নিজের কবর পাকা করলেন বৃদ্ধ, ইচ্ছা মাজার বানানো

হাতিয়া (নোয়াখালী) প্রতিনিধি
আপডেট : ১১ জুন ২০২৪, ০৮: ৫৩
Thumbnail image

নোয়াখালীতে নিজের জন্য পাকা কবর তৈরি করে এলাকায় আলোচনার সৃষ্টি করেছেন হাতিয়া দ্বীপের হানিফ (৮০) নামের এক বৃদ্ধ। এই বৃদ্ধ বলছেন, পিরের নির্দেশে তিনি কবর তৈরি করছেন। তিনি মারা গেলেও যাতে তাঁর ভক্তরা এখানে মাজার তৈরি করে জিয়ারত করতে পারেন। এ ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। 

নিজের জন্য পাকা কবর তৈরি করা ওই ব্যক্তি স্থানীয়ভাবে জমিদার ডাক্তার নামে পরিচিত। বুড়িরচর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের জোড়খালী গ্রামের মৃত মোজাফ্ফর আহমদের ছেলে। তাঁর ৪ ছেলে ও ৫ মেয়ে রয়েছে। 

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির মধ্যে বিশাল পাকা ঘর। ঘরের ডান পাশে খনন করে মাটির তলদেশ থেকে ইটের গাথনি দিয়ে কবরের আকৃতি করে তৈরি করা হচ্ছে বিশাল প্রাচীর। রাজমিস্ত্রিরা একনিষ্ঠ মনে কবর নির্মাণের কাজ করে যাচ্ছেন। পাশে চেয়ারে বসে নিজের কবরের কাজ দেখভাল করছেন আশি বছরের বৃদ্ধ হানিফ। এ খনন গত ১৫–২০ দিন ধরে চলছে। 

হানিফ ও তাঁর সন্তানদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মো. হানিফ চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর চরণদ্বীপ দরবার শরীফের মাওলানা খাইরুল বাশার ফারুকীর একজন খলিফা। মাইজভান্ডার দরবার শরীফে তিনি ৫৫ বছরেরও বেশি সময় এ তরিকার সঙ্গে জড়িত। পিরের নির্দেশে প্রতি বছর আরবি রবিউস সানি মাসের ১১ তারিখে পারিবারিকভাবে নিজ বাড়িতে ওরস মাহফিল করে আসছেন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল তাঁর রয়েছে প্রায় ত্রিশ হাজার মুরিদ। পিরের নির্দেশে তিনি এমন কাজ করছেন। 

কবরের পাশে বসে আছেন বৃদ্ধ হানিফনিজের কবর নিজেই তৈরি করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার অসিয়ত করা জায়গায় হয়ত আমার ছেলেরা পরবর্তীতে কবর নাও দিতে পারে। তাই আমার ক্রয়কৃত নিজস্ব জায়গায় আমি আমার কবর তৈরি করছি। আমি এখানে থাকব। মৃত্যুর পরে এ কবরকে কেন্দ্র করে আমার ভক্তরা মাজার তৈরি করে তা জিয়ারত করবে।’ 

এখানে ঘরের পাশে কবর স্থাপন ও পাকাকরণ বিষয়ে পরিবারের কোনো সদস্যের দ্বিমত প্রসঙ্গে বলেন, ‘যেহেতু আমি পিরের নির্দেশনা পেয়ে নিজের কবর নিজে তৈরি করছি তাতে কারও কোনো আপত্তি নাই।’ 

ডাক্তার হানিফের ছেলে শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘আমার বাবা দীর্ঘদিন মাইজভান্ডার তরিকায় হাজার হাজার আশেকান সৃষ্টি করেছেন। আমাদের এ বাড়িতে প্রতিবছর তিনি আশেকানদের নিয়ে ওরস মাহফিল করে আসছেন। যার খরচ সম্পূর্ণ আমাদের পারিবারিক সদস্যরা বহন করেন। যেহেতু তিনি রোগশয্যায় যেকোনো সময় মৃত্যুবরণ করতে পারেন। ওনার মনের ইচ্ছাতেই উনি নিজের কবরটা যেন দেখে যেতে পারেন। সেই লক্ষ্যেই আমরা ছেলেরা বাবার সামনে কবরটা তৈরি করছি।’ 

ছোট ছেলে মো. শাহারাজ উদ্দিন ঘরের পাশে বাবার জন্য কবর তৈরি প্রসঙ্গে বলেন, ‘বাবার মৃত্যুর পর ওনার ইচ্ছায় তাঁকে এখানে দাফন দেওয়া হবে। তবে বাবার কবরকে মাজার বানিয়ে কোনো প্রকার ব্যবসা করার ইচ্ছা আমাদের কারও নেই।’ 

স্থানীয় প্রতিবেশী জাফর উদ্দিন বলেন, ‘মৃত্যুর আগে কারও জন্য কখনো কবর বানাতে দেখিনি কিংবা শুনিনি। কিন্তু এখানে দেখলাম। নিজের জন্য নিজেই কবর তৈরি করেছেন জমিদার ডাক্তার। এতে এলাকায় কেউ ভালো বললেও অনেকেই আবার খারাপ মন্তব্য করছেন। তবে অদৃশ্য কোনো এক ভয়ে প্রকাশ্যে কেউ কিছু বলতে পারছেন না।’ 

কবরের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন বৃদ্ধ হানিফ। ছবি: আজকের পত্রিকাস্থানীয় ইউপি মেম্বার লিটন চৌধুরী বলেন, ‘ইসলামি শরিয়তে কী বলে তা আমার জানা নেই। তবে তাঁর (বৃদ্ধ) জীবনের শেষ ইচ্ছে মোতাবেক কবরটি করা হয়েছে।’ 

হাজী এমরাত আলী জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘মৃত্যুর আগে কবরের জন্য স্থান নির্ধারণ করা এবং মাটি ভরাট করা যেতে পারে। কিন্তু মৃত্যুর আগে বা পরে কবর বাধাই করা ইসলাম সমর্থন করে না। এ ছাড়া যদি কোনো অসৎ বা মাজার করার উদ্যেশ্য থাকে তাহলে এলাকাবাসীর উচিত এটি প্রতিহত করা।’ 

 এ বিষয়ে বুড়িরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘মৃত্যুর আগেই জীবিত মানুষের জন্য কবর খুড়া হয়েছে এমন খবর পেয়ে ওই ব্যক্তির ছেলেদেরকে জিজ্ঞাসা করলাম যে এটা কেন করেছ। ছেলেদের উত্তর ছিল আমার বাবার একান্ত ইচ্ছা যেন উনি উনার কবরটা দেখে যেতে পারে। আমি তাদেরকে বলেছি, ইসলামের বিধিবিধানের বাইরে এসব কাজ করা যাবে না। আসলে এগুলোর কোনো বিধান নেই। এসব গর্হিত কাজ এখনই বন্ধ করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কারা পরিদর্শক হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক

ট্রাম্পের অভিষেক: সি আমন্ত্রণ পেলেও পাননি মোদি, থাকছেন আরও যাঁরা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে: সলিমুল্লাহ খান

দেওয়ানি মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিতে একগুচ্ছ সুপারিশ কমিশনের

সংস্কারের কিছু প্রস্তাবে মনঃক্ষুণ্ন বিএনপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত