মিটফোর্ডে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে সময় লাগে দু-তিন দিন

প্রতিনিধি, মিটফোর্ড (ঢাকা) 
Thumbnail image

দেশে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গু। মৃত্যুও বাড়ছে সমানতালে। ঢাকা শহরে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতাল নন কোভিড এবং ডেঙ্গু ডেডিকেটেড হওয়ায় চিকিৎসার জন্য মিটফোর্ড হাসপাতালের ওপর লাখো মানুষের নির্ভরতা। ঢাকা মেডিকেল থেকে শুরু করে ঢাকার আশপাশের জেলার হাসপাতাল থেকেও প্রচুর রোগী রেফার করে মিটফোর্ড হাসপাতালে। ফলে ‘তিল ধারণের ঠাঁই নেই’ হাসপাতালে। বারান্দায়, গেটের সামনে অবস্থান করছেন রোগীরা। শয্যার জন্য রোগী ও তাঁদের স্বজনেরা এক বিল্ডিং থেকে ছুটছেন আরেক বিল্ডিংয়ে। 

রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালে রোববার সকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বর্হি বিভাগে ডাক্তার দেখাতে ও টিকা নিতে আসা লোকজনের দীর্ঘ লাইন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা। জরুরি বিভাগের সামনেও একের পর এক অ্যাম্বুলেন্স, সিএনজি ভিড় জমাচ্ছে। স্বজনদের আহাজারিতে মিটফোর্ডের বাতাস যেন ভারী হয়ে উঠছে। 

বহির্বিভাগেই যে রোগীর ভিড়, তা নয়। অন্তবিভাগের অবস্থাও তথৈবচ। মুন্সিগঞ্জ থেকে আগত মোস্তুফা বলেন, গতকাল ভর্তি হয়েছি, কিন্তু কোন সিট পাইনি। তাই বাবাকে নিয়ে হাসপাতালের সিঁড়িতে অবস্থান করছি। কর্তৃপক্ষ আশা দিয়েছে বিকেলের মধ্যে একটা ব্যবস্থা করে দেবে। কিন্তু বাবার অবস্থা ধীরে ধীরে শোচনীয় হচ্ছে। 

রাজধানীর সূত্রাপুর থেকে বর্হি বিভাগে ডাক্তার দেখাতে আসা সাজেদা আক্তার বলেন, সকাল ৭টায় এসেছি। অনেকে ফজরের পর থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। সকাল সাড়ে ৮টায় আউটডোর চালু হয়েছে। এখন ১০টা বাজলেও লাইনের মাঝামাঝি অবস্থানে যেতে পারিনি। এখান থেকে টিকিট সংগ্রহের পর আরেকটি কাউন্টারের সামনে লাইন ধরতে হবে। সেখান থেকে কোন চিকিৎসকের কাছ থেকে চিকিৎসা নেব তা নির্ধারণ করে দেবে। এরপর নির্দিষ্ট বিভাগের চিকিৎসকের কক্ষের সামনে গিয়ে আবারও দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। হয়তো দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে ২টা বেজে যাবে। তখন বলবে আগামীকাল আসার জন্য। আগামীকাল এসেও দীর্ঘ লাইন পেরিয়ে ডাক্তার দেখালে, ডাক্তার আবার কিছু পরীক্ষা দেবেন। পরীক্ষার জন্য আবার দাঁড়াতে হবে লাইনে। আগেও এমন ভোগান্তির শিকার হয়েছি। ভেবেছিলাম আর এখানে আসব না, কিন্তু টাকার অভাবে অন্য কোথাও যেতেও পারি না। 

ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালে রোগী ও স্বজনদের ভিড়মিটফোর্ড হাসপাতাল পরিচালকের একান্ত সহকারী খোরশেদ আলম বলেন, ‘আউটডোরের কাউন্টার মেরামত চলছে। তাই আমাদের বর্হি বিভাগের লাইন দীর্ঘ হচ্ছে এবং ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে সেবা গ্রহণকারীদের। তবে আগামী দু’তিন দিনের মধ্যে কাউন্টার মেরামত হয়ে যাবে। তখন ভোগান্তি কমে যাবে। প্রতিটি সরকারি হাসপাতালেই কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আমরাও তার ব্যতিক্রম না। তবে কীভাবে ভর্তি রোগীদের সঠিক স্বাস্থ্যসম্মত জায়গায় রেখে সেবা প্রদান করা যায় সে বিষয়ে আমাদের পরিকল্পনা চলমান আছে।’ 

মিটফোর্ড হাসপাতালের উপপরিচালক মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘একমাত্র নন কোভিড হওয়ায় এখানে প্রচুর রোগী আসছে। রোগীদের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছি আমরা। তাও আমরা আমাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সামাল দিচ্ছি। রোগীদের শয্যা সরবরাহ করা আমাদের সক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। কেননা ইতি মধ্যে আমরা আমাদের সক্ষমতার বাইরে গিয়েও আলাদা একটি ডেঙ্গু ইউনিট স্থাপন করেছি। আমাদের ডাক্তারেরা যথেষ্ট আন্তরিক। শয্যা না মিললেও বারান্দায় বা মেঝেতে রেখে সঠিক চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত