আকিফ গালিব
বছর কুড়ি আগেও প্রতিটি শৈশবে উঁকি দিলে একটি নাম খুব পরিচিত তিনি সুকুমার রায়। শৈশবের পাঠে সুকুমার নেই এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া বিরল। শিশুদের সুখপাঠ্য ছড়া লিখে অতি সহজেই সুকুমার রায় প্রতিটি শিশুমনে স্থান দখল করে আছেন। শিশুদের ছাড়িয়ে তাঁর লেখা বড়দের মনেও বিশেষ ভালো লাগার সৃষ্টি করে। তাঁর লেখা পড়লে পাঠের দোলা থেকে যায় অনেকক্ষণ। সুকুমার রায়ের পারিবারিক পরিবেশ তাঁর সাহিত্য সাধনার পথে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। অল্প বয়স থেকেই পিতার সাহচর্যে মুখে মুখে ছড়া রচনা করতেন তিনি। তা ছাড়া ছবি আঁকা, ফটোগ্রাফি, নাটক রচনা বিবিধ গুণে গুণান্বিত ছিলেন। তিনি একাধারে শিশুসাহিত্যিক, ছড়াকার, রম্যরচনাকার, নাট্যকার। কিন্তু তার আঁকা নিয়ে খুব কম আলোচনা চোখে পড়ে কিংবা তাঁর লেখার কাছে আঁকা হেরে গেছে। বাবা উপেন্দ্রকিশোর রায় প্রশিক্ষিত শিল্পী ছিলেন না। কিন্তু উপেন্দ্রকিশোর রায়ের আঁকা দক্ষ চোখেও ত্রুটি শনাক্ত করা প্রায় কঠিন। সুকুমার রায়ও পিতার মতো প্রশিক্ষিত শিল্পী নন, তাঁর আঁকায় জায়গায় জায়গায় ত্রুটি, ভুল রেখা অদক্ষ চোখেই ধরা দেয়। তবুও, তার আঁকার নিজস্ব শৈলী রয়েছে যা তার সাহিত্য থেকে তার কল্পনাপ্রসূত চরিত্রগুলোকে জীবন্ত করে তুলেছে। কার্টুন না হলেও সুকুমার রায়ের ছবি যেন কার্টুনের দোসর। আবোল তাবোলের রামগরুদের ছানা, কুমড়োপটাশ, কাঠবুড়ো কিংবা হিজিবিজবিজের ছবি দেখে ছেলে-বুড়ো সবাই হাসবে। সুকুমার কার্টুন এঁকেছেন দু-একটা, তলায় মজাদার ছড়া।
সুকুমার রায়ের সেরা কাজ বললেই সবাই আবোল তাবোলের নাম করবেন জানি। ছড়ায় উদ্ভট (অ্যাবসারড) ও আপাত অর্থহীনতার (ননসেন্স) মধ্য দিয়ে রসসৃষ্টির কৃতিত্বে সুকুমার রায়ের জুড়ি নেই। আবোল তাবোলে সেই কৃতিত্ব সমধিক উজ্জ্বল। আবোল তাবোলে থাকা ৪৫টি ছড়ার মধ্যে যেমন বৈচিত্র্য ও বিভিন্নতা এত বেশি যেকোনো এক প্রকার শ্রেণিতে এদের বাঁধা যায় না। তেমনি এই ছড়াগুলোয় ব্যবহৃত ইলাস্ট্রেশনও বৈচিত্র্য ও ভিন্নতার দেখা মেলে শুধু হাস্যরসের আধার নয়। ছড়া ও ছবিগুলোর মধ্যে যে রসদ লুকিয়ে আছে, তা সন্ধান না করতে পারলে সুকুমার পাঠ অসম্পূর্ণ থেকে যায়। আপাত অর্থের আড়ালে সুকুমার যত্নে বপন করেছেন একাধিক গভীর বিষয়ে নিয়ে নানান কথা। ‘আবোল তাবোল’-এর ছড়া ও ছবিগুলোর অন্তর্নিহিত অর্থগুলো সন্ধান করতে গিয়ে কতগুলো বিভাগে ভাগ করতে পারা যায়— (১) সামাজিক, (২) রাজনৈতিক, (৩) প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, (৪) গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলি ও (৫) অন্যান্য।
নোটবই কবিতার জিজ্ঞাসু ভদ্রলোকটির যে চিত্র আঁকা হয়েছে সন্ধানী গবেষক চরিত্রেরই রকমফের। খুড়োর কল-এর চিত্র দেখলে যে কেউ হেসে উঠবে কিন্তু ছবিটা যতটা হাসির তার চেয়ে মানুষের লুব্ধতার প্রতি কশাঘাত! ব্রিটিশ শাসনের কালে ‘একুশে আইন’ আর ‘বাবুরাম সাপুড়ে-র ছবি কি বিশেষ তাৎপর্যময় চিত্রকর্ম নয়? ‘সৎপাত্র, হাতুড়ে কবিতার ডাক্তার, কাতুকুতু বুড়ো-র আঁকা চিত্রকর্ম হাত-গণনা কবিতার জ্যোতিষীর যে ছবি কবি এঁকেছেন আমরা সব সময়ই চারপাশে দেখছি? বুড়ীর বাড়ী কবিতায় হতদরিদ্র বৃদ্ধার জীর্ণ যে ছবিটি অবহেলিত মানুষের প্রতি সুখী-সমাজ এবং তথাকথিত কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের ঔদাসীন্য সূচিত করে।
অনেকে মনে করেন হৃষীকেশ মুখার্জি পরিচালিত, অমল পালেকর-উৎপল দত্ত অভিনীত সেই ‘গোলমাল’ ছবিটিতে উৎপল দত্ত মনে করতেন, ‘গোঁফ’ হচ্ছে পৌরুষের প্রতীক আর যে পুরুষ মানুষ গোঁফ কাটতে পারে, সে এত নিষ্ঠুর যে মানুষ খুন করতেও দ্বিধা বোধ করবে না! কী অদ্ভুত ধারণা, তাই না! নিজের পৌরুষ যে তাঁর চারিত্রিক দৃঢ়তা, বিশাল গোঁফ-জোড়া নয়, এ কথা বোঝাতে তাঁর পরিবার-পরিজনের খুব কষ্ট হয়েছিল। সম্ভবত, হৃষীকেশ-এর অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন সুকুমারের ‘গোঁফ-চুরি’ কবিতার নায়ক—হেড অফিসের বড়বাবু! সুকুমার রায়ের আঁকার মতোই গোঁফ ছিল উৎপল দত্তের। সুকুমার রায়ের ইলাস্ট্রেশনে নতুন কিছু প্রাণী বাঙালি জনজীবনে জুড়ে গেছে যেমন হারুদের অফিসের ট্যাঁশ গরু যে আদতে গরু নয় পাখি, বেচারাথেরিয়াম, চিল্লানসোরাস, গোমড়ামুখো: গোমড়াথেরিয়াম, ল্যাগব্যাগর্নিস অদ্ভুত নামের এসব পশুপাখির ইলাস্ট্রেশন দেখে দেখে বাঙালির মননে এসব প্রাণী বাস্তবতা পেয়েছে। সুকুমার রায়ে অনন্য হ য ব র ল নিয়ে কথা না বললে এই লেখা পূর্ণতা পাবে না। হযবরল লেখার মতোই চিত্রকর্মেও অন্যতম।
হ য ব র ল গল্পের অসংখ্য চরিত্রের একজন গণিতবিদ কাক-শ্রী কাক্কেশ্বর কুচকুচে। সুকুমার রায়ের আঁকায় দেখা যায় কাকের হাতে ধরা আছে স্লেট, মুখে চকখড়ি, সিরিয়াস মুখে সেটা ধরে আছে এক হাত নাকি পায়ে? নিচে ঝুলছে দলিল-দস্তাবেজ। ৪১ নম্বর গেছোবাজার, কাগেয়াপটির এই কাকেরা সব ধরনের হিসাবি ও বেহিসাবি, খুচরা ও পাইকারি—সব গণনার কাজ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সম্পন্ন করে থাকে। এই বর্ণনার সঙ্গে যেন এই আঁকাটা না হলে সেটা অসম্পূর্ণই থেকে যেত। এক ঘরোয়া আলোচনায় একজন নামকরা চিত্রশিল্পী বলেছিলেন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও জিনগতভাবে সুকুমার রায় আঁকা পেয়েছিলেন ফলে তাঁর আঁকায় জীবন ছিল। রিয়েলিস্টিক আঁকতেই তিনি ভালোবাসতেন কারণ আঁকায় বিশ্বাসযোগ্যতা আনা। আদতেই সুকুমার রায়ের ইলাস্ট্রেশনগুলো দেখতে বোঝা যায়, সেই কথার সত্যতা। হ য ব র ল-এর সেই ফিচেল বিড়াল, যা কিনা সুকুমার সমগ্র বইয়ের প্রচ্ছদে এসে সব বাংলা ভাষাভাষী পাঠকের মনে ঢুকে গেছে। সেটার এক চোখ টেপা বাঁকা হাসি যেন সুকুমারের গোটা সাহিত্যের মূল মেজাজটাই ধরে বসে আছে।
‘একজনের মাথার ব্যারাম ছিল, সে সব জিনিসের নামকরণ করত। তার জুতোর নাম ছিল অবিমৃশ্যকারিতা, তার ছাতার নাম ছিল প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব, তার গাড়ুর নাম ছিল পরমকল্যাণবরেষু—কিন্তু যেই তার বাড়ির নাম দিয়েছে কিংকর্তব্যবিমূঢ়, অমনি ভূমিকম্প হয়ে বাড়িটাড়ি সব পড়ে গিয়েছে।’ হ য ব র ল-তে লিখেছিলেন সুকুমার। ‘পাগলা দাশু-র যে চিত্র সুকুমারের আঁকায় পাই, তা যেমন চরিত্রকে প্রদর্শিত করে তেমনি মিথে পরিণত হওয়া ‘দ্রিঘাংচু’; চন্দ্রবিন্দু, শ্রীকাকেশ্বর কুচকুচে, উদো আর বুদো, হিজিবিজবিজ, ব্যাকরণ শিং, বি. এ. খাদ্যবিশারদ, ন্যাড়া হ য ব র ল-এর চরিত্রগুলো নিয়মের বাইরে বেরিয়ে যাচাই করলে দেখবেন কোনটিই কাল্পনিক নয়, এমনকি ১০০ বছর আগের নয়, সমসাময়িক। অতএব, বোধ প্রয়োগ করলেই বোঝা যাবে সুকুমার রায় ব্যক্তিটি; আঁকায় ও লেখায় ‘ননসেন্স’ শব্দটির বিকল্প মানে তৈরি করেছিলেন। আর তাই হয়তো এত বছর পরেও গুঞ্জন শুনি কবীর সুমনের সুরে-‘আমাকে ভাবায় সুকুমার রায়/আমাকে ভাবায় সুকুমার রায়।’
বছর কুড়ি আগেও প্রতিটি শৈশবে উঁকি দিলে একটি নাম খুব পরিচিত তিনি সুকুমার রায়। শৈশবের পাঠে সুকুমার নেই এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া বিরল। শিশুদের সুখপাঠ্য ছড়া লিখে অতি সহজেই সুকুমার রায় প্রতিটি শিশুমনে স্থান দখল করে আছেন। শিশুদের ছাড়িয়ে তাঁর লেখা বড়দের মনেও বিশেষ ভালো লাগার সৃষ্টি করে। তাঁর লেখা পড়লে পাঠের দোলা থেকে যায় অনেকক্ষণ। সুকুমার রায়ের পারিবারিক পরিবেশ তাঁর সাহিত্য সাধনার পথে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। অল্প বয়স থেকেই পিতার সাহচর্যে মুখে মুখে ছড়া রচনা করতেন তিনি। তা ছাড়া ছবি আঁকা, ফটোগ্রাফি, নাটক রচনা বিবিধ গুণে গুণান্বিত ছিলেন। তিনি একাধারে শিশুসাহিত্যিক, ছড়াকার, রম্যরচনাকার, নাট্যকার। কিন্তু তার আঁকা নিয়ে খুব কম আলোচনা চোখে পড়ে কিংবা তাঁর লেখার কাছে আঁকা হেরে গেছে। বাবা উপেন্দ্রকিশোর রায় প্রশিক্ষিত শিল্পী ছিলেন না। কিন্তু উপেন্দ্রকিশোর রায়ের আঁকা দক্ষ চোখেও ত্রুটি শনাক্ত করা প্রায় কঠিন। সুকুমার রায়ও পিতার মতো প্রশিক্ষিত শিল্পী নন, তাঁর আঁকায় জায়গায় জায়গায় ত্রুটি, ভুল রেখা অদক্ষ চোখেই ধরা দেয়। তবুও, তার আঁকার নিজস্ব শৈলী রয়েছে যা তার সাহিত্য থেকে তার কল্পনাপ্রসূত চরিত্রগুলোকে জীবন্ত করে তুলেছে। কার্টুন না হলেও সুকুমার রায়ের ছবি যেন কার্টুনের দোসর। আবোল তাবোলের রামগরুদের ছানা, কুমড়োপটাশ, কাঠবুড়ো কিংবা হিজিবিজবিজের ছবি দেখে ছেলে-বুড়ো সবাই হাসবে। সুকুমার কার্টুন এঁকেছেন দু-একটা, তলায় মজাদার ছড়া।
সুকুমার রায়ের সেরা কাজ বললেই সবাই আবোল তাবোলের নাম করবেন জানি। ছড়ায় উদ্ভট (অ্যাবসারড) ও আপাত অর্থহীনতার (ননসেন্স) মধ্য দিয়ে রসসৃষ্টির কৃতিত্বে সুকুমার রায়ের জুড়ি নেই। আবোল তাবোলে সেই কৃতিত্ব সমধিক উজ্জ্বল। আবোল তাবোলে থাকা ৪৫টি ছড়ার মধ্যে যেমন বৈচিত্র্য ও বিভিন্নতা এত বেশি যেকোনো এক প্রকার শ্রেণিতে এদের বাঁধা যায় না। তেমনি এই ছড়াগুলোয় ব্যবহৃত ইলাস্ট্রেশনও বৈচিত্র্য ও ভিন্নতার দেখা মেলে শুধু হাস্যরসের আধার নয়। ছড়া ও ছবিগুলোর মধ্যে যে রসদ লুকিয়ে আছে, তা সন্ধান না করতে পারলে সুকুমার পাঠ অসম্পূর্ণ থেকে যায়। আপাত অর্থের আড়ালে সুকুমার যত্নে বপন করেছেন একাধিক গভীর বিষয়ে নিয়ে নানান কথা। ‘আবোল তাবোল’-এর ছড়া ও ছবিগুলোর অন্তর্নিহিত অর্থগুলো সন্ধান করতে গিয়ে কতগুলো বিভাগে ভাগ করতে পারা যায়— (১) সামাজিক, (২) রাজনৈতিক, (৩) প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, (৪) গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলি ও (৫) অন্যান্য।
নোটবই কবিতার জিজ্ঞাসু ভদ্রলোকটির যে চিত্র আঁকা হয়েছে সন্ধানী গবেষক চরিত্রেরই রকমফের। খুড়োর কল-এর চিত্র দেখলে যে কেউ হেসে উঠবে কিন্তু ছবিটা যতটা হাসির তার চেয়ে মানুষের লুব্ধতার প্রতি কশাঘাত! ব্রিটিশ শাসনের কালে ‘একুশে আইন’ আর ‘বাবুরাম সাপুড়ে-র ছবি কি বিশেষ তাৎপর্যময় চিত্রকর্ম নয়? ‘সৎপাত্র, হাতুড়ে কবিতার ডাক্তার, কাতুকুতু বুড়ো-র আঁকা চিত্রকর্ম হাত-গণনা কবিতার জ্যোতিষীর যে ছবি কবি এঁকেছেন আমরা সব সময়ই চারপাশে দেখছি? বুড়ীর বাড়ী কবিতায় হতদরিদ্র বৃদ্ধার জীর্ণ যে ছবিটি অবহেলিত মানুষের প্রতি সুখী-সমাজ এবং তথাকথিত কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের ঔদাসীন্য সূচিত করে।
অনেকে মনে করেন হৃষীকেশ মুখার্জি পরিচালিত, অমল পালেকর-উৎপল দত্ত অভিনীত সেই ‘গোলমাল’ ছবিটিতে উৎপল দত্ত মনে করতেন, ‘গোঁফ’ হচ্ছে পৌরুষের প্রতীক আর যে পুরুষ মানুষ গোঁফ কাটতে পারে, সে এত নিষ্ঠুর যে মানুষ খুন করতেও দ্বিধা বোধ করবে না! কী অদ্ভুত ধারণা, তাই না! নিজের পৌরুষ যে তাঁর চারিত্রিক দৃঢ়তা, বিশাল গোঁফ-জোড়া নয়, এ কথা বোঝাতে তাঁর পরিবার-পরিজনের খুব কষ্ট হয়েছিল। সম্ভবত, হৃষীকেশ-এর অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন সুকুমারের ‘গোঁফ-চুরি’ কবিতার নায়ক—হেড অফিসের বড়বাবু! সুকুমার রায়ের আঁকার মতোই গোঁফ ছিল উৎপল দত্তের। সুকুমার রায়ের ইলাস্ট্রেশনে নতুন কিছু প্রাণী বাঙালি জনজীবনে জুড়ে গেছে যেমন হারুদের অফিসের ট্যাঁশ গরু যে আদতে গরু নয় পাখি, বেচারাথেরিয়াম, চিল্লানসোরাস, গোমড়ামুখো: গোমড়াথেরিয়াম, ল্যাগব্যাগর্নিস অদ্ভুত নামের এসব পশুপাখির ইলাস্ট্রেশন দেখে দেখে বাঙালির মননে এসব প্রাণী বাস্তবতা পেয়েছে। সুকুমার রায়ে অনন্য হ য ব র ল নিয়ে কথা না বললে এই লেখা পূর্ণতা পাবে না। হযবরল লেখার মতোই চিত্রকর্মেও অন্যতম।
হ য ব র ল গল্পের অসংখ্য চরিত্রের একজন গণিতবিদ কাক-শ্রী কাক্কেশ্বর কুচকুচে। সুকুমার রায়ের আঁকায় দেখা যায় কাকের হাতে ধরা আছে স্লেট, মুখে চকখড়ি, সিরিয়াস মুখে সেটা ধরে আছে এক হাত নাকি পায়ে? নিচে ঝুলছে দলিল-দস্তাবেজ। ৪১ নম্বর গেছোবাজার, কাগেয়াপটির এই কাকেরা সব ধরনের হিসাবি ও বেহিসাবি, খুচরা ও পাইকারি—সব গণনার কাজ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সম্পন্ন করে থাকে। এই বর্ণনার সঙ্গে যেন এই আঁকাটা না হলে সেটা অসম্পূর্ণই থেকে যেত। এক ঘরোয়া আলোচনায় একজন নামকরা চিত্রশিল্পী বলেছিলেন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও জিনগতভাবে সুকুমার রায় আঁকা পেয়েছিলেন ফলে তাঁর আঁকায় জীবন ছিল। রিয়েলিস্টিক আঁকতেই তিনি ভালোবাসতেন কারণ আঁকায় বিশ্বাসযোগ্যতা আনা। আদতেই সুকুমার রায়ের ইলাস্ট্রেশনগুলো দেখতে বোঝা যায়, সেই কথার সত্যতা। হ য ব র ল-এর সেই ফিচেল বিড়াল, যা কিনা সুকুমার সমগ্র বইয়ের প্রচ্ছদে এসে সব বাংলা ভাষাভাষী পাঠকের মনে ঢুকে গেছে। সেটার এক চোখ টেপা বাঁকা হাসি যেন সুকুমারের গোটা সাহিত্যের মূল মেজাজটাই ধরে বসে আছে।
‘একজনের মাথার ব্যারাম ছিল, সে সব জিনিসের নামকরণ করত। তার জুতোর নাম ছিল অবিমৃশ্যকারিতা, তার ছাতার নাম ছিল প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব, তার গাড়ুর নাম ছিল পরমকল্যাণবরেষু—কিন্তু যেই তার বাড়ির নাম দিয়েছে কিংকর্তব্যবিমূঢ়, অমনি ভূমিকম্প হয়ে বাড়িটাড়ি সব পড়ে গিয়েছে।’ হ য ব র ল-তে লিখেছিলেন সুকুমার। ‘পাগলা দাশু-র যে চিত্র সুকুমারের আঁকায় পাই, তা যেমন চরিত্রকে প্রদর্শিত করে তেমনি মিথে পরিণত হওয়া ‘দ্রিঘাংচু’; চন্দ্রবিন্দু, শ্রীকাকেশ্বর কুচকুচে, উদো আর বুদো, হিজিবিজবিজ, ব্যাকরণ শিং, বি. এ. খাদ্যবিশারদ, ন্যাড়া হ য ব র ল-এর চরিত্রগুলো নিয়মের বাইরে বেরিয়ে যাচাই করলে দেখবেন কোনটিই কাল্পনিক নয়, এমনকি ১০০ বছর আগের নয়, সমসাময়িক। অতএব, বোধ প্রয়োগ করলেই বোঝা যাবে সুকুমার রায় ব্যক্তিটি; আঁকায় ও লেখায় ‘ননসেন্স’ শব্দটির বিকল্প মানে তৈরি করেছিলেন। আর তাই হয়তো এত বছর পরেও গুঞ্জন শুনি কবীর সুমনের সুরে-‘আমাকে ভাবায় সুকুমার রায়/আমাকে ভাবায় সুকুমার রায়।’
আকাশি রঙের বাড়ি। দোতলায় দুটি কক্ষে আলো জ্বলছে। সন্ধ্যার আবছা আঁধারে ছেয়ে আছে বাড়িটির চারদিকের গাছগুলো। সন্ধ্যার নীল আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে পেঁজা তুলোর মতো মেঘ। বাড়ির সামনে ল্যাম্পপোস্টের আলোয় জলাশয়ে প্রকৃতির এই মোহনীয় ছবি প্রতিফলিত হয়েছে।
২ দিন আগেচারুশিল্প হচ্ছে মানুষের অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যম। একটি ছবি একটি বিপ্লবের উন্মেষ ঘটাতে পারে। ছবি শুধু বিনোদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি বিপ্লবের বার্তাও নিয়ে আসে।
১৩ দিন আগেআপনি যে বয়সেরই হোন না কেন, এই বই পড়লে তারুণ্যশক্তিকে অনুভব করবেন, অনুপ্রাণিত হবেন। নতুন শুরুর একটা তাগিদ পাবেন। এই তরুণদের প্রত্যেকের মতো আপনিও বলে উঠবেন—সব সম্ভব! এই বইয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে জন্ম নেওয়া অবহেলিত অবস্থা থেকে সাফল্যের শীর্ষে যাওয়ার পথচলার গল্প উঠে এসেছে। প্রায় চার শ পৃষ্ঠার বইটির দাম
২০ দিন আগেপ্রকাশনা সংস্থা ‘ঐতিহ্য’ তার দুই যুগের পথচলা (২০০০-২০২৪) স্মরণীয় করে রাখতে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে দশ দিনব্যাপী ‘ঐতিহ্য বই উৎসব ২০২৪’ আয়োজন করেছে। আজ ২ নভেম্বর শনিবার বেলা ১১টায় যৌথভাবে উৎসব উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বিশিষ্ট লেখক-গবেষক শারমিন আহমদ এবং তরুণ
২০ দিন আগে