সাভারে ফ্ল্যাট থেকে ৩ লাশ উদ্ধার, সন্দেহের তালিকায় অতিথিরা

রিফাত মেহেদী, সাভার (ঢাকা)
প্রকাশ : ০১ অক্টোবর ২০২৩, ১৭: ৩৩
আপডেট : ০১ অক্টোবর ২০২৩, ১৮: ৩৩

সাভারের আশুলিয়ায় ফ্ল্যাট থেকে স্বামী, স্ত্রী ও তাঁদের সন্তানের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে এক রুম থেকে মা শাহিদা বেগম ও ১২ বছরের ছেলে জয়ের গলাকাটা রক্তাক্ত মরদেহ এবং পাশের কক্ষে গামছা দিয়ে হাত-পা বাঁধা ও গলাকাটা অবস্থায় স্বামী মোক্তারুল হোসেন বাবুলের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এভাবেই উদ্ধার করা হয়েছে একই পরিবারের তিনজনের লাশ।

পোশাকশ্রমিক দম্পতি ও শিশুকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনার রহস্য এখনো উদ্‌ঘাটন করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে ভুক্তভোগীদের ফ্ল্যাটে মিলেছে রান্না করা খিচুড়ি ও পাঁচ-ছয়টি চায়ের কাপ।

আশপাশে ছড়িয়ে পড়া বিকট দুর্গন্ধ থেকে গতকাল শনিবার রাত ১০টার দিকে বেরিয়ে আসে লোমহর্ষক এ ঘটনা। পুলিশের ধারণা দুই এক দিন আগে তাঁদের হত্যা করা হয়েছে।

আশুলিয়ার উত্তর গাজীরচটে শেখ মেহেদী হাসানের ছয়তলা ভবনের চারতলার একটি ফ্ল্যাটে প্রায় আট বছর ধরে বসবাস করে আসছিল এই দম্পতি। মরদেহ উদ্ধার করে আজ রোববার সকালে ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে রাতে ছুটে আসে জেলা পুলিশ সুপার, র‍্যাব ও সিআইডির একাধিক দল।

নিহত বাবুলের বড় বোন মনোয়ারা বেগমপুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানায়, ভয়ংকর এ হত্যাকাণ্ড ঘটল, কিন্তু আশপাশের কেউই টের পেল না। তাহলে তাঁদের চেতনানাশক কোনো কিছু খাওয়ানো হয়েছে। তারপর তাঁদের তিনজনকেই ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। ঘরে রান্না করা খিচুড়ি ছিল। এ ছাড়া পাঁচ-ছয় কাপ চা খেয়েছে—এমন চিত্রও দেখা মিলেছে। পূর্বপরিচয়ের সূত্রে অতিথি হিসেবে হয়তো হত্যাকারীরা ঘরে প্রবেশ করেছিল।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাবুল ও শাহিদা পেশায় পোশাকশ্রমিক। তাঁদের ১২ বছরের ছেলে জয় আশুলিয়ার একটি স্কুলে সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ছিল। হত্যার শিকার বাবুল ঠাঁকুরগাও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার কোষারাণীগঞ্জ ইউনিয়নের গরুড়া (ফুলবাড়ী) গ্রামের মৃত সইর উদ্দিনের ছেলে। সাত ভাই-বোনের মধ্যে তৃতীয় ছিলেন বাবুল।

নিহত বাবুলের বড় বোন মনোয়ারা বেগম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার ভাইটা জীবনে অনেক কষ্ট করে বড় হয়েছে। আমার ভাইয়ের কোনো শত্রু ছিল বলে আমরা জানি না। থাকলে তো কখনো আমাদের একটু হলেও বলত। আমি খুনিদের ফাঁসি চাই।’

প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে দুর্গন্ধের জেরে প্রতিবেশীরাই প্রথমে দরজা ঠেলে দেখতে পান বিছানার ওপর মা ও ছেলের লাশ। পরে পুলিশে খবর দেন তাঁরা।

এ বিষয়ে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, হত্যাকাণ্ড দেখে প্রাথমিকভাবে ধারণা, তাঁদের চেতনানাশক কোনো কিছু খাওয়ানো হয়েছিল। অচেতন করার পর তাঁদের হত্যা করা হয়। মরদেহ দেখে মনে হচ্ছে, প্রায় ৩৬ থেকে ৪০ ঘণ্টা আগে অর্থাৎ শুক্রবার এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। তাঁদের কোনো কিছু খোয়া যায়নি। এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তবে এখনই সুনির্দিষ্টভাবে বলা যাচ্ছে না হত্যার কারণ। সবগুলো বিষয় মাথায় নিয়েই তদন্ত করা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত