চাকরি পুনর্বহাল ও ১০ বছরের বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবিতে শিক্ষকের সংবাদ সম্মেলন

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬: ৪৮
Thumbnail image
সংবাদ সম্মেলন করেন শিক্ষক মো. আবুল মুনসুর। ছবি: আজকের পত্রিকা

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার গচিহাটা কলেজে সহকারী অধ্যাপক পদে চাকরিতে পুনর্বহাল এবং ১০ বছরের প্রাপ্য বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন শিক্ষক মো. আবুল মুনসুর। আজ শনিবার দুপুরে জেলা শহরের গৌরাঙ্গ বাজারে কিশোরগঞ্জ নিউজ কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলন তিনি অভিযোগ করেন, কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি মেজর (অব.) মো. আখতারুজ্জামান রঞ্জনের রোষানলে পড়ে মিথ্যা অভিযোগে চাকরিচ্যুত হয়ে তিনি মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে প্রথম শ্রেণি পেয়ে মাস্টার্স করেন মো. আবুল মুনসুর। প্রভাষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার গচিহাটা কলেজে। ১৯৯৫ সালের ১ জুন কলেজটিতে যোগদানের পর ২০১৪ সালের ১ নভেম্বর তিনি পদোন্নতি পান সহকারী অধ্যাপক পদে।

পরবর্তীতে মিথ্যা অভিযোগে প্রথমে চাকরি থেকে অব্যাহতি এবং পরবর্তীতে অপসারণের সিদ্ধান্ত নেয় কলেজ গভর্নিং বডি। ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে সরকারি অংশের বেতন শিট থেকে মো. আবুল মুনসুরের নাম বাদ দেওয়া হয় এবং ব্যাংক থেকে বেতন উত্তোলন বন্ধ করে দেওয়া হয়।

কিন্তু ঢাকা বোর্ডের আপিল অ্যান্ড আরবিট্রেশন কমিটির ২০১৫ সালের ২০ এপ্রিলের সভায় মো. আবুল মুনসুরকে সমুদয় প্রাপ্য বেতন ভাতাসহ স্বপদে বহালের জন্য সিদ্ধান্ত দেওয়া হয় এবং কলেজ গভর্নিং বডিকে পত্র দিয়ে এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয়।

কলেজ গভর্নিং বডি তাকে পুনর্বহাল না করে পুনরায় আপিল করলে বোর্ড পূর্বের সিদ্ধান্ত বহাল রাখে। এরপরও দীর্ঘ ৯ বছর ধরে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেনি কলেজ গভর্নিং বডি।

এদিকে চাকুরিবিহীন অবস্থায় প্রায় ১০ বছর ধরে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন মো. আবুল মুনসুর। এরই মধ্যে তার স্ত্রী তাঁকে ছেড়ে গেছেন। এই সময়ে অন্যত্র চাকরি হলেও সেসব স্থানে যোগদান করার জন্য কলেজ থেকে অনুমতি পত্রও তাঁকে দেওয়া হয়নি। এমনকি আখতারুজ্জামান রঞ্জন তাঁর লোকজন দিয়ে পিটিয়ে তাঁর বাম হাত ও পা অচল করে দিয়েছেন। অসুস্থ বৃদ্ধা মা ও প্রতিবন্ধী দুই বোনের জন্যও কিছু করতে পারছেন না তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে মো. আবুল মুনসুর অভিযোগ করেন, কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি ও প্রতিষ্ঠাতা মেজর (অব.) মো. আখতারুজ্জামান রঞ্জন বিভিন্ন সময়ে নানা অজুহাতে তাকে ধমকাতেন এবং চাকুরি থেকে বহিষ্কারের হুমকি দিতেন। ২০১৪ সালের অক্টোবর মাসের শিক্ষক পরিষদের সভায় বিনা অন্যায়ে তাকে ধমকান এবং চাকরি থেকে সাতদিনের মধ্যে বহিষ্কারের জন্য অধ্যক্ষকে মৌখিক নির্দেশ দেন। এরপর মিথ্যা যৌন হয়রানির অভিযোগ এনে কলেজ কর্তৃপক্ষ তাকে পর পর দুটি কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়। তিনি নোটিশ দুটির জবাব যথাসময়ে দিলেও কলেজ কর্তৃপক্ষ জবাব মেনে নেয়নি। কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি মেজর (অব.) মো. আখতারুজ্জামান রঞ্জন বিষয়টি কলেজ শিক্ষক পরিষদকে তদন্ত করার নির্দেশ দেন।

তিনি বলেন, কলেজ শিক্ষক পরিষদ তদন্ত করে রিপোর্ট দেয় যে, তাদের ধারণা হয়েছে যে যৌন হয়রানি বা অসদাচরণের মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। এজন্য আবুল মুনসুরের বিরুদ্ধে কোনো কঠিন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত হবে না।

সহকারী অধ্যাপক মো. আবুল মুনসুর অভিযোগ করে বলেন, ‘মেজর (অব.) মো. আখতারুজ্জামান রঞ্জন সরকারি কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করেন না। নিজেকে তিনি সরকার বলে দাবি করেন। তিনি অধ্যক্ষকে চাপে ফেলে জোর করে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগপত্র ঢাকা বোর্ডে পাঠান। বস্তুত অভিযোগকারীর অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই, এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও চক্রান্ত। আমার বর্তমান বয়স ৫৯ বছরেরও বেশি। অতীতে আমার বিরুদ্ধে অন্যায়মূলক কোনো কাজ করার রেকর্ড নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘আখতারুজ্জামান রঞ্জনের রোষানলের কারণে চাকরিতে ফিরতে পারছি না। এমনকি আমাকে অনাপত্তিপত্র না দেওয়ায় অন্য কোথাও চাকুরিও করতে পারছি না। ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে বেতন ভাতা বন্ধ রয়েছে। ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (ইএফটি) থেকেও আমার নাম বাদ দিয়ে মাউশিতে পাঠানো হয়েছে। এ অবস্থায় চরম অর্থকষ্টে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি।’

সংবাদ সম্মেলনে মো. আবুল মুনসুরের দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি (বাকশিস) কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি এএসএম আজিজুর রহমান ভূঞা, সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আলম এবং কটিয়াদী উপজেলা শাখার সভাপতি মো. আবু লায়েছ ভূঞা উপস্থিত ছিলেন।

অভিযোগের বিষয়ে মেজর (অব.) মো. আখতারুজ্জামান রঞ্জন সাংবাদিকদের বলেন, ‘নারীঘটিত বিষয়ের কারণে তাঁর বিরুদ্ধে কলেজ কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিয়েছে। পরে ঢাকা বোর্ড তাঁর পক্ষে সিদ্ধান্ত দিলে এর বিরুদ্ধে আমরা হাইকোর্টে গিয়েছি। সেখানে বিষয়টি বিচারাধীন রয়েছে। যদি রায় তার পক্ষে আসে, তবে সে বেতনভাতাদি পাবে। এতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত