মাদারীপুরে শুধুমাত্র ‘ওসি’র বাড়ির জন্য সেতু নির্মাণের অভিযোগ

আয়শা সিদ্দিকা আকাশী, মাদারীপুর
প্রকাশ : ২০ নভেম্বর ২০২৪, ১১: ৫০
আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০২৪, ১১: ৫৯
মাদারীপুরে শুধুমাত্র এক পুলিশ কর্মকর্তার বাড়ির জন্য একটি সেতু নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

মাদারীপুর সদর উপজেলার ঘটমাঝি ইউনিয়নের ইটেরপুল থেকে পাথুরিয়ার পাড় সড়কের পাশে ছয়না গ্রামের ইটেরপুর খালের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে একটি কালভার্ট। শুধু পুলিশ কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান মোল্লার বাড়িতে যাওয়ার জন্যই এই সেতু নির্মাণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই সেতু পার হওয়ার পর সদ্য তৈরি ওই বাড়ি ছাড়া আর ঘনবসতি নেই। এমনকি সড়কও নেই। তাই পুলিশের ওসির বাড়ির সামনে এই নতুন কালভার্ট সেতু নির্মাণ নিয়ে এলাকায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

পুলিশ পরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান মোল্লা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, বাড়িটি তাঁর বাবা বানিয়েছেন। এই কালভার্ট নির্মাণের ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না।

একাধিক সূত্রে জানা যায়, মাদারীপুর সদর উপজেলার ঘটমাঝি ইউনিয়নের ছয়না গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমান মোল্লা বর্তমানে ঢাকার উত্তরা জোনে হাইওয়ে থানায় পুলিশ পরিদর্শক হিসেবে কর্মরত আছেন। এর আগে তিনি শরীয়তপুরের জাজিরা থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। শরীয়তপুরের জাজিরা থানায় ওসি থাকা অবস্থায় মন্ত্রণালয়ে বিশেষ তদবির করে নিজের বাড়ির জন্য এই সেতুটি পাস করিয়ে আনেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

মাদারীপুর শহরের ইটেরপুল থেকে পাথুরিয়ার পাড় সড়কের ওপর ছয়না গ্রামে নির্মাণ করা সেতুটির নাম দেওয়া হয় ‘কামাল মোল্লার বাড়ির নিকট কালভার্ট সেতু’। কামাল মোল্লা হচ্ছেন পুলিশ পরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান মোল্লার ছোট ভাই। আর বাড়িটি এলাকায় ওসির বাড়ি নামে পরিচিত।

মাদারীপুরের ঘটমাঝি ইউনিয়নে সদ্য নির্মিত পুলিশ কর্মকর্তার বাড়ি। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাদারীপুরের ঘটমাঝি ইউনিয়নে সদ্য নির্মিত পুলিশ কর্মকর্তার বাড়ি। ছবি: আজকের পত্রিকা

কালভার্ট সেতুর নামফলকে লেখা আছে ৩ কোটি ২৩ লাখ ৮৭ হাজার ৯৬ টাকায় আবরার এন্টারপ্রাইজের মাধ্যমে কাজটি বাস্তবায়ন করা হয়। এত টাকা মূল্যে সেতু নির্মাণ নিয়েও এলাকায় ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

তবে সদর উপজেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, কালভার্ট সেতুটির চুক্তিমূল্য ৩২ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। তবে নামফলকের চুক্তিমূল্য লেখা ভুল হয়েছে। গত অর্থবছরের এডিপির প্রকল্পের অর্থায়নে মাদারীপুর সদর উপজেলা পরিষদের কর্তৃপক্ষ সড়কটি নির্মাণ করেন।

স্থানীয় কয়েকজন নাম না প্রকাশে বলেন, ওসি মোস্তাফিজুর রহমান মোল্লা ক্ষমতার অপব্যবহার করে এই সেতু নির্মাণ করেছেন। একটি বাড়ির জন্য একটি ব্রিজ কখনোই প্রয়োজন হয় না। এভাবে সরকারের টাকা অপচয় করা ঠিক হয়নি। তা ছাড়া এত টাকা ব্যয়ে একটি সেতু নির্মাণ করা কখনোই কাম্য নয়। এর সঙ্গে যাঁরা যাঁরা জড়িত সবার বিচার হওয়া উচিত।

ঘটমাঝি ইউনিয়নের ইটেরপুল থেকে পাথুরিয়ার পাড়  সড়কের পাশে ছয়না গ্রামের ইটেরপুর খালের ওপর নির্মাণ করা সেতু। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঘটমাঝি ইউনিয়নের ইটেরপুল থেকে পাথুরিয়ার পাড় সড়কের পাশে ছয়না গ্রামের ইটেরপুর খালের ওপর নির্মাণ করা সেতু। ছবি: আজকের পত্রিকা

এ বিষয়ে মোস্তাফিজুর রহমান মোল্লা বলেন, ‘কালভার্ট সেতু নির্মাণের ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। যৌথ পরিবার হওয়ায় বাড়িটি নির্মাণ করেছেন আমার বাবা আনু মোল্লা। আমার বাবার বাড়ির সামনে কালভার্ট সেতু নির্মাণ করায় আমিও ক্ষুব্ধ। অন্য কোথায়ও সেতুটি নির্মাণ না করে আমার বাবার বাড়ির সামনে সেতু নির্মাণ করায় ঠিকাদারের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, ঠিকাদারও বিষয়টি এড়িয়ে যান। এলাকার মানুষ না জেনেই আমার ওপর এমন মিথ্যে অভিযোগ দিচ্ছেন। আমি কালভার্ট নির্মাণের ব্যাপারে কিছুই জানি না।’

মাদারীপুর সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ওবাইদুর রহমান খান একটি হত্যা মামলার আসামি হওয়ায় এলাকায় নেই। তাই তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ওয়াদিয়া শাবাব বলেন, ‘একটি বাড়ির জন্য একটি সেতু নির্মাণের কোনো সুযোগ নেই। প্রকল্প বাস্তবায়নের জবাব দিতে পারবে সংশ্লিষ্ট দপ্তর। এ ছাড়া সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা প্রকৌশলী কীভাবে এমন প্রকল্প হাতে নিয়েছেন তা আমার বোধগম্য নয়।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত