কোটা সংস্কার আন্দোলন: পালিয়ে বেড়াচ্ছেন কর্ণকাঠীর যুবকেরা

খান রফিক, বরিশাল
প্রকাশ : ২৯ জুলাই ২০২৪, ০৯: ২২
আপডেট : ৩০ জুলাই ২০২৪, ০৯: ০২

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রভাব পড়েছে পাশের কর্ণকাঠী গ্রামের বাসিন্দাদের ওপর। আন্দোলনের সময় পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ এনে অজ্ঞাতনামা পাঁচ শতাধিক ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। এ মামলায় গ্রেপ্তারের ভয়ে এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন কর্ণকাঠীর যুবকেরা।

বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন খয়রাবাদ সেতুর পাশের এক চা-দোকানি জানান, আন্দোলন করেছেন ছাত্ররা। এলাকাবাসী তাঁদের পাশে ছিলেন। কেউ পানি পান করিয়েছেন, কেউ শরবত দিয়েছেন, কেউ চা বিতরণ করেছেন। এই অপরাধে এখন মামলা দিয়ে সাধারণ মানুষকে পুলিশ হয়রানি করছে। যে কারণে এলাকার পুরুষেরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। অন্য এক বাসিন্দা জানান, তাঁর বাসায় ছাত্ররা ভাড়া থাকেন।আশপাশের বহু ভবনে ছাত্রছাত্রীরা থাকেন। এখন মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার ভয়ে খাবার খেতেও যেতে পারেন না।

বরিশাল পূর্বাঞ্চলীয় উন্নয়ন পরিষদের সদস্যসচিব মুনাওয়ারুল ইসলাম অলি বলেন, কর্ণকাঠীবাসীকে সব ধরনের হয়রানি বন্ধের দাবি জানান তাঁরা। যদি কোনো দুষ্কৃতকারী থাকে, তাহলে পুলিশ তাঁদের আইনের আওতায় আনতে পারে। কিন্তু ঢালাওভাবে গ্রামবাসীকে হয়রানি করার ঘটনা উন্নয়ন পরিষদ সমর্থন করে না। তাঁরা এর নিন্দা জানান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারীরাও তাঁদের চার দফা দাবিতে এলাকাবাসীকে হয়রানি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে তাঁরা কেন্দ্রীয়ভাবে ঘোষণা দেওয়া আলটিমেটামের সঙ্গে একমত প্রকাশ করেছেন। জানতে চাইলে ববির কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক সুজয় শুভ বলেন, ‘সারা দেশের শিক্ষার্থীদের ডাকা কর্মসূচির সঙ্গে আমরা একমত। কেন্দ্রীয়ভাবে যদি ১০০ দাবি তোলে তার সঙ্গেও একমত। আমরাও শিক্ষার্থীদের মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার চাই। আলটিমেটাম অনুযায়ী দাবি মানা না হলে ববি শিক্ষার্থীরাও কঠোর কর্মসূচি দেবে।’

সুজয় জানান, গত শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তাঁরা যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা বিকৃত করায় তাঁরা বিরক্ত। শনিবার রাতেই এক ভিডিও বার্তায় তাঁরা জানিয়েছেন, কর্মসূচি প্রত্যাহার করেননি। এ জন্য তাঁদের ওপর চাপ আসছে।

চাপের প্রসঙ্গ টেনে সুজয় বলেন, ‘বন্দর থানার পুলিশ একটি মামলা করে অজ্ঞাতনামা বহু আসামি করেছে। ওই মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন কর্ণকাঠীবাসী এবং সাধারণ ছাত্রদের হয়রানি করা হচ্ছে। যে কারণে কর্নকাঠি এখন পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। আমরা শনিবার যে চার দফা দাবি তুলেছি, তার মধ্যে অন্যতম ছিল বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন এলাকায় সাধারণ জনগণকে কোনো ধরনের মামলার আসামি কিংবা হয়রানি করা যাবে না।’

এ প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম আর মুকুল সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। যাঁদের সবাই এলাকাবাসী ও বহিরাগত। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

এদিকে বিএম কলেজে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া এস এম হাসান রাজু জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীরা পুলিশ এবং ছাত্রলীগের হয়রানির শিকার হচ্ছেন। মামলা আর ছাত্রলীগের ভয়ে তাঁরা ক্যাম্পাসছাড়া। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত