নওশাদ জামিল
শতাব্দীর পর শতাব্দী পরাধীন ছিল বাঙালি জাতি, গৌরবোজ্জ্বল মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে জাতি অর্জন করেছে রক্তভেজা লাল-সবুজের পতাকা, প্রতিষ্ঠা করেছে নিজস্ব ভূখণ্ড ও মানচিত্র। এ অর্জনের প্রধান কান্ডারি, স্বাধীন বাংলাদেশ অভ্যুদয়ের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বিজয় একসূত্রেই গাঁথা। বঙ্গবন্ধু ও বাঙালির বিজয়কে কখনো বিচ্ছিন্ন করে ভাবা উচিত নয়। ফলে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে জানা ও গবেষণা অত্যন্ত জরুরি। এ তাগিদ থেকে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যকে নিয়ে সম্প্রতি তিনটি উপন্যাস লিখেছেন কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক। বঙ্গবন্ধুর অন্যতম অনুপ্রেরণাদাতা বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিবকে নিয়ে তিনি লিখেছেন অনন্য আবেগদীপ্ত উপন্যাস ‘আমার রেণু’। এটিই ফজিলাতুন নেছা মুজিবকে নিয়ে লেখা প্রথম উপন্যাস। লিখেছেন শেখ রাসেলকে নিয়ে ভিন্নধারার উপন্যাস ‘রাসেল তার আব্বুর হাত ধরে হেঁটে যায়’। লিখেছেন বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যার জীবনভিত্তিক উপন্যাস ‘হে সন্তপ্ত সময়’। সম্প্রতি তিনটি বই প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের প্রধানতম প্রকাশনা সংস্থা আগামী প্রকাশনী। বইগুলোয় যেমন বঙ্গবন্ধুর কথা ঘুরেফিরে উঠে এসেছে, তেমনই উঠে এসেছে বঙ্গবন্ধু পরিবারের অজানা অধ্যায়।
বাঙালির ইতিহাস বড় বৈচিত্র্যময় ও সমৃদ্ধ, তার ঘোরলাগা ইতিহাসের ভেতর এত বেশি রোমাঞ্চকর ঘটনার ঘনঘটা, সেই গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় নিয়ে হাজার হাজার উপন্যাস লেখা সম্ভব। বাঙালির ইতিহাস, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বকে নিয়ে কটি উপন্যাস লেখা হয়েছে? বাস্তবতায় দেখা যায়, বাঙালির গৌরবগাথা নিয়ে শিল্প-সাহিত্য, চলচ্চিত্রে যত বহুমাত্রিক কাজ হওয়া উচিত ছিল, তা হয়নি। যুদ্ধ, ইতিহাস নিয়ে ইউরোপ-আমেরিকাসহ সারা বিশ্বেই বহুমাত্রিক কাজ হয়েছে, হচ্ছে এখনো। ইউরোপে ‘ওয়ার লিটারেচার’ হিসেবে একটা গুরুত্বপূর্ণ ধারা রয়েছে। আমাদের শিল্প-সাহিত্য, চলচ্চিত্র ‘ওয়ার লিটারেচার’ তত গুরুত্বপূর্ণ হয়নি এখনো। সেটা হলে জাতি যেমন অনুপ্রেরণা পাবে, তেমনই পাবে সামনে এগিয়ে যাওয়ার অদম্য সাহস।
ইতিহাস নিয়ে খুব বেশি উপন্যাস লেখা হয়নি, তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই যে ইতিহাসের আশ্রয়ে উপন্যাস রচনা সহজ নয়। ইতিহাসের তথ্য ও ঘটনাপঞ্জি ক্রমানুসারে সাজালেই ইতিহাসভিত্তিক উপন্যাস হয়ে যাবে, তা তো নয়। কেননা ঐতিহাসিকের কাজ আর ঔপন্যাসিকের কাজ এক নয়—দুজনের কাজ পুরোপুরি ভিন্নধর্মী। ঐতিহাসিক তথ্য-উপাত্ত সত্য ও নির্মোহভাবে উপস্থাপন করেন; ঔপন্যাসিক কল্পনাবোধের মধ্য দিয়ে ইতিহাসের নানা অলিগলিতে টর্চ ফেলে—শুধু ওপর থেকে নয়, এক পাশ থেকেও নয়, চারদিক থেকে আলো ফেলে চাপা ত্রস্ত্র অন্ধকারের মধ্যে খোঁজেন নতুন আলো, নতুন দীপ্তি। আনোয়ারা সৈয়দ হক সেই দীপ্তির সন্ধানে নিজেকে বর্তমান থেকে সরিয়ে উপস্থিত হয়েছেন ইতিহাসের সন্ধিক্ষণে, কল্পনার আশ্রয়ে অবলোকন করেছেন বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ-পূর্বাপর নানামাত্রিক ঘটনাপ্রবাহ। ইতিহাসকে পাশে রেখে, কল্পনার সঙ্গে সেতুবন্ধ নির্মাণ করে হাজির করেছেন ইতিহাসের নায়ক-নায়িকাদের, খলনায়কদেরও। শুধু নায়ক-নায়িকা নন, ইতিহাসের যুগসন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে সাধারণ মানুষজন কী ভাবেন, তাঁদের স্বপ্ন, ইচ্ছা, সামাজিক ও ব্যক্তিগত জীবনের টানাপোড়েন, দৃশ্যপুঞ্জ ও ঘটনাকে সংবেদনশীল দৃষ্টিতে উপস্থাপন করেছেন তিনি।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘প্রথম আলো’ পড়তে পড়তে উপলব্ধি করেছিলাম যে বিবেকানন্দ, রামকৃষ্ণ কিংবা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর—তাঁরা ইতিহাসের নিছক চরিত্র নয়, উপন্যাসেরও মহৎ চরিত্র। ‘আমার রেণু’ পড়তে পড়তে একটা স্বচ্ছ ধারণা তৈরি হয় যে তিনি ইতিহাসের অন্যতম নেপথ্য নায়িকা। তাঁকে জানার মধ্য দিয়ে আমার অসাধারণ দৃঢ়চেতা এক বাঙালি নারীর কথা যেমন জানতে পারি, তেমনই জানতে পারি বাঙালির মহানায়ক বঙ্গবন্ধুকেও।
আনোয়ারা সৈয়দ হক অত্যন্ত পরিশ্রমী লেখক; ইতিহাসের চরিত্রকে নিয়ে উপন্যাস লিখতে গিয়ে তাঁকে দিনের পর দিন প্রচুর বইপুস্তক পড়তে হয়েছে, বিশদ তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে হয়েছে, সব মিলিয়ে তাঁকে ইতিহাসের পাতায় মুখ গুঁজে পড়ে থাকতে হয়েছে বছরের পর বছর। ইতিহাসের প্রতিপক্ষ হিসেবে নয়, পরিপূরক হিসেবে তিনি উপন্যাস রচনা করেছেন, তার জন্য তাঁকে সর্বদা সজাগ থাকতে হয়েছে—কোনো তথ্য ভুল যেন না হয়ে যায়! কেননা ইতিহাস বিকৃতির কোনো অধিকার ঔপন্যাসিকের নেই, ঐতিহাসিকেরও নেই।
আনোয়ারা সৈয়দ হক উপন্যাস লিখতে গিয়ে তথ্যের বিকৃতি করেননি, আবার ডকু-ফিকশনও লেখেননি, লিখেছেন উপন্যাসই। ঐতিহাসিক উপন্যাস লিখতে গিয়ে কেউ কেউ শুধু ডকুমেন্টই লেখেন, ফিকশনটা আর লিখতে পারেন না। আনোয়ারা সৈয়দ হক ডকুমেন্টকে নির্ভর করে ফিকশনই লিখেছেন—তাঁর লেখায় ডকু যতটুকু, ফিকশন তার চেয়ে বেশি। ইতিহাস তো উপন্যাস নয়, আবার উপন্যাস ইতিহাসও নয়। দুটি আলাদা। তবে এটাও সত্য যে ইতিহাস উপন্যাসের একটা উপাদানমাত্র। সেটা শক্তিশালী উপাদানই, কিন্তু আখ্যান এড়িয়ে ইতিহাসের সরণি ধরে হাঁটলে উপন্যাস পাওয়া যায় না; ইতিহাসকে পাশে রেখে আখ্যানের আলপথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছানো যায় উপন্যাসের জমিনে। তিনি উপন্যাসের উর্বর জমিনেরই সন্ধান পেয়েছেন, ফলিয়েছেন রত্নভান্ডার।
আনোয়ারা সৈয়দ হক তাঁর ‘আমার রেণু’ উপন্যাসটি অত্যন্ত দরদ দিয়ে লিখেছেন, তুলে এনেছেন ইতিহাসের ভিন্নধর্মী অধ্যায়। এটি যেন আমাদেরই গৌরবের ইতিহাস।
বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছাকে অবলম্বন করে আখ্যানের ডালপালা বিস্তার হয়েছে, তাতে এর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে উঠে এসেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও। উপন্যাস লিখতে গিয়ে তিনি ইতিহাসের যেমন আশ্রয় নিয়েছেন, তেমনই ঔপন্যাসিকের প্রধান শক্তি কল্পনাও বাধাগ্রস্ত করেননি। বাস্তবতা ও কল্পনার আকাশে রেণু হয়ে উঠেছে ইতিহাসের অনন্য এক চরিত্র। অনুরূপভাবে তিনি বেশ খেটেখুটে লিখেছেন ‘হে সন্তপ্ত সময়’। উপন্যাসের মূলে রয়েছেন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। উপন্যাসের পটভূমি ১৯৭৫ থেকে ১৯৮১ সময়কাল। এই উপন্যাসের নায়ক-নায়িকারা অনেকেই জীবিত, অনেকেই মৃত, ফলে লেখককে অনেক ভেবেচিন্তে সময়কে উপস্থাপন করতে হয়েছে।
লেখক তাঁর নিজস্ব বয়ানে বিভিন্ন বই ও পত্রিকার সাহায্যে উপন্যাসটি রচনা করেছেন। তুলে ধরেছেন পিতা-মাতা এবং প্রায় সর্বস্ব হারানো দুই বোনের সংগ্রামী জীবনের আলেখ্য। এ ছাড়া শেখ রাসেলকে নিয়ে লেখাটা শুধু শিশু-কিশোরেরা নয়, বড়দেরও নানা অজানা তথ্যের সন্ধান দেবে, পাশাপাশি দেবে উপন্যাস পাঠের অনন্য স্বাদ ও উপলব্ধি।
মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধ-পরবর্তী স্বাধীন বাংলাদেশে ইতিহাসভিত্তিক বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপন্যাস, নাটক, কবিতা রচিত হয়েছে, নির্মিত হয়েছে বেশ কিছু চলচ্চিত্রও; কিন্তু তা পর্যাপ্ত নয়। বাস্তবতা যখন হতাশাময়, তখন ইতিহাসে সাহিত্যের দায় মোচনে এগিয়ে এসেছেন কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক, রচনা করেছেন ইতিহাসভিত্তিক তিনটি উপন্যাস। নির্দ্বিধায় বলা যায়, তাতে ইতিহাসের কিছুটা দায় মোচন হয়েছে।
শতাব্দীর পর শতাব্দী পরাধীন ছিল বাঙালি জাতি, গৌরবোজ্জ্বল মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে জাতি অর্জন করেছে রক্তভেজা লাল-সবুজের পতাকা, প্রতিষ্ঠা করেছে নিজস্ব ভূখণ্ড ও মানচিত্র। এ অর্জনের প্রধান কান্ডারি, স্বাধীন বাংলাদেশ অভ্যুদয়ের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বিজয় একসূত্রেই গাঁথা। বঙ্গবন্ধু ও বাঙালির বিজয়কে কখনো বিচ্ছিন্ন করে ভাবা উচিত নয়। ফলে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে জানা ও গবেষণা অত্যন্ত জরুরি। এ তাগিদ থেকে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যকে নিয়ে সম্প্রতি তিনটি উপন্যাস লিখেছেন কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক। বঙ্গবন্ধুর অন্যতম অনুপ্রেরণাদাতা বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিবকে নিয়ে তিনি লিখেছেন অনন্য আবেগদীপ্ত উপন্যাস ‘আমার রেণু’। এটিই ফজিলাতুন নেছা মুজিবকে নিয়ে লেখা প্রথম উপন্যাস। লিখেছেন শেখ রাসেলকে নিয়ে ভিন্নধারার উপন্যাস ‘রাসেল তার আব্বুর হাত ধরে হেঁটে যায়’। লিখেছেন বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যার জীবনভিত্তিক উপন্যাস ‘হে সন্তপ্ত সময়’। সম্প্রতি তিনটি বই প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের প্রধানতম প্রকাশনা সংস্থা আগামী প্রকাশনী। বইগুলোয় যেমন বঙ্গবন্ধুর কথা ঘুরেফিরে উঠে এসেছে, তেমনই উঠে এসেছে বঙ্গবন্ধু পরিবারের অজানা অধ্যায়।
বাঙালির ইতিহাস বড় বৈচিত্র্যময় ও সমৃদ্ধ, তার ঘোরলাগা ইতিহাসের ভেতর এত বেশি রোমাঞ্চকর ঘটনার ঘনঘটা, সেই গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় নিয়ে হাজার হাজার উপন্যাস লেখা সম্ভব। বাঙালির ইতিহাস, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বকে নিয়ে কটি উপন্যাস লেখা হয়েছে? বাস্তবতায় দেখা যায়, বাঙালির গৌরবগাথা নিয়ে শিল্প-সাহিত্য, চলচ্চিত্রে যত বহুমাত্রিক কাজ হওয়া উচিত ছিল, তা হয়নি। যুদ্ধ, ইতিহাস নিয়ে ইউরোপ-আমেরিকাসহ সারা বিশ্বেই বহুমাত্রিক কাজ হয়েছে, হচ্ছে এখনো। ইউরোপে ‘ওয়ার লিটারেচার’ হিসেবে একটা গুরুত্বপূর্ণ ধারা রয়েছে। আমাদের শিল্প-সাহিত্য, চলচ্চিত্র ‘ওয়ার লিটারেচার’ তত গুরুত্বপূর্ণ হয়নি এখনো। সেটা হলে জাতি যেমন অনুপ্রেরণা পাবে, তেমনই পাবে সামনে এগিয়ে যাওয়ার অদম্য সাহস।
ইতিহাস নিয়ে খুব বেশি উপন্যাস লেখা হয়নি, তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই যে ইতিহাসের আশ্রয়ে উপন্যাস রচনা সহজ নয়। ইতিহাসের তথ্য ও ঘটনাপঞ্জি ক্রমানুসারে সাজালেই ইতিহাসভিত্তিক উপন্যাস হয়ে যাবে, তা তো নয়। কেননা ঐতিহাসিকের কাজ আর ঔপন্যাসিকের কাজ এক নয়—দুজনের কাজ পুরোপুরি ভিন্নধর্মী। ঐতিহাসিক তথ্য-উপাত্ত সত্য ও নির্মোহভাবে উপস্থাপন করেন; ঔপন্যাসিক কল্পনাবোধের মধ্য দিয়ে ইতিহাসের নানা অলিগলিতে টর্চ ফেলে—শুধু ওপর থেকে নয়, এক পাশ থেকেও নয়, চারদিক থেকে আলো ফেলে চাপা ত্রস্ত্র অন্ধকারের মধ্যে খোঁজেন নতুন আলো, নতুন দীপ্তি। আনোয়ারা সৈয়দ হক সেই দীপ্তির সন্ধানে নিজেকে বর্তমান থেকে সরিয়ে উপস্থিত হয়েছেন ইতিহাসের সন্ধিক্ষণে, কল্পনার আশ্রয়ে অবলোকন করেছেন বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ-পূর্বাপর নানামাত্রিক ঘটনাপ্রবাহ। ইতিহাসকে পাশে রেখে, কল্পনার সঙ্গে সেতুবন্ধ নির্মাণ করে হাজির করেছেন ইতিহাসের নায়ক-নায়িকাদের, খলনায়কদেরও। শুধু নায়ক-নায়িকা নন, ইতিহাসের যুগসন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে সাধারণ মানুষজন কী ভাবেন, তাঁদের স্বপ্ন, ইচ্ছা, সামাজিক ও ব্যক্তিগত জীবনের টানাপোড়েন, দৃশ্যপুঞ্জ ও ঘটনাকে সংবেদনশীল দৃষ্টিতে উপস্থাপন করেছেন তিনি।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘প্রথম আলো’ পড়তে পড়তে উপলব্ধি করেছিলাম যে বিবেকানন্দ, রামকৃষ্ণ কিংবা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর—তাঁরা ইতিহাসের নিছক চরিত্র নয়, উপন্যাসেরও মহৎ চরিত্র। ‘আমার রেণু’ পড়তে পড়তে একটা স্বচ্ছ ধারণা তৈরি হয় যে তিনি ইতিহাসের অন্যতম নেপথ্য নায়িকা। তাঁকে জানার মধ্য দিয়ে আমার অসাধারণ দৃঢ়চেতা এক বাঙালি নারীর কথা যেমন জানতে পারি, তেমনই জানতে পারি বাঙালির মহানায়ক বঙ্গবন্ধুকেও।
আনোয়ারা সৈয়দ হক অত্যন্ত পরিশ্রমী লেখক; ইতিহাসের চরিত্রকে নিয়ে উপন্যাস লিখতে গিয়ে তাঁকে দিনের পর দিন প্রচুর বইপুস্তক পড়তে হয়েছে, বিশদ তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে হয়েছে, সব মিলিয়ে তাঁকে ইতিহাসের পাতায় মুখ গুঁজে পড়ে থাকতে হয়েছে বছরের পর বছর। ইতিহাসের প্রতিপক্ষ হিসেবে নয়, পরিপূরক হিসেবে তিনি উপন্যাস রচনা করেছেন, তার জন্য তাঁকে সর্বদা সজাগ থাকতে হয়েছে—কোনো তথ্য ভুল যেন না হয়ে যায়! কেননা ইতিহাস বিকৃতির কোনো অধিকার ঔপন্যাসিকের নেই, ঐতিহাসিকেরও নেই।
আনোয়ারা সৈয়দ হক উপন্যাস লিখতে গিয়ে তথ্যের বিকৃতি করেননি, আবার ডকু-ফিকশনও লেখেননি, লিখেছেন উপন্যাসই। ঐতিহাসিক উপন্যাস লিখতে গিয়ে কেউ কেউ শুধু ডকুমেন্টই লেখেন, ফিকশনটা আর লিখতে পারেন না। আনোয়ারা সৈয়দ হক ডকুমেন্টকে নির্ভর করে ফিকশনই লিখেছেন—তাঁর লেখায় ডকু যতটুকু, ফিকশন তার চেয়ে বেশি। ইতিহাস তো উপন্যাস নয়, আবার উপন্যাস ইতিহাসও নয়। দুটি আলাদা। তবে এটাও সত্য যে ইতিহাস উপন্যাসের একটা উপাদানমাত্র। সেটা শক্তিশালী উপাদানই, কিন্তু আখ্যান এড়িয়ে ইতিহাসের সরণি ধরে হাঁটলে উপন্যাস পাওয়া যায় না; ইতিহাসকে পাশে রেখে আখ্যানের আলপথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছানো যায় উপন্যাসের জমিনে। তিনি উপন্যাসের উর্বর জমিনেরই সন্ধান পেয়েছেন, ফলিয়েছেন রত্নভান্ডার।
আনোয়ারা সৈয়দ হক তাঁর ‘আমার রেণু’ উপন্যাসটি অত্যন্ত দরদ দিয়ে লিখেছেন, তুলে এনেছেন ইতিহাসের ভিন্নধর্মী অধ্যায়। এটি যেন আমাদেরই গৌরবের ইতিহাস।
বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছাকে অবলম্বন করে আখ্যানের ডালপালা বিস্তার হয়েছে, তাতে এর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে উঠে এসেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও। উপন্যাস লিখতে গিয়ে তিনি ইতিহাসের যেমন আশ্রয় নিয়েছেন, তেমনই ঔপন্যাসিকের প্রধান শক্তি কল্পনাও বাধাগ্রস্ত করেননি। বাস্তবতা ও কল্পনার আকাশে রেণু হয়ে উঠেছে ইতিহাসের অনন্য এক চরিত্র। অনুরূপভাবে তিনি বেশ খেটেখুটে লিখেছেন ‘হে সন্তপ্ত সময়’। উপন্যাসের মূলে রয়েছেন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। উপন্যাসের পটভূমি ১৯৭৫ থেকে ১৯৮১ সময়কাল। এই উপন্যাসের নায়ক-নায়িকারা অনেকেই জীবিত, অনেকেই মৃত, ফলে লেখককে অনেক ভেবেচিন্তে সময়কে উপস্থাপন করতে হয়েছে।
লেখক তাঁর নিজস্ব বয়ানে বিভিন্ন বই ও পত্রিকার সাহায্যে উপন্যাসটি রচনা করেছেন। তুলে ধরেছেন পিতা-মাতা এবং প্রায় সর্বস্ব হারানো দুই বোনের সংগ্রামী জীবনের আলেখ্য। এ ছাড়া শেখ রাসেলকে নিয়ে লেখাটা শুধু শিশু-কিশোরেরা নয়, বড়দেরও নানা অজানা তথ্যের সন্ধান দেবে, পাশাপাশি দেবে উপন্যাস পাঠের অনন্য স্বাদ ও উপলব্ধি।
মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধ-পরবর্তী স্বাধীন বাংলাদেশে ইতিহাসভিত্তিক বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপন্যাস, নাটক, কবিতা রচিত হয়েছে, নির্মিত হয়েছে বেশ কিছু চলচ্চিত্রও; কিন্তু তা পর্যাপ্ত নয়। বাস্তবতা যখন হতাশাময়, তখন ইতিহাসে সাহিত্যের দায় মোচনে এগিয়ে এসেছেন কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক, রচনা করেছেন ইতিহাসভিত্তিক তিনটি উপন্যাস। নির্দ্বিধায় বলা যায়, তাতে ইতিহাসের কিছুটা দায় মোচন হয়েছে।
হিমালয় পাই এর নতুন বই’ ডিটাচমেন্ট টু ডিপার্চার’ প্রকাশিত হয়েছে। বইটি বাজারে এনেছে জনপ্রিয় প্রকাশনা সংস্থা আদর্শ প্রকাশনী। বইটিতে মূলত উত্তর ভারতের বিভিন্ন শহর পরিভ্রমণের প্রেক্ষিতে লেখকের সোশিওলজিকাল, পলিটিক্যাল কালচারাল, হিস্টরিকাল, এনথ্রোপলজিকাল যেসব পর্যবেক্ষণ তৈরি হয়েছে সেগুলোকেই সোশ্যাল থিসিসরূ
৪ দিন আগে‘স্বাধীনতা সাম্য সম্প্রীতির জন্য কবিতা’ স্লোগান নিয়ে শুরু হচ্ছে জাতীয় কবিতা উৎসব ২০২৫। আগামী ১ ও ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি চত্বরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে কবিতার এই আসর। আজ শনিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এটি জানানো হয়েছে...
১১ দিন আগেবাংলা একাডেমি ২০২৪ সালের ষাণ্মাসিক ফেলোশিপ এবং ছয়টি পুরস্কারের জন্য মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেছে। মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস, বিজ্ঞান, শিল্পকলা এবং ভাষা গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি ফেলোশিপ পাচ্ছেন। এ ছাড়া প্রবন্ধ, শিশুসাহিত্য, নাটক এবং কথাসাহিত্যে অবদানের জন্য মোট ছয়টি পুরস্কার দেওয়া হচ্
২৬ ডিসেম্বর ২০২৪সূক্ষ্মচিন্তার খসড়াকে ধারণ করে শিল্প-সাহিত্য ভিত্তিক ছোটকাগজ ‘বামিহাল’। বগুড়ার সবুজ শ্যামল মায়াময় ‘বামিহাল’ গ্রামের নাম থেকেই এর নাম। ‘বামিহাল’ বিশ্বাস করে বাংলার আবহমান জীবন, মানুষ-প্রকৃতি কিংবা সুচিন্তার বিশ্বমুখী সূক্ষ্ম ভাবনার প্রকাশই আগামীর সবুজ-শ্যামল মানববসতি বিনির্মাণ করতে পারে...
২১ ডিসেম্বর ২০২৪