ড. মো. গোলাম রহমান
বলা হয়েছে গল্পটি সত্য ঘটনা নয়, তবে সত্যমূলক। ‘পুণ্যাহ’ নাটকের কাহিনি গড়িয়েছে কাকরগাছি নামে একটি গ্রামকে কেন্দ্র করে। এই গ্রামে হঠাৎ একদিন ঝড় হয়, সেই ঝড়ে পুরো গ্রাম এক মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়। সংস্কারাচ্ছন্ন জনপদের লোকজন নিজেদের এই পরিণতির জন্য নিজেরাই তাদের মুখোমুখি দাঁড়ায়। নিজেদের পাপ খুঁজে বের করতে চায়। পাপী কে? এই অনুসন্ধান তৎপরতায় নিজেরা ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তখন মনে হয়, কাকরগাছি একটি বিচ্ছিন্ন গ্রাম নয়, সারা দেশ যেন একেকটি কাকরগাছি গ্রাম হয়ে ওঠে। একটি বিধ্বস্ত জনবসতি যেন নাটকে একটি প্রেক্ষাপট মাত্র, যার প্রতিটি চরিত্র রূপক অর্থে সমাজের একেকটি প্রতিনিধি।
কাহিনির ঋজুতায়, সংলাপ ও গীতিময়তায় নাটকটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এক দমে দেখে ফেলা যায়। কাহিনিতে একজন নারী ও একজন পুরুষের ভালোবাসার মাত্রা ভিন্নমাত্রায় প্রতিভাত হয় এবং সমাজ নারীকে সব পাপের জন্য অঙ্গুলি নির্দেশ করে। নারী চরিত্র আম্বিয়াকে স্কুলে যেতে নিষেধ করে অষ্টম শ্রেণিতে ওঠার পরই। দুই দিন সময় বেঁধে দেওয়া হয় অন্যত্র চলে যাওয়ার জন্য আর আম্বিয়ার কাছে মনে হয় বেঁধে দেওয়া দুই দিন যেন এক ঘণ্টায় শেষ হয়ে যাবে। নারী যেন সমাজের সব ধ্বংসের অন্যতম চিহ্নিত কারণ হয়ে ওঠে। সমাজে ভালো-মন্দ, পাপ-পুণ্য, ন্যায়-অন্যায়, সঠিক- বেঠিক সবকিছু নাট্যনির্দেশকের মতে, ‘দরদিয়া অভিব্যক্তি নির্মাণ করার প্রয়াস।’ এই প্রয়াসের প্রচ্ছন্ন প্রকাশ দেখা যায় সাহসী সংলাপ উচ্চারণে। বাংলার লোকায়ত সংস্কৃতির অনেক শব্দই স্থান করে নেয় সংলাপে। মসজিদের মৌলভি সারা জনপদে পাপের কারণ খুঁজে পেতে হয়রান হয়ে পড়েন। সরলপ্রাণ মানুষের মনে দ্বিধাদ্বন্দ্বের অভিব্যক্তি নাট্যবক্তব্যে প্রধান হয়ে ওঠে। মৌলভি নিজের মনের কথা মানুষের কাছে বলতে গিয়ে বিহ্বল হয়ে পড়েন, জনপদের মানুষগুলো নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার আর কোনো উপায় খুঁজে পায় না।
নৈসর্গিক শোভার কাকরগাছির শান্ত-সৌম্য নিভৃত পরিবেশ থেকে বেরিয়ে কেউ কেউ শহরের হাতছানিতে প্রবেশ করে। সেই চাকচিক্যে পুরুষ প্রেমিকের অর্থ আর অনেক মানুষের সম্ভাবনা আম্বিয়াকে অসহায় নারীতে সীমাবদ্ধ করে দেয়। সে বরণ করে নেয় নিভৃত বেদনায় তার একাকিত্ব। সমাজের পুরষালি দৃষ্টিভঙ্গি ও স্বার্থের টান আম্বিয়ার প্রেমিক নিঃশর্ত ভ্রূণ হত্যার জন্য চাপ তৈরি করে। সমাজের প্রতিটি মানুষ পাপ আর পাপীকে অনুসন্ধান করে করে একতরফা সিদ্ধান্ত আরোপ করে। আম্বিয়ার ভালোবাসা পাপ হয়ে যায়, টিকে যায় তার প্রেমিকের সম্মানবোধ। যুগ যুগ ধরে চলতে থাকা কলুষিত সমাজের গতানুগতিক বৈচারিক ঘোষণা জারি হয় পাথর মেরে আম্বিয়াকে শাস্তি দেওয়ার। তখন জনমনে নিজের অপরাধবোধ থেকে নিজেকে মুক্ত করার অতিতৎপরতায় তৈয়ব এগিয়ে যায়। স্বতঃস্ফূর্ত জমায়েত থেকে বের হয়ে আম্বিয়ার প্রেমিক পুরুষ তৈয়ব ক্ষিপ্রগতিতে ঢিল ছুড়ে মারে আম্বিয়ার কপালে।
আমার মনে হয়েছে নাটকটি এখানে শেষ হলেও মন্দ হতো না। কিন্তু আম্বিয়ার মুখনিঃসৃত কঠিন-কঠোর শব্দাবলি বের হয়, অনেকটা এই রকম: ‘আমার এই প্রস্রাবের পানিতে তৈয়ব যেন তার মুখটা ধুয়ে ফেলে...। কী ভয়াবহ তীব্র দহন আম্বিয়ার কণ্ঠস্বরে!’
একটি নাটকের সফলতা শুধু তার মঞ্চায়নেই সীমাবদ্ধ থাকে না, পুণ্যাহ নাটকটি প্রায় সবার অভিনয়গুণে সমৃদ্ধ হয়েছে। পুরো নাটক গীত ও কাব্যময়, আগেই বলেছি। সুললিত কণ্ঠে গীত হয়েছে। আধুনিক ভাবধারায় গানগুলোর সঙ্গে নৃত্য সংযোজন করা হয়েছে। সে জন্যই বলা হয় নাটক বহুমুখী শিল্প।
মানুষকে ভালোবাসার শিক্ষা দেয় নাটক, নাটক জীবনের কথা বলে। সংকট-উত্তরণে জীবন যাপনের শৈল্পিক দৃষ্টিকোণ থেকে এক অনন্য শিল্পমাধ্যম হিসেবে বাংলাদেশে নাটক একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলন তৈরি করেছে। অন্য অনেক নাট্য সংস্থার মতো নাট্যকেন্দ্র এই উপস্থাপনায় নিজেদের তুলে ধরেছে। ‘পুণ্যাহ’ নাটকটি রচনা করেছেন বদরুজ্জামান আলমগীর এবং নির্দেশনায় ছিলেন ইউসুফ হাসান অর্ক। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত মঞ্চ নাটকগুলোর মধ্যে ‘পুণ্যাহ’ দর্শক- শ্রোতার কাছে সমাদৃত হবে বলে আশা করা যায়।
বলা হয়েছে গল্পটি সত্য ঘটনা নয়, তবে সত্যমূলক। ‘পুণ্যাহ’ নাটকের কাহিনি গড়িয়েছে কাকরগাছি নামে একটি গ্রামকে কেন্দ্র করে। এই গ্রামে হঠাৎ একদিন ঝড় হয়, সেই ঝড়ে পুরো গ্রাম এক মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়। সংস্কারাচ্ছন্ন জনপদের লোকজন নিজেদের এই পরিণতির জন্য নিজেরাই তাদের মুখোমুখি দাঁড়ায়। নিজেদের পাপ খুঁজে বের করতে চায়। পাপী কে? এই অনুসন্ধান তৎপরতায় নিজেরা ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তখন মনে হয়, কাকরগাছি একটি বিচ্ছিন্ন গ্রাম নয়, সারা দেশ যেন একেকটি কাকরগাছি গ্রাম হয়ে ওঠে। একটি বিধ্বস্ত জনবসতি যেন নাটকে একটি প্রেক্ষাপট মাত্র, যার প্রতিটি চরিত্র রূপক অর্থে সমাজের একেকটি প্রতিনিধি।
কাহিনির ঋজুতায়, সংলাপ ও গীতিময়তায় নাটকটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এক দমে দেখে ফেলা যায়। কাহিনিতে একজন নারী ও একজন পুরুষের ভালোবাসার মাত্রা ভিন্নমাত্রায় প্রতিভাত হয় এবং সমাজ নারীকে সব পাপের জন্য অঙ্গুলি নির্দেশ করে। নারী চরিত্র আম্বিয়াকে স্কুলে যেতে নিষেধ করে অষ্টম শ্রেণিতে ওঠার পরই। দুই দিন সময় বেঁধে দেওয়া হয় অন্যত্র চলে যাওয়ার জন্য আর আম্বিয়ার কাছে মনে হয় বেঁধে দেওয়া দুই দিন যেন এক ঘণ্টায় শেষ হয়ে যাবে। নারী যেন সমাজের সব ধ্বংসের অন্যতম চিহ্নিত কারণ হয়ে ওঠে। সমাজে ভালো-মন্দ, পাপ-পুণ্য, ন্যায়-অন্যায়, সঠিক- বেঠিক সবকিছু নাট্যনির্দেশকের মতে, ‘দরদিয়া অভিব্যক্তি নির্মাণ করার প্রয়াস।’ এই প্রয়াসের প্রচ্ছন্ন প্রকাশ দেখা যায় সাহসী সংলাপ উচ্চারণে। বাংলার লোকায়ত সংস্কৃতির অনেক শব্দই স্থান করে নেয় সংলাপে। মসজিদের মৌলভি সারা জনপদে পাপের কারণ খুঁজে পেতে হয়রান হয়ে পড়েন। সরলপ্রাণ মানুষের মনে দ্বিধাদ্বন্দ্বের অভিব্যক্তি নাট্যবক্তব্যে প্রধান হয়ে ওঠে। মৌলভি নিজের মনের কথা মানুষের কাছে বলতে গিয়ে বিহ্বল হয়ে পড়েন, জনপদের মানুষগুলো নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার আর কোনো উপায় খুঁজে পায় না।
নৈসর্গিক শোভার কাকরগাছির শান্ত-সৌম্য নিভৃত পরিবেশ থেকে বেরিয়ে কেউ কেউ শহরের হাতছানিতে প্রবেশ করে। সেই চাকচিক্যে পুরুষ প্রেমিকের অর্থ আর অনেক মানুষের সম্ভাবনা আম্বিয়াকে অসহায় নারীতে সীমাবদ্ধ করে দেয়। সে বরণ করে নেয় নিভৃত বেদনায় তার একাকিত্ব। সমাজের পুরষালি দৃষ্টিভঙ্গি ও স্বার্থের টান আম্বিয়ার প্রেমিক নিঃশর্ত ভ্রূণ হত্যার জন্য চাপ তৈরি করে। সমাজের প্রতিটি মানুষ পাপ আর পাপীকে অনুসন্ধান করে করে একতরফা সিদ্ধান্ত আরোপ করে। আম্বিয়ার ভালোবাসা পাপ হয়ে যায়, টিকে যায় তার প্রেমিকের সম্মানবোধ। যুগ যুগ ধরে চলতে থাকা কলুষিত সমাজের গতানুগতিক বৈচারিক ঘোষণা জারি হয় পাথর মেরে আম্বিয়াকে শাস্তি দেওয়ার। তখন জনমনে নিজের অপরাধবোধ থেকে নিজেকে মুক্ত করার অতিতৎপরতায় তৈয়ব এগিয়ে যায়। স্বতঃস্ফূর্ত জমায়েত থেকে বের হয়ে আম্বিয়ার প্রেমিক পুরুষ তৈয়ব ক্ষিপ্রগতিতে ঢিল ছুড়ে মারে আম্বিয়ার কপালে।
আমার মনে হয়েছে নাটকটি এখানে শেষ হলেও মন্দ হতো না। কিন্তু আম্বিয়ার মুখনিঃসৃত কঠিন-কঠোর শব্দাবলি বের হয়, অনেকটা এই রকম: ‘আমার এই প্রস্রাবের পানিতে তৈয়ব যেন তার মুখটা ধুয়ে ফেলে...। কী ভয়াবহ তীব্র দহন আম্বিয়ার কণ্ঠস্বরে!’
একটি নাটকের সফলতা শুধু তার মঞ্চায়নেই সীমাবদ্ধ থাকে না, পুণ্যাহ নাটকটি প্রায় সবার অভিনয়গুণে সমৃদ্ধ হয়েছে। পুরো নাটক গীত ও কাব্যময়, আগেই বলেছি। সুললিত কণ্ঠে গীত হয়েছে। আধুনিক ভাবধারায় গানগুলোর সঙ্গে নৃত্য সংযোজন করা হয়েছে। সে জন্যই বলা হয় নাটক বহুমুখী শিল্প।
মানুষকে ভালোবাসার শিক্ষা দেয় নাটক, নাটক জীবনের কথা বলে। সংকট-উত্তরণে জীবন যাপনের শৈল্পিক দৃষ্টিকোণ থেকে এক অনন্য শিল্পমাধ্যম হিসেবে বাংলাদেশে নাটক একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলন তৈরি করেছে। অন্য অনেক নাট্য সংস্থার মতো নাট্যকেন্দ্র এই উপস্থাপনায় নিজেদের তুলে ধরেছে। ‘পুণ্যাহ’ নাটকটি রচনা করেছেন বদরুজ্জামান আলমগীর এবং নির্দেশনায় ছিলেন ইউসুফ হাসান অর্ক। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত মঞ্চ নাটকগুলোর মধ্যে ‘পুণ্যাহ’ দর্শক- শ্রোতার কাছে সমাদৃত হবে বলে আশা করা যায়।
আকাশি রঙের বাড়ি। দোতলায় দুটি কক্ষে আলো জ্বলছে। সন্ধ্যার আবছা আঁধারে ছেয়ে আছে বাড়িটির চারদিকের গাছগুলো। সন্ধ্যার নীল আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে পেঁজা তুলোর মতো মেঘ। বাড়ির সামনে ল্যাম্পপোস্টের আলোয় জলাশয়ে প্রকৃতির এই মোহনীয় ছবি প্রতিফলিত হয়েছে।
৩ দিন আগেচারুশিল্প হচ্ছে মানুষের অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যম। একটি ছবি একটি বিপ্লবের উন্মেষ ঘটাতে পারে। ছবি শুধু বিনোদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি বিপ্লবের বার্তাও নিয়ে আসে।
১৩ দিন আগেআপনি যে বয়সেরই হোন না কেন, এই বই পড়লে তারুণ্যশক্তিকে অনুভব করবেন, অনুপ্রাণিত হবেন। নতুন শুরুর একটা তাগিদ পাবেন। এই তরুণদের প্রত্যেকের মতো আপনিও বলে উঠবেন—সব সম্ভব! এই বইয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে জন্ম নেওয়া অবহেলিত অবস্থা থেকে সাফল্যের শীর্ষে যাওয়ার পথচলার গল্প উঠে এসেছে। প্রায় চার শ পৃষ্ঠার বইটির দাম
২০ দিন আগেপ্রকাশনা সংস্থা ‘ঐতিহ্য’ তার দুই যুগের পথচলা (২০০০-২০২৪) স্মরণীয় করে রাখতে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে দশ দিনব্যাপী ‘ঐতিহ্য বই উৎসব ২০২৪’ আয়োজন করেছে। আজ ২ নভেম্বর শনিবার বেলা ১১টায় যৌথভাবে উৎসব উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বিশিষ্ট লেখক-গবেষক শারমিন আহমদ এবং তরুণ
২০ দিন আগে