Ajker Patrika

সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে দুর্গম পাহাড়ে পানির সংকট নিরসন

প্রতিনিধি, খাগড়াছড়ি
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২১, ১৪: ৫৮
সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে দুর্গম পাহাড়ে পানির সংকট নিরসন

খাগড়াছড়ির দুর্গম পাহাড়ে পানির সংকট দূর করতে `উদ্ভাবনী প্রকল্প' হাতে নিয়েছে সরকার। এ প্রকল্পে সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। লোকাল গভর্ন্যান্স সাপোর্ট প্রজেক্টের (এলজিএসপি) আওতায় জেলার দুর্গম সাত গ্রামের বাসিন্দারা এই সুবিধা ভোগ করছেন। ফলে দূর হয়েছে যুগ যুগ ধরে চলা সুপেয় পানির সংকট। বিদ্যুৎ ও যোগাযোগবিচ্ছিন্ন দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় এ ধরনের প্রকল্প বাড়ানোর দাবি স্থানীয়দের।

পাহাড়বেষ্টিত নয়নাভিরাম খাগড়াছড়ি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হলেও সারা বছরই এখানে সুপেয় পানির তীব্র সংকট রয়েছে। দুর্গম এলাকায় গভীর বা অগভীর নলকূপ না থাকায় স্থানীয় বাসিন্দাদের নির্ভর করতে হয় ভূপৃষ্ঠের পানির ওপর। বর্ষা বা শুষ্ক মৌসুমে সুপেয় পানির উৎস নষ্ট হয়ে গেলে অনেককেই দূষিত পানি পান করতে হয়। অথবা ২ থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে গিয়ে খাওয়ার পানি সংগ্রহ করতে হয়। পাহাড়ের পথ ডিঙিয়ে খাওয়ার পানি সংগ্রহ করা দুরূহ কাজ। এ কারণেই দুর্গম এলাকায় সুপেয় জলের সংকট নিরসনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। 

লোকাল গভর্ন্যান্স সাপোর্ট প্রজেক্টের (এলজিএসপি) প্রকল্পের আওতায় খাগড়াছড়ি সাতটি বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন দুর্গম গ্রামে সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিটি প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৫ লাখ টাকা। সোলার প্যানেলের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানি তোলা হচ্ছে। এর মাধ্যমে স্থানীয়দের যুগ যুগ ধরে চলা দীর্ঘদিনের পানির সংকট দূর হয়েছে। 

জেলার পানছড়ি উপজেলার পায়ুং কার্বারিপাড়ার বাসিন্দা ললিজয় ত্রিপুরা, গৌড়ি ত্রিপুরা ও মনিকা ত্রিপুরা বলেন, আমাদের গ্রামে আগে পানির কোনো ব্যবস্থা ছিল না। দূরের ছড়া বা ঝিরি থেকে পানি সংগ্রহ করতে হতো। সুপেয় পানির সংকট ছিল। এখন সোলার প্যানেলের মাধ্যমে ট্যাংকে পানি তোলা হচ্ছে। এসব ট্যাংক থেকে গ্রামের মানুষ পানি সংগ্রহ করছে। আমাদের পানির কষ্ট দূর হয়েছে।’ 

খাগড়াছড়ি ৭টি বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন দুর্গম গ্রামে সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হয়েছেমোল্লাপাড়া এলাকার বাসিন্দা জাহেদা বেগম বলেন, ‘আগে আমরা পাহাড়ের ঝিরি থেকে পানি সংগ্রহ করতাম। আমাদের এখানে বিদ্যুৎ না থাকায় পানির পাম্পও বসাতে পারিনি। এখন তো সোলার প্যানেলের মাধ্যমে পাম্প চালিয়ে পানি তোলা হচ্ছে। আমাদের গ্রামের ১০০ পরিবার এখান থেকে খাওয়ার ও রান্নার পানি সংগ্রহ করে।’ 

বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন, দুর্গম ও পাহাড়ি এলাকায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে জানিয়ে উল্টাছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিজয় চাকমা বলেন, `আমার এলাকা অত্যন্ত দুর্গম। যেসব এলাকায় পানির কষ্ট বেশি, সেখানে আমরা এলজিএসপি প্রকল্পের মাধ্যমে সোলার প্যানেল স্থাপন করে ভূগর্ভস্থ পানি তোলা হচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়িত হওয়ায় এলাকার মানুষের পানির কষ্ট দূর হয়েছে। বর্তমানে খাওয়ার পানির কোনো সমস্যা নাই। আমার ইউনিয়নের মোল্লাপাড়া, পায়ুং কারবারিপাড়া, কুঞ্জরামপাড়া ও ললিন্দ্রপাড়ায় চারটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এতে অন্তত ২ হাজার মানুষের পানির কষ্ট দূর হয়েছে।

লোকাল গভর্ন্যান্স সাপোর্ট প্রজেক্টের (এলজিএসপি) ডিস্ট্রিক্ট ফ্যাসিলিটেটর অরুণদর্শী চাকমা জানান, পাহাড়ের অন্যতম প্রধান সমস্যা সুপেয় পানি। দুর্গম এলাকায় পানির সংকট নিরসনে নবায়নযোগ্য সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে পানির সংকট নিরসন হয়েছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের প্রকল্প আরও বাড়ানো হবে। দুর্গম এলাকায় পানির সংকট দূর করতে এরই মধ্যে এলজিএসপি প্রজেক্ট-৩-এর আওতায় পানির সংকট নিরসনের ৭টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত