তিনি শিক্ষক, তিনিই পিয়ন, তিনিই ঝাড়ুদার! 

ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৪ এপ্রিল ২০২২, ১৯: ৫২
আপডেট : ০৪ এপ্রিল ২০২২, ২০: ৪৫

টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলা সদর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত দুলালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রায় এক শ’ শিক্ষার্থী রয়েছে বিদ্যালয়টিতে। তবে এ বিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন মো. আবদুল লতিফ নামের মাত্র একজন শিক্ষক। বর্তমানে সেখানে তিনিই প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষক, কেরানি এমনকি দপ্তরির দায়িত্ব পালন করেন।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, দুলালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজহারুল ইসলাম ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর অবসরে যান। তাঁর আগে আরও দুজন সহকারী শিক্ষক অবসরে যান। এরপর থেকেই একা হয়ে পড়েন লতিফ।

সরেজমিনে দেখা যায়, শিক্ষক আবদুল লতিফ তিন শ্রেণিতে একসঙ্গে ক্লাস নিচ্ছেন। এক ক্লাস থেকে অন্য ক্লাসে যাচ্ছেন। শিক্ষক যে ক্লাসে আছেন সেই ক্লাস নীরব থাকলেও অন্য ক্লাসের শিক্ষার্থীরা হইচই করছে। তিনি আবার গিয়ে সেই শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শান্ত করছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে একমাত্র শিক্ষক আবদুল লতিফ বলেন, ‘শুক্রবার ও অন্যান্য বন্ধের দিন বাদে প্রতিদিন সকাল নয়টায় বিদ্যালয়ে এসে চারটি কক্ষের তালা খুলে ঝাড়ু দিই। প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ছয়টি শ্রেণিতে সব ক্লাস নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। হাজিরা খাতায় নাম লিখতে হয়। আবার ঘণ্টাও বাজাতে হয়। পরীক্ষাও চালাতে হয়। মাসে কমপক্ষে চার-পাঁচবার উপজেলা শিক্ষা অফিসে নানা কাজে যেতে হয়। এ ছাড়া উপবৃত্তির তালিকার মতো সময় সাপেক্ষ কাজও করতে হয়। আমি আর পারছি না।’

দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী সাজ্জাদ রায়হান ও মায়মুনা বলেন, ‘স্যারের খুব কষ্ট। একবার পড়ায় তারপর আবার নিজেই গিয়ে বেল (ঘণ্টা) বাজায়।’

এ বিষয়ে অভিভাবক মোর্শেদ আলী ও শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষকের অভাবে আমাদের ছেলেমেয়েদের কোনো লেখাপড়া হচ্ছে না।’

অভিভাবক ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বললে তাঁরা বলেন, একজন শিক্ষক দিয়ে কি কোনো স্কুল চলে? এই স্কুল থাকা না থাকা সমান কথা!

ওই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র মো. হাসান আলী বলছে, ‘২০১৫ সালে এই স্কুলের শিক্ষার্থী ছিল ৩ শতাধিক। বর্তমানে শিক্ষার্থী আছে মাত্র ৯২ জন। লতিফ স্যার বাদে আর সবাই অবসরে যাওয়ায় পর সরকার নতুন কোনো শিক্ষক নিয়োগ দেয়নি। ফলে ছাত্রসংখ্যা কমে যাচ্ছে। তারা আশপাশের মাদ্রাসাগুলোতে চলে গেছে।’

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান বলেন, ‘বদলি বন্ধ থাকায় বিদ্যালয়টির শিক্ষক সংকট দূর করা যাচ্ছে না। বদলি প্রক্রিয়া শুরু হলে দ্রুত শিক্ষক দেওয়া হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত