নোয়াখালীতে বন্যা: আশ্রয়ে ক্ষতি ১২২৯ স্কুলের

মিজানুর রহমান রিয়াদ, নোয়াখালী
Thumbnail image

সাম্প্রতিক বন্যায় নোয়াখালীর আটটি উপজেলার পানিবন্দী হয়ে পড়েছিলেন ২০ লাখের বেশি মানুষ। তাঁরা আশ্রয় নেন ১ হাজার ২২৯টি প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। দীর্ঘদিন ধরে বিপুলসংখ্যক মানুষের থাকা-খাওয়ার জন্য ব্যবহারে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আসবাবসহ নানা ক্ষতি হয়। ফলে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যবহৃত হচ্ছে। এসব ক্ষয়ক্ষতি সারতে ৪৬ কোটি টাকা প্রয়োজন বলে শিক্ষা বিভাগ জানিয়েছে।

গত ২০ আগস্ট নোয়াখালীতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। জেলার সদর, কবিরহাট, কোম্পানীগঞ্জ, সেনবাগ, বেগমগঞ্জ, সোনাইমুড়ী, চাটখিল উপজেলার বেশির ভাগ এলাকা এবং সুবর্ণচর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন কয়েক ফুট পানিতে প্লাবিত হয়। জলমগ্ন হয় নোয়াখালী, কবিরহাট, বেগমগঞ্জ, সেনবাগ, সোনাইমুড়ী ও চাটখিল পৌর এলাকা।

সরেজমিনে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা গেছে, বিদ্যালয়গুলোর শ্রেণিকক্ষের চেয়ার-টেবিল ও বেঞ্চ, বিদ্যুতের বোর্ড, পানির ট্যাপ, শৌচাগার ভাঙাচোরা অবস্থায় পড়ে রয়েছে। নোয়াখালী পৌর এলাকার নোয়াখালী উচ্চবিদ্যালয়ে শহরের হরিনারায়ণপুর এলাকার হাজারেরও বেশি মানুষ আশ্রয় নেন। ২০ দিনের বেশি সময় আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয় এ প্রতিষ্ঠানটি। আর ব্যবহারের ওই সময়টুকুতে নষ্ট হয় ওয়াশরুম, পানির ট্যাপ, বেসিন, পানির পাইপলাইন, শ্রেণিকক্ষের লাইট, ফ্যান, বৈদ্যুতিক সুইচ, সিসি ক্যামেরা, টেবিলসহ প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন আসবাব।

জেলা শিক্ষা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বন্যার সময় জেলার ৭৬৬টি প্রাথমিক ও ৪৬৩টি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা। সবগুলোই কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্ষয়ক্ষতি মেরামতের জন্য প্রায় ৬ কোটি এবং মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের অন্তত ৪০ কোটি টাকার প্রয়োজন।

জানা গেছে, বন্যা-পরবর্তী বিভিন্ন সময় কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদান কার্যক্রম সীমিত পরিসরে চালু হলেও উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে অনেক কম। শিক্ষকেরা বলছেন, এমন পরিস্থিতির কারণে শিক্ষা কার্যক্রম থেকে পিছিয়ে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে এখনো বেশির ভাগ সড়কে পানি থাকায় বিদ্যালয়ে আসতে বেগ পেতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।

অভিভাবকেরা বলছেন, ‘বন্যা-পরবর্তী নোয়াখালীতে যে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে, তা আরও দীর্ঘ হচ্ছে। এখনো অনেক গ্রামীণ সড়কে হাঁটুপানি রয়েছে। ফলে বিদ্যালয়গুলোতে কিছুটা পাঠদান শুরু হলেও আমাদের বাচ্চারা নিয়মিত যেতে পাচ্ছে না। দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা-পরবর্তী ছাত্র আন্দোলন এবং বন্যা ও জলাবদ্ধতার কারণে দীর্ঘ একটা সময় লেখাপড়ার বাইরে থাকার কারণে তারা সিলেবাস থেকে অনেক পিছিয়ে গেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা দ্রুত মেরামত করে পাঠদানের উপযোগী করা জরুরি।

নোয়াখালী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহমুদ রিয়াদ বলেন, বিদ্যালয়টির পূর্বপাশের খালপাড়ের এলাকাটি নিচু হওয়ায় বন্যার শুরুতে বেশির ভাগ বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়ে। আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের কারণে দুটি ভবনের ওয়াশরুম, বেসিন, লাইট-ফ্যান, বিদ্যুতের সুইচ, সিসি ক্যামেরা, শ্রেণিকক্ষের চেয়ার-টেবিল ও আসবাবসহ প্রায় ৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। ১০ সেপ্টেম্বর থেকে মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র থেকে চলে যাওয়ায় প্রাথমিকভাবে পাঠদানের জন্য কিছু শ্রেণিকক্ষ প্রস্তুত করা হয়। স্বল্পপরিসরে পাঠদান কার্যক্রম চলছে। তবে কক্ষগুলোতে বিদ্যুতের সুইচ, লাইট-ফ্যান নষ্ট হওয়ায় গরমে শিক্ষার্থীদের কষ্ট হচ্ছে। এ ছাড়া ওয়াশরুমগুলো ব্যবহারে বেগ পেতে হচ্ছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মনছুর আলী চৌধুরী বলেন, এখনো বন্যাকবলিত এলাকার ৮৩টি বিদ্যালয় ও মাঠে পানি থাকার কারণে পাঠদান বন্ধ রয়েছে, বাকিগুলোতে পাঠদান চলছে। ক্ষয়ক্ষতির তালিকা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পাঠানো হয়েছে।

জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসান শওকত বলেন, ‘বন্যার সময় অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বেশির ভাগই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা এরই মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের প্রায় ৪০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করেছি। যেহেতু এখনো অনেক এলাকা থেকে পানি নামেনি, তাই ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। বরাদ্দ পেলে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মেরামতকাজ শুরু হবে।’

নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক খন্দকার ইশতিয়াক আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, জেলার সদর, কবিরহাট ও সেনবাগ, বেগমগঞ্জ, সোনাইমুড়ী ও চাটখিল উপজেলার অনেক ইউনিয়নে এখনো ১২ লাখ মানুষ পানিবন্দী। পুরোপুরি পানি নেমে যাওয়ার পর জেলার শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক হবে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত