Ajker Patrika

গাজীপুর সিটির সাবেক মেয়র

থেমে আছে জাহাঙ্গীরের ৭ হাজার কোটির দুর্নীতির তদন্ত

  • ২০২১ সালে অনিয়মের অভিযোগে বরখাস্ত হন জাহাঙ্গীর আলম।
  • দুদক বলেছিল, তাঁর বিরুদ্ধে ৭ হাজার ৮০০ কোটির দুর্নীতির তথ্য আছে।
  • দলে ফেরার পর সব তদন্ত থেমে যায়, কোনো প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি।
মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান, গাজীপুর
আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৯: ১৩
জাহাঙ্গীর আলম। ফাইল ছবি
জাহাঙ্গীর আলম। ফাইল ছবি

গাজীপুর সিটি করপোরেশনে হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি, ভুয়া ভাউচার তৈরি, একই কাজ একাধিক প্রকল্পে দেখানো, জমি অধিগ্রহণসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে মেয়র পদ থেকে বরখাস্ত হয়েছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। এরপর ২০২১ সালে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। আর ২০২২ সালে তদন্ত শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এই দুই তদন্তের কোনোটি আলোর মুখ দেখেনি।

২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে গোপনে ধারণ করা জাহাঙ্গীর আলমের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। সেই ভিডিওতে আওয়ামী লীগ ও দলটির নেতাদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন তিনি। এরপর দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ২০২১ সালের ১৯ নভেম্বর আওয়ামী লীগ থেকে জাহাঙ্গীরকে বহিষ্কার করা হয়। যদিও পরে আবার তাঁকে দলে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। তবে তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয় এরপরই।

দুর্নীতি ৭ হাজার কোটি

২০২২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) জাহাঙ্গীরের ৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়ার কথা জানায়। এসব অভিযোগের বিষয়ে দুদক একাধিক অনুসন্ধান দল গঠন করে। প্রথম অনুসন্ধানী দলে ছিলেন দুদকের উপপরিচালক আলী আকবর ও সদস্য দুদকের সহকারী পরিচালক আশিকুর রহমান আশিক।

গাজীপুরে গিয়ে আশিকুর রহমান আশিক তখন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বরখাস্ত হওয়া মেয়র জাহাঙ্গীর আলম তাঁর প্রায় তিন বছরের বেশি সময়কালে ৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকার অনিয়ম করেছেন বলে অভিযোগ পেয়েছে দুদক।

এরপর জাহাঙ্গীর আলমকে দলে ফিরিয়ে নেয় আওয়ামী লীগ। এরপর সব তদন্ত, সবকিছু থেমে যায়। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর জাহাঙ্গীর আলমও ভারতে চলে গেছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। এসব বিষয়ে জানতে হোয়াটসঅ্যাপে কল করা হলে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে অনেক মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে। আমি নির্বাচিত মেয়র ছিলাম কিন্তু আমাকে কাজ করতে দেওয়া হয়নি। ব্যাংকে একক স্বাক্ষরের যে অ্যাকাউন্ট, সেটি আমি খুলিনি।’

মন্ত্রণালয়ের তদন্তও থমকে

দুদকের তদন্তের আগে ২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর ভুয়া টেন্ডার, আরএফকিউ, বিভিন্ন পদে অযৌক্তিক লোকবল নিয়োগ, একই কাজ বিভিন্ন প্রকল্পে দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অভিযোগে জাহাঙ্গীর আলমকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

জাহাঙ্গীরকে যেদিন বরখাস্ত করা হয়, সেই দিনই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি করে। কমিটির সদস্যরা সরেজমিনে গাজীপুরে বিভিন্ন এলাকায় কাজ পরিদর্শন করেন। নগর ভবন থেকে বিভিন্ন কাগজপত্র ও তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করেন। কর্মকর্তাদের মন্ত্রণালয়ে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদও করেন। কিন্তু তদন্তের ফলাফল আর জানা যায়নি।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (নগর উন্নয়ন অনুবিভাগ) এ এইচ এম কামরুজ্জামান বলেন, ‘আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। এ ধরনের কোনো বিষয় কেউ আমাকে জানায়নি।’

এ বিষয়ে গাজীপুর নাগরিক ফোরামের সভাপতি জালাল উদ্দিন বলেন, সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে যে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, সেসব কমিটির তদন্ত শেষ করা উচিত ছিল। এই তদন্ত শেষ করতে আদালতে রিট করা হয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি উচ্চ আদালত তদন্ত শেষ করতে দুদককে ৬ মাসের সময় বেঁধে দেন। এরপর প্রায় ৩ বছর পেরিয়ে গেলেও তদন্ত শেষ হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত