Ajker Patrika

লক্ষ্মীপুরে ধীরগতিতে নামছে পানি, খাবারের তীব্র সংকট

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ৩০ আগস্ট ২০২৪, ১৪: ৩০
লক্ষ্মীপুরে ধীরগতিতে নামছে পানি, খাবারের তীব্র সংকট

লক্ষ্মীপুরে গত দুই দিন ধরে নামতে শুরু করেছে বন্যার পানি। ধীরগতিতে পানি নামায় পরিস্থিতির তেমন উন্নতি নেই। এখনো পানিবন্দী ১০ লাখ মানুষ। বিভিন্ন সড়ক থেকে পানি কিছুটা নামলেও বাসাবাড়ি তলিয়ে রয়েছে। সুপেয় পানি ও খাবারের সংকটে রয়েছে ভানবাসীরা। সদর উপজেলার কুশাখালীর জাউডগী, নলডগী, বসুদৌহিদা, চরশাহী, আন্দারমানিক, রায়পুরের চরকাচিয়া, চরঘাসিয়াসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে এখনো ত্রাণ পৌঁছায়নি। এসব এলাকায় চরম দুর্ভোগে মানবেতর জীবন পার করছে বানবাসীরা। 

এদিকে গ্রামীণ ২০০ কিলোমিটার কাঁচা-পাকা রাস্তার বেহাল দসার কারণে যোগাযোগবিচ্ছিন্ন রয়েছে। পাশাপাশি ৫০ হাজার পুকুর ও ঘেরের মাছ পানিতে ভেসে ২০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। অন্যদিকে গবাদিপশুর ক্ষতি হয়েছে আরও ২০ কোটি টাকার। এ ছাড়া কৃষি খাতেও ক্ষতি হয়েছে শত কোটি টাকাসহ এখন পর্যন্ত ৫০০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। পুরোপুরি বন্যার পানি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিশ্চিত হওয়া যাবে। 

অভিযোগ উঠেছে, গত দুই দিনে পাঁচ-ছয় ইঞ্চি পানি কমেছে। সদর উপজেলার ডাকাতিয়া ও রহমতখালী খালসহ বিভিন্ন খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করার কারণে পানি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ফলে দ্রুত পানি সরছে না। ইতিমধ্যে দুই শতাধিক স্থানে খালের ওপর বাঁধ কেটে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো। গত দুই দিন ধরে জেলার রামগঞ্জ উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবহমান বিরন্দখালটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সার্বিক সহযোগিতায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ব্লার্ড ডোনার্স ক্লাবের সদস্যরা বাঁধটি অপসারণের উদ্যোগ নেন। বর্তমানেও তা অব্যাহত রেখেছেন তাঁরা। পাশাপাশি অন্যান্য খালের বাঁধ সরিয়ে দিলে দ্রুত বন্যার পানি নামবে বলে দাবি স্থানীয়দের।

চন্দ্রগঞ্জের লতিফপুর এলাকার হাসান ইব্রাহিম বলেন, ‘এত পানি এর আগে দেখিনি। বাসার ভেতরে এখনো হাঁটুপানি। অনেকেই একাধিকবার ত্রাণ পেয়েছেন, কিন্তু একবারও জোটেনি আমার। কবে এই দুর্যোগ থেকে মুক্তি পাব, স্বাভাবিক পরিবেশে ফিরে যাব, কাজ-কর্ম আগের মতো করব সেটাই আশা।’ 

দীঘলির নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘গত দুই দিন ধরে যেভাবে পানি নামছে, যদি এইভাবে নামে, তাহলে ১৫ দিনেও মুক্তি মিলবে না। বাসাবাড়ি ও রাস্তাঘাট এখনোও পানির নিচে। দুটি পুকুরের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেক কষ্টে আছি।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় জেলার পাঁচ উপজেলার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে। সরকারি হিসেবে পানিবন্দী রয়েছে অন্তত ১০ লাখ মানুষ। ১৯৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৩০ হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রয় নেওয়া মানুষ নানা সমস্যায় ভুগছে। খাবারের সংকটসহ রয়েছে ওষুধ, স্যালাইন ও বিশুদ্ধ পানির সংকটও। আশ্রয়কেন্দ্র আশ্রয় নেওয়া মানুষ চরম দুর্ভোগে রয়েছে। 

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, ৫৪ হাজার পুকুর ও ঘেরের মধ্যে প্রায় ৫০ হাজার পুকুর বা ঘেরের মাছ পানিতে ভেসে ২০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এর পরিমাণ আরও বাড়বে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। 

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. ইউনুছ মিয়া বলেন, এখন পর্যন্ত ৭৮৯ মেট্রিকটন চাল ও নগদ ২০ লাখ ৭০ হাজার টাকা ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হয়েছে। এ ছড়া এখন পর্যন্ত ৫০০ কোটি টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাহিদ-উজ-জামান বলেন, বৃষ্টি না হওয়ায় বন্যার উন্নতি হচ্ছে। তবে মেঘনার পানি বিপৎসীমার অনেক নিচে রয়েছে। দুই দিন ধরে পানি নামছে ধীরগতিতে। বৃষ্টি না হলে তাড়াতাড়ি পানি নেমে যাবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। 

জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান বলেন, ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে। প্রতি এলাকায় সেনাবাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন ও বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ভানবাসী মানুষের পাশে ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছে। কোনো মানুষ যেন কষ্টে না থাকে, সেটা নিশ্চিতে কাজ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত