স্বকৃত নোমান
কোনো কোনো মানুষ কর্মগুণে হয়ে ওঠেন ইতিহাসের অনিবার্য অংশ। ইতিহাস থেকে কোনোভাবেই তাঁকে বিযুক্ত করা যায় না। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন তেমনই এক ব্যক্তিত্ব, যিনি অর্থনীতির পাশাপাশি শিক্ষা, সমাজ, গবেষণাসহ বহুমুখী কর্মযজ্ঞে সারা জীবন নিজেকে ব্যাপৃত রেখে হয়ে উঠেছেন ইতিহাসের অংশ। বাংলা-ভারতীয় নবজাগরণের পথিকৃৎ হিসেবে যদি আমরা রাজা রামমোহন, বিদ্যাসাগর, বঙ্কিমচন্দ্র, মাইকেল, রবীন্দ্রনাথ প্রমুখকে ধরি, তবে অমর্ত্য সেন তাঁদেরই উত্তরাধিকারী, যিনি বাঙালির জাগরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন এবং কর্মগুণে বাংলা ও বাঙালিকে বিশ্বদরবারে করেছেন মহিমান্বিত।
সম্প্রতি কলকাতার আনন্দ পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত হয়েছে অমর্ত্য সেনের আত্মকথা ‘জগৎ কুটির’। রয়েল সাইজের পাঁচ শ পৃষ্ঠার বইটি আমি সংগ্রহ করেছিলাম অমর্ত্য সেন তো বটেই, পাশাপাশি তাঁর মাতামহ ক্ষীতিমোহন সেনের প্রতি কৌতূহলবশত। বিশিষ্ট গবেষক, চিন্তক ক্ষীতিমোহন সেন বাংলা-ভারতীয় লোকায়ত সাহিত্য-সংস্কৃতিকে খুব গভীরভাবে ধরতে পেরেছিলেন। তাঁর জ্ঞানশক্তিকে যথার্থরূপে চিহ্নিত করতে পেরেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সে কারণেই তাঁকে তিনি নিয়ে এসেছিলেন শান্তিনিকেতনের শিক্ষক হিসেবে। বইটি পড়ে নিরাশ হইনি। জেনেছি ক্ষীতিমোহন সম্পর্কে জানা-অজানা অনেক কথা।
বাংলাদেশের পাঠকদের জন্য বইটি গুরুত্বপূর্ণ এ কারণে যে অমর্ত্য সেনের সঙ্গে রয়েছে বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। তাঁর বাবা আশুতোষ সেন ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিস্ট্রির শিক্ষক এবং পিতামহ সারদাপ্রসাদ সেন ছিলেন ঢাকা আদালতের একজন বিচারক। পুরান ঢাকার যে বাড়িটিতে তাঁরা থাকতেন, সেই বাড়ির নাম ছিল ‘জগৎ কুটির’। সেই বাড়ির নামেই অমর্ত্য সেন তাঁর আত্মকথা গ্রন্থের নামকরণ করেছেন, যার ইংরেজি নাম ‘হোম ইন দ্য ওয়ার্ল্ড’। মূলত তিনি ইংরেজিতে লিখেছেন। বাংলায় অনুবাদ করেছেন ১৭ জন অনুবাদক। অনুবাদ এতই অনবদ্য যে পড়ার সময় মনেই হয় না এটি কোনো অনূদিত গ্রন্থ। মনে হয় খোদ অমর্ত্য সেন বাংলাতেই লিখেছেন বইটি।
ব্যক্তিজীবনে অমর্ত্য সেন একজন মুক্তমনা, প্রগতিশীল মানুষ। জগৎ-জীবনকে তিনি দেখেছেন উদার ও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে। জীবনকে ব্যাপৃত রেখেছেন মানবতার কল্যাণে। তাঁর জন্ম মাতুলালয় শান্তিনিকেতনে হলেও জীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন ভারতবর্ষের বাইরে। বিশ্বের নানা দেশ ও জ্ঞানের সংস্পর্শে এসে নিজেকে করে তুলেছেন প্রাজ্ঞ, যশস্বী, পরিশীলিত ও আধুনিক বিশ্বমানবে। কিন্তু ভুলে যাননি শেকড়কে, জাতিগত পরিচয়কে। জগৎ কুটিরে তিনি লিখেছেন, ‘বাঙালি পরিচয় আমার কাছে বরাবর গুরুত্বপূর্ণ। তার জন্য সেই পরিচিতির বোধকে কখনো পেশা, রাজনীতি, জাতি এবং সকলের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া মানবতার মতো অন্যান্য সম্বন্ধকে মুছে দেওয়ার মতো আগ্রাসী হতে হয়নি।’
জাতিগত পরিচয় তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ বলেই ‘জগৎ কুটির’-এর প্রায় পৌনে তিন শ পৃষ্ঠাব্যাপী তিনি বাঙালি, বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে লিখেছেন। ব্যক্তিগত স্মৃতিকথার ফাঁকে ফাঁকে তিনি ঢুকে পড়েছেন বাংলা-ভারতের ইতিহাসের গভীরে। ইতিহাসের প্রচলিত অনেক বিষয়কে বিশ্লেষণ করেছেন নিজস্ব দৃষ্টিকোণ থেকে। পিতা, পিতামহ, মাতা, মাতামহ, ভাই, বোন ও বন্ধুবান্ধবদের কথা যেমন লিখেছেন, তেমনি লিখেছেন শৈশবের মান্দালয়ের কথা। মিয়ানমারের মান্দালয়, বাবার চাকরিসূত্রে যেখানে কেটেছে তাঁর শৈশবের বেশ কয়েক বছর। লিখেছেন শৈশবে দেখা বার্মা তথা বর্তমান মিয়ানমারের কথা। সমালোচনা করেছেন মিয়ানমার জান্তা সরকারের কর্মকাণ্ড। নোবেলজয়ী অং সান সু চির প্রশংসা যেমন করেছেন, তেমনি করেছেন রোহিঙ্গা প্রশ্নে তাঁর অবস্থানের নিন্দাও। বাদ যায়নি বাংলাদেশের প্রসঙ্গ। তৎকালীন ঢাকা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে লিখেছেন। গুরুত্বপূর্ণ মূল্যায়ন করেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে। ভারতে মোগল শাসন, ব্রিটিশ শাসন, দেশভাগ, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, মন্বন্তরসহ নানা রাজনৈতিক ও সাহিত্য-সাংস্কৃতিক বিষয়ে বর্ণনা করেছেন নিজস্ব মতামত। তাঁর ছাত্রজীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময় কেটেছে কলকাতায়। বিস্তর সময় কাটিয়েছেন কলকাতার সাহিত্যিক-পরিমণ্ডলে। লিখেছেন সেই সময়ের বিদ্বজ্জন ও বন্ধুবান্ধবদের কথা।
আত্মকথাকে ইতিহাসে প্রক্ষিপ্ত করে অমর্ত্য সেন তাঁর ‘জগৎ কুটির’কে করে তুলেছেন গুরুত্বপূর্ণ। এই বই একজন অর্থনীতিবিদের আত্মজীবনী হলেও ইতিহাসবিদ ও সাহিত্যিকদের জন্যও প্রয়োজনীয়।
জগৎ কুটির
অমর্ত্য সেন
প্রকাশক: আনন্দ পাবলিশার্স লিমিটেড
দাম: ১২৭৫ টাকা
কোনো কোনো মানুষ কর্মগুণে হয়ে ওঠেন ইতিহাসের অনিবার্য অংশ। ইতিহাস থেকে কোনোভাবেই তাঁকে বিযুক্ত করা যায় না। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন তেমনই এক ব্যক্তিত্ব, যিনি অর্থনীতির পাশাপাশি শিক্ষা, সমাজ, গবেষণাসহ বহুমুখী কর্মযজ্ঞে সারা জীবন নিজেকে ব্যাপৃত রেখে হয়ে উঠেছেন ইতিহাসের অংশ। বাংলা-ভারতীয় নবজাগরণের পথিকৃৎ হিসেবে যদি আমরা রাজা রামমোহন, বিদ্যাসাগর, বঙ্কিমচন্দ্র, মাইকেল, রবীন্দ্রনাথ প্রমুখকে ধরি, তবে অমর্ত্য সেন তাঁদেরই উত্তরাধিকারী, যিনি বাঙালির জাগরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন এবং কর্মগুণে বাংলা ও বাঙালিকে বিশ্বদরবারে করেছেন মহিমান্বিত।
সম্প্রতি কলকাতার আনন্দ পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত হয়েছে অমর্ত্য সেনের আত্মকথা ‘জগৎ কুটির’। রয়েল সাইজের পাঁচ শ পৃষ্ঠার বইটি আমি সংগ্রহ করেছিলাম অমর্ত্য সেন তো বটেই, পাশাপাশি তাঁর মাতামহ ক্ষীতিমোহন সেনের প্রতি কৌতূহলবশত। বিশিষ্ট গবেষক, চিন্তক ক্ষীতিমোহন সেন বাংলা-ভারতীয় লোকায়ত সাহিত্য-সংস্কৃতিকে খুব গভীরভাবে ধরতে পেরেছিলেন। তাঁর জ্ঞানশক্তিকে যথার্থরূপে চিহ্নিত করতে পেরেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সে কারণেই তাঁকে তিনি নিয়ে এসেছিলেন শান্তিনিকেতনের শিক্ষক হিসেবে। বইটি পড়ে নিরাশ হইনি। জেনেছি ক্ষীতিমোহন সম্পর্কে জানা-অজানা অনেক কথা।
বাংলাদেশের পাঠকদের জন্য বইটি গুরুত্বপূর্ণ এ কারণে যে অমর্ত্য সেনের সঙ্গে রয়েছে বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। তাঁর বাবা আশুতোষ সেন ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিস্ট্রির শিক্ষক এবং পিতামহ সারদাপ্রসাদ সেন ছিলেন ঢাকা আদালতের একজন বিচারক। পুরান ঢাকার যে বাড়িটিতে তাঁরা থাকতেন, সেই বাড়ির নাম ছিল ‘জগৎ কুটির’। সেই বাড়ির নামেই অমর্ত্য সেন তাঁর আত্মকথা গ্রন্থের নামকরণ করেছেন, যার ইংরেজি নাম ‘হোম ইন দ্য ওয়ার্ল্ড’। মূলত তিনি ইংরেজিতে লিখেছেন। বাংলায় অনুবাদ করেছেন ১৭ জন অনুবাদক। অনুবাদ এতই অনবদ্য যে পড়ার সময় মনেই হয় না এটি কোনো অনূদিত গ্রন্থ। মনে হয় খোদ অমর্ত্য সেন বাংলাতেই লিখেছেন বইটি।
ব্যক্তিজীবনে অমর্ত্য সেন একজন মুক্তমনা, প্রগতিশীল মানুষ। জগৎ-জীবনকে তিনি দেখেছেন উদার ও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে। জীবনকে ব্যাপৃত রেখেছেন মানবতার কল্যাণে। তাঁর জন্ম মাতুলালয় শান্তিনিকেতনে হলেও জীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন ভারতবর্ষের বাইরে। বিশ্বের নানা দেশ ও জ্ঞানের সংস্পর্শে এসে নিজেকে করে তুলেছেন প্রাজ্ঞ, যশস্বী, পরিশীলিত ও আধুনিক বিশ্বমানবে। কিন্তু ভুলে যাননি শেকড়কে, জাতিগত পরিচয়কে। জগৎ কুটিরে তিনি লিখেছেন, ‘বাঙালি পরিচয় আমার কাছে বরাবর গুরুত্বপূর্ণ। তার জন্য সেই পরিচিতির বোধকে কখনো পেশা, রাজনীতি, জাতি এবং সকলের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া মানবতার মতো অন্যান্য সম্বন্ধকে মুছে দেওয়ার মতো আগ্রাসী হতে হয়নি।’
জাতিগত পরিচয় তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ বলেই ‘জগৎ কুটির’-এর প্রায় পৌনে তিন শ পৃষ্ঠাব্যাপী তিনি বাঙালি, বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে লিখেছেন। ব্যক্তিগত স্মৃতিকথার ফাঁকে ফাঁকে তিনি ঢুকে পড়েছেন বাংলা-ভারতের ইতিহাসের গভীরে। ইতিহাসের প্রচলিত অনেক বিষয়কে বিশ্লেষণ করেছেন নিজস্ব দৃষ্টিকোণ থেকে। পিতা, পিতামহ, মাতা, মাতামহ, ভাই, বোন ও বন্ধুবান্ধবদের কথা যেমন লিখেছেন, তেমনি লিখেছেন শৈশবের মান্দালয়ের কথা। মিয়ানমারের মান্দালয়, বাবার চাকরিসূত্রে যেখানে কেটেছে তাঁর শৈশবের বেশ কয়েক বছর। লিখেছেন শৈশবে দেখা বার্মা তথা বর্তমান মিয়ানমারের কথা। সমালোচনা করেছেন মিয়ানমার জান্তা সরকারের কর্মকাণ্ড। নোবেলজয়ী অং সান সু চির প্রশংসা যেমন করেছেন, তেমনি করেছেন রোহিঙ্গা প্রশ্নে তাঁর অবস্থানের নিন্দাও। বাদ যায়নি বাংলাদেশের প্রসঙ্গ। তৎকালীন ঢাকা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে লিখেছেন। গুরুত্বপূর্ণ মূল্যায়ন করেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে। ভারতে মোগল শাসন, ব্রিটিশ শাসন, দেশভাগ, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, মন্বন্তরসহ নানা রাজনৈতিক ও সাহিত্য-সাংস্কৃতিক বিষয়ে বর্ণনা করেছেন নিজস্ব মতামত। তাঁর ছাত্রজীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময় কেটেছে কলকাতায়। বিস্তর সময় কাটিয়েছেন কলকাতার সাহিত্যিক-পরিমণ্ডলে। লিখেছেন সেই সময়ের বিদ্বজ্জন ও বন্ধুবান্ধবদের কথা।
আত্মকথাকে ইতিহাসে প্রক্ষিপ্ত করে অমর্ত্য সেন তাঁর ‘জগৎ কুটির’কে করে তুলেছেন গুরুত্বপূর্ণ। এই বই একজন অর্থনীতিবিদের আত্মজীবনী হলেও ইতিহাসবিদ ও সাহিত্যিকদের জন্যও প্রয়োজনীয়।
জগৎ কুটির
অমর্ত্য সেন
প্রকাশক: আনন্দ পাবলিশার্স লিমিটেড
দাম: ১২৭৫ টাকা
মৃত্তিকাবিজ্ঞানী অধ্যাপক আলমগীর হাইয়ের প্রথম একক চিত্র প্রদর্শনীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। শনিবার (১২ এপ্রিল) বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা, ৫ নম্বর গ্যালারিতে চিত্র প্রদর্শনী শুরু হয়।
১৬ ঘণ্টা আগেজর্জ দুহামেল ১৮৮৪ সালের ৩০ জুন প্যারিসের জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পরিবার আর্থিকভাবে খুব একটা সচ্ছল ছিল না। তিনি ছিলেন তৃতীয় সন্তান। সব মিলিয়ে তাঁর শৈশব-কৈশোরের স্মৃতি খুব একটা সুখকর নয়; যা তাঁর আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস লে নতেয়্যাখ দু হ্যাভখ (Le Notaire du Havre) এ ফুটে ওঠে।
২১ ঘণ্টা আগেলাতিন আমেরিকার বিখ্যাত ঔপন্যাসিক গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের জন্মদিন আজ। ১৯২৭ সালের আজকের এই দিনে, অর্থাৎ ৬ মার্চ দক্ষিণ আমেরিকার দেশ কলম্বিয়ার অ্যারাকাতাকা শহরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। মার্কেজ তাঁর লেখায় ‘নিঃসঙ্গতা’ ফুটিয়ে তোলার জন্য বিখ্যাত।
০৬ মার্চ ২০২৫আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন উপলক্ষে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত হয়েছে ইউনেস্কো বই প্রদর্শনী-২০২৫। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এই প্রদর্শনী হয়।
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫