আনন্দের মধ্যে ভাগ আছে

জাহীদ রেজা নূর, ঢাকা
প্রকাশ : ০১ অক্টোবর ২০২১, ১১: ২১
আপডেট : ০১ অক্টোবর ২০২১, ১২: ০৫

মোহাম্মদপুর ফার্টিলিটি সার্ভিসেস অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারের সামনে মাস্ক-মুখেই সুঘ্রাণটা নাকে আসে। এদিক-ওদিক তাকালে নিরাভরণ ভ্যানটা চোখে পড়ে। একজন এইমাত্র সেই ভ্যানওয়ালার হাত থেকে খিচুড়ি নিয়ে ফুটপাতে রাখা চেয়ারে বসলেন। দুপুর দেড়টায় একটা তোফা ভোজ!

কাছে গেলে বোঝা যায়, বড় একটা হাঁড়িতে রয়েছে খিচুড়ি। সঙ্গে বেশ কয়েকটা ঢাকনা আঁটা ভারী প্লাস্টিকের বাটি। পুরো আয়োজনে পরিচ্ছন্নতার ছাপ। যিনি বিক্রি করছেন, তার সামনে গিয়ে দাঁড়াই।

‘আপনার সঙ্গে একটু কথা বলা যাবে?
‘যাবে না ক্যানো?’ এ রকম অদ্ভুত প্রশ্ন যেন জীবনে প্রথম শুনলেন।

‘আপনার নাম কী?’
‘মো. আমজাদ হোসেন।’

‘কী বিক্রি করেন?’
‘খাবার বিক্রি করি। খিচুড়ি। এখন প্রায় শেষের দিকে।’ এ কথা বলে তিনি বড় হাঁড়ির ঢাকনা সরিয়ে যা দেখান, তাতে মনে হয় আজ বিক্রিবাট্টা ভালোই।

‘কটায় খাবার বিক্রি শুরু করেন?’
‘সকাল ৭টার দিকে আসি। ১টা-২টা পর্যন্ত বিক্রি করি। সকাল থাইকাই মানুষ খায়।’

‘আরো কিছু বাক্স দেখছি। খিচুড়ির সাথে এই বাক্স থেকে কিছু দেন?’
‘ডিম আছে, ভর্তা আছে। শুঁটকিভর্তা। আলুভর্তা। ডাইলভর্তা।’

‘খিচুড়ির সঙ্গে ভর্তার প্যাকেজ?’
কথাটা ঠিকভাবে বোঝেন না তিনি। নিজেই ব্যাখ্যা করেন, ‘শুধু ভর্তা দিয়া খিচুড়ি ৩০টাকা, ডিম নিলে ৫০টাকা।’

‘আপনার ছেলেমেয়ে আছে?’
‘ছেলেমেয়ে দুইজন। স্কুলে পড়ে। বড়জন ফোরে। ছোটজন টুয়ে। দেশে থাকে।’

‘দেশ কই?’
‘কুড়িগ্রাম।’

‘ভাবিও কুড়িগ্রামে থাকে?’
‘হ্যাঁ, কুড়িগ্রামে। আমি দুই-তিন মাস পর পর বাড়ি যাই। সপ্তাহখানেক থাকি। কখনো দেখা গেল দুই সপ্তাহ থাকি।’

‘বাড়িতে গিয়ে কিছু করেন?’
‘না। আমি তো আর কোনো কর্ম জানি না। বাড়িতে সবার সঙ্গে সময় কাটাই।’

‘খিচুড়ি নিজেই রান্না করেন?’
‘শেখের ট্যাক ২ নম্বরে থাকি। সেখানেই খিচুড়ি রান্ধি। খিচুড়ি রান্‌তে হইলে রাত তিনটায় উঠতে হবে। তারবাদে পাকশাক করতে হবে।’

‘কী চাল দেন?’
‘দেশি বাসমতি আর পোলাওর চাল। রান্না হোটেলে শিখছি।’

‘আয় হয় কত?’
‘খরচের তুলনায় আয় কম হয়। ৫০০-৭০০ টাকা হয়।’

‘লকডাউনের সময় কেমন হতো?’
‘তখন তো বন্ধ ছিল। এক বেলা কম খাইছি। একসময় দিনে কিছুই খাই নাই। এখন কোনো রকম চলে আরকি। বেচাকেনা হয়, কোনোভাবে সংসারটা চালাই।’

‘আচ্ছা, জীবন মানে কী, বলেন তো?’
‘জীবনটা মানে হলো কষ্টের জীবন।’

‘আনন্দ নাই কোনো? এই যে আপনার চোখে-মুখে তো হাসি দেখছি। এইটা কি আনন্দ না?’
‘এইটা আনন্দ, তবে আনন্দের মধ্যে ভাগ আছে। কেউ হয়তো কষ্টের মইদ্যে আনন্দ করে, কেউ সুখে আনন্দ করে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত