কক্সবাজার সৈকতে ভেসে এল আরও একটি মরা পরপইস

কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৫: ০০

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে জোয়ারের সঙ্গে আরও একটি মরা পরপইস ভেসে এসেছে। গতকাল রোববার বিকেলের দিকে টেকনাফের বাহারছড়া সৈকতে সামুদ্রিক বিপন্ন এই স্তন্যপায়ী প্রাণীর মরদেহ ভেসে আসে। এর আগে এদিন দুপুরে একই সৈকতে আরও একটি মরা পরপইস ভেসে আসে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে হিমছড়ি এলাকায় দুটি পরপইস ভেসে এসেছিল। 

বোরির জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, একই সৈকতে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে দুটি পরপইসের মরদেহ ভেসে আসার বিষয়টি উদ্বেগজনক। তবে বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বোরি) বিজ্ঞানীরা জানিয়েছিলেন সমুদ্র উপকূলে এর আগে পরপইসের মরদেহ ভেসে আসার ঘটনা ঘটেনি। 

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের কক্সবাজার সামুদ্রিক কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কী কারণে পরপইসগুলোর মৃত্যু ঘটেছে তা খতিয়ে দেখা হবে।’ 

পরপইসের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মাছ ধরার জালে আটকা পড়ে, নৌকার সঙ্গে সংঘর্ষ কিংবা অন্য কোনোভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে এটি মারা পড়েছে। শব্দ ও জল দূষণ এবং বাঁধ, পোতাশ্রয়সহ অন্যান্য নির্মাণ কাঠামোর কারণেও এদের জীবন হুমকিতে পড়েছে।’ 

বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শফিকুর রহমান আরও বলেন, এটি ইন্দো প্যাসিফিক ফিনলেস পরপইস হিসেবে পরিচিত। বৈজ্ঞানিক নাম নিওফোকেনা ফোকেনয়েডস। দেখতে ইরাবতী ডলফিনের মতো পরপইস একটি ছোট জলজ স্তন্যপায়ী প্রাণী। কিন্তু এদের পৃষ্ঠীয় পাখনা থাকে না। বাচ্চা অবস্থায় কালো রঙের হলেও বয়সের সঙ্গে রং বিবর্ণ হয়ে যায়। এটি ৫-৬ ফিট পর্যন্ত লম্বা হয়। এদের শরীর মজবুত এবং মাথা অনেকটা গোলাকার। এই প্রাণীটি অগভীর জল, জলাভূমি এবং মোহনা পছন্দ করে। এরা সাধারণত একাকী চলাফেলা করতে পছন্দ করে। কিন্তু মাঝেমধ্যে খাদ্য গ্রহণের সময় এদের ৫-১২টি বা ৫০ টির বেশি দলবদ্ধ অবস্থায় ঘুরতে দেখা যায়। মাছ, স্কুইড, চিংড়ি, অক্টোপাস এবং মাঝে মাঝে সামুদ্রিক উদ্ভিদও খাদ্য হিসেবে এরা গ্রহণ করে। সাধারণত বসন্তে বা গ্রীষ্মে প্রাণীটি বাচ্চা প্রসব করে। বাচ্চারা জন্মের পর মায়ের পিঠে লেগে থাকতে দেখা যায়। 

আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) তালিকায় পরপইস বিপন্ন প্রাণী হিসেবে চিহ্নিত। ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন সোসাইটির সর্বশেষ জরিপে বঙ্গোপসাগরে মোট ১৩ জাতের সিটাসিয়ান বা সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৮ প্রজাতির ডলফিন, ৪ প্রজাতির তিমি ও মাত্র এক প্রজাতির পরপইস রয়েছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত