বিভুরঞ্জন সরকার
একটি জনপ্রিয় গানের প্রথম কলি হলো ‘ভবের নাট্যশালায় মানুষ চেনা দায় রে…’। সত্যি, মানুষ চেনা খুব সহজ কাজ নয়। যাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ মেলামেশা, তাদেরই কি ঠিকমতো চেনা যায়? কিন্তু সমাজ-সংসার থেকে যাদের বসবাস দূরে, মাটির ওপর ঘর না বেঁধে যারা জলে ভেসে বাস করে নৌকায়, আমাদের দেশের তেমন এক প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনাচার ও মুখের ভাষা নিয়ে অসাধারণ একটি বই লিখেছেন হাবিবুর রহমান।
হাবিবুর রহমান পুলিশের একজন কর্মকর্তা। পুলিশের লেখা বই? মনে হতে পারে, সন্ত্রাসী বা জাত ক্রিমিনালদের নিয়ে কোনো শ্বাসরুদ্ধকর কাহিনির বর্ণনা আছে বইটিতে। কিন্তু না, পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়েই পুলিশ কর্মকর্তা হাবিবুর রহমানের যোগাযোগ হয় বেদে সম্প্রদায়ের সঙ্গে। তারপর মেলামেশা এবং পরিণতিতে এই সম্প্রদায়ের মানুষের ভাষা, জীবনাচার নিয়ে গবেষক হয়ে ওঠা। ‘ঠার: বেদে জনগোষ্ঠীর ভাষা’ নামের ৩৬৮ পৃষ্ঠার এই বইটি পড়তে বসলে পাঠক আগ্রহী হয়ে উঠবেন এবং একসময় বইটিকে আর বেশি বড় বলে মনে হবে না।
‘ঠার’ শব্দটির বাংলা অর্থ ইশারা, সংকেত বা ইঙ্গিত। কিন্তু ঠার যে বেদে সম্প্রদায়ের ভাষা, সেটা আমাদের কতজনের জানা? শিঙ্গা লাগিয়ে সাপের খেলা দেখায়, দাঁতের পোকা বা বাতের ব্যথার ওষুধ বিক্রি করে জীবন বাঁচায়, এর বাইরে বেদে সম্প্রদায় সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই হয়তো তেমন ধারণা নেই।
আগে দেশের বিভিন্ন স্থানে, বিশেষ করে নদীতীরবর্তী এলাকায় বেদে সম্প্রদায়কে দেখা গেলেও দিন দিন তারা অদৃশ্য হয়ে পড়ছে। বেদেরা অস্পৃশ্য ও সুবিধাবঞ্চিত এক সম্প্রদায়।
বাংলা সাহিত্যে কোনো কোনো লেখকের গল্প-উপন্যাসে বেদে সম্প্রদায়ের কথা উঠে এসেছে। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্প-উপন্যাসে এই যাযাবর জনগোষ্ঠীর জীবনচিত্র কিছু কিছু উঠে এসেছে। এই মুহূর্তে মনে পড়ছে তাঁর ছোটগল্প ‘বেদেনী’র কথা।
‘বেদেনী’তে আছে: ‘বিচিত্র জাত বেদেরা। জাতি জিজ্ঞাসা করিলে বলে, বেদে। তবে ধর্মে ইসলাম। আচারে পুরা হিন্দু; মনসাপূজা করে, মঙ্গলচণ্ডী, ষষ্ঠীর ব্রত করে, কালী-দুর্গাকে ভূমিষ্ঠ হইয়া প্রণাম করে। হিন্দু পুরাণ-কথা ইহাদের কণ্ঠস্থ। বিবাহ আদানপ্রদান সমগ্রভাবে ইসলাম-ধর্ম সম্প্রদায়ের সঙ্গে হয় না, নিজেদের এই বিশিষ্ট সম্প্রদায়ের মধ্যেই আবদ্ধ। বিবাহ হয় মোল্লার নিকট ইসলামীয় পদ্ধতিতে, মরিলে পোড়ায় না, কবর দেয়।’
হাবিবুর রহমান বলছেন, ‘প্রচলিত সমাজব্যবস্থার পাশাপাশি থেকেও তারা (বেদেরা) এক ব্যতিক্রমী সমাজের উত্তরাধিকার, যা আমাদের অগোচরেই আজও বহন করে চলেছে।’
বেদেদের যাপিত জীবনের গল্প আমরা এটুকুই জানি, ভূমিহীন এই মানুষেরা দলবদ্ধভাবে নৌকায় বাস করে। এ জন্য তাদের জলের জিপসিও বলা হয়। সাপের খেলা দেখানোর জন্যই এরা বেশি জনপ্রিয়। বেদেদের বাদিয়া, বাইদ্যা বা বইদ্যানি নামেও ডাকা হয়। এই নামগুলোর উৎপত্তি বৈদ্য (চিকিৎসক) থেকে।
প্রাচীনকাল থেকেই বেদেরা কবিরাজি, ঝাড়ফুঁকসহ বিভিন্ন হাতুড়ে চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত। অনেকে অবশ্য দাবি করেন, বেদে শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে বেদুইন থেকে। আরব বেদুইনদের বেদেরা পরিচয় দেয় নিজেদের পূর্বপুরুষ হিসেবে।
হাবিবুর রহমান বেদের সঙ্গে খোলা মন নিয়ে তাকিয়েছেন বলেই তাদের ভাষার বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন এবং রচনা করতে পেরেছেন ‘ঠার : বেদে জনগোষ্ঠীর ভাষা’ গ্রন্থটি। ভাষাবিজ্ঞানের সূত্র মেনেই তিনি শ্রমসাধ্য এই গবেষণাকাজটি শেষ করতে সক্ষম হয়েছেন। ঠার ভাষা নিয়ে তাঁর বইটি এক কথায় একটি অসাধারণ প্রকাশনা। যারা ভাষা, সমাজ, সংস্কৃতি, নৃবিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ে আগ্রহী, তাদের জন্য এটি সংগ্রহে রাখার মতো একটি বই।
ঠার ভাষায় আমাদের জাতীয় সংগীত সংযোজিত হওয়ায় বইটির গুরুত্ব বেড়েছে। যাঁরা ঠার ভাষা শিখতে চান, তাদের জন্য এই বই তো বিকল্পহীন। ‘ঝামার শিয়ের চেংলা, ঝামি তরে ঝালোবাসি’ যে আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি—জানার পর কি একটু পুলক অনুভব হয় না?
একটি জনপ্রিয় গানের প্রথম কলি হলো ‘ভবের নাট্যশালায় মানুষ চেনা দায় রে…’। সত্যি, মানুষ চেনা খুব সহজ কাজ নয়। যাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ মেলামেশা, তাদেরই কি ঠিকমতো চেনা যায়? কিন্তু সমাজ-সংসার থেকে যাদের বসবাস দূরে, মাটির ওপর ঘর না বেঁধে যারা জলে ভেসে বাস করে নৌকায়, আমাদের দেশের তেমন এক প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনাচার ও মুখের ভাষা নিয়ে অসাধারণ একটি বই লিখেছেন হাবিবুর রহমান।
হাবিবুর রহমান পুলিশের একজন কর্মকর্তা। পুলিশের লেখা বই? মনে হতে পারে, সন্ত্রাসী বা জাত ক্রিমিনালদের নিয়ে কোনো শ্বাসরুদ্ধকর কাহিনির বর্ণনা আছে বইটিতে। কিন্তু না, পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়েই পুলিশ কর্মকর্তা হাবিবুর রহমানের যোগাযোগ হয় বেদে সম্প্রদায়ের সঙ্গে। তারপর মেলামেশা এবং পরিণতিতে এই সম্প্রদায়ের মানুষের ভাষা, জীবনাচার নিয়ে গবেষক হয়ে ওঠা। ‘ঠার: বেদে জনগোষ্ঠীর ভাষা’ নামের ৩৬৮ পৃষ্ঠার এই বইটি পড়তে বসলে পাঠক আগ্রহী হয়ে উঠবেন এবং একসময় বইটিকে আর বেশি বড় বলে মনে হবে না।
‘ঠার’ শব্দটির বাংলা অর্থ ইশারা, সংকেত বা ইঙ্গিত। কিন্তু ঠার যে বেদে সম্প্রদায়ের ভাষা, সেটা আমাদের কতজনের জানা? শিঙ্গা লাগিয়ে সাপের খেলা দেখায়, দাঁতের পোকা বা বাতের ব্যথার ওষুধ বিক্রি করে জীবন বাঁচায়, এর বাইরে বেদে সম্প্রদায় সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই হয়তো তেমন ধারণা নেই।
আগে দেশের বিভিন্ন স্থানে, বিশেষ করে নদীতীরবর্তী এলাকায় বেদে সম্প্রদায়কে দেখা গেলেও দিন দিন তারা অদৃশ্য হয়ে পড়ছে। বেদেরা অস্পৃশ্য ও সুবিধাবঞ্চিত এক সম্প্রদায়।
বাংলা সাহিত্যে কোনো কোনো লেখকের গল্প-উপন্যাসে বেদে সম্প্রদায়ের কথা উঠে এসেছে। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্প-উপন্যাসে এই যাযাবর জনগোষ্ঠীর জীবনচিত্র কিছু কিছু উঠে এসেছে। এই মুহূর্তে মনে পড়ছে তাঁর ছোটগল্প ‘বেদেনী’র কথা।
‘বেদেনী’তে আছে: ‘বিচিত্র জাত বেদেরা। জাতি জিজ্ঞাসা করিলে বলে, বেদে। তবে ধর্মে ইসলাম। আচারে পুরা হিন্দু; মনসাপূজা করে, মঙ্গলচণ্ডী, ষষ্ঠীর ব্রত করে, কালী-দুর্গাকে ভূমিষ্ঠ হইয়া প্রণাম করে। হিন্দু পুরাণ-কথা ইহাদের কণ্ঠস্থ। বিবাহ আদানপ্রদান সমগ্রভাবে ইসলাম-ধর্ম সম্প্রদায়ের সঙ্গে হয় না, নিজেদের এই বিশিষ্ট সম্প্রদায়ের মধ্যেই আবদ্ধ। বিবাহ হয় মোল্লার নিকট ইসলামীয় পদ্ধতিতে, মরিলে পোড়ায় না, কবর দেয়।’
হাবিবুর রহমান বলছেন, ‘প্রচলিত সমাজব্যবস্থার পাশাপাশি থেকেও তারা (বেদেরা) এক ব্যতিক্রমী সমাজের উত্তরাধিকার, যা আমাদের অগোচরেই আজও বহন করে চলেছে।’
বেদেদের যাপিত জীবনের গল্প আমরা এটুকুই জানি, ভূমিহীন এই মানুষেরা দলবদ্ধভাবে নৌকায় বাস করে। এ জন্য তাদের জলের জিপসিও বলা হয়। সাপের খেলা দেখানোর জন্যই এরা বেশি জনপ্রিয়। বেদেদের বাদিয়া, বাইদ্যা বা বইদ্যানি নামেও ডাকা হয়। এই নামগুলোর উৎপত্তি বৈদ্য (চিকিৎসক) থেকে।
প্রাচীনকাল থেকেই বেদেরা কবিরাজি, ঝাড়ফুঁকসহ বিভিন্ন হাতুড়ে চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত। অনেকে অবশ্য দাবি করেন, বেদে শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে বেদুইন থেকে। আরব বেদুইনদের বেদেরা পরিচয় দেয় নিজেদের পূর্বপুরুষ হিসেবে।
হাবিবুর রহমান বেদের সঙ্গে খোলা মন নিয়ে তাকিয়েছেন বলেই তাদের ভাষার বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন এবং রচনা করতে পেরেছেন ‘ঠার : বেদে জনগোষ্ঠীর ভাষা’ গ্রন্থটি। ভাষাবিজ্ঞানের সূত্র মেনেই তিনি শ্রমসাধ্য এই গবেষণাকাজটি শেষ করতে সক্ষম হয়েছেন। ঠার ভাষা নিয়ে তাঁর বইটি এক কথায় একটি অসাধারণ প্রকাশনা। যারা ভাষা, সমাজ, সংস্কৃতি, নৃবিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ে আগ্রহী, তাদের জন্য এটি সংগ্রহে রাখার মতো একটি বই।
ঠার ভাষায় আমাদের জাতীয় সংগীত সংযোজিত হওয়ায় বইটির গুরুত্ব বেড়েছে। যাঁরা ঠার ভাষা শিখতে চান, তাদের জন্য এই বই তো বিকল্পহীন। ‘ঝামার শিয়ের চেংলা, ঝামি তরে ঝালোবাসি’ যে আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি—জানার পর কি একটু পুলক অনুভব হয় না?
হিমালয় পাই এর নতুন বই’ ডিটাচমেন্ট টু ডিপার্চার’ প্রকাশিত হয়েছে। বইটি বাজারে এনেছে জনপ্রিয় প্রকাশনা সংস্থা আদর্শ প্রকাশনী। বইটিতে মূলত উত্তর ভারতের বিভিন্ন শহর পরিভ্রমণের প্রেক্ষিতে লেখকের সোশিওলজিকাল, পলিটিক্যাল কালচারাল, হিস্টরিকাল, এনথ্রোপলজিকাল যেসব পর্যবেক্ষণ তৈরি হয়েছে সেগুলোকেই সোশ্যাল থিসিসরূ
১ দিন আগে‘স্বাধীনতা সাম্য সম্প্রীতির জন্য কবিতা’ স্লোগান নিয়ে শুরু হচ্ছে জাতীয় কবিতা উৎসব ২০২৫। আগামী ১ ও ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি চত্বরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে কবিতার এই আসর। আজ শনিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এটি জানানো হয়েছে...
৮ দিন আগেবাংলা একাডেমি ২০২৪ সালের ষাণ্মাসিক ফেলোশিপ এবং ছয়টি পুরস্কারের জন্য মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেছে। মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস, বিজ্ঞান, শিল্পকলা এবং ভাষা গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি ফেলোশিপ পাচ্ছেন। এ ছাড়া প্রবন্ধ, শিশুসাহিত্য, নাটক এবং কথাসাহিত্যে অবদানের জন্য মোট ছয়টি পুরস্কার দেওয়া হচ্
২৪ দিন আগেসূক্ষ্মচিন্তার খসড়াকে ধারণ করে শিল্প-সাহিত্য ভিত্তিক ছোটকাগজ ‘বামিহাল’। বগুড়ার সবুজ শ্যামল মায়াময় ‘বামিহাল’ গ্রামের নাম থেকেই এর নাম। ‘বামিহাল’ বিশ্বাস করে বাংলার আবহমান জীবন, মানুষ-প্রকৃতি কিংবা সুচিন্তার বিশ্বমুখী সূক্ষ্ম ভাবনার প্রকাশই আগামীর সবুজ-শ্যামল মানববসতি বিনির্মাণ করতে পারে...
২১ ডিসেম্বর ২০২৪