার আবছা আঁধারে ছেয়ে আছে বাড়িটির চারদিকের গাছগুলো। সন্ধ্যার নীল আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে পেঁজা তুলোর মতো মেঘ। বাড়ির সামনে ল্যাম্পপোস্টের আলোয় জলাশয়ে প্রকৃতির এই মোহনীয় ছবি প্রতিফলিত হয়েছে।
৩ দিন আগেচারুশিল্প হচ্ছে মানুষের অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যম। একটি ছবি একটি বিপ্লবের উন্মেষ ঘটাতে পারে। ছবি শুধু বিনোদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি বিপ্লবের বার্তাও নিয়ে আসে।
১৪ দিন আগেআপনি যে বয়সেরই হোন না কেন, এই বই পড়লে তারুণ্যশক্তিকে অনুভব করবেন, অনুপ্রাণিত হবেন। নতুন শুরুর একটা তাগিদ পাবেন। এই তরুণদের প্রত্যেকের মতো আপনিও বলে উঠবেন—সব সম্ভব! এই বইয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে জন্ম নেওয়া অবহেলিত অবস্থা থেকে সাফল্যের শীর্ষে যাওয়ার পথচলার গল্প উঠে এসেছে। প্রায় চার শ পৃষ্ঠার বইটির দাম
২১ দিন আগেপ্রকাশনা সংস্থা ‘ঐতিহ্য’ তার দুই যুগের পথচলা (২০০০-২০২৪) স্মরণীয় করে রাখতে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে দশ দিনব্যাপী ‘ঐতিহ্য বই উৎসব ২০২৪’ আয়োজন করেছে। আজ ২ নভেম্বর শনিবার বেলা ১১টায় যৌথভাবে উৎসব উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বিশিষ্ট লেখক-গবেষক শারমিন আহমদ এবং তরুণ
২১ দিন আগে