জো বাইডেন-জয়া বাঘদম্পতির শাবকদের নাম রাখা হলো— প্রকৃতি, স্রোতস্বিনী ও রূপসী

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
Thumbnail image

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় মানুষের পরিচর্যায় বড় হওয়া বাঘ জো বাইডেন ও তাঁর সঙ্গী বাঘিনী জয়া আহসানের ঘরে এক মাসে আগে জন্ম নেওয়া শাবক তিনটির আনুষ্ঠানিক নাম দেওয়া হয়েছে। এদের নাম যথাক্রমে; প্রকৃতি, স্রোতস্বিনী ও রূপসী।

আজ সোমবার (২৫ মার্চ) বেলা ১২টার দিকে এক আয়োজনের মাধ্যমে এই নামকরণ করা হয়। ওই আয়োজনে যোগ দেন চিড়িয়াখানা ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানসহ সংশ্লিষ্টরা।

ঘটনাস্থলে জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদের বলেন, তিনটি ব্যাঘ্র শাবকের বয়স একমাস পূর্ণ হয়েছে। তিনটিই মেয়ে। আমরা এগুলোর নামকরণ করেছি। একটির নাম প্রকৃতি, একটির নাম রূপসী এবং আরেকটির নাম স্রোতস্বিনী। বাঙালির আবহমান সংস্কৃতি ও প্রকৃতির সঙ্গে মিলিয়ে আমরা তিনটি বাঘের বাংলা নাম রেখেছি। এ তিনটি বাঘ শাবকের জন্ম হয়েছে ‘জো বাইডেন’ পরিবারে।

এই নামকরণ আয়োজন ঘিরে জন্মের এক মাস পর শাবক তিনটিকে খাঁচার বাইরে আনা হয়। এ সময় জেলা প্রশাসকসহ ঘটনাস্থলে উপস্থিত কয়েকজন শাবক তিনটিকে কোলে নিয়ে আদর করছেন, চুমু খাচ্ছেন। কেউবা তাঁদের নিয়ে ছবি তুলে ফেসবুকে শেয়ার করছেন।

চিড়িয়াখানার ভারপ্রাপ্ত কিউরেটর ডা. শাহাদাত হোসেন শুভ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ফিজিক্যালি এরা এখন যথেষ্ট ভালো আছে। হাঁটাচলা-দৌঁড়ানো ধীরে ধীরে শিখতে শুরু করেছে। তাঁদের মা জয়াও ভালো রেসপন্স দিচ্ছে। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় এই পর্যন্ত ১৭টি বাঘ রয়েছে। এদের মধ্যে পাঁচটি ছেলে ও ১২টি মেয়ে।

এর আগে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় বাঘের শাবক তিনটির জন্ম হয়। চিড়িয়াখানা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর ৩৩ লাখ টাকায় কেনা ১১ মাস বয়সী রাজ এবং ৯ মাস বয়সী পরীকে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় আনা হয়। ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই বেঙ্গল টাইগার দম্পতি রাজ-পরীর তিনটি ছানার জন্ম হয়, যার মধ্যে দুটি ছিল ‘হোয়াইট টাইগার’ অন্যটি কমলা-কালো ডোরাকাটা। পরদিন একটি সাদা বাঘ শাবক মারা যায়। অন্য সাদা বাঘিনীটি ‘শুভ্রা’।

কমলা-কালো বাঘিনীটির নাম দেয়া হয় ‘জয়া’। সেই জয়ার ঘরে ২০২০ সালের ২৮ ডিসেম্বর জন্ম নেয় তিন শাবক। কিন্তু প্রথমবার সন্তান জন্মদানের পর জয়া অসহিঞ্চু আচরণ শুরু করে। তাঁর অবহেলায় পরদিন দুটি শাবক মারা যায়। মুমূর্ষু অবস্থায় থাকা আরেকটির প্রাণ রক্ষায় নিজের হেফাজতে নেন চিড়িয়াখানার ভারপ্রাপ্ত কিউরেটর শুভ। মানুষের মমতায় তাঁকে বড় করে তোলা হয়।

চিড়িয়াখানার কর্মীরা নিজেরাই দুধ খাইয়ে, নিবিড় পরিচর্যা করে, পেলে-পুষে বাঘের ছানাটিকে বাঁচিয়ে তোলেন। ওই শাবকটিই হচ্ছে বর্তমানে জো বাইডেন। প্যারিস জলবায়ু পরিবর্তন চুক্তিতে স্বাক্ষর করায় আমেরিকার প্রেসিডেন্টের সম্মানার্থে তাঁর নাম রাখা হয়েছিল জো বাইডেন।

এক বছর লালন-পালন করার পর জো বাইডেনকে পরে বিশেষ প্রক্রিয়ায় খাঁচায় অবস্থিত অন্যান্য বাঘ পরিবারের সঙ্গে সোশালাইজেশনের (সামাজীকরণের) মাধ্যমে সদস্য হিসাবে রি-ইন্ট্রোডাকশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।

প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর এই প্রথমবারের মত সে (জো বাইডেন) জয়ার সঙ্গে নিজের পরিবার তৈরি করল। মানুষের হাতে লালন-পালন হয়ে পুনরায় বাঘ পরিবারের সঙ্গে একত্রীকরণের মাধ্যমে বংশবিস্তার করার চক্র একটি বিরল ঘটনা, যার সম্পূর্ণ কৃতিত্ব বাঘ জো বাইডেনের বলে জানান চিড়িয়াখানার কর্মকর্তারা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত