হালদায় থামছে না মা মাছের মৃত্যু, দূষণের উৎস খুঁজছে তদন্ত কমিটি

মো. আরফাত হোসাইন, রাউজান (চট্টগ্রাম)
আপডেট : ০১ জুলাই ২০২৪, ০৯: ৪৬
Thumbnail image

দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র হালদায় ভেসে উঠছে একটির পর একটি মৃত মা মাছ। এতে উদ্বিগ্ন ডিম সংগ্রহকারীসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। বিশেষজ্ঞদের মতে, শাখা খাল দিয়ে কলকারখানার বর্জ্যে নদীদূষণ ও মৎস্য শিকারিদের নিয়ম না মানার কারণে মা মাছের মৃত্যু ঘটছে। তা ছাড়া নদীর ফটিকছড়ির ভূজপুর ও হারুয়ালছড়ি এলাকার দুই রাবার ড্যামে ছয় মাস ধরে জমে থাকা রাসায়নিক নদীর পানির সঙ্গে মিশে হালদার পরিবেশ নষ্ট হয়েছে। ফলে মরছে মা মাছ ও গাঙ্গেয় ডলফিন বা শুশুক।

গতকাল রোববার সকালে নদীর রাউজান অংশের পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের আজিমের ঘাটে আরও একটি মৃত মা কাতল মাছ ভেসে উঠেছে। গত এক সপ্তাহে নদীর রাউজান ও হাটহাজারী অংশে বড় আকৃতির কয়েকটি মৃত কাতল মা মাছ ও একটি মিঠাপানির ডলফিন ভেসে উঠেছে বলে জানান ডিম আহরণকারীরা। তাঁদের দাবি, আরও অনেক মৃত মা মাছ জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে। নদীর কিনারায় যেসব মৃত মা মাছ দেখা যাচ্ছে, সেসব উদ্ধার করা হচ্ছে। এদিকে হালদা ও কর্ণফুলী নদী দূষণের উৎসগুলো চিহ্নিত করতে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

গত ২৩ জুন পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম মহানগর দপ্তর এ তদন্ত কমিটি গঠন করে। চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ের পরিচালক (যুগ্ম-সচিব) স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে ২৩ জুন থেকে ১৫ দিনের মধ্যে পরিদর্শন প্রতিবেদন, হালদা ও কর্ণফুলী নদীর পানি দূষণের উৎসসমূহ চিহ্নিত করা ও মতামত ওই কার্যালয়ে জমা দিতে বলা হয়েছে। 

তবে কয়েক দিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। এই বৃষ্টি ও জোয়ার-ভাটায় দূষিত পানি নেমে গেলে নদী কিছুটা দূষণমুক্ত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদিকে হালদা নদীর দূষণ প্রতিরোধে পরিবেশ অধিদপ্তরকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মাত্রাতিরিক্ত দূষণে হালদা নদীর স্বাস্থ্যব্যবস্থা আজ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। বিষাক্ত বর্জ্য হালদার জলজ বাস্তুতন্ত্রের ওপর প্রভাব ফেলছে। পানির বিভিন্ন ভৌত রাসায়নিক গুণাবলি পরিবর্তন করে দূষিত হালদার জলজ পরিবেশকে। নদীদূষণের বর্তমান পরিবেশ থেকে স্বাভাবিক পরিবেশে ফিরিয়ে আনার জন্য হালদার শাখা খালে যেসব কলকারখানার বর্জ্য ফেলা হচ্ছে, সেসব কারখানা চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।’

তিনি বলেন, নদীর ফটিকছড়ির ভূজপুর ও হারুয়ালছড়ি এলাকার দুই রাবার ড্যামে ছয় মাস ধরে জমে থাকা রাসায়নিক নদীর পানির সঙ্গে মিশে হালদার পরিবেশ নষ্ট করছে। ফলে মরছে মা মাছ ও গাঙ্গেয় ডলফিন।

তদন্ত কমিটির সদস্য পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের রিসার্চ কর্মকর্তা আশরাফ উদ্দিন বলেন, ‘তদন্ত সম্পন্ন হয়নি। আমাদের সময় দেওয়া হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহ বা তার পরের সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন হবে বলে আশাবাদী।’ 

রাউজান উপজেলা মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, রোববার একটি মৃত মাছ নদীতে ভেসে ওঠার পর স্থানীয়রা সেটি উদ্ধার করেছে। তবে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে এখনো কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আনোয়ার ফেরদৌস বলেন, হালদা ও কর্ণফুলী দূষণের উৎস খুঁজে বের করতে গঠিত তদন্ত কমিটি কাজ করছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কারা পরিদর্শক হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক

ট্রাম্পের অভিষেক: সি আমন্ত্রণ পেলেও পাননি মোদি, থাকছেন আরও যাঁরা

ট্রাম্পের শপথের আগেই বার্নিকাটসহ তিন কূটনীতিককে পদত্যাগের নির্দেশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে: সলিমুল্লাহ খান

সংস্কারের কিছু প্রস্তাবে মনঃক্ষুণ্ন বিএনপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত