Ajker Patrika

গবেষণার বই, বিক্রি দুটিই কম

শরীফ নাসরুল্লাহ, ঢাকা
স্টলে পছন্দের বই খুঁজছে কয়েকজন কিশোর। গতকাল অমর একুশে বইমেলা প্রাঙ্গণে। ছবি: আজকের পত্রিকা
স্টলে পছন্দের বই খুঁজছে কয়েকজন কিশোর। গতকাল অমর একুশে বইমেলা প্রাঙ্গণে। ছবি: আজকের পত্রিকা

এবারের বইমেলায়ও হরেক বিষয় নিয়ে গবেষণা, পর্যালোচনাধর্মী নানা বই বের হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে গল্প ও উপন্যাসের একচেটিয়া প্রাধান্যে কিছুটা ভাগ বসিয়েছে গবেষণা, বিশ্লেষণসহ ভিন্ন স্বাদের মননশীল বই। এ ধরনের বইয়ের বিক্রি দিন দিন বাড়ছে। তবে প্রকাশক তথা বই ব্যবসায়ীদের মতে, এবার সার্বিকভাবে মেলায় বইয়ের বিক্রি বেশ কম। সংগত কারণে গবেষণাধর্মী বইয়ের কাটতিও প্রত্যাশা অনুযায়ী নয়।

মূলত নিম্ন আয়ের মানুষদের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠান গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র বাংলাদেশের সমবয়সী। যুদ্ধাহত ও অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা দেওয়া যুদ্ধকালীন চিকিৎসা কেন্দ্র ‘বাংলাদেশ হাসপাতাল’ থেকেই আজকের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের জন্ম। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর নেতৃত্বে সাধারণ মানুষের দ্বারে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার ধারণা ও চর্চা শুরু করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। বাংলাদেশে জনস্বাস্থ্য আন্দোলনের এই সূচনা ও বিকাশ নিয়ে লেখা হয়েছে বই ‘গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের গল্প: পাবলিক হেলথের প্রথম পাঠ’। ইউপিএল প্রকাশিত বইটি লিখেছেন মোশতাক আহমদ।

লে. জে. (অব.) কামাল মতিনউদ্দীন ছিলেন একজন পাকিস্তানি জেনারেল, কূটনীতিক ও সামরিক ইতিহাসবিদ। পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিভক্তি তথা পূর্ব পাকিস্তানে (আজকের বাংলাদেশ) পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর পতনের কারণ নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা ও গবেষণালব্ধ তথ্য নিয়ে ‘ট্র্যাজেডি অব এররস্: পূর্ব পাকিস্তান সংকট’ নামে বই লিখেছেন তিনি। রাবেয়া বুকস বের করেছে বইটির ভাষান্তর। অনুবাদ করেছেন ড. ফারুক হোসেন।

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তীকালে দেশের অর্থনৈতিক সংস্কার কী ধরনের হতে পারে, বিরূপাক্ষ পাল তা তুলে ধরেছেন ‘বাংলাদেশের অর্থনীতির সংস্কার’ নামের বইয়ে। প্রকাশ করেছে আদর্শ।

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকদের সময়ে পূর্ব বাংলার শিল্প খাত নিয়ে ড. সায়ীদ ওয়াকিলের গবেষণাধর্মী বই ‘ব্রিটিশ আমলে পূর্ব-বাংলায় স্থাপিত শিল্প-কারখানা: আর্থ-সামাজিক ও ঐতিহাসিক পর্যালোচনা’ এনেছে দিব্য প্রকাশ। সাদিকুর রহমানের ‘মধ্যযুগে বাংলার অর্থনীতি’ বের করেছে কথাপ্রকাশ।

ঢাকার পাশের জেলা নারায়ণগঞ্জের সংস্কৃতি, ইতিহাস নিয়ে সাহিত্য প্রকাশ এনেছে ‘নারায়ণগঞ্জের সংস্কৃতি ইতিহাস ঐতিহ্য’। লিখেছেন জেলার সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি।

বইমেলার শেষ দিকে সাধারণত ভিড় ও কেনাকাটা দুটিই বাড়ে। তবে অমর একুশের আগের দিন গতকাল বৃহস্পতিবার মেলায় আশানুরূপ ভিড় হয়নি। বেশির ভাগ মানুষ দৃশ্যত নিছক বেড়াতে এসেছিলেন। তাঁদের অনেকেই ব্যস্ত ছিলেন ছবি তোলায়।

প্রকাশক ও বিক্রয়কর্মীরা জানিয়েছেন, বিক্রিতে চলছে মন্দা। সব ধরনের বইয়ের ক্ষেত্রেই। পলল প্রকাশনীর কর্ণধার খান মাহবুব বলেন, ‘অতীতের তুলনায় এবার বইয়ের বিক্রি নিম্নগামী। মেলা বাজারে পরিণত হয়েছে। হকাররা নানাভাবে ঢুকে পড়ছে মেলায়।’

সাহিত্য প্রকাশের বিক্রয় নির্বাহী রথীন দাস বললেন, ‘বাংলা একাডেমির বইমেলা শুরু হওয়ার পর থেকে সবগুলো মেলায় অংশগ্রহণ করছি। গত কয়েক দশকে বেচাকেনায় এমন মন্দা দেখিনি। কোভিডের সময়ও এমন হয়নি।’

বাংলা একাডেমি জানিয়েছে, মেলায় গতকাল পর্যন্ত গবেষণাধর্মী বই বের হয়েছে ৩৮টি।

নতুন বইয়ের খোঁজে

বিভিন্ন দেশের বিচিত্র ইতিহাস-ঐতিহ্যের বিষয় নিয়ে প্রবন্ধ-নিবন্ধের সংকলন ‘ইতিহাসের পথে পথে’। জ্ঞানকোষ প্রকাশনী থেকে বের হওয়া বইটি লিখেছেন মাহমুদুর রহমান।

কথাসাহিত্যিক আহমদ মোস্তফা কামালের একগুচ্ছ উপন্যাসের বই ‘উপন্যাস সংগ্রহ’ বের করেছে কথাপ্রকাশ।

ঐতিহ্য থেকে বের হয়েছে মোহাইমিন পাটোয়ারীর ‘শোষণ মুক্তির অর্থনীতি’। লেখক এতে গল্পের ছলে বিশ্বের নানা দেশের উত্থান-পতনের রহস্য এবং বর্তমান বিশ্বের অর্থনৈতিক কাঠামোগুলো বিশ্লেষণ করেছেন।

গতকাল মেলায় নতুন বই এসেছে ১১২টি। শুরু থেকে এ পর্যন্ত মোট নতুন বইয়ের সংখ্যা ১৯০৫।

আয়োজন মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘উপন্যাস, ঔপন্যাসিক ও রশীদ করীমের

উপন্যাসবীক্ষা: কয়েকটি প্রসঙ্গ’ শীর্ষক আলোচনা। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হামীম কামরুল হক। আলোচনায় অংশ নেন অনিরুদ্ধ কাহালি এবং সাখাওয়াত টিপু। সভাপতিত্ব করেন সুব্রত বড়ুয়া।

হামীম কামরুল হক বলেন, রশীদ করীম প্রথমত ও প্রধানত একজন ঔপন্যাসিক। তাঁর উপন্যাসে মধ্যবিত্ত মানসের দ্বিধান্বিত ও অন্তর্দ্বন্দ্বময় আত্মস্বরূপের উন্মোচন ঘটেছে। ঔপন্যাসিক হিসেবে তিনি নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রবণতার প্রকাশ ঘটিয়েছেন।

সভাপতির বক্তব্যে সুব্রত বড়ুয়া বলেন, রশীদ করীম আমাদের বাংলা সাহিত্যের একজন সার্থক ঔপন্যাসিক। তাঁর সাহিত্য ও সাহিত্যচিন্তা নিয়ে গভীর গবেষণা প্রয়োজন।

‘লেখক বলছি’ মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন শাহাবুদ্দীন নাগরী ও ইমরান মাহফুজ। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি মো. সোলায়মান চৌধুরী, লেলিনা আক্তার, শাহীন রিজভী, মো. আশরাফুল হক, তাজ ইসলাম, আলতাফ হোসাইন রানা, চঞ্চল শাহরিয়ার, জুবায়ের আন নায়েম ও আউয়াল খোন্দকার। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী এস এম শাহনুর, এম এ কুদ্দুস, কামরুন নেসা চৌধুরী ও জান্নাতুল ফেরদৌস মুক্তা।

আজ শুক্রবার ভাষাশহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বইমেলা শুরু হবে সকাল ৭টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। সকাল ৮টায় মেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর। সভাপতিত্ব করবেন কবি হাসান হাফিজ। বিকেল ৪টায় রয়েছে অমর একুশে বক্তৃতা ২০২৫। স্বাগত বক্তব্য দেবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম। অমর একুশে বক্তব্য দেবেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত