ডাকাতির সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে ছোড়া গুলিতে নিজেদের লোকই নিহত

সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি 
প্রকাশ : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬: ৫৪
ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গভীররাতে প্রাইভেটকার আটকে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এ সময় দায়িত্বরত টহল পুলিশ এগিয়ে ডাকাত দল তাদের লক্ষ্য করে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়ে পালিয়ে যায়। তবে ডাকাত দলের ছোড়া গুলিতে তাদেরই এক সদস্য নিহত হয়েছেন।

গতকাল রোববার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টায় উপজেলার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পন্থিছিলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আজ সোমবার আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবুর রহমান।

নিহতের নাম মো. রাশেদ (২৬)। তিনি সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের মধ্যম সোনাইছড়ি এলাকার বাদশা আলমের ছেলে।

পুলিশ বলছে, মহাসড়কে ডাকাতির ঘটনায় ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী মো. নুরুজ্জামান (৩৩) বাদী হয়ে অজ্ঞাত ডাকাত দলের বিরুদ্ধে সোমবার সকালে সীতাকুণ্ড থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। পাশাপাশি গুলিতে নিহত ডাকাত রাশেদের বাবা বাদশা আলম বাদী হয়ে অজ্ঞাত ডাকাত দলের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী মো. নুরুজ্জামান ও থানায় দায়ের করা অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, রোববার রাতে ভুক্তভোগী নুরুজ্জামান বন্ধু জয়নালকে নিয়ে এক্সকেভেটরের পার্টস কিনতে প্রাইভেটকারে করে টাঙ্গাইল থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা হন তাঁরা। দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার সময় তাদের প্রাইভেটকারটি সীতাকুণ্ডের পন্থিছিলা এলাকা অতিক্রমের সময় ৭-৮ জন ব্যক্তি তাদের গাড়ি লক্ষ্য করে লোহার পাইপ ছুড়ে মারে। বিকট শব্দ শুনে কোনো সমস্যা হয়েছে কি না তা দেখতে কিছু দূর এগিয়ে গাড়িটি থামান তারা।

তৎক্ষণাৎ সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সদস্যরা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন এবং তাদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করেন। পরে তাদের তিনজনের হাতে থাকা মোবাইল ফোন ও টাকা ছিনিয়ে নেয়। এ সময় তাঁদের চিৎকার শুনে মহাসড়কে দায়িত্বরত টহল পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। ডাকাত দল পুলিশ সদস্যের উপস্থিতি টের পেয়ে তাদের লক্ষ্য করে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়ে পালিয়ে যায়।

তবে পালিয়ে যাওয়ার সময় ডাকাতদলের ছোড়া গুলিতে বিদ্ধ হয়ে এক ডাকাত আহত হন। পরে তাকে সঙ্গে পালানোর চেষ্টা করেন ডাকাত দল। পরে পুলিশসহ সকলে পিছু ধাওয়া করলে আহত সদস্যকে ফেলে পালিয়ে যায় ডাকাতদল। পরে তাঁকে আহত অবস্থায় পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়।

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী নুরুজ্জামান বলেন, ‘মহাসড়কে ডাকাতিতে অংশ নেওয়া সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সবাই মুখে মাস্ক পরা ছিল। তারা সবাই চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ও বিভিন্ন ভাষায় কথা বলছিল। শার্ট ও প্যান্ট পরিহিত ডাকাতদলের সব সদস্যের বয়স ২০ থেকে ৪৫ এর মধ্যে।’

এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ডাকাত দলের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেছেন বলে জানান।

এ বিষয়ে সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ডাকাতির সময় টহল পুলিশ ছুটে গেলে ডাকাতেরা তাদের লক্ষ্য করে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়ে পালিয়ে যায়। এ সময় ডাকাতের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হন রাশেদ নামের এক ডাকাত। ডাকাতেরা গুলিবিদ্ধ রাশেদকে উঠিয়ে জমি দিয়ে নেওয়ার সময় পুলিশ পিছু ধাওয়া করে। তখন তাঁকে ফেলে পালিয়ে যায় বাকি সদস্যরা। পরে জমি থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আটক করা হয় ওই সদস্যকে।

তিনি আরও বলেন, ‘মহাসড়কে ডাকাতদলের ফেলে যাওয়া দুটি রাম দা ও একটি লোহার পাইপ উদ্ধার করা হয়েছে। পরে গুলিবিদ্ধ ডাকাত রাশেদকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু তাঁর অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় সেখান থেকে তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে রেফার করা হয়। সেখানে (চমেকে) চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ (সোমবার) সকালে তাঁর মৃত্যু হয়।’

ওসি মজিবুর রহমান বলেন, ‘নিহত ডাকাতের প্যান্টের পকেটে চারটি মোবাইল ফোন ও কিছু নগদ টাকা পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ডাকাতির কবলে পড়া ব্যবসায়ী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে ডাকাতির মামলা দায়ের করেছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ ছাড়া নিহত ডাকাত রাশেদের বাবা বাদী হয়ে অজ্ঞাত ডাকাত দলের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য চমেক হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। আইনগত প্রক্রিয়া শেষে নিহতের মরদেহ তার স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত