Ajker Patrika

দাবদাহে দুর্গম পাহাড়ে পানির তীব্র সংকট

  • জুরাছড়ি উপজেলার পাহাড়িরা রয়েছেন পানির তীব্র সংকটে।
  • নেমে গেছে পানির স্তর, শুকিয়ে গেছে পাহাড়ি ছড়া, ঝরনা ও নালা।
  • জলবায়ু পরিবর্তন ও মাত্রাতিরিক্ত হারে গাছ কাটাকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞেরা।
সুমন্ত চাকমা, জুরাছড়ি (রাঙামাটি) 
দাবদাহে দুর্গম পাহাড়ে পানির তীব্র সংকট। ছবি: আজকের পত্রিকা
দাবদাহে দুর্গম পাহাড়ে পানির তীব্র সংকট। ছবি: আজকের পত্রিকা

পার্বত্য জেলা রাঙামাটির জুরাছড়ি উপজেলার দুর্গম পাহাড়ি গ্রামে পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। নেই কোনো নলকূপ। দাবদাহে শুকিয়ে গেছে পাহাড়ি ছড়া, ঝরনা ও নালা। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় কুয়ার পানিও পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে পাহাড়ে বসবাসরত মানুষের কষ্ট বহুগুণ বেড়েছে।

উপজেলার জুরাছড়ি ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের দুর্গম এলাকায় অবস্থিত কুকিছড়া, ত্রিপুরাপাড়া, জনতাপাড়া, বারুদগলা ও সোহেলপাড়ায় ২৪৭টি পরিবারের বসবাস। তাদের পেশা কৃষিকাজ (জুমচাষ)। নেই বিদ্যুৎ। চিকিৎসাসেবার জন্য নেই কমিউনিটি ক্লিনিকও। এই ওয়ার্ডে ছয়টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও নেই নিরাপদ পানির জন্য কোনো নলকূপ।

শুধু জুরাছড়ি ইউনিয়নে নয়, নিরাপদ পানির সংকট বনযোগীছড়া ইউনিয়নের বালিশপাড়া, ছোট পানছড়ি ও এরাইছড়ি; মৈদং ইউনিয়নের আমতলা বাদলহাটছড়া, জামুরাছড়ি ও কাঁঠাল তুলি এবং দুমদুম্যা ইউনিয়নের করল্যাছড়ি, দুলুছড়ি, শিমাইতুলি ও তেছড়িতে পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, জুরাছড়ি ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের গ্রামগুলোর পাদদেশ দিয়ে বয়ে গেছে পানছড়ি ছড়া। এই ছড়ার ছোট ছোট প্রশাখা রয়েছে। কিন্তু সেসব শুকিয়ে গেছে। গ্রীষ্মে গ্রামের লোকজনের একমাত্র ভরসা কুয়ার পানি। কিন্তু পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় কুয়ার পানিও পাওয়া যাচ্ছে না।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পাড়াগুলো পাহাড়ের চূড়ায় হওয়ায় পাড়া থেকে প্রায় ৫০০-৮০০ ফুট নিচে নামলে ছোট ঝিরি বা ঝরনার দেখা মেলে। ঝিরিগুলোয় পানি নেই বললেই চলে। তবুও এর ওপরই ভরসা করতে হচ্ছে তাঁদের। তাঁরা বলছেন, আগের মতো বড় বড় গাছ না থাকায় শুষ্ক মৌসুমে ছোট ঝিরি-ঝরনাগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে।

স্থানীয় ওয়ার্ড সদস্য অরুণ চাকমা বলেন, প্রচণ্ড গরমে পাহাড়ে মানুষের জীবনযাপন অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে পানির সংকট পরিস্থিতি আরও খারাপ করেছে।

সোহেলপাড়ার কিরণ জয় চাকমা বলেন, ‘শুষ্ক মৌসুম এলেই আমাদের এলাকায় খাবারের চেয়ে বিশুদ্ধ পানির সংকট চরমে পৌঁছায়। আমাদের নারীরা প্রতিদিন পাড়া থেকে কয়েক শ ফুট নিচে নেমে খাবার পানি, গৃহস্থালি ও রান্নার পানি সংগ্রহ করেন।’ স্থানীয় মল্কা বানু চাকমা ও রঞ্জিতা চাকমা বলেন, ‘গ্রীষ্মকাল এলে আমাদের গোসলের কথা ভুলে যেতে হয়। দুই-তিন দিন পর পর গোসল করতে পারি। তাও আবার এক-দুই লিটার পানি দিয়ে গোসল সারতে হয়।’

উন্নয়নকর্মী পলাশ খীসা জানান, এসব গ্রামে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নিরাপদ পানির সংকটের পাশাপাশি কৃষির ওপর ব্যাপক চাপ পড়ছে। তীব্র গরম ও পানির সংকটে গবাদিপশুর মৃত্যুও বাড়ছে। তিনি বলেন, ঝিরি-ছড়াগুলো রক্ষায় সরকারের সহযোগিতার পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন।

জুরাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ইমন চাকমা বলেন, ৫ নম্বর ওয়ার্ডে গ্রীষ্মকাল এলে পানির সংকট দেখা দেয়। চাহিদার তুলনায় মাত্রাতিরিক্ত গাছ কেটে ফেলা ও বাণিজ্যিক সেগুন চাষে পানির স্তর দিন দিন নেমে যাচ্ছে। পানির সংকট নিরসনে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগসহ বিভিন্ন উন্নয়ন দপ্তরে প্রস্তাব পাঠানো হলেও বাস্তবায়নের আগ্রহ পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি সরকারি-বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোর এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান।

উপজেলা উপসহকারী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী রকি দে পানির সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, দুর্গম হওয়ায় এসব এলাকা পিছিয়ে রয়েছে। তবে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ থেকে রিং ওয়েল ও গ্র্যাভিটি ফ্লো সিস্টেম (জিএফএস) প্রকল্পের প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঢাবির সিন্ডিকেটে সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের চূড়ান্ত অনুমোদন

শ্বশুরকে জামাতার ফোন: ‘আপনার মেয়েকে মাইরা ফেলছি, লাশ নিয়ে যান’

স্ত্রীকে হত্যার পর লাশ সেপটিক ট্যাংকে ফেলে গেলেন ইমামতি করতে

ঐতিহাসিক শিমলা চুক্তি বাতিল করল পাকিস্তান, এর প্রভাব কী

সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের জামাতাকে অবসরে পাঠিয়েছে সরকার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত